শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

#9 আকাশ আর মাটি মিলিয়ে সতেরো-আঠারো ঘণ্টা কাটিয়ে গত পরশু সকালে দুজন পৌঁছেছেন বেঙ্গালুরুতে। দুজনই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একাদশে। সাকলাইন সজীবের অভিষেক অনুমিতই ছিল। এই মাঠে সাকিবের সঙ্গে আরেকজন স্পিনার তো লাগতই।
শুভাগত হোম চৌধুরীকেও নামিয়ে দেওয়া হলো। ব্যাটিং-বোলিং দুটিতেই ‘১৩’ সংখ্যাটা থাকল। ব্যাটিংয়ে ১০ বলে ১৩ রান। বোলিংয়ে ২ ওভারে ১৩। শুভাগত কেন দলে—এই প্রশ্ন যদি না-ও করেন, একটা প্রশ্ন তো উঠছেই—নাসির হোসেনকে স্কোয়াডে নেওয়া হলো না কেন?
দুজনই অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার। ১৫ জনের দল করার সময় নাসিরকে বেশি ভালো মনে হয়েছে বলেই তো তাঁকে নিয়েছেন নির্বাচকেরা। তাহলে ম্যাচের পর ম্যাচ তাঁকে বসিয়ে রাখা কেন? বিশেষ করে এই ম্যাচে নাসিরকে না খেলানোর কোনো ব্যাখ্যাই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অভিজ্ঞতা, অতীত পারফরম্যান্স—কিছুরই কি তাহলে মূল্য নেই! শুভাগতর কথাও ভাবুন। মানসিক প্রস্তুতি তো ছিলই না, সঙ্গে ওই শারীরিক ধকল—শুভাগতর প্রতিও তো এটা অন্যায়ই হলো।

ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফি সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যাখ্যা না দিয়ে ‘টিম কম্বিনেশন’-এর সেই পরিচিত বর্মে আড়াল খুঁজলেন। নাসির খেললেই এই ম্যাচে শুভাগতর চেয়ে ভালো করতেন বলে কোনো নিশ্চয়তা নেই। তবে একাদশ নির্বাচনে একটা যুক্তি তো থাকবে। এখানে সেটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, এই সমস্যা!
পরাজয়ের কারণ হিসেবে অবশ্যই এটা আসবে না। মাশরাফি সেই কারণ হিসেবে দেখাচ্ছেন ‘ছোট ছোট ভুল’কে। সেই ভুলগুলো কী? ‘ব্যাটিং-বোলিংয়ের সময় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপার থাকে। ওসব সিদ্ধান্ত নিতে আমরা কিছু ভুল করেছি।’
গত পরশু সংবাদ সম্মেলন শেষে কান্না সামলাতে পারেননি মাশরাফি। বিকেলেও তাঁর কথায় পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল, তাসকিনকে হারানোটা কোনোভাবেই মানতে পারছেন না। এত দিনের পরিকল্পনা সব যে এলোমেলো। ম্যাচ শেষে অবশ্য দাবি করলেন, সবকিছু বাইরে রেখেই মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ দল। কিন্তু চাইলেই কি তা পারা যায়? মাশরাফিও বললেন, ‘একাদশের তিনজন খেলোয়াড় না থাকলে সমস্যা তো হয়ই, তার ওপর এমন ফর্মে থাকা তিনজন!’
তাসকিন-সানির ছিটকে পড়াটা তাও সামলে ওঠার একটু সময় দিয়েছে। তামিমের খেলতে না পারা তো বিনা মেঘে বজ্রপাত! যেটিকে মাশরাফি ‘বিগ লস’ বলবেন, এটি অনুমিতই। তারপরও যে মাঠে একেবারে বিনা প্রতিরোধে আত্মসমর্পণ করেনি দল, এতেই তৃপ্তি খুঁজছেন অধিনায়ক, ‘এই ম্যাচে আমাদের একটা চাওয়া ছিল, আমরা সিনিয়র খেলোয়াড়েরা যেন ভালো করি। রিয়াদ খুব ভালো ব্যাটিং করেছে। সাকিব ব্যাটিং-বোলিং দুটিতেই ভালো। মুশফিকও ভালো খেলেছে। সামনের ম্যাচগুলোতে এটা কাজে লাগবে।’
সামনে আর দুটিই ম্যাচ। আগামীকাল এখানেই প্রতিপক্ষ ভারত। এরপর ২৬ তারিখে কলকাতায় নিউজিল্যান্ড। মনের কোণে সেমিফাইনালের যে স্বপ্ন লুকিয়ে রেখেছিলেন, তা নিয়ে আলোচনাটা এখন বাহুল্যই মনে হবে।

বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের যে উইকেটটি বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের জন্য তৈরি করা হয়েছে, সেটা দেখে নাকি রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ডান হাতটা ‘নিশপিশ’ করছে। রবীন্দ্র জাদেজারও তর সইছে না, কখন খেলা শুরু হবে!


বেঙ্গালুরুর যে উইকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল, সেটাতেই হবে ভারত-বাংলাদেশ দ্বৈরথ। আর এটা তো দেখাই গেছে, সেদিন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ক্যারিবীয় স্পিনার সুলিমান বেন আর স্যামুয়েল বদ্রি কী দুর্দান্ত বোলিংই-ই না করেছিলেন!

কলকাতায় পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটা জিতে রোববারই বেঙ্গালুরু পৌঁছে গেছে ভারতীয় দল। সেখানে পিচের খুঁটিনাটি দেখে ভারতীয় একটি পত্রিকাকে ব্যাটিং কোচ সঞ্জয় বাঙ্গার জানিয়েছেন, বুধবার বাংলাদেশের বিপক্ষে ঘূর্ণি উইকেট নিয়েই মাঠে নামবে ভারত।

চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের উইকেটের তত্ত্বাবধানে আছেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের উইকেট কমিটির দক্ষিণাঞ্চল প্রতিনিধি পি আর বিশ্বনাথন। তিনি বলেছেন, ‘বেঙ্গালুরুর উইকেট হচ্ছে টি-টোয়েন্টির জন্য একেবারে আদর্শ। এখানে প্রচুর রান হবে। ভারতীয় উইকেটের চরিত্র অনুযায়ী স্পিনাররাও বেশ বাঁক আদায় করে নিতে পারবেন। স্পিনাররা অবশ্যই সাহায্য পাবেন এই উইকেট থেকে।’

ওয়েস্ট ইন্ডিজ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচে সুলিমান বেন ও স্যামুয়েল বদ্রি দুজন মিলে ৮ ওভারে রান দিয়েছিলেন মাত্র ২৫। বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচে উইকেট স্পিনারদের কী ধরনের সাহায্য করবে, তার একটা বড় নমুনা হতে পারে দুই ক্যারিবীয় স্পিনারের এই পরিসংখ্যান।

ভারতীয় দল অবশ্য এতে বেশ খুশি। এই উইকেটে নিষেধাজ্ঞা-জর্জরিত বাংলাদেশকে বেশ বিপদে ফেলা যাবে বলেই ধারণা তাদের। তবে বাংলাদেশও এমন উইকেটে খেলতে পেরে খুশি হতেই পারে। সাকিব আল হাসানের সঙ্গে মাহমুদউল্লাহ-সাকলাইন সজীব-শুভাগত হোম-নাসির হোসেন-সাব্বির রহমান—বাংলাদেশের ঘূর্ণি অস্ত্রও কিন্তু নেহাতই মন্দ নয়!

বাংলাদেশ এই খবরকে ‘সুসংবাদ’ হিসেবেও দেখতে পারে বৈকি।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