আমরা যখন জামাতে নামাজ শেষ করি তখন হজুরের সংগে মোনাজাত ধরার যুক্তি চাই।
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Masumakonda

Call

মুনাজাতের স্বপক্ষে হাদীস বিশারদগণের রায়ঃ ১। জগত বিখ্যাত হাদীস বিশারদ আল্লামা হাফিয ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) বুখারী শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থে বলেন, “যে সকল নামাযের পর সুন্নাত নামায নেই, সে সকল ফরজ নামাযের পর ইমাম ও মুক্তাদীগণ আল্লাহর যিকিরে মশগুল হবেন। অতঃপর ইমাম কাতারের ডান দিকে মুখ করে দু‘আ করবেন। তবে সংক্ষিপ্তভাবে মুনাজাত করতে চাইলে কিবলার দিকে মুখ করেও করতে পারেন।” (ফাতহুল বারী ২: ৩৯০পৃঃ) ﻭﺃﻣﺎ ﺍﻟﺼﻼۃ ﺍﻟﺘﻲ ﻻﯾﺘﻄﻮﻉ ﺑﻌﺪﮨﺎ ﻓﯿﺘﺸﺎﻏﻞ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﻭﻣﻦ ﻣﻌﮧ ﺑﺎﻟﺬﮐﺮ ﺍﻟﻤﺎﺛﻮﺭ ﻭﻻ ﯾﺘﻌﯿﻦ ﻟﮧ ﻣﮑﺎﻥ ﺑﻞ ﺇﻥ ﺷﺎﺀ ﻭﺍ ﺍﻧﺼﺮﻓﻮﺍ ﻭﺫﮐﺮﻭﺍ ﻭﺇﻥ ﺷﺎﺀ ﻭﺍ ﻣﮑﺜﻮﺍ ﻭﺫﮐﺮﻭﺍ، ﻭﻋﻠﯽ ﺍﻟﺜﺎﻧﻲ ﺇﻥ ﮐﺎﻥ ﻟﻺﻣﺎﻡ ﻋﺎﺩۃ ﺃﻥ ﯾﻌﻠﻤﮩﻢ ﺃﻭ ﯾﻌﻈﮩﻢ ﻓﯿﺴﺘﺤﺐ ﺃﻥ ﯾﻘﺒﻞ ﻋﻠﯿﮩﻢ ﺑﻮﺟﮩﮧ ﺟﻤﯿﻌﺎ ﻭﺇ ﮐﺎﻥ ﻻ ﯾﺰﯾﺪ ﻋﻠﯽ ﺍﻟﺬﮐﺮ ﺍﻟﻤﺄﺛﻮﺭ۰ ﻓﮩﻞ ﯾﻘﺒﻞ ﻋﻠﯿﮩﻢ ﺟﻤﯿﻌﺎ ﺃﻭ ﯾﺘﻔﺘﻞ ﻓﯿﺠﻌﻞ ﯾﻤﯿﻨﮧ ﻣﻦ ﻗﺒﻞ ﺍﻟﻤﺄﻣﻮ ﻣﯿﻦ ﻭﯾﺴﺎﺭﮦ ﻣﻦ ﻗﺒﻞ ﺍﻟﻘﺒﻠۃ ﻭﯾﺪﻋﻮ ﺍﻟﺜﺎﻧﻲ ﮨﻮ ﺍﻟﺬﯼ ﺟﺰﻡ ﺑﮧ ﺃﮐﺜﺮ ﺍﻟﺸﺎﻓﻌﯿۃ، ﻭﯾﺤﺘﻤﻞ ﺍﻥ ﻗﺼﺮ ﺯﻣﻦ ﺫﻟﮏ ﺍﻥ ﯾﺴﺘﻤﺮ ﻣﺴﺘﻘﺒﻼ ﻟﻠﻘﺒﻠۃ ‏( ﻓﺘﺢ ﺍﻟﺒﺎﺭﯼ : ۲/ ۳۹۰ ) ২। প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাদাতা আল্লামা বদরুদ্দীন ’আইনী (রহঃ) বলেন,“এ হাদীস দ্বারা নামাযের পরে মুনাজাত করা মুস্তাহাব বুঝা যায়। কারণ-সময়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐ সময় দু‘আ কবুল হওয়ার বেশী সম্ভাবনা।” (উমদাতুল ক্বারী ৬:১৩৯ পৃঃ) ﻭﻣﻦ ﻓﻮﺍﺋﺪ ﺍﻟﺤﺪﯾﺚ ۔۔۔ ﻣﻨﮩﺎ : ﻓﻀﻞ ﺍﻟﺬﮐﺮ ﻋﻘﯿﺐ ﺍﻟﺼﻼۃ ﺑﺄﻧﮩﺎ ﺃﻭﻗﺎﺕ ﻓﺎﺿﻠۃ ﺗﺮﺟﯽ ﻣﻨﮩﺎ ﺇﺟﺎﺑۃ ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ ‏( ﻋﻤﺪۃ ﺍﻟﻘﺎﺭﻱ : ۴/ ۶۱۳ ) ৩। আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী (রহঃ) বুখারী শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থে বলেন, ‘নামাযের পরে হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা বিদ‘আত নয়। কারণ-এ ব্যাপারে প্রচুর কাওলী রিওয়ায়াত বিদ্যমান। আমলী রিওয়ায়াতের মধ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাঝে মধ্যে এ মুনাজাত করেছেন’ বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। আর এটাই সকল মুস্তাহাবের নিয়ম। তিনি নিজে মুনাসিব মত আমল বেছে নিতেন, আর অবশিষ্ট মুস্তাহাবসমূহের ব্যাপারে উম্মতদেরকে উৎসাহ দিতেন। সুতরাং এখন যদি আমাদের কেউ নামাযের পরে হাত উঠিয়ে দায়িমী (স্থায়ী) ভাবে মুনাজাত করতে থাকে, তাহলে সে ব্যক্তি এমন একটা বিষয়ের উপর আমল করল, যে ব্যাপারে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উৎসাহ দিয়ে গেছেন। যদিও তিনি নিজে সর্বদা আমল করেননি।”(ফাইযুল বারী, ২:১৬৭ পৃঃ ও ৪৩১ পৃঃ/৪:৪১৭ পৃঃ) ۔۔۔