ইমাম আবু হানিফা ৭০ বছর বেচছে ছিলেন । তিনি একাধারে ৪০ বছর ইশার ওযুতে ফজরের নামাজ আদায় করেন এবং একাধারে ৩০ বছর রোযা রাখেন । এটা কি ভাবে সম্ভব তিনি বিয়ে করেন নি? তার সন্তান নেই ? নবী সঃ কি এ ইবাদাত করেছেন?
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

ইমাম আবু হানীফা (রহ.) এর সংক্ষপ্তি জীবনী বয়স ও বংশ পরিচয় তার পূর্ণ নাম হল- আবু হানীফা আন নু’মান ইবনি সাবিত যাওতী। প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী তিনি ৮০ হিজরীতে কূফা শহরে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৫০ হিজরীতে বাগদাদ শহরে মৃত্যুবরণ করেন। শিক্ষা- দীক্ষা প্রথমত- তিনি ‘কূফা’ শহরেই ‘ইলমে ক্বালাম’ শিক্ষা করেন। অতঃপর কূফার শীর্ষস্থানীয় ফিকাহ শাস্ত্রবিদ ‘হাম্মাদ (রহ.)’ এর নিকট জ্ঞান আহরণ করতে থাকেন। অতঃপর ১২০ হিজরীতে স্বীয় উ¯তাদ ‘হযরত হাম্মাদ (রহ.)’ এর স্থলাভিষিক্ত হন এবং কুফার ‘মাদ্রাসাতুর রায়’ এর কর্তৃত্ব গ্রহণ করেন। সেই সাথে ‘ইরাক’ এর অনন্য ইমাম বলে বিবেচিত হন এবং অসাধারণ খ্যাতি লাভ করেন এবং ‘বসরাহ’, ‘মক্কা’, ‘মাদীনা’ ও ‘বাগদাদ’ এর তদানীšতন সকল প্রসিদ্ধ ও শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে কিরামের সাথে সাক্ষাৎ ও মতবিনিময় করেন এবং একে অপর থেকে উপকৃত হতে থাকেন। এভাবেই ক্রমশ তার সুখ্যাতি বৃদ্ধি পেতে থাকে। মাসআলা ই¯িতম্বাতে ইমাম সাহেবের তীক্ষèতা ইমাম সাহেব যেমন তীক্ষè বুদ্ধির অধিকারী ও ধী- শক্তি সম্পন্ন ছিলেন তেমনি ছিলেন গভীর জ্ঞানের অধিকারী। নিম্নোক্ত কয়েকটি ঘটনা দ্বারা তা অনুমান করা সম্ভব হবে: ‘একদিন ইমাম আবু হানীফা (রহ.) কিরাত ও হাদীস বর্ননায় প্রসিদ্ধ তাবিই হযরত আমাশ (রহ.) এর নিকট উপস্থিত ছিলেন। এমন সময় কোন একটি মাসআলা সম্পর্কে ইমাম সাহেবের মতামত জিজ্ঞেস করা হল। জবাবে তিনি তার মতাতমত জানালেন। হযরত আমাশ (রহ.) জিজ্ঞেস করলেন- এ দলীল তুমি কোথায় পেয়েছ? জবাবে ইমাম সাহেব বললেন যে আপনিই তো আমাদেরকে হাদীস শুনিয়েছেন, আবু সালেহ ও আবু হুরইরাহ সূত্রে আর ওয়ায়েল ও আব্দুল্লাহ ইবনি মাসঊদ (রদ্বি.) এর সূত্রে, আবী ইয়াস ও আবী মাসঊদ আল আনসারীর সূত্রে যে- রাসূলুল্লা¬হ সাল্লাল্লা¬হু আলাইহি ওয়া সাল¬াম বলেছেন- ﻣﻦ ﺩﻝّ ﻋﻠﻰ ﺧﻴﺮ ﻛﺎﻥ ﻟﻪ ﻣﺜﻞ ﺍﺟﺮ ﻋﻤﻠﻪ . ‘যে ব্যক্তি কোন নেক কাজে অন্যকে পথ দেখাবে (উদ্বুদ্ধ করবে) সে ব্যক্তি উক্ত নেক কাজটি করার সমতুল্য সাওয়াবের অধিকারী হবে’। আপনি আরো বর্ননা করেছেন আবী সালেহ ও আবী হুরইরা সূত্রে যে- একবার জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লা¬হ সাল্লাল্লা¬হু আলাইহি ওয়া সাল¬াম কেজিজ্ঞাসা করলেন আমি আমার ঘরে নামায আদায় করছিলাম এমন সময় কোন এক ব্যক্তি আমার ঘরে প্রবেশ করে, ফলে আমার অšতরে ‘উযব’ (আতœতুষ্টি) সৃষ্টি হয়। রাসূলুল্লা¬হ সাল¬াল¬হু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- ﻟﻚ ﺍﺟﺮﺍﻥ ﺍﺧﺮ ﺍﻟﺴّﺮﻭ ﺍﺧﺮ ﺍﻟﻌﻼﻧﻴﺔ . ‘তুমি দু’টি সাওয়াব পাবে, অপ্রকাশ্যে আমাল করার এবং প্রকাশ্যে আমাল করার’। এভাবে ইমাম সাহেব তারই বর্ননাকৃত আরও চারটি হাদীস শুনালেন। ইমাম আমাশ বললেন- যথেষ্ট হয়েছে, আর শুনাতে হবে না। আমি তোমাকে একশত দিনে যা শুনিয়েছি তুমি এক ঘন্টায় তা শুনিয়ে দিলে। আমার ধারনাও ছিল না যে তুমি এ হাদীসগুলোর উপর আমাল করে থাক। সত্যিই তোমরা ফকীহরা হলে ডাক্তারতুল্য, আর আমরা হলাম ঔষধের দোকানদার। আর তুমি তো উভয় দিকই হাসীল করেছ ( ﺍﻟﺠﻮﺍﻫﺮ ﺍﻟﻤﻀﻴﺔ , খ- ২, পৃ- ৪৮৪)। ‘ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনি মুবারক বলেন- একদিন আমি সিরিয়াতে হযরত আওযায়ী’র নিকট এলাম। তিনি আমাকে ইমাম আবু হানীফা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন যে- কুফা শহরে যে একজন বিদআতীর আবির্ভাব ঘটেছে, কে সে? আমি (তখনকার মত কোন জবাব না দিয়ে) ঘরে ফিরে এসে ইমাম সাহেবের কিতাবগুলো ঘেটে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা বের করলাম এবং তিনদিন পর কিতাবটি হাতে নিয়ে তার নিকট উপস্থিত হলাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন এটা কী কিতাব? আমি কিতাবটি তার হাতে দিলাম। তিনি কিতাবটি হাতে নিতেই এমন একটি মাসআলার প্রতি তার দৃষ্টি পড়ল যাতে আমি ﻗﺎﻝ ﺍﻧّﻌﻤﺎﻥ শব্দটি চিহ্নিত করে রেখেছিলাম। দাঁড়িয়ে থেকেই তিনি আযানের পর থেকে নামাযের ইক্বমাত পর্যšত কিতাবটির সিংহভাগ পড়ে ফেললেন। অতঃপর কিতাবটি বন্ধ করে তিনি নামায পড়ালেন। সেই মাসযিদের তিনি ইমাম ও মুআজ্জীন ছিলেন। নামাযের পর আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন ‘নু’মান ইবনি সাবিত’ লোকটি কে? আমি বললাম তিনি একজন শাইখ। ইরাকে তার সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়েছিল। তিনি বললেন- এ লোকটি শীর্ষস্থানীয় শাইখ। তার নিকট গিয়ে আরও অধিক পরিমাণ জ্ঞান আহরণ কর। আমি বললাম ইনিই তো সেই ব্যক্তি যার নিকট যেতে আপনি বারণ করেছিলেন’ (তারীখে বাগদাদ, খ- ১৩, পৃ- ৩৩৮)। ‘অতঃপর যখন মক্কা শরীফে ইমাম আবু হানীফা’র সাথে তার সাক্ষাৎ ঘটে তখন তিনি ইমাম সাহেবের সাথে সেসব মাসআলার ব্যাপারে আলোচনা করলেন। ইবনুল মুবারক তার কাছ থেকে যতটুকু লিখেছিলেন তিনি তার চেয়ে আরও বিশদ ব্যাখ্যা দিলেন। সেই মাজলীশ থেকে ফিরে ইমাম আওযায়ী, ইবনুল মুবারককে বললেন লোকটির অসাধারণ ইলম এবং জ্ঞানের গভীরতা দেখে আমার ইর্ষা হচ্ছে। আর আমি আল্লাহপাক এর দরবারে ই¯তগফার করছি। কেননা আমি প্রকাশ্য ভুলের মধ্যে ছিলাম। তুমি তার সান্নিধ্য গ্রহণ কর। তার সম্পর্কে ইতপূর্বে যে মšতব্য আমার কাছে পোৗছেছিল তিনি তার চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন মানুষ (আওযাযুল মাসালিক, খ- ১, পৃ- ৮৮- ৮৯)’। ‘ইমাম আবু হানীফা (রহ.) ও তার শাগরিদদেরকে যারা পেয়েছিলেন তাদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় হাফিজে হাদীস ফাযল ইবনি মূষা আস সিনানীকে জিজ্ঞাসা করা হল- ইমাম আবু হানীফা সম্পর্কে যারা অপবাদ গেয়ে বেড়ায় তাদের সম্পর্কে আপনার কী ধারণা? তিনি বললেন- আসল ব্যাপার হল ইামাম আবু হানীফা (রহ.) তাদের সামনে এমন তত্ত্ব ও তথ্য পেশ করেছেন যার সবটা তারা বুঝতে সক্ষম হয়নি। আর তিনি তাদের জন্য কিছুই অবশিষ্ট রাখেননি। ফলে তারা ইমাম সাহেবের সাথে হিংসা আরম্ভ করেছেন’। ‘একদিন ‘দারুল হানাতীন’ এ ইমাম আবু হানীফা ও ইমাম আওযায়ী (রহ.) একত্রিত হয়ে ইলমী আলোচনা করতে থাকলেন। ইমাম আওযায়ী জিজ্ঞসা করলেন- আপনারা রুকুর সময় এবং রুকু থেকে উঠার সময় হাত উঠান না কেন? ইমাম সাহেব বললেন- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে কোন প্রমান পাওয়া যায়নি বলে। ইমাম আওযায়ী বললেন- কেন, আমাদেরকে ইমাম যুহরী, সালীম থেকে হাদীস শুনিয়েছেন, তিনি তার পিতা থেকে বর্ননা করেছেন যে- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামায আরম্ভ করতে, রুকুতে যেতে, রুকু থেকে উঠতে হাত উঠাতেন। ইমাম আবু হানীফা (রহ.) বললেন- আমাকে হাম্মাদ ইব্রহীম থেকে, তিনি আলকামা ও আসওয়াদ থেকে, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনি মাসঊদ থেকে বর্ননা করেছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধু নামায আরম্ভ করার সময় ব্যতীত আর কোন সময় হাত উঠাতেন না। ইমাম আওযায়ী বললেন- আমি তোমাকে যুহরী, সালীম ও ইবনি উমার (রদ্বি.) এর বরাতে হাদীস শুনাচ্ছি আর তুমি শুনাচ্ছ হাম্মাদ আর ইব্রহীম থেকে। জবাবে ইমাম আবু হানীফা বললেন- আমার বর্নিত হাদীসের সনদে হাম্মাদ তোমার সনদের যুহরীর তুলনায় অধিক ফকীহ ছিলেন আর ইবনি উমার যদিও সাহাবী কিন্তু আলকামা তার চেয়ে কম জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন না। আর আসওয়াদের অনেক ফাযীলাত রয়েছে। অতঃপর ইমাম আওযায়ী নিশ্চুপ হয়ে গেলেন (পূর্বেই আমরা বলে এসেছি যে ইমাম আবু হানীফা হাদীস গ্রহণের ক্ষেত্রে বর্ননাকারীর ফকীহ হওয়ার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। এর কারনও আমরা বিশদ আলোচনা করে এসেছি)’। হাদীস শাস্ত্রে ইমাম আবু হানীফার অসাধারণ ব্যুৎপত্তি ইমাম আবু হানীফা (রহ.) ফিকাহ শাস্ত্রে এবং মাসআলা ই¯িতম্বাতের ক্ষেত্রে অকল্পনীয় জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন, অনুরুপ হাদীস শাস্ত্রেও তিনি ছিলেন অনন্য শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী। যেমন একটু পূর্বেই আমরা ইমাম আমাশের মšতব্য শুনে