শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

একজন পুরুষ এবং মহিলা যখন নতুন সংসার শুরু করেন তখন তারা নানা স্বপ্ন দেখে থাকেন। তার মধ্যে একটা সন্তান যেন তাদের ভালবাসার মূর্ত প্রতীক হয়ে দাড়ায়। তাই প্রত্যেক নবদম্পতিই এই স্বপ্নটি মনে মনে লালন করে চলেন। তাছাড়া এটা সবারই জানা যে, সন্তান ছাড়া একটি পরিবার সম্পূর্ন হয় না। একটি দম্পতি সংসার শুরু করার পরেই সন্তানের অভাববোধ করেন । এটাই জগতের নিয়ম। কিন্তু একটি সংসারে নতুন অতিথি আসার আগে অনেক প্রস্তুতির প্রয়োজন পড়ে । একটি সুস্থ ও সবল বাচ্চার স্বপ্ন দেখে সব দম্পতিরাই। তাই স্বপ্নের সূচনা যেন ভালোভাবে হয়, তাহলে স্বপ্নটি পূরণ হবার সম্ভাবনাও বেশী থাকে। বলা হয়ে থাকে একটি সার্থক গর্ভধারণ,গর্ভধারণ করার আগেই বিভিন্ন প্লানের উপর নির্ভর করে। সব মহিলাই উপকৃত হতে পারেন যদি গর্ভধারণের আগের প্লান সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান থাকে। আসুন জেনে নেওয়া যাক, গর্ভধারণের আগে কি কি প্রস্তুতি নেয়া দরকার। আর্থিক প্রস্তুতি :- যদিও বলা হয়ে থাকে অর্থই অনর্থের মূল।তারপরও অর্থ ছাড়া জীবন অচল। তাই আপনার পরিবারে কোন নতুন অতিথিকে আনতে চাইলে তার ভবিষ্যতটা যতটা পারেন সুরক্ষিত করার চেষ্টা করবেন। কেননা সন্তান পালন বর্তমান যুগে অনেক ব্যয়সাপেক্ষ। তাই গর্ভধারণ করার ইচ্ছা থাকলে আগে অর্থনৈতিক দিকটাও ভেবে দেখবেন। একটা প্লানও করে নিতে পারেন। একটা ফিক্সড ডিপোজিট অথবা ইন্সুরেন্স করিয়ে নিতে পারেন গর্ভধারণের আগে।এতে আপনার অনাগত সন্তানের ভবিষ্যত সিকিউর থাকবে। এছাড়া একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমানো উচিত্‍ গর্ভধারণের চেষ্টাকালীন সময়ে। কেননা গর্ভাবস্থায়,বাচ্চা প্রসবকালীন ও বাচ্চা জন্মদানের পরবর্তী অবস্থায় অর্থের দরকার হয়। মানসিক প্রস্তুতি :- আপনি ও আপনার স্বামী যখন গর্ভধারণের চেষ্টা করবেন,তখন মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিবেন, আপনারা এখন সন্তান চান কিনা? সন্তানের দেখভাল করার মত লোকজন ও পর্যাপ্ত পরিমাণ সময় আছে কিনা? ক্যারিয়ারের গঠনের মাঝে সন্তান নিলে সামলাতে পারবেন কিনা? দু জনের মাঝে ভালো বোঝাপড়া আছে কিনা? মানসিকভাবে বর্তমানে আপনি বিপর্যস্ত কিনা? এই প্রশ্নগুলো নিজেকে করুন। যদি হ্যাঁবাচক উত্তর পান তবে বুঝতে হবে যে আপনি মানসিকভাবে প্রস্তুত। যদি না বাচক উত্তর পান তবে গর্ভধারণের চেষ্টা করার আগে আরও ভালোমতো ভেবে নিন। শারীরিক প্রস্তুতি :- মেডিকেল চেকআপ :আপনি কি খুব শ্রীঘ্রই বাচ্চা নিতে চাচ্ছেন?যদি বাচ্চা নিতে চান তবে গর্ভধারণের জন্য একটা বিশেষ সময়ের পরিকল্পনা করুন। এরপর মেডিকেল চেকআপ করুন।