ﻻ ﺃﻥ ﺍﻟﺮﻓﻊ ﺑﺪﻋۃ ﻓﻘﺪ ﮨﺪﻱ ﺇﻟﯿﮧ ﻓﻲ ﻗﻮﻟﯿﺎﺕ ﮐﺜﯿﺮۃ، ﻭﻓﻌﻠﮧ ﺑﻌﺪ ﺍﻟﺼﻼۃ ﻗﻠﯿﻼ، ﻭﮨﮑﺬﺍ ﺷﺎﻧﮧ ﻓﻲ ﺑﺎﺏ ﺍﻷﺫﮐﺎﺭ ﻭﺍﻷﻭﺭﺍﺩ ﺍﺧﺘﺎﺭﮦ ﺻﻠﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻠﯿﮧ ﻭﺳﻠﻢ ﻟﻨﻔﺴﮧ ﻣﺎ ﺍﺧﺘﺎﺭ ﺍﻟﻠﮧ ﻟﮧ ﺻﻠﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻠﯿﮧ ﻭﺳﻠﻢ ﻭﺑﻘﻲ ﺃﺷﯿﺎﺀ ﺭﻏﺐ ﻓﯿﮩﺎ ﺍﻷﻣۃ، ﻓﺈﻥ ﺍﻟﺘﺰﻡ ﺃﺣﺪ ﻣﻨﺎ ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ ﺑﻌﺪ ﺍﻟﺼﻼۃ ﺑﺮﻓﻊ ﺍﻟﯿﺪ ﻓﻘﺪ ﻋﻤﻞ ﺑﻤﺎ ﺭﻏﺐ ﻓﯿﮧ ﻭﺇﻥ ﻟﻢ ﯾﮑﺜﺮﮦ ﻟﻨﻔﺴﮧ، ﻓﺎﻋﻠﻢ ﺫﻟﮏ۰ ‏( ﻓﯿﺾ ﺍﻟﺒﺎﺭﻱ : ۲/ ۱۶۷ ) ৪। কুতুবুল আলম শাইখুল হাদীস হযরত মাওলানা যাকারিয়া (রহঃ) বললেন,“ফরজ নামাযের পরে হাত উঠিয়ে মুনাজাত করাকে কিছু লোক অস্বীকার করে থাকে। কিন্তু তা ঠিক নয়। কারণ-এর ব্যাপারে প্রচুর হাদীস বিদ্যমান রয়েছে। এ সকল হাদীস দ্বারা নামাযের পর মুনাজাত করা মুস্তাহাব প্রমাণিত হয়”। (আল-আবওয়াব ওয়াত-তারাজিম ৯৭ পৃঃ) ৫। সুপ্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস হযরত মাওলানা ইউসুফ বিন্নূরী (রহঃ) মুনাজাত সম্পর্কিত হাদীসসমূহ উল্লেখ পূর্বক বলেন, “মুনাজাত অধ্যয়ে যে সকল হাদীস পেশ করা হল, এগুলোই যথেষ্ট প্রমাণ যে, ফরজ নামাযের পর সম্মিলিত মুনাজাত জায়িয। এ হাদীস সমূহের ভিত্তিতেই আমাদের ফুক্বাহা কেরাম উক্ত মুনাজাতকে মুস্তাহাব বলেছেন।(মা’আরিফুস সুনান : ৩:১২৩ পৃঃ) ﻓﮩﺬﮦ ﻭﻣﺎ ﺷﺎﮐﻠﮩﺎ ﻣﻦ ﺍﻟﺮﻭﺍﯾﺎﺕ ﻓﻲ ﺍﻟﺒﺎﺏ ﺗﮑﺎﺩ ﺗﮑﻔﻲ ﺣﺠۃ ﻟﻤﺎ ﺍﻋﺘﺎﺩﮦ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻓﯽ ﺍﻟﺒﻼﺩ ﻣﻦ ﺍﻟﺪﻋﻮﺍﺕ ﺍﻻﺟﺘﻤﺎﻋﯿۃ ﺩﺑﺮ ﺍﻟﺼﻠﻮﺍﺕ۰۰۰ ‏( ﻣﻌﺎﺭﻑ ﺍﻟﺴﻨﻦ : ۳/ ۱۲۳ ) ৬। মুসলিম শরীফের প্রসিদ্ধ ব্যাখ্যাকার আল্লামা নববী (রহঃ) বলেন, “সকল ফরজ নামাযের পরে ইমাম, মুক্তাদী ও মুনফারিদের জন্য দু‘আ করা মুস্তাহাব। এ ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই।” (শারহে মুহাযযাব লিন-নাওওয়াবী ৩:৪৬৯) ﻗﺪ ﺫﮐﺮﻧﺎ ﺍﺳﺘﺤﺒﺎﺏ ﺍﻟﺬﮐﺮ ﻭﺍﻟﺪﻋﺎﺀ ﻟﻺﻣﺎﻡ ﻭﺍﻟﻤﺄﻣﻮﻡ ﻭﺍﻟﻤﻨﻔﺮﺩ ﻭﮨﻮ ﻣﺴﺘﺤﺐ ﻋﻘﺐ ﮐﻞ ﺍﻟﺼﻠﻮﺍﺕ ﺑﻼ ﺧﻼﻑ۔۔۔ ۰ ‏( ﺷﺮﺡ ﺍﻟﻤﮩﺬﺏ ﻟﻠﻨﻮﻭﻱ : ۳/ ۴۶۹ ) ৭। প্রখ্যাত হাদীস সংকলক হযরত মাওলানা জাফর আহমাদ উসমানী (রহঃ) বলেন, “আমাদের দেশে যে সম্মিলিত মুনাজাতের প্রথা চালু আছে যে, ইমাম সাহেব নামাযের পর কেবলামুখী বসে দু‘আ করে থাকেন, এটা কোন বিদ‘আত কাজ নয়। বরং হাদীসে এর প্রমাণ রয়েছে। তবে ইমামের জন্য উত্তম হলো-ডানদিক বা বামদিকে ফিরে মুনাজাত করা।”(ই’লাউস সুনান ৩:১৬৩, ৩:১৯৯ পৃঃ) তিনি আরো বলেন, “হাদীসসমূহ দ্বারা প্রমাণিত হল যে, প্রত্যেক ফরজ নামাযের পর হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা মুস্তাহাব। যেমন- আমাদের দেশে এবং অন্যান্য মুসলিম দেশে প্রচলিত আছে।” (ঐ ৩:১৬৭ পৃঃ, ৩:২০৪) এর পর তিনি নামাযের পর মুনাজাত অস্বীকারকারীদের কঠোর সমালোচনা করেছেন। (৩: ২০৩) ﻗﻠﺖ ﻭﺍﻟﺤﺎﺻﻞ ﺃﻥ ﻣﺎ ﺟﺮﺉ ﺑﮧ ﺍﻟﻌﺮﻑ ﻓﻲ ﺩﯾﺎﺭﻧﺎ ﻣﻦ ﺃﻥ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﯾﺪﻋﻮ ﻓﯽ ﺩﺑﺮ ﺑﻌﺾ ﺍﻟﺼﻠﻮﺍﺵ ﻣﺴﺘﻘﺒﻼ ﻟﻠﻘﺒﻠﮧ ﻟﯿﺲ ﺑﺒﺪ ﻋۃ ﺑﻞ ﻟﮧ ﺃﺻﻞ ﻓﯽ ﺍﻟﺴﻨۃ، ﻭﺇﻥ ﮐﺎﻥ ﺍﻷﻭﻟﯽ ﺃﻥ ﯾﻨﺤﺮﻑ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺑﻌﺪ ﮐﻞ ﺻﻼۃ ﯾﻤﯿﻨﺎ ﺃﻭ ﯾﺴﺎﺭﺍ ۔۔۔۰ ‏( ﺇﻋﻼﺀ ﺍﻟﺴﻨﻦ : ۳/ ۱۹۹ ) তেমনিভাবে ফকীহুন নফ্স হযরত মাওলানা মুফতী রশীদ আহমদ গাংগুহী (রাহঃ)ও মুনাজাত অস্বীকারকারীদের সমালোচনা করেছেন।