এলাম যে- ‘তুমি উভয় দিকই হাসীল করেছ’। বস্তুত কোন ব্যক্তি কুরআন ও হাদীসের গভীর জ্ঞান অর্জন করা ব্যতীত ফিকাহ’র ইমাম হতে পারে না। কেননা ফিকাহ শাস্ত্র কুরআন- হাদীস থেকেই উৎসারিত। সুতরাং ইমাম আবু হানীফার মত ফিকাহ শাস্ত্রে অসাধারণ জ্ঞানের অধিকারী সর্বজন স্বীকৃত ব্যক্তির সম্পর্কে এ কথা ধারনা করা সঙ্গত নয় যে- তিনি হাদীস শাস্ত্রে দূর্বল ছিলেন, বরং অসংখ্য প্রমান রয়েছে যে তিনি হাদীস শাস্ত্রেও অতুলনীয় জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। তিনি চার হাজার শাইখ থেকে হাদীস সংগ্রহ করেছেন বলে বিভিন্ন লেখক মšতব্য করেছেন (আস সুন্নাহ, পৃ- ৪১৩, উকূদুল জামান, পৃ- ৬৩, খইরতুল হিসান, পৃ- ২৩। ইমাম মুহাম্মাদ ইবনি ইউসূফ আস সালেহী ‘উকূদুল জামান গ্রন্থে দীর্ঘ ২৪ পৃষ্ঠায় ইমাম সাহেবের মাশায়েখদের একটা ফিরি¯ত পেশ করেছেন, উকূদুল জামান, পৃ- ৬৩- ৮৭)। ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.) বর্ননা করেন- ‘হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম আবু হানীফার চেয়ে অধিক জ্ঞানী আমার দৃষ্টিতে পড়েনি। সহীহ হাদীস সম্পর্কে তিনি আমার চেয়ে অধিক দুরদর্শী ছিলেন’। ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.) আরও বলেন- ‘ইমাম আবু হানীফা (রহ.) যখন দৃঢ়তার সাথে কোন মšতব্য পেশ করতেন তখন তার এ মšতব্যের সপক্ষে হাদীস বা আসার সংগ্রহ করার জন্য কুফা শহরের সকল মাশায়েখদের কাছে যেতাম, অনেক সময় এর সপক্ষে দু’ তিনটি হাদীস পেয়ে যেতাম। অতঃপর সেগুলো ইমাম সাহেবের কাছে পেশ করলে তিনি এর মধ্যে অনেকগুলো সম্পর্কে এ- ও বলতেন যে এই হাদীসটি সহীহ নয় অথবা অপরিচিত (সূত্রে বর্নিত)। আমি তাকে বলতাম তবে এ সম্পর্কে আপনার কী জানা রয়েছে, অথচ এ হাদীসটি তো আপনার বক্তব্যের অনুকূল। জবাবে তিনি বলতেন- আমি কুফাবাসীদের ইলম সম্পর্কে ভালভাবেই জানি’। এ ঘটনা থেকে অনুমান করা যায় যে ইমাম সাহেব হাদীস শাস্ত্রে কী পরিমাণ জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। ইমাম আবু ইউসুফ সারা শহর ঘুরে যা সংগ্রহ করতেন তার চেয়ে বেশি তার কাছে আগে থেকেই রয়েছে। ইমাম আবু হানীফা (রহ.) কুফা শহরের উলামাদের সংগৃহীত সকল ইলম সংগ্রহ করেছিলেন। যেমন- ইমাম বুখারী (রহ.) এর জনৈক উ¯তাদ ইয়াহইয়া ইবনি আদাম তার সহীহ গ্রন্থে বলেন- ‘ইমাম আবু হানীফা (রহ.) নিজ শহরের সকল হাদীস সংগ্রহ করেছেন এবং তার মধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শেষ জীবনের হাদীসগুলোর প্রতি তার লক্ষ্য ছিল (অর্থাৎ বিভিন্নমুখী হাদীসগুলোর মধ্যে সর্বশেষ হাদীস কোনটি ছিল)। যার দ্বারা অন্যান্যগুলো রহিত সাব্য¯ত করা সহজ হয়। বিখ্যাত ফিকাহ শাস্ত্রবিদ এবং আবীদ হাসান ইবনি সালিহ বলেন- ‘ইমাম আবু হানীফা (রহ.) হাদীসের