এতে করে আপনি জানতে পারবেন যে,বাচ্চা নেয়ার জন্য আপনার শরীর প্রস্তুত কিনা? কেনোনা একটি স্বাস্থ্যবান বাচ্চা জন্মদেওয়া একটি সুস্থ ও স্বাস্থ্যবান মায়ের উপর নির্ভর করে। এজন্য প্রি কন্সেপসন, প্রি প্রেগনেন্সি চেক আপ বা গর্ভধারণ করার আগের চেকআপটা করে নেওয়া উচিত্‍। কেনোনা কিছু মেডিকেল কন্ডিশন ও জীবনযাত্রার মান গর্ভধারণকে প্রভাবিত করে, এমনকি গর্ভধারণ করার ক্ষমতাকেও প্রভাবিত করে। কি কি চেকআপ করাবেন ? যদি আপনি সন্তানধারণের চেষ্টা করেন এবং আগে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন তাহলে আপনার চিকিত্‍সককে বলুন কবে নাগাদ তা বন্ধ করবেন? সাধারণত গর্ভধারণ করার চেষ্টা করার কিছু মাস আগে থেকেই জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিটি বন্ধ করতে বলেন ডাক্তাররা। আপনার কিছু স্বাভাবিক মাসিক হওয়া দরকার গর্ভধারণের আগে।এতে করে গর্ভধারণ পরবর্তী বাচ্চা প্রসবের সময় নির্ধারণ করতে সুবিধা হয়। স্বাস্থ্য ও অন্যান্য পরীক্ষা করুন।আপনার কোন রোগ থাকলে তা সারিয়ে নেয়ার চেষ্টা করবেন। এমনকি আপনার স্বামীর কোন অসুখ থাকলেও তার চিকিত্‍সা করাতে হবে। এরপর ডাক্তার আপনার শারীরিক কিছু পরীক্ষা যেমন ওজন, রক্তচাপ ও আপনার নিতম্ব স্বাস্থ্যবান কিনা তা পরীক্ষা করবেন। কেননা খুব ছোট ও চাপা নিতম্বে বাচ্চা জন্মের সময় জটিলতা দেখা দেয়।তাই আগে থেকেই পরীক্ষা করা থাকলে প্রসবকালে আপনার ডাক্তার সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবেন। এরপর ডাক্তারটা পরীক্ষা করবেন যে, আপনি সন্তান ধারণ করতে পারবেন কিনা? মানে বন্ধ্যা কি না তা পরীক্ষা করেন।অনেক কারণে একটি দম্পতি বন্ধ্যা হতে পারে। মহিলা ,পুরুষ উভয় ই এর জন্য দায়ী হতে পারে। এজন্য যথাযথ পরীক্ষা করে সমস্যা ধরা পড়লে, যার সমস্যা তার চিকিত্‍সা করাতে হবে। প্যাপ টেস্ট করাতে হবে,জরায়ুমুখে কোন সমস্যা আছে কিনা তা জানার জন্য। কেনোনা একটি সার্থক প্রসব সুস্থ জরায়ু ও গর্ভাশয়ের উপর নির্ভর করে। এছাড়াও ডায়াবেটিস,উচ্চরক্তচাপ আছে কিনা তা পরীক্ষা করতে হবে। কারণ এইসব অসুখ মারাত্মক সমস্যা করে গর্ভাকালীন ও পরবর্তী সময়ে।তাই গর্ভধারণের আগেই এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করুন ও ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলুন। এছাড়া HIV ও herpes এই টেস্ট গুলো করা ভালো কেনোনা এগুলো থাকলে গর্ভধারণ করা ঝুকিপূর্ণ। এছাড়াও আপনি যদি দ্বিতীয় বারের মত মা হতে যান এবং আপনার যদি আগের গর্ভকালীন অবস্থায় নিম্নোক্ত সমস্যা হয়ে থাকে, বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাওয়া জন্মের সময় বাচ্চা মরে যাওয়া অকালে বাচ্চা হওয়া বাচ্চার শারিরীক গঠনে সমস্যা থাকা এইসব হয়ে থাকলে পরবর্তী বাচ্চা নেওয়ার সময় আপনাকে আরো সচেতন হতে হবে ও চিকিত্‍সকের পরামর্শমত গর্ভধারণ করতে হবে। আপনার ও আপনার স্বামীর পরিবারে কোন জেনেটিক সমস্যার কারণে কারো অসুখ হলে, একজন জেনেটিক কাউন্সিলারের সাথে পরামর্শ অবশ্যই করবেন। এজমা, ডায়াবেটিস, ডিপ্রেসনের ও অন্যান্য কোন ওসুধ খাওয়ার অভ্যাস থাকলে