(আল কাওকাবুদ্দুররী- ২ : ২৯১) ◘ মুহাদ্দিসীনে কিরামের বর্ণিত এ রায়সমূহ দ্বারা বুঝা গেলঃ (ক) সকল নামাযের পর হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা মুস্তাহাব। এ সময় দু‘আ কবুল হওয়ার খুবই সম্ভাবনা। (খ) মুনাজাত ইমাম-মুক্তাদী; মুনফারিদ সকলের জন্যই মুস্তাহাব আমল। (গ) ফরয নামাযের পর ইমাম-মুক্তাদী সকলের ইজতিমায়ী মুনাজাত করা মুস্তাহাব। (ঘ) ফরয নামাযের পর মুস্তাহাব মনে করে দায়িমীভাবে মুনাজাত করলেও কোন ক্ষতি নেই। (ঙ) নামাজের পর মুনাজাত কোন ক্রমেই বিদ‘আত নয়। বহু কাওলী হাদীস দ্বারা এ মুনাজাত ছাবেত আছে। মুস্তাহাব আমল হেতু রাসুল (সাঃ) নিজে যদিও তা মাঝে মধ্যে করেছেন, কিন্তু সকলকে তিনি এর প্রতি মৌখিকভাবে যথেষ্ট উৎসাহ দিয়েছেন। (চ) প্রচলিত মুনাজাতকে বিদ‘আত বলা বা বিরোধিতা করা হঠকারিতার শামিল। প্রচলিত মুনাজাত মুস্তাহাব। সকল মাযহাবেই এ মুনাজাত মুস্তাহাব সাব্যস্ত হয়েছে।” (প্রমাণের জন্য হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদুল মিল্লাত হযরত মাওঃ আশরাফ আলী থানবী (রহঃ)এর প্রসিদ্ধ ফাতওয়া দ্রষ্টব্য পৃঃ ১/৭৯৬) ► মুনাজাতের স্বপক্ষে ফিকহের কিতাবসমূহের দলীলঃ ফিকহের কিতাবসমূহে মুনাজাতের স্বপক্ষে বহু প্রামণ পাওয়া যায়। নিম্নে তার কিয়দাংশ উদ্ধৃত হলঃ ( ۱) ﻗﺎﻝ ﻓﻲ ﺷﺮﻋۃ ﺍﻹﺳﻼﻡ : ﻭﯾﻐﺘﻨﻢ ﺃﻱ ﺍﻟﻤﺼﻠﻲ ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ ﺑﻌﺪ ﺍﻟﻤﮑﺘﻮﺑۃ ‏( ۲ ‏) ﻓﻲ ﻣﻔﺎﺗﯿﺢ ﺍﻟﺠﻨﺎﻥ : ﻗﻮﻟﮧ ﺑﻌﺪ ﺍﻟﻤﮑﺘﻮﺑۃ ﺃﻱ ﻗﺒﻞ ﺍﻟﺴﻨۃ، ﮐﺬﺍ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﻌﺎﯾۃ ‏( ۳ ‏) ﻓﻲ ﻧﻮﺭ ﺍﻹﯾﻀﺎﺡ ﻭﺷﺮﺣﮧ ﺍﻟﻤﺴﻤﯽ ﺑﺈﻣﺪﺍﺩ ﺍﻟﻔﺘﺎﺡ ﺛﻢ ﺑﻌﺪ ﺍﻟﻔﺮﺍﻍ ﻋﻦ ﺍﻟﺼﻼۃ ﯾﺪﻋﻮ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﻟﻨﻔﺴﮧ ﻭﻟﻠﻤﺴﻠﻤﯿﻦ ﺭﺍﻓﻌﻲ ﺃﯾﺪﯾﮩﻢ ﺣﺬﻭ ﺍﻟﺼﺪﻭﺭ ﻭﺑﻄﻮﻧﮩﺎ ﻣﻤﺎ ﯾﻠﯽ ﺍﻟﻮﺟﮧ ﺑﺨﺸﻮﻉ ﻭﺳﮑﻮﻥ ﺛﻢ ﯾﻤﺴﺤﻮﻥ ﺑﮩﺎ ﻭﺟﻮﮨﮩﻢ ﻓﻲ ﺍﺧﺮﮦ ﺍﯼ ﻋﻨﺪ ﺍﻟﻔﺮﺍﻍ ﻣﻦ ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ۰ ﺍﻧﺘﮩﯽ۰ ﮐﺬﺍ ﻓﻲ ﺍﻟﺘﺤﻔۃ ﺍﻟﻤﺮﻏﻮﺑۃ ﻭﺍﻟﺴﻌﺎﯾۃ۰ ‏( ۴ ‏) ﻗﺪ ﺃﺟﻤﻊ ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀ ﻋﻠﯽ ﺍﺳﺘﺤﺒﺎﺏ ﺍﻟﺬﮐﺮ ﻭﺍﻟﺪﻋﺎﺀ ﺑﻌﺪ ﺍﻟﺼﻼۃ ﻭﺟﺎﺋﺖ ﻓﯿﮧ ﺃﺣﺎﺩﯾﺚ ﮐﺜﯿﺮۃ۰ ﺍﻧﺘﮩﯽ ‏( ﺗﮩﺬﯾﺐ ﺍﻷﺫﮐﺎﺭ ﻟﻠﺮﻣﻠﻲ ﮐﺬﺍ ﻓﻲ ﺍﻟﺘﺤﻔۃ ﺍﻟﻤﺮﻏﻮﺑۃ ‏) ‏( ۵ ‏) ۔۔۔ ﺃﻱ ﺍﺫﮐﺮﻭﺍ ﺍﻟﻠﮧ ﺗﻌﺎﻟﯽ ﻭﺍﺩﻋﻮﺍ ﺑﻌﺪ ﺍﻟﻔﺮﺍﻍ ﻣﻦ ﺍﻟﺼﻼۃ۰ ‏( ﻓﺘﺎﻭﻱ ﺻﻮﻓﯿﮧ ﮐﺬﺍ ﻓﻲ ﺍﻟﺘﺤﻔۃ ‏) ‏( ۶ ‏) ﺇﻥ ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ ﺑﻌﺪ ﺍﻟﺼﻼۃ ﺍﻟﻤﮑﺘﻮﺑۃ ﻣﺴﻨﻮﻥ ﻭﮐﺬﺍ ﺭﻓﻊ ﺍﻟﯿﺪﯾﻦ ﻭﻣﺴﺢ ﺍﻟﻮﺟﮧ ﺑﻌﺪ ﺍﻟﻔﺮﺍﻍ۰ ‏( ﻣﻨﮩﺞ ﺍﻟﻌﻤﺎﻝ ﻭﺍﻟﻌﻘﺎﺋﺪ ﺍﻟﺴﻨﯿۃ ﮐﺬﺍ ﻓﻲ ﺍﻟﺘﺤﻔۃ ‏) ﺑﺤﻮﺍﻟﮧ ﮐﻔﺎﯾﺖ ﺍﻟﻤﻔﺘﻲ : ۳ / ১। ফিকহে হানাফীর অন্যতম মুল কিতাব ‘মাবসুত’-এর বর্ণনাঃ ........“যখন তুমি নামায থেকে ফারিগ হবে, তখন আল্লাহর নিকট দু‘আয় মশগুল হয়ে যাবে। কেননা-এ সময় দু‘আ কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশী।” ২। প্রসিদ্ধ ফিকহের কিতাব ‘মিনহাজুল উম্মাল ও আকায়িদুছ ছুন্নিয়্যাহ এর বর্ণনাঃ “ফরজ নামাযের পর দু‘আ করা সুন্নত। অনুরূপভাবে দু‘আর সময় হাত উঠানো এবং পরে হাত চেহারায় মুছে নেয়াও সুন্নত।” ৩। .......‘আততাহজীবুল আজকার’-এর বর্ণনা,“এ কথার উপর উলামাগণের ইজমা হয়েছে যে, নামাযের পর যিকর ও দু‘আ করা মুস্তাহাব।” ৪। ..........‘শির’আতুল ইসলাম’ এর বর্ণনা, “ফরয নামাযের পর মুসল্লীরা দু‘আ করাকে গণীমত মনে করবে।” ৫। .........‘তুহফাতুল মারগুবা’ ও ‘সি’আয়া’-এর বর্ণনাঃ “নামাজ শেষে ইমাম ও মুসল্লীগণ নিজের জন্য এবং মুসলমানদের জন্য হাত উঠিয়ে দু‘আ করবেন। অতঃপর মুনাজাত শেষে হাত চেহারায় মুছবেন।” (তুহ্ফা পৃঃ ১৭) ৬। ........... ‘ফাতাওয়া বাজ্জাজিয়া’-এর বর্ণনাঃ নামায শেষে ইমাম প্রকাশ্যভাবে হাদীসে বর্ণিত দু‘আ পড়বেন এবং মুসল্লীগণও প্রকাশ্য আওয়াজে দু‘আ পড়বেন। এতে কোন অসুবিধা নেই। তবে মুসল্লীদের দু‘আ ইয়াদ হয়ে যাওয়ার পর সকলে বড় আওয়াজে দু‘আ করা বিদ‘আত হবে। তখন মুসল্লীগণ দু‘আ আস্তে পড়বেন। ৭। ‘নূরুলঈযাহ’-এর বর্ণনাঃ “নামাযের পরে জরুরী বা ওয়াজিব মনে না করে হাত উঠিয়ে সম্মিলিতভাবে আল্লাহর নিকট দু‘আ করা মুস্তাহাব।”