নাসিখ- মানসূখ নির্নয়ের ব্যাপারে খুব সতর্ক ছিলেন। কাজেই তিসি কোন হাদীসের উপর তখনই আমাল করতেন যখন সে হাদীসটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সেই সাথে সাহাবায়ে কিরাম থেকেও প্রমানিত হত (কেননা পূর্বেই বলে এসেছি যে সাহাবাদের আমাল দ্বারাই প্রমানিত হয় যে হুযুরের সর্বশেষ আমাল কোনটি ছিল এবং কোনটি মানসূখ হয়ে গিয়েছে)। আর তিনি কুফাবাসী (উলামায়ে কিরামের) হাদীস ও ফিকাহ সম্পর্কে সম্যক অবগত ছিলেন। তার নিজ শহরের (উলামাদের) আমাল কঠোরভাবে অনুসরন করতেন’। ইবনি সালিহ আরও বলেন- ‘ইমাম আবু হানীফা (রহ.) নিজেই বলতেন- কুরআনের মধ্যে কিছু বিষয় রয়েছে যা নাসিখ (অন্য বিষয়কে রহিতকারী), আর কিছু বিষয় রয়েছে মানসূখ। অনুরূপ হাদীসের মধ্যে কিছু নাসিখ ও কিছু মানসূখ রয়েছে। আর ইমাম আবু হানীফা (রহ.) তার শহরে যেসব হাদীস পৌছেছে তার মধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর তিরোধানের সময়কার সর্বশেষ আমাল কী ছিল সেসব তার মুখস্থ ছিল’। মোটকথা ইমাম আবু হানীফা (রহ.) কুফা শহরের উলামাদের হাসিলকৃত সকল ইলম সংগ্রহ করেছিলেন। এখানেই তিনি ক্ষন্ত হননি বরং তিনি কুফা শহর থেকে সফর করে দীর্ঘ ছয়টি বছর মক্কা- মাদীনা অবস্থান করে সেখানকার সকল শাইখদের নিকট থেকে ইলম হাসিল করেন। আর মক্কা- মাদীনা যেহেতু স্থানীয়, বহিরাগত সকল উলামা, মাশায়েখ, মুহাদ্দিস ও ফকীহদের কেন্দ্রস্থল ছিল, কাজেই এক কথায় বলা চলে যে- মক্কা- মাদীনা ছিল ইলমের মারকায। আর তার মত অসাধারণ ধী- শক্তি সম্পন্ন, কর্মঠ ও মুজতাহিদ ইমামের জন্য দীর্ঘ ছয় বছর যাবত মক্কা- মাদীনার ইলম হাসিল করা নিংসন্দেহে সাধারণ ব্যাপার নয়। এছাড়া তিনি ৫৫ বার পবিত্র হাজ্জব্রত পালন করেছেন বলে প্রমান পাওয়া যায় (উকূদুল জামান, পৃ- ২২০)। প্রত্যেক সফরেই তিনি মক্কা- মাদীনার স্থানীয় ও বহিরাগত উলামা, মাশায়েখ ও মুহাদ্দিসিনের সাথে সাক্ষাৎ করতেন। আল্লামা আলী আল কারী, মুহাম্মাদ ইবনি সামায়াহ’র বরাত দিয়ে বলেছেন- ‘আবু হানীফা (রহ.) তার রচিত গ্রন্থগুলোতে সত্তর হাজারের উর্দ্ধে হাদীস বর্ননা করেছেন। আরﺍﻻﺛﺎﺭ গ্রন্থটি চল্লিাশ হাজার হাদীস থেকে বাছাই করে লিখেছেন’ (আল জাওয়াহিরুল মযিয়াহ, খ- ২, পৃ- ৪৭৩)। ইয়াহইয়া ইবনি নাসর বলেন- ‘একদিন আমি ইমাম আবু হানীফার ঘরে প্রবেশ করি যা কিতাবে ভরপুর ছিল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম এগুলো কী? তিনি বললেন- এগুলো সব হাদীসের কিতাব, এর মধ্যে সামান্য কিছুই আমি বর্ননা করেছি যেগুলো ফলপ্রদ’ (আস সুন্নাহ, পৃ- ৪১৩, উকূদু জাওয়াহিরিল মুনীফাহ, ১, ৩১)। ইমাম আবু হানীফা (রহ.) এর যদিও অন্যান্য মুহাদ্দীসদের মত হাদীস শিক্ষা দেয়ার জন্য কোন মাজলীস ছিল না এবং হাদীস শাস্ত্রে কোন কিতাব সংকলণ করেননি, যেমন ইমাম