শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা সুদকে হারাম করেছেন আর ব্যবসা কে হালাল করেছেন।ব্যাংকে টাকা লেনদেন করা বা চাকরি করা এইসব কাজগুলো সুদের সাথে সমপৃক্ত তাই ব্যাংকে চাকরি করা বা লেনদেন করা হারাম।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

সুদকে আল্লাহ এ কারণেই হারাম করেছেন যে, এর মাধ্যমে অভাবীদের অভাবকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগানো হয়, একজন গরিব লোকের ওপর অধিকহারে ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়। এছাড়াও সমাজে সুদের প্রচলনের কারণে পারস্পরিক সুসম্পর্ক নষ্ট হয়, বিশৃংখলা, মারামারি, কাটাকাটি, হানাহানি, খুন-খারাবি ব্যাপকহারে সংঘটিত হয়। সুদের প্রচলনের কারণে মানুষ কাজ-কর্ম, ব্যবসা- বাণিজ্য ছেড়ে দেয়। তারা সুদের আয়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে ফলে তারা জমিনে ফসল ফলানোর জন্য কোনো পরিশ্রমকরে না। এসব ছাড়াও সুদের রয়েছে আরো অনেক ক্ষতিকারিতা। আল্লাহ পাক এরশাদ করেন: “যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতে দন্ডায়মান হবে, যেভাবে দন্ডায়মান হয় ঐ ব্যক্তি, যাকে শয়তান আসরকরে মোহবিষ্ট করে দেয়। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা বলেছে: ক্রয়-বিক্রয় তো সুদ নেয়ার মতই। অথচ আল্লাহ তা’আলা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন। অত:পর যার কাছে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে, পূর্বে যা হয়ে গেছে, তা তার। তার ব্যাপর আল্লাহর উপর নির্ভশীল। আর যারা পুনরায় সুদ নেয়, তারাই দোযথে যাবে। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। আল্লাহপাক সুদকে নিশ্চহ্ন করেন এবয দান খায়রাতকেবর্ধিত করেন। আল্লাজ পছন্দ করেন না কোন অবিশ্বাসী পাপীকে।” (সূরা বাকারাহ: ২৭৫-২৭৬) যারা সুদ খেয়েছে তাদের তাওবা করে তা থেকে বিরত থাকতে আল্লাহপাক নির্দেশ দিয়েছেন। এরশাদ হয়েছে: “হে ইমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যে সমস্ত আছে, তা পরিত্যাগ কর, যদি তোমরা ইমানদার হয়ে থাক। অত:পর যদি তোমরা পরিত্যাগ না কর, তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়ে যাও। কিন্তু যদি তোমরা তাওবা কর, তবে তোমরা নিজের মূলধন পেয়ে যাবে। তোমরা কারও প্রতি অত্যাচার করো না এবং কেউ তোমাদের প্রতি অত্যাচার করবে না।” (সূরা বাকারাহ: ২৭৮-২৭৯) সুদী ব্যাংকে চাকরী হারাম। যারা সুদ খায় তাদের যায়গা জাহান্নাম। তাছাড়া রাসূল (স:) সুদের সম্পৃক্ত চার প্রকারের লোককে অভিসম্পাত করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবেনে মাসউদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: ﻟَﻌَﻦَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ- ﺁﻛِﻞَ ﺍﻟﺮِّﺑَﺎ ﻭَﻣُﻮﻛِﻠَﻪُ ﻭَﺷَﺎﻫِﺪَﻩُ ﻭَﻛَﺎﺗِﺒَﻪُ . “রাসূল (স:) সুদগ্রহীতাকে, সুদদাতাকে, সাক্ষীদাতাকে এবং লেখকে অভিসম্পাত করেছেন” (হাদীসসহীহ/ আহমদ, তিরমিযী ও ইবনে মাযাহ) উপরোক্ত হাদিস মতে সুদী ব্যাংকে চাকরী করা হারাম। সুদবিহীন ব্যাংকের ক্ষেত্রে মডেল হিসেবে ‘ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশে লিমিটেড’ কে বিবেচনায় আনা যায়। কারণ বাংলাদেশে এটিই প্রথম ইসলামী ব্যাংক এবং এই ব্যাংকের কার্যক্রম বাংলাদেশের সর্বত্র বিদ্যমান এবং একইসাথে অন্যান্য ইসলামী ব্যাংকের তুলনায় এই ব্যাংকের কার্যক্রম অধিকতর শরীয়াহ ভিত্তিক বলে বিজ্ঞ জনের মত রয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশে কিছু সুদী ব্যাংক আছে, যারা তাদের কিছু শাখায় ইসলামী ব্যাংকিং চালু করেছে, কিন্তু অনেকেরই কাছে এ ধরনের ব্যাংকিং নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ তারা হালালকে হারামের সাথে মিশিয়ে ফেলেছে