(নূরুল ঈযাহ পৃঃ ৮২) উল্লেখিত বর্ণনাসমূহ দ্বারা স্পষ্টতঃ প্রমাণিত হলো যে, নামাযের পর দু‘আ করা মুস্তাহাব। আর তা বিভিন্ন হাদীসে দু‘আর আদব হিসাবে হাত উঠাতে উৎসাহিত করার আলোকে হাত উঠিয়ে করা বাঞ্ছনীয়। আরো প্রমাণিত হল যে, মুনাজাত করা ইমাম-মুক্তাদী সবার জন্যই পালনীয় মুস্তাহাব আমল। ► পরিশিষ্ট: এ সকল বর্ণনার দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হল যে, নামাযের পর ইমাম-মুক্তাদী সকলের জন্য ওয়াজিব মনে না করে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা মুস্তাহাব। এ মুনাজাতকে বিদ‘আত বলার কোন যুক্তি নেই। কারণ-বিদ‘আত বলা হয় সেই আমলকে, শরীয়তে যার কোনই অস্তিত্ব নেই। আর মুনাজাত সেই ধরনের মূল্যহীন কোন আমল নয়। তবে যেহেতু মুনাজাত ‘মুস্তাহাব আমল’, তাই এটাকে জরুরী বা ওয়াজিব মনে করা এবং এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করা অনুচিত। মুস্তাহাব নিয়ে বাড়াবাড়ি করা নিষিদ্ধ। অতএব, কেউ মুনাজাতের ব্যাপারে যদি এমন জোর দেয় যে, মুনাজাত তরককারীকে কটাক্ষ বা সমালোচনা করতে থাকে, বা মুনাজাত না করলে তার সাথে ঝগড়া-ফাসাদ করতে থাকে তাহলে তারা যেহেতু মুস্তাহাবকে ফরজে পরিণত করছে সুতরাং সেরূপ পরিবেশে মুনাজাত করা মাকরূহ। মুনাজাত মাকরূহ হওয়ার এই একটি মাত্র দিক আছে। আর এটা শুধু মুনাজাতের বেলায় নয়, বরং সমস্ত মুস্তাহাবেরই এ হুকুম; মুস্তাহাব আমল নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে, ঝগড়া বিবাদ শুরু করলে তা নিষিদ্ধ করে দেয়া হবে। অতএব, মুনাজাতও পালন করতে হবে এবং বিদ‘আত থেকেও বাঁচতে হবে। আর এর জন্য সুষ্ঠু নিয়ম আমাদের খেয়াল মতে এই যে, মসজিদের ইমাম সাহেবান মুনাজাতের আমল জারী রেখে মুনাজাত সম্পর্কে মুসল্লীগণকে ওয়াজ-নসীহতের মাধ্যমে বুঝাবেন এবং ফরয-ওয়াজিব ও সুন্নাত-মুস্তাহাবের দরজা ও মর্তবা (ব্যবধান) বুঝিয়ে দিয়ে বলবেন, সালামের পর ইমামের ইকতিদা শেষ হয়ে যায়। ইমাম ছাহেব মুস্তাহাব আমল হিসাবে মুনাজাত করতে পারেন, কোন জরুরী কাজ থাকলে মুনাজাত নাও করতে পারেন। তেমনিভাবে মুসল্লীগণের জন্য ইমামের সাথে মুনাজাতে শরীক হওয়া উত্তম, যদি কোন মুসল্লীর জরুরী কাজ থাকে তাহলে তিনি সালাম বাদ ইমামের সাথে মুনাজাতে শামিল নাও হতে পারে। বা মুনাজাত করা যেহেতু মুস্তাহাব, সুতরাং যার সুযোগ আছে, সে মুস্তাহাবের উপর আমল করে নিবে। আর যার সুযোগ নেই; তার জন্য মুস্তাহাব তরক করার অবকাশ আছে। এমন কি কেউ যদি ইমামের সাথে মুনাজাত শুরু করে, তাহলে ইমামের সাথে শেষ করা জরুরী নয়। কারণ সালাম ফিরানোর পর ইকতিদা শেষ হয়ে যায়। সুতরাং কেউ চাইলে, ইমামের আগেই তার মুনাজাত শেষ করে দিতে পারে। আবার কেউ চাইলে, ইমামের মুনাজাত শেষ হওয়ার পরও দীর্ঘক্ষণ একা একা মুনাজাত করতে পারে। কিন্তু এ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করা শরী‘আতে নিষেধ। এভাবে বুঝিয়ে দেয়ার পর ইমাম সাহেবান প্রত্যেক ফরয নামাযের পর দায়িমীভাবে মুনাজাত করলেও তাতে কোন ক্ষতি নেই। অনেকের ধারণা মুস্তাহাব আমল দায়েমীভাবে করলে তা বিদ‘আত হয়ে যায়। সুতরাং ‘মুস্তাহাব প্রমাণের জন্য মাঝে মাঝে তরক করতে হবে।’ তাদের এ ধারণা সঠিক নয়। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে যে, হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা (রাঃ) দায়িমীভাবে চাশতের নামায পড়তেন। কখনও পরিত্যাগ করতেন না। উপরস্তু তিনি বলতেন, “চাশতের নামাযের মুহূর্তে আমার পিতা-মাতা জীবিত হয়ে এলেও আমি তাদের খাতিরে এ নামায পরিত্যাগ করব না। (মুয়াত্বা মালেক পৃঃ ১১৬, হাঃ নং ১৯১) অথচ চাশতের নামায মুস্তাহাব পর্যায়ের। হযরত আয়িশা (রাঃ) দায়েমীভাবে পড়ার কারণে কি তা বিদ‘আত বলে গণ্য হয়েছিল? কখনোই নয়। তেমনিভাবে মুস্তাহাব প্রমাণের জন্য মাঝে মধ্যে তরক করার কোন আবশ্যকীয়তা নেই। যেমন-সকল ইমামই টুপি পরে, জামা পরে নামায পড়ান। কেউ একথা বলেন না যে, মাঝে মধ্যে টুপি ছাড়া জামা ছাড়া নামায পড়ানো উচিত-যাতে মুসল্লীগণ বুঝতে পারেন যে টুপি পরা বা জামা পরা ফরজ-ওয়াজিব আমল নয়। তাহলে মুস্তাহাব প্রমাণের জন্য মুনাজাতকে কেন ছাড়া হবে? অতএব মাঝে মধ্যে মুনাজাত তরক করে নয়, বরং ওয়াজ-নসীহতের মাধ্যমেই মুনাজাত মুস্তাহাব হওয়ার ব্যাপারটি বুঝিয়ে দেয়া যুক্তিযুক্ত। এটাই অদ্ভুদ পরিস্থিতির উত্তম সমাধান। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে শরীয়তের সঠিক বিধান বুঝার এবং সুন্নাত মুতাবিক সহীহ আমল করার তাওফীক দান করুন-আমীন। ► মুনাজাতের সুন্নাত তরীকা: ১. মুনাজাতের শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা করা এবং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর দরূদ পাঠ করা।(তিরমিযী হাঃ নং- ৩৪৭৬) ২. উভয় হাত সিনা বরাবর উঠানো।(মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক হাঃ নং - ৩২৩৪) ৩. হাতের তালু আসমানের দিকে প্রশস্ত করে রাখা।(রদ্দুল মুহতার : ১/৪৭৭, তাবারানী কাবীর হাঃ নং - ৩৮৪২) ৪. হাতের আঙ্গুলসমূহ স্বাভাবিক ফাঁক রাখা। (হিসনে হাসীন : ২৭) ৫. দু’হাতের মাঝখানে সামান্য ফাঁক রাখা। (ত্বহ্ত্বাবী টীকাঃ মারাকিল ফালাহ : ২০৫) ৬. মন দিয়ে কাকুতি-মিনতি করে দু‘আ করা। (সূরা আ‘রাফ : ৫৫) ৭. আল্লাহ তাআলার নিকট দু‘আর বিষয়টি বিশ্বাস ও দৃঢ়তার সাথে বারবার চাওয়া। (বুখারী শরীফ হাঃ নং - ৬৩৩৮) ৮. নিঃশব্দে দু‘আ করা মুস্তাহাব। তবে দু‘আ সম্মিলিতভাবে হলে এবং কারো নামাযে বা ইবাদতে বিঘ্ন সৃষ্টির আশংকা না থাকলে সশব্দে দু‘আ করাও জায়িয আছে। (সূরা আরাফ : ২০৫, বুখারী শরীফ হাঃ নং - ২৯৯২) ৯. আল্লাহ তা’আলার প্রশংসা, যেমনঃ ‘সুব্হানা রাব্বিকা রাব্বিল ইয্যাতী’ শেষ পর্যন্ত পড়া; দরূদ শরীফ ও আমীন বলে দু‘আ শেষ করা। (তাবারানী কাবীর হাঃ নং - ৫১২৪, মুসান্নাফে আঃ রাজ্জাক হাঃ নং - ১১৭, আবু দাউদ হাঃ নং- ৯৮৩) ১০. মুনাজাতের পর হস্তদ্বয় দ্বারা মুখমণ্ডল মুছে নেওয়া। (আবু দাউদ হাঃ নং - ১৪৮৫) ► মুনাজাত অস্বীকারকারীগণের কতিপয় অভিযোগ ও তার জাওয়াবঃ (১) অভিযোগ-১ বর্ণিত হাদীসমূহ সম্পর্কে ফরয নামাযের পর মুনাজাত ভিত্তিহীন হওয়ার দাবীদারগণ আপত্তি তুলেন যে, ‘এ হাদীসমূহের কোন একটিতেও ফরয নামাযের পর সম্মিলিত মুনাজাত করার কথা উল্লেখ নেই। কেননা, এগুলোর কোনটিতে শুধু দু‘আর কথা আছে, কিন্তু হাত তোলার কথা নেই। আবার কোনটিতে শুধু হাত তোলার কথা আছে, কিন্তু তা একাকীভাবে, সম্মিলিতভাবে নয়। আবার কোনটিতে সম্মিলিত মুনাজাতের কথা