মালিক (রহ.) করেছেন (মুআত্তা মালিক)। কিন্তু তার শাগরিদগণ তার বর্নিত হাদীসগুলো সংগ্রহ করে বিভিন্ন কিতাব ও মুসনাদ সংকলন করেছেন যার সংখ্যা দশের উর্দ্ধে। তার মধ্যে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ গ্রন্থগুলো হল- ইমাম আবু ইউসুফ রচিত ‘কিতাবুল আসার’, ইমাম মুহাম্মাদ রচিত ‘কিতাবুল আসার আল মারফুআহ’ ও ‘আল আসারুল মারফুআহ ওয়াল মাওকুফাহ’, মুসনাদুল হাসান ইবনি যিয়াদ আল লু- লুঈ, মুসনাদে হাম্মাদ ইবনি আবু হানীফা ইত্যাদি। অনুরূপ আল ওয়াহাবী, আল হারেসী আল বুখারী, ইবনুল মুযাফফার, মুহাম্মাদ ইবনি জাফর আল আদল, আবু নাঈম আল ইস্পাহানী, কাযী আবু বাকর মুহাম্মাদ ইবনি আব্দুল বাকী আল আনসারী, ইবনি আবীল আউআম আস সাদী ও ইবনি খসরু আল বালাখী- ও ইমাম সাহেবের হাদীস সংগ্রহে বিভিন্ন মুসনাদ রচনা করেছেন। অতঃপর প্রধান বিচারপতি আবুল মুআইয়্যেদ মুহাম্মাদ ইবনি মাহমূদ আল খাওয়ারিযিমী (মৃত্যু- ৬৬৫ হিজরী) উপরোক্ত মুসনাদগুলোর অধিকাংশকে একত্রিত করে জামীউল মাসনীদ নামে ফিকাহশাস্ত্রের অধ্যায়ের ধারাবাহিকতায় ﻣﻊ ﺣﺬﻑ ﻣﻌﺎﺩ ﻭ ﻋﻠﻢ ﺗﻜﺮﺍﺭ ﺍﻻﺳﻨﺎﺩ , মহা ‘মুসনাদ গ্রন্থ’ রচনা করেছেন। তার ভুমিকাতে তিনি বলেন- ‘আমি সিরিয়ার অনেকের মুখেই শুনেছি যারা ইমাম আবু হানীফার ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে অজ্ঞ। তারা মুসনাদে শাফিই, মুআত্তা মালিক এর সাথে তুলনা করে ইমাম আবু হানীফা সম্পর্কে মšতব্য করে বলে তিনি হাদীস সম্পর্কে সল্প জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন এবং তাদের ধারনা যে ইমাম আবু হানীফা কোন মুসনাদ নেই এবং তিনি সামান্য কিছু ছাড়া হাদীস রিওয়ায়েত করেননি। কাজেই আমি দ্বীনের মর্যাদাবোধের লক্ষে ১৫ টি মুসনাদকে একত্রিত করার প্রয়াস পেলাম যা ইমাম আবু হানীফার নিকট হতে হাদীস শাস্ত্রের শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে কিরাম সংকলন করেছেন’। তার এ কিতাবটি আটশত পৃষ্ঠায় মুদ্রীত হয়েছে। এছাড়াও অসংখ্য প্রমান ও ঘটনা রয়েছে যা ইমাম সাহেবের অসাধারণ জ্ঞানের এবং হাদীস ও ফিকাহ শাস্ত্রে তদানিšতন অনন্য মর্যাদার সাক্ষ্য বহন করে। ইমাম সাহেবের জীবনী লেখা যেহেতু আমার উদ্দেশ্য নয় বরং দৃষ্টšতস্বরূপ কয়েকটি ঘটনা লিখলাম। তার সম্পর্কে বিশদভাবে জানতে আগ্রহী হলে মাওলানা জাফর আহমাদ উসমানী থানভী (রহ.) রচিত ‘ইনযাউল ওয়াতান আনিল ওয়াদাই বি ইমামিয যামান’, আল্লামা সালিহী আল শাফিই (রহ.) রচিত ‘উকূদুল যামান’, আল মুওয়াফফিক আল মাক্কী রচিত ‘মানাকিবু আবী হানীফাহ’, মুহাম্মাদ যাহিদ আল কাউসারী রচিত ‘নাইবুল খতীব’, আলী আল কারী রচিত মানাকিবুল ইমাম আবু হানীফাহ দেখা যেতে পারে। বাংলা ভাষায়ও তার জীবনী সম্পর্কে বিভিন্ন বই রয়েছে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