গর্ভধারণের চেষ্টা করার সময়ই এগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকুন এবং চিকিত্‍সকের পরামর্শ নিন। কেননা এতে সন্তান বিকলাঙ্গ হবার চান্স থাকে। রুবেলা, চিকেন পক্স এর টিকা আগেই নিয়ে রাখুন। এছাড়া ১৫ বছরের পর সব মেয়েরি টিটি টিকা নেওয়া উচিত্‍। যে কোন ভ্যাক্সিন নেয়ার কমপক্ষে ১ মাস অপেক্ষা করুন গর্ভধারণের চেষ্টা করার জন্য। দাঁতের যত্ন নিন। দাঁতের সমস্যা হলে একজন ডেন্টিস্ট কে দেখান।কারণ এটা প্রমাণিত যে দাঁতের মাড়ীতে কোন অসুখ থাকলে কমওজনের ও অকালে জন্ম হয় শিশুর। একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য :- আপনার যদি ২৮ দিন অন্তর রেগুলার মাসিক হয় তাহলে মাসিক হওয়ার ১০ তম দিন থেকে ১৮ তম দিনে গর্ভধারণের চেষ্টা করলে গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে আর যাদের অনিয়মিত মাসিক হয় তারা তাদের সবচেয় কম সময় যেই মাসিক হয় সেই সময়ের সাথে ১৮ বিয়োগ করে ও সবচেয়ে বেশী সময়ে যে মাসিক হয় তার সাথে ১০ বিয়োগ করে তার ওভুলেশন ডেট গণনা করতে পারে । যেমন কারো যদি ২৬ থেকে ৩১ দিন অন্তর অন্তর মাসিক হয় তাহলে ২৬-১৮=৮ এবং ৩১-১০=২১ অর্থাত্‍ তার মাসিক হবার ৮তম দিন থেকে ২১ তম দিনে গর্ভধারণের চেষ্টা করলে তা সফল হবার সম্ভাবনা বেশী থাকে । এছাড়াও আপনার ডাক্তারকে কিছু প্রশ্ন অবশ্যই জিজ্ঞাসা করবেন , কখন জন্মনিয়ন্ত্রন পদ্ধতি বন্ধ করবেন ? ওভুলেশনের ডেট ক্যালকুলেট করে নিবেন । কি কি উপসর্গ দেখে বুঝবেন যে আপনি প্রেগন্যান্ট । সাধারণত মাসিক না হওয়া, স্তন বড় হয়ে যাওয়া, সকালে বমি বমি ভাব হওয়া এগুলো দেখে বুঝা যায় । এরপর সিউর হওয়ার জন্য প্রেগনেন্সি টেস্ট করাতে হবে। (তথ্যসুত্র :- সাজগোজ)

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

সুস্থ, স্বাভাবিক সন্তান প্রসবের বিষয়টি যতটা না ভাগ্যের ব্যাপার, তার চেয়েও বেশি জড়িত দম্পতির সুপরিকল্পিত ভাবনার সঙ্গে। গর্ভধারণের আগে নিজের শরীরকে উপযুক্ত করতে হবে। এ জন্য মেনে চলতে হবে কিছু নিয়মকানুন। কাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের শুরু হয় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার মাধ্যমে। আমাদের দেশে গর্ভধারণের আগে দম্পতিরা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছেন এমন ঘটনা বিরল। একজন মা গর্ভধারণের সিদ্ধান্ত নিলে সঙ্গে সঙ্গে তার উচিত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া। চিকিৎসক আপনার বিস্তারিত ইতিহাস শুনবেন। কোনো ধরনের সমস্যা আছে কি-না তা জানবেন এবং প্রয়োজনে শারীরিক, রক্ত এবং আনুষঙ্গিক পরীক্ষা করে দেখবেন। আপনাকে যদি নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হয় এবং তা গর্ভধারণে কোনো জটিলতা সৃষ্টি করবে কি-না তাও জেনে নিন। কিছু কিছু রোগ যেমন ডায়াবেটিস, হাইপোথাইরয়েড, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তস্বল্পতা থাকলে এগুলো গর্ভধারণের আগেই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। গর্ভধারণের ইচ্ছা প্রকাশ করার সঙ্গে সঙ্গে নিজের ওজন কমিয়ে স্বাভাবিক মাত্রার মধ্যে আনুন। ওজন বেশি হলে প্রতি মাসে নিয়মিত ডিম্বাণু নিঃসরণের সম্ভাবনা কমে। ফলে কমে যায় গর্ভধারণের সম্ভবনা। এ ছাড়া ওজনের কারণে হতে পারে গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ, গর্ভকালীন ডায়াবেটিস, প্রি-একলামশিয়া, একলামশিয়া। গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে গর্ভস্থ শিশুর আকার ও ওজন অনেক বেশি হয়। ফলে সিজার অপারেশনের হার বাড়ে। এসব শিশুর বিকলাঙ্গতা দেখা দিতে পারে। প্রি-একলামশিয়া, একলামশিয়া হলে গর্ভস্থ শিশুর ওজন খুব কম হতে পারে, নির্দিষ্ট সময়ের আগে শিশু জন্ম নিতে পারে এমনকি শিশু গর্ভেই মারা যেতে পারে। শুধু তাই নয়, মা খিঁচুনির শিকার হয়ে মৃত্যবরণ করতে পারেন। আবার কারও ওজন যদি স্বাভাবিকের তুলনায় কম থাকে তাহলে ওজন বাড়াতে হবে। গর্ভধারণ আগে ব্যায়ামের ভূমিকা অপরিসীম। গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যায়াম করলে গর্ভধারণের সম্ভবনা বেড়ে যায়। ধূমপান ও মদপানকে না বলুন। ধূমপান করলে গর্ভপাত, কম ওজনের শিশু এবং মদপান করলে শিশুর বুদ্ধি-প্রতিবন্ধিতা, ওজন-স্বল্পতা এবং জন্মগত ত্রুটি দেখা দিতে পারে। খাবার গ্রহণে সচেতন হোন। নিয়মিত পুষ্টিকর আঁশযুক্ত খাবার বেশি করে খান। ক্যালসিয়াম, ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার খান বেশি বেশি। শিশুর হাড়ের গঠনে মায়ের ক্যালসিয়াম জরুরি। তাই ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন_ ছোট মাছ, সামুদ্রিক মাছ, শাকসবজি বেশি করে গ্রহণ করতে হবে। ফলিক এসিড গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্ক ও স্নায়ু গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জানা হয় না যে, একজন মা গর্ভধারণ করেছেন। জানার আগেই অনাগত শিশুর মস্তিষ্ক গঠনের প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যায়। ক্যাফেইন গর্ভবতীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ খাবার। তাই দিনে এক কাপের বেশি কফি নয়। ক্যাফেইন পাওয়া যায় চা, চকোলেট ও কোমল পানীয়তে। গর্ভধারণের আগেই কিছু কিছু ভ্যাকসিন দেওয়া জরুরি। রুবেলা ভাইরাস গর্ভস্থ শিশুর জন্মগত অনেক ত্রুটির জন্য দায়ী। যেমন_ জন্মগত হৃদরোগ, ছানি, গ্গ্নুকোমা, অন্ধত্ব, কানে কম শোনা। যদি শরীরে রুবেলা অ্যান্টিবডি কম থাকে বা না থাকে তাহলে একটি এমএমআর টিকা দিতে হবে। এ টিকা দেওয়ার তিন মাস পর্যন্ত কোনোভাবে গর্ভধারণ করা যাবে না। কারণ এ সময়ের মধ্যে গর্ভধারণ করলে শিশুর উপরের সমস্যাগুলো দেখা দেবে। ছয় বছরের মধ্যে টিটেনাস টিকা নেওয়া না থাকলে একটা নিতে হবে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