আছে; কিন্তু ফরয নামাযের পরে হওয়ার কথা উল্লেখ নেই। অতএব, এ হাদীসসমূহ দ্বারা প্রচলিত সম্মিলিত মুনাজাত প্রমাণিত হয় না!! জওয়াব - ১ তাদের অভিযোগের ভিত্তিই সহীহ নয়। কারণ শরীয়তে এমন কোন বিধান নেই যে, প্রত্যেকটা ইবাদতের সকল অংশ কোন একটা আয়াত বা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হতে হবে। নতুবা তা অগ্রহণযোগ্য হবে। তাদের এ আপত্তির জবাবে হযরত মাওলানা মুফতী কিফায়াতুল্লাহ (রহঃ) মুফতী আজম হিন্দুস্তান “কিফায়াতুল মুফতী” গ্রন্থে বলেন- “বিষয়গুলো যেমন কোন এক হাদীসে একত্রিতভাবে উল্লেখিত হয়নি, তেমনি কোন হাদীসে তা নিষিদ্ধও হয়নি। কোন জিনিসের উল্লেখ না থাকার দ্বারা তা নিষিদ্ধ হওয়া বুঝায় না। সুতরাং এ কথা বলা যাবে না যে, এ সব হাদীস নামাযের পরের দু‘আর জন্য প্রযোজ্য নয় বরং উল্লেখিত হাদীসমূহের বর্ণনা ভাব এমন ব্যাপকতা সম্পন্ন, যা সম্ভাব্য সকল অবস্থাকেই শামিল করে। তা ছাড়া বিভিন্ন রিওয়ায়াতে এ অবস্থাগুলোর পৃথক পৃথক উল্লেখ রয়েছে-যার সমষ্টিগত সামগ্রিক দৃষ্টিকোণে ফরজ নামাযের পর হস্ত উত্তোলন পূর্বক সম্মিলিত মুনাজাত অনায়াসে ছাবিত হয়। এটা তেমনি, যেমন নামাযের বিস্তারিত নিয়ম, আযানের সুন্নত নিয়ম, উযূর সুন্নাত তরীকা ইত্যাদি একত্রে কোন হাদীসে বর্ণিত নেই। বিভিন্ন হাদীসের সমষ্টিতে তা ছাবিত হয়” তারপরেও তা সকল উলামাদের নিকট গ্রহণযোগ্য।(দেখুনঃ কিফায়াতুল মুফতী, ৩:৩০০ পৃঃ) (২) অভিযোগ-২ নামাযের পর মুনাজাতের স্বপক্ষে হাদীসমূহ কেবল নফল নামাযের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অতএব, এর দ্বারা ফরয নামাযের পর মুনাজাত মুস্তাহাব হওয়া প্রমাণিত হয় না। জওয়াব-২ বর্ণিত হাদীসসমূহের কয়েকটিতে ফরয নামাযের কথা উল্লেখ আছে। আর কয়েকটির মধ্যে “প্রত্যেক নামাযের পর” কথাটির উল্লেখ আছে। যার মধ্যে ফরয ও নফল সবই শামিল। সুতরাং এ প্রশ্নই অবান্তর। তাদের এ প্রশ্নের জওয়াবে হযরত মাওলানা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী (রহঃ) বুখারী শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থে বলেন, “নামাযের পর মুনাজাত করার পক্ষের হাদীসগুলোর ব্যাপারে ফিকাহবিদগণ নফল এবং ফরয উভয় নামাযকেই শামিল করেছেন।” (ফাইযুল বারী, ৪:৪৭ পৃঃ) মাওলানা জাফর আহমদ উসমানী (রহঃ) বলেন, “ফরজ নামাযের পর মুনাজাত নফল নামাযের অপেক্ষা উত্তম।” (ই’লাউস সুনান, ৩:১৬৭ পৃঃ) সুতরাং কিছুক্ষনের জন্য যদি মেনে নেয়া হয় যে, উক্ত হাদীসসমূহে নফল নামাযের পর মুনাজাত করতে বলা হয়েছে তাহলে উক্ত কথার দ্বারা ফরজ নামাযের পর মুনাজাত আরো উত্তমভাবে প্রমাণিত হবে। এ কারণে যে, নফল নামাযের পর দুআ কবূল হওয়ার কোন ঘোষণা করা হয় নাই, আর ফরয নামাযের পর দুআ কবূল হওয়ার ঘোষণা করা হয়েছে। তো যে ক্ষেত্রে কবুল হওয়ার ঘোষণা নেই, সে ক্ষেত্রে যদি দু‘আ ও মুনাজাত করতে হয় তাহলে যেখানে দু‘আ কবুল হওয়ার ঘোষণা আছে সেখানে অবশ্যই দু‘আ করা কর্তব্য। সুতরাং উক্ত অভিযোগ দ্বারা ফরয নামাযের পরে মুনাজাতকে অস্বীকার করা যায় না। (৩) অভিযোগ-৩ মুনাজাত মুস্তাহাব হয়ে থাকলে, প্রচুর হাদীসে এ ব্যাপারে রাসূল (সাঃ) হতে আমল ছাবিত থাকতো। অথচ এ ব্যাপারে একটি আমলী রিওয়ায়াতও ছাবিত নেই। জওয়াব-৩ প্রথমতঃ মুনাজাতের ব্যাপারে ‘রাসূল (সাঃ)-এর আমল সম্পর্কিত একটি রিওয়ায়াতও ছাবিত নেই’-এ কথাটি সম্পূর্ণ গলদ। কারণ এ প্রসঙ্গে অনেকগুলো স্পষ্ট রিওয়ায়াত দ্বারা আমরা রাসূল (সাঃ)-এর আমল অধ্যায়ে রাসূল (সাঃ)-এর মুনাজাত করার হাদীস বর্ণনা করেছি। দ্বিতীয়তঃ মুস্তাহাব আমল প্রমাণের জন্য রাসূল (সাঃ)-এর কওলী বা মৌখিক হাদীস যথেষ্ট, নবী কারীম (সাঃ)-এর আমল এর মাধ্যমে ছাবিত হওয়া মোটেই জরুরী নয়। কারণ-বহু মুস্তাহাব আমল এমন রয়েছে, যা রাসূলে পাক (সাঃ) বিশেষ হিকমতের কারণে বা সুযোগের অভাবে নিজে করতেন না, কিন্তু সে সবের প্রতি মৌখিকভাবে উম্মতদেরকে উৎসাহ দিতেন। যাতে উম্মত তা আমল করে নিতে পারে। যেমন তাহিয়্যাতুল মসজিদ নামায, চাশতের নামায, আযান দেয়া যাকে আফজালুল আ’মাল বলা হয়ে থাকে ইত্যাদি। এগুলো রাসূলে পাক (সাঃ) থেকে আমল করার মাধ্যমে ছাবিত নেই। অথচ তিনি এসব নেক কাজসমূহের প্রতি উম্মতকে মৌখিকভাবে যথেষ্ট উৎসাহিত করে গিয়েছেন। সকল উলামায়ে কেরাম এগুলোকে মুস্তাহাব আমল হিসাবে গ্রহণ করেছেন। তদ্রুপ মুনাজাতের ব্যাপারে রাসূলে করীম (সাঃ) হতে আমলী রিওয়ায়াত স্বল্প বর্ণিত হলেও মৌখিক রিওয়ায়াত প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান। অতএব, মুস্তাহাব প্রমাণ হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। হযরত মাওলানা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী (রহঃ) বলেন, যারা বলে থাকেন যে, মুস্তাহাব প্রমান হওয়ার জন্য রাসূলে পাক (সাঃ)-এর মৌখিক বর্ণনার পাশাপাশি আমলও থাকতে হবে, তারা সঠিক সরল পথ থেকে দূরে সরে পড়েছেন এবং একটি ফাসিদ ও গলদ জিনিসের উপর ভিত্তি করে কথা বলেছেন। (দ্রষ্টব্যঃ ফাইযুল বারী, ২:৪৩১ পৃঃ) (৪) অভিযোগ-৪ মুনাজাতের স্বপক্ষে যে সকল হাদীসের উদ্ধৃতি দেয়া হয়, তার অনেকটাই জ’য়ীফ। অতএব, তা গ্রহণযোগ্য নয়। জওয়াব-৪ এ অধ্যায়ের অনেক সহীহ হাদীসের পাশাপাশি কিছু হাদীস জ’য়ীফ থাকলেও যেহেতু তার সমর্থনে অনেক সহীহ রিওয়ায়াত বিদ্যমান রয়েছে, অতএব, তা নির্ভরযোগ্যই বিবেচিত হবে। দ্বিতীয়তঃ সেই হাদীসসমূহ ফজীলত সম্পর্কে। আর ফজীলতের ব্যাপারে জ’য়ীফ হাদীসও গ্রহণযোগ্য।(দেখুনঃ আল আযকার লিন নববী পৃঃ ৭-৮, তাদরীবুর রাভী লিস সুয়ূতী পৃঃ ১৯৬, কিতাবুল মাউযূআত লি মুল্লা আলী ক্বারী পৃঃ ৭৩) (৫) অভিযোগ-৫ হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তিনি ফরজ নামাযের পর যখন সালাম ফিরাতেন, তখন এত তাড়াতাড়ি উঠে পড়তেন যে, মনে হতো-তিনি যেন উত্তপ্ত পাথরের ওপর উপবিষ্ট ছিলেন।(উমদাতুল কারী, ৬:১৩৯ পৃঃ) এতে বুঝা যায়, হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) সালাম ফিরিয়ে মুনাজাত না করেই দাঁড়িয়ে যেতেন। জওয়াব-৫ হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর উল্লেখিত আমলের এ অর্থ নয় যে, তিনি সালাম ফিরানোর পর মাসনুন দু‘আ-যিকর না করেই দাঁড়িয়ে যেতেন। কেননা-তিনি রাসূলে পাক (সাঃ)-এর বিরুদ্ধাচরণ কখনও করতে পারেন না। রাসূলে পাক (সাঃ) হতে সালাম ফিরানোর পর দু‘আ যিকর এর কথা প্রচুর হাদীসে বর্ণিত আছে। সুতরাং রিওয়ায়াতটির সঠিক মর্ম হল-হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) সালাম ফিরানোর পর সংক্ষিপ্ত দু‘আ-যিকর পাঠের অধিক সময় বসে থাকতেন না। অতএব, উল্লেখিত রিওয়ায়াত দ্বারা হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর মুনাজাত করা ব্যতীত উঠে পড়া প্রমাণিত হয় না।