আমি একটা হিন্দু মেয়েকে পছন্দ করি। সেও আমাকে ভালোবাসে। আমরা বিয়ে করতে চাই কিন্তু ধর্মান্তরিত হতে চাই না। আমাকে কি জানাবেন যে স্ব স্ব ধর্ম ঠিক রেখে কোন পদ্ধতিতে আমরা বিয়ে করতে পারি?
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
fahim99

Call

বিয়ে হচ্ছে একটি ভালবাসার সফল সমাপ্তি অথবা সফল হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে একটি ভালবাসার শুরু। অর্থাৎ বিয়ে প্রতিটি মানুষের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় যার শেষ প্রান্তে সফলতাই কাম্য। দুজন মানুষ তারা যে ধর্মের হোক না কেন ভালবাসায় জড়াতে পারে এবং তা দোষের কিছু নয়। কিন্তু প্রশ্ন উঠে তখন যখন তা কোন আইনগত সম্পর্কের দিকে গড়ায়। কারণ বিয়ে মানে দুজন মানুষের জীবন নয় বরং অন্য অনেক জীবনের প্রশ্নও এই সিধান্তের সাথে জড়িত। দুই পক্ষের বাবা ও মা সহ অন্য যারা আছেন তাদের মতামত, এই বিয়ের ফলে যে সন্তানরা জন্মগ্রহন করবে তাদের ধর্মীয় পরিচয় এই বিষয়গুলো ওতপ্রোতভাবে জড়িত। দুজন মানুষ যদি বিয়ের আগে এই বিষয়গুলি আগেই আলোচনা করে কোন সিধান্ত নেয় তবে তা সফল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। নিজেদের মাঝে মিল থাকলে সমাজও মেনে নিতে বাধ্য হয় একসময়। বর্তমানে নিজ নিজ ধর্মীয় বিশ্বাস অটুট রেখে সংসার করছেন অনেক দম্পতি। বেড়ে উঠছে নতুন একটি প্রজন্ম, যাদের উত্তরাধিকার সূত্রে ধর্মীয় কোন পরিচয় নেই। এটাকে সমাজের অনেক বড় পরিবর্তন বলছেন সমাজবিজ্ঞানীরা ধর্ম পরিবর্তন না করেই দু’টি ভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের মধ্যে বিয়ের ঘটনা বাড়ছে। একই ধর্মের দু’জন বিয়ে করে ঘর সংসার করতে হবে এমন ধারণা থেকে বের হয়ে আসছেন অনেকেই। দুই ধর্মের দু’জন তাদের নিজ নিজ ধর্মীয় বিশ্বাস ঠিক রেখে বিয়ে করছেন। আচার-আচরণ পালন করছেন যে যার বিশ্বাস মত। এভাবে দেশের আইন অনুযায়ী বিয়ে করে সংসার করছেন অসংখ্য দম্পতি। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের জুটি এখন অনেক। আর এই বিয়ের ফলে বেড়ে উঠছে নতুন একটি প্রজন্ম। যারা উত্তরাধিকার সূত্রে কোন ধর্মীয় পরিচয় বহন করছেন না। আধুনিক সমাজে সেটা প্রয়োজনও মনে করছেন না অনেকে। এই উত্তরাধিকারীদের মধ্যে আবার কেউ কেউ নিজেই একটি ধর্ম বেছে নিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ ধর্ম বিশ্বাস থেকে সরে আসছেন। তবে রাষ্ট্র আইন করে এমন বিয়ের ব্যবস্থা করলেও এইসব পরিবারের সম্পত্তি বন্টনের জন্য কোন আইন নেই। বাংলাদেশে ইসলাম, হিন্দু ও খৃষ্টান ধর্মীয় আইনে সম্পত্তি ভাগ হয়। কিন্তু এই পরিবারের সম্পত্তি যদি বাবা-মা ভাগ করে দিয়ে না যান বা উইল না করেন, তবে ভাগ করার কোন নিয়ম নেই। আইন : বাংলাদেশের বিশেষ বিবাহ আইন ১৮৭২ (সংশোধিত ২০০৭) অনুযায়ী এই বিয়ে হচ্ছে। এই আইন অনুযায়ী, একজন মুসলমান, হিন্দু, খ্রীষ্টান, বৌদ্ধ, শিখ, ইহুদি বা অন্য যে কোন ধর্মের যে কেউ যে কারো সাথে বিয়ে করতে পারবে। ধর্মের পরিবর্তন করা প্রয়োজন হবে না। অথবা দু’জনই ধর্মীয় বিশ্বাস বাদ দিয়ে বিয়ে করতে পারবে। অথবা একজন অন্যজনের ধর্ম মেনে নিতে পারবে। তবে নাবালকের সাথে কেউ বিয়ে করতে পারবে না। আইন অনুযায়ী এই বিয়ে রেজিষ্ট্রি করার জন্য সরকার একজনকে নিয়োগ দিয়েছে। বাংলাদেশে একজনই এই বিয়ে পড়িয়ে থাকেন। প্রায় প্রতিমাসেই এই বিয়ে হচ্ছে। গত কয়েক বছরে এই বিয়ের হার বেড়েছে। ১৯৮৩ সাল থেকে এপর্যন্ত এক হিসেবে দেখা গেছে, প্রায় ৫০০ দম্পত্তি কোন ধর্ম পরিবর্তন না করেই এমন বিয়ে করেছেন। এদের মধ্যে ছেলে হিন্দু, মেয়ে মুসলমান। কিংবা ছেলে মুসলমান, মেয়ে হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী। অনেকে আছেন আবেগে বিয়ে করছেন। অনেকে জেনে বুঝে গন্ডি ভাঙ্গার তাগিদে। অনেক পরিবার আছে এই বিয়ে মেনে নিচ্ছেন, আবার অনেক পরিবার আছে যারা মানছেন না। আইন মতে, বিয়ের ১৪ দিন আগে রেজিস্ট্রারের কাছে নোটিস দিতে হয়। এরমধ্যে কারো কোন আপত্তি থাকলে সে তা জানায়। এরপরে বর বধুর সাক্ষর আর ৩ জন সাক্ষীর সাক্ষরে সম্পন্ন হয় বিয়ে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