shohanrand1

Call

আলহামদুলিল্লাহ, এ জাতীয় একটি প্রশ্ন সৌদি আরবের স্থায়ী ফতোয়া বোর্ড ‘লাজনায়ে দায়েমা’র নিকট করা হয়েছিল, আমরা এখানে প্রশ্নসহ তা উল্লেখ করছি: “প্রশ্ন: অনেক মানুষের বিশ্বাস, সকল বস্তু মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নূর থেকে সৃষ্টি