(আল আবওয়াব ওয়াত তারাজিম, ৯৭ পৃঃ) ► তাম্বীহঃ যারা ফরজ নামাযের পরে সর্বাবস্থায় ইজতিমায়ী মুনাজাতের বিরোধী, তারা হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর আমলের ভুল অজুহাত দেখিয়ে সালাম ফিরানোর পর দেরী না করেই সুন্নত ইত্যাদির জন্য উঠে পড়েন। অথচ এর দ্বারা নামাযের পর যে মাসনূন দু‘আ ইত্যাদি রয়েছে, তা তরক করা হয়। দ্বিতীয়তঃ ফরজ ও সুন্নাতের মাঝখানে কিছু সময়ের ব্যবধান করার যে হুকুম হাদীস শরীফে পাওয়া যায়, তাও লংঘন করা হয়। তাদের জন্য নিমোক্ত হাদীসটি বিশেষ ভাবে প্রণিধানযোগ্যঃ হাদীসঃ আবু রিমছা (রাঃ) বর্ণনা করেন, একদা আমি নবী কারীম (সাঃ)-এর সাথে নামায পড়তে ছিলাম। হযরত আবু বকর ও উমর (রাঃ) ঐ নামাযে উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রথম সারিতে নবী কারীম (সাঃ)-এর ডান পার্শ্বে দাঁড়িয়ে থাকতেন। আমাদের সাথে এক ব্যক্তি ছিল, যে উক্ত নামাযে তাকবীরে উলা হতেই উপস্থিত ছিল। (অর্থাৎ সে মাসবুক ছিল না) নবী কারীম (সাঃ) নামায শেষ করে সালাম ফিরালেন এমনভাবে যে, উভয় দিকে আমরা তাঁর গন্ডদ্বয় দেখতে পেলাম। অতঃপর নবী কারীম (সাঃ) ঘুরে বসলেন। তখন ঐ তাকবীরে উলায় উপস্থিত ব্যক্তি দাঁড়িয়ে পড়ল সুন্নাত নামায পড়ার জন্য। তৎক্ষণাৎ হযরত উমর (রাঃ) লাফিয়ে উঠলেন এবং ঐ ব্যক্তির উভয় কাঁধ ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে বললেন-“বসে পড়! পূর্ববর্তী কিতাবধারীদের (ধর্মীয়) পতন হয়েছে, যখন তারা (ফরজ ও সুন্নাত) নামাযের মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি করত না।” নবী কারীম (সাঃ) হযরত উমর (রাঃ)-এর এ কাজ দেখে দৃষ্টি উঠালেন এবং বললেন, “হে খাত্তাবের পুত্র! আল্লাহ তোমাকে সঠিক পন্থী বানিয়েছেন।”(আবু দাউদ শরীফ হাঃ নং ১০০৫) ► তথ্যসূত্র ◘ তাফসীরগ্রন্থ ১. তাফসীরে দুররে মানছূর ২. তাফসীরে ইবনে আব্বাস ৩. তাফসীরে মাযহারী ◘ হাদীসগ্রন্থ ১. বুখারী শরীফ ২. নাসায়ী শরীফ ৩. আবু দাউদ শরীফ ৪. তিরমিযী শরীফ ৫. ইবনে মাজাহ শরীফ ৬. তারীখে কাবীর ৭. ই‘লাউস সুনান ৮. মুস্তাদরাকে হাকেম ৯. তালখীসে যাহাবী ১০. তাবারানী কাবীর ১১. তাবারানী আওসাত ১২. কানযুল উম্মাল ১৩. ইবনুস সুন্নী ◘ হাদীসের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ১. ফাতহুল বারী ২. উমদাতুল কারী ৩. আল কাওকাবুদ্দুররী ৪. ফয়যুল বারী ৫. মা‘আরেফুস সুনান ৬. আল আবওয়াব ওয়াত তারাজিম ৭. ফাতহুল মুলহিম ৮. শরহে মুহায্যাব লিন্নাববী ৯. তাদরীবুর রাবী ১০. কিতাবুল মাওযূ‘আত (মুল্লা আলী কারী) ◘ ফাতাওয়া ও ফিক্হগ্রন্থ ১. মাবসূত ২. ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৩. ফাতাওয়া শামী ৪. ইমদাদুল ফাতাওয়া ৫. নূরুল ঈযাহ ৬. কিফায়াতুল মুফতী

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

ফরয ছালাত শেষে সালাম ফিরানোর পরে ইমাম ও মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে হাত উঠিয়ে ইমামের সরবে দো‘আ পাঠ ও মুক্তাদীদের সশব্দে ‘আমীন’ ‘আমীন’ বলার প্রচলিত প্রথাটি দ্বীনের মধ্যে একটি নতুন সৃষ্টি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম হ’তে এর পক্ষে ছহীহ বা যঈফ সনদে কোন দলীল নেই। বলা আবশ্যক যে, আজও মক্কা-মদীনার দুই হারাম-এর মসজিদে উক্ত প্রথার কোন অস্তিত্ব নেই।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