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

সকল ব্যাংকের ক্ষেত্রে একটি মূলনীতি জেনে রাখুন- ব্যাংকে চাকরি করা হারাম হওয়ার মূলত কারণ দু’টি। যথা- ১-হারাম কাজে সহায়তা করা হয়। ২-হারাম মাল থেকে বেতন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকা। হারাম কাজের সহায়তার বিভিন্ন স্তর আছে। শরীয়তে সর্ব ধরণের সহায়তা হারাম নয়। বরং সেসব সহায়তা হারাম যাতে সরাসরি হারাম কাজে জড়িত হওয়া হয়। যেমন সুদী লেনদেন করা। সুদী লেনদেন লেখা। সুদী টাকা উসুল করা ইত্যাদি। ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻣﺴﻌﻮﺩ ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻪ ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ﻟﻌﻦ ﺍﻟﻠﻪ ﺁﻛﻞ ﺍﻟﺮﺑﺎ ﻭﻣﻮﻛﻠﻪ ﻭﺷﺎﻫﺪﻳﻪ ﻭﻛﺎﺗﺒﻪ হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ এর পিতা থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-“যে সুদ খায়, যে সুদ খাওয়ায়, তার সাক্ষী যে হয়, আর দলিল যে লিখে তাদের সকলেরই উপর আল্লাহ তায়ালা অভিশাপ করেছেন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং-৩৮০৯, মুসনাদে আবি ইয়ালা, হাদিস নং-৪৯৮১) তবে যদি সুদী কাজে জড়িত না হতে হয়, বরং তার কাজের ধরণ এমন হয় যেমন ড্রাইভার, ঝাড়ুদার, দারোয়ান, জায়েজ কারবারে বিনিয়োগ ইত্যাদি হয় তাহলে যেহেতু এসবে সরাসরি সুদের সহায়তা নেই তাই এমনটি করার সুযোগ আছে। আর হারাম মাল থেকে বেতন পাওয়ার বিষয়ের ক্ষেত্রে শরয়ী মূলনীতি হল-যদি বেতনটি হালাল ও হারাম মালের সাথে মিশ্রিত হয়, আর হারাম মাল বেশি হয়, তাহলে তা নেয়া জায়েজ নয়। তবে যদি হারাম মাল কম হয় তাহলে বেতন নেয়া জায়েজ হবে। ﻭﻻ ﻳﺠﻮﺯ ﻗﺒﻮﻝ ﻫﺪﻳﺔ ﺃﻣﺮﺍﺀ ﺍﻟﺠﻮﺭ ﻷﻥ ﺍﻟﻐﺎﻟﺐ ﻓﻲ ﻣﺎﻟﻬﻢ ﺍﻟﺤﺮﻣﺔ ﺇﻻ ﺇﺫﺍ ﻋﻠﻢ ﺃﻥ ﺃﻛﺜﺮ ﻣﺎﻟﻪ ﺣﻼﻝ ﺑﺄﻥ ﻛﺎﻥ ﺻﺎﺣﺐ ﺗﺠﺎﺭﺓ ﺃﻭ ﺯﺭﻉ ﻓﻼ ﺑﺄﺱ ﺑﻪ ﻷﻥ ﺃﻣﻮﺍﻝ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻻ ﺗﺨﻠﻮ ﻋﻦ ﻗﻠﻴﻞ ﺣﺮﺍﻡ ﻓﺎﻟﻤﻌﺘﺒﺮ ﺍﻟﻐﺎﻟﺐ ‏( ﺍﻟﻔﺘﺎﻭﻯ ﺍﻟﻬﻨﺪﻳﺔ، ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﻜﺮﺍﻫﻴﺔ، ﺍﻟﺜﺎﻧﻲ ﻋﺸﺮ ﻓﻲ ﺍﻟﻬﺪﺍﻳﺎ ﻭﺍﻟﻀﻴﺎﻓﺎﺕ - 5/342 ) অনুবাদ-জালেম বাদশাহর হাদিয়া গ্রহণ জায়েজ নয়। কেননা তার অধিকাংশ মাল হয় হারাম। তবে যদি জানা যায় যে, তার অধিকাংশ মাল হালাল, এ হিসেবে যে সে ব্যাবসায়ী বা জমিদার, তাহলে তার থেকে হাদিয়া গ্রহণ করাতে সমস্যা নেই। কেননা সাধারণত মানুষের মাল অল্প হারাম থেকে মুক্ত নয়। তাই এতে আধিক্যের বিষয়টি বিবেচিত হবে। { ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া-৫/৩৪২} ব্যাংকের অবস্থা এই যে, তার পূর্ণ সম্পদ কয়েকটি বিষয়ের সমষ্টি। যথা- ১-মূলধন। ২-সঞ্চয়কারীদের জমাকৃত টাকা। ৩-জায়েজ ব্যবসার আমদানী। ৪-সুদ এবং হারাম ব্যাবসার আমদানী। এ চারটি বিষয়ের মাঝে কেবল ৪র্থ সুরতটি হারাম। বাকিগুলো যদি কোন হারাম কাজ না হয় তাহলে মূলত জায়েজ। যেসব ব্যাংকে প্রথম ৩টি বিষয়ের লেনদেন অধিক। আর ৪র্থ বিষয়টি তথা হারাম লেনদেনের লভ্যাংশ কম সেসব ব্যাংকে সেসব ডিপার্টমেন্টে চাকরী করা যাতে হারাম কাজ করতে না হয় তাহলে তা জায়েজ হবে। এবং বেতন নেওয়াও জায়েজ হবে। তবে উত্তম হল এ চাকরীও ছেড়ে দেয়া। কিন্তু যদি হারাম আমদানী বেশি হয় হালালের তুলনায়, বা হারাম কাজে জড়িত হতে হয় তাহলে উক্ত ব্যাংকে চাকরী করা জায়েজ নয়। এ থেকে বেতন নেওয়াও জায়েজ নয়। বেতন নিলে তা হারাম হিসেবে গণ্য হবে। {ফাতওয়ায়ে উসমানী-৩/৩৯৪-৩৯৬} ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺍﻋﻠﻢ ﺑﺎﻟﺼﻮﺍﺏ উত্তর লিখনে মুফতি লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