পৃথিবীতে এমন কোনো মানুষ নেই, যার কোনো সমস্যা নেই। যে যত বড়, তার সমস্যাও তত কঠিন। পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ হচ্ছে, ‘অবশ্যই কষ্টের সঙ্গে স্বস্তি আছে, অবশ্যই কষ্টের সঙ্গে স্বস্তি আছে।’ সুখ ও দুঃখেই মানুষের জীবন। ভারতের একজন কবি বলেছেন, সুখ-দুঃখের অপর নামই জীবন, কোনো সময় খুশির হাসিতে শিশির ঝরে। আবার কোনো সময় দুঃখে চোখ থেকে অশ্রু ঝরে। মানুষের সমস্যাগুলোর মধ্যে কিছু সমস্যা স্বাস্থ্যগত, আর কিছু বাহ্যিক। যেকোনো সমস্যার ব্যাপারে ইসলামের দিকনির্দেশনা রয়েছে। বুখারি শরিফসহ হাদিসের প্রায় সব কিতাবে একটি অধ্যায় আছে, যার নাম ‘চিকিৎসা অধ্যায়’। তা ছাড়া মহানবী হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.)-এর সব কয়টি সুন্নাত বিজ্ঞানভিত্তিক ও স্বাস্থ্যসম্মত। তন্ত্রগুরু ও মন্ত্রবাজদের আসলে কি কোনো ক্ষমতা আছে? বাস্তবে কি তাঁরা সমস্যার সমাধান করতে পারেন? না, পারেন না। ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে নবী- রাসুল ও ওলিরা আল্লাহর ইচ্ছায় কিছু অলৌকিক ও আশ্চর্য বিষয় প্রদর্শন করতে পারেন। ইসলামী পরিভাষায় যাকে ‘মুজিজা’ ও ‘কারামত’ বলা হয়। এ ছাড়া সব তথাকথিত সাধক, তন্ত্রগুরু ও মন্ত্রবিদ ইমাম গাজ্জালি (রহ.)-এর মতে হলো, ভিক্ষাভিত্তির কৌশল ও চাতুর্যপূর্ণ উপকরণ- যা দ্বারা সহজে মানুষের পকেট খালি করা যায় এবং সাধারণ মানুষের মনে খানিকটা প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়। আবার কাকতালীয়ভাবে কেউ কোনো কাজে সফল হলে, তা ফলাও করে প্রচার করে মানুষকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করা হয়। জগতে যেসব চিরাচরিত নিয়ম আছে, ইসলাম তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে, অসুস্থ হলে চিকিৎসা করা, বিপদে পড়লে কোনো হক্কানি আলেমের দ্বারস্থ হয়ে দোয়া নেওয়া ইসলামের নির্দেশিত। কিন্তু সমস্যা সমাধানের নামে ভৌতিক ও কাল্পনিক উপায় গ্রহণ করার কোনো যৌক্তিকতা ইসলামে নেই। চিকিৎসা করতে ইসলামে কোনো বাধা তো নেই-ই, বরং নির্দেশ আছে। আমাদের প্রিয় নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘চিকিৎসা গ্রহণ করো। কারণ যিনি রোগ দিয়েছেন তিনি ওষুধও সৃষ্টি করেছেন।’ প্রশ্ন হলো, আমরা কী ধরনের চিকিৎসা গ্রহণ করব। এ সম্পর্কে হাদিস শরিফে আছে- ‘যদি চিকিৎসায় মঙ্গল থাকে, তবে এই তিন ধরনের চিকিৎসায় তা রয়েছে- মধু পান, শিঙ্গা ও আগুনের সেক’; অর্থাৎ মধু দ্বারা তৈরি সিরাপ। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চিকিৎসা, ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা। উপরোল্লিখিত উপায় ব্যতীত জাদুটোনা, তাবিজ-কবচ ও জ্যোতির্বিদ্যাসহ সব ধরনের ভৌতিক ও গায়েবি পন্থায় চিকিৎসা করার বা চিকিৎসা নেওয়ার অনুমোদন ইসলাম ধর্মে নেই। মহানবী (সা.) যখন পৃথিবীতে আবির্ভূত হন, তখন আরব সমাজে গণক ও জ্যোতিষী নামের কিছু লোক ছিল, তারা জিন ও জ্যোতির্বিদ্যা দ্বারা ভবিষ্যদ্বাণী করত। তখন মহানবী (সা.) তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করলেন এবং পবিত্র কোরআনের উদ্ধৃতি দিয়ে তাদের জানিয়ে দিলেন- ‘আপনি ঘোষণা করুন, আসমান- জমিনে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া গায়েব বা অদৃশ্য সম্পর্কে কেউ জানে না।’ (সুরা নাহ্ল, আয়াত ৬৫)। মহানবী (সা.) নিজের ব্যাপারে ও জগৎবাসীকে জানিয়ে দিলেন, ‘আমি যদি গায়েব জানতাম, তাহলে আমি শুধু কল্যাণময় কাজই বেশি করতাম। কোনো বিপদ আমাকে স্পর্শ করত না। আমি বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য সুসংবাদবাহক এবং সতর্ককারী।’ (সুরা আরাফ, আয়াত ১৮৮)। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে নবীজি (সা.) বলেন, ‘আমি গণক নই, নিশ্চয়ই গণক ও তাদের গণনার গন্তব্য জাহান্নাম।’ সুত্রঃ- pchelplinebd.com/Islam/archives/2988