মহিলাদের মেনোপজের সময় ও পরে অ্যান্ড্রোজেনিক হরমোনগুলো আনুপাতিক হারে বেড়ে যায়, তখন চুল বেশি করে পড়তে শুরু করে। তবে এ ক্ষেত্রে ফিমেল প্যাটার্ন অব হেয়ার লস হয়ে থাকে। শুধু কপালের দিক থেকে নয়, চুল পড়া শুরু হয় পুরো মাথা থেকেই। ধীরে ধীরে চুলের ঘনত্ব কমে যায়। অ্যান্ড্রোজেনিক হরমোনই মেয়েদের চুল পড়া ও ছেলেদের টাকের সবচেয়ে বড় কারণ।
স্ট্রেস বা মানসিক চাপ:
দুশ্চিন্তায় ভুগলে বা মানসিক সমস্যা থাকলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি করে চুল পড়তে পারে। তবে এ চুল পড়া সাময়িক এবং পুনরায় চুল গজায়। তবে দীর্ঘদিন মানসিক দুশ্চিন্তায় থাকলে বা দুশ্চিন্তা কাটিয়ে উঠতে না পারলে অনেক বেশি চুল পড়ে যেতে পারে।দৈনিক ১০০টা পর্যন্ত চুল পড়া স্বাভাবিক। কিন্তু এর চেয়ে বেশি পড়লে তা অবশ্যই উদ্বেগের কারণ। বালিশ, তোয়ালে বা চিরুনিতে লেগে থাকা চুল গুনতে চেষ্টা করুন। অন্তত পরপর তিন দিন। অথবা অল্প এক গোছা চুল হাতে নিয়ে হালকা টান দিন। যদি গোছার চার ভাগের এক ভাগ চুলই উঠে আসে তবে তা চিন্তার বিষয়।
চিকিৎসা
ওষুধের মাধ্যমে:
বাজারে চুল পড়া রোধের জন্য মিনোক্সিডিল নামের ওষুধ পাওয়া যায়। এটি যেখান থেকে চুল পড়ছে সেখানে লাগাতে হবে। এটি নারী ও পুরুষ উভয়েই ব্যবহার করতে পারেন। এতে কাজ না হলে অন্য চিকিৎসা নিতে হবে।
লেজার থেরাপি এলএইচটি:
লেজার থেরাপি হেয়ার ফলিকলগুলোকে আবার সজীব করে। এমনিতে প্রতিদিনই চুল পড়ে ও নতুন চুল গজায়। কিন্তু বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বা অন্য কোনো অসুস্থতার ফলে যে পরিমাণ চুল পড়ে যায়, সেই পরিমাণ গজায় না। লেজার থেরাপি চুলের গোড়ায় রক্ত সঞ্চালন ৫৪ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয় ও ফলিকলগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করে।
ঘরোয়া সমাধানঃ
আঁচড়াতে গেলেন। চিরুনিতে একরাশ চুলের জটলা দেখে আঁতকে উঠলেন। সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে অনেক দৌড়ান পার্লারে। কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ চুলের পেছনে। বাড়তি টাকা খরচ না করে ঘরোয়া চিকিৎসাতেই চুলপড়া রোধ করা সম্ভব।
গরম তেলের চিকিৎসা : এটা মূলত হট অয়েল ট্রিটমেন্ট নামেই প্রচলিত। অলিভ, নারিকেল বা ক্যানোলা তেল (বীজ জাতীয় উপাদান দিয়ে তৈরি) নিয়ে কিছুটা গরম করুন। মনে রাখবেন তেল উষ্ণ হতে হবে, খুব বেশি গরম নয়। এবার খুব ধীরে, যত্ন ও সময় নিয়ে মাথার তালুতে চুলের গোড়ালিগুলোয় ম্যাসাজ করুন। তারপর একঘণ্টা রেখে শ্যাম্পুদিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
প্রকৃতির রস: আপনার মাথার তালুতে লাগাতে পারেন পিয়াজ, রসুন অথবা আদার রস। লাগিয়ে ম্যাসাজ করে ঘুমিয়ে পড়ুন। সকালে উঠে ধুয়ে ফেলুন। চুল হবে মজবুত। মাথা ম্যাসাজ: আপনার চুল ঝরা রক্ষায় মাথায় ম্যাসেজে করলে বেশ উপকার পাবেন। তবে এটা হতে হবে নিয়মিত। প্রতিদিনকার এই ম্যাসাজ আপনার রক্তচলাচল বৃদ্ধি করবে। আর মাথার তালুতে রক্ত চলাচল বৃদ্ধির ফলে আপনার চুলের ফলিকলগুলো কাজ করবে নতুনভাবে। আমন্ড অথবা যে কোন তেল দিয়ে ম্যাসাজ করার সময় তেলে কয়েক ফোঁটা ল্যাভেন্ডার দিতে পারেন।
অ্যান্টি অক্সিডেন্ট: গরম গ্রিন টি লাগাতে পারেন মাথার তালুতে। এককাপ পানিতে দু’ই-ব্যাগ গ্রিন টি হালকা গরম করে নিন। তারপর এই মিশ্রণটি মাথার তালুতে ম্যাসাজ করে ঘণ্টাখানেক রেখে দেন। এরপর মাথা ধুয়ে ফেলুন। গ্রিন টি-তে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে যা চুল পড়া রোধের পাশাপাশি নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
মেডিটেশন: এক সমীক্ষায় দেখা গেছে চুল পড়ার অন্যতম কারণ দুঃশ্চিন্তা, মানসিক অবসাদ, চাপ, বিষণ্নতা প্রভৃতি। আমাদের নিত্যদিনকার নাগরিক জীবনে এগুলোর উপস্থিতি সর্বদা। তাই মেডিটেশনের ফলে এসব দুঃশ্চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসা সহজ হয়। হরমনাল ব্যালেন্সও রক্ষা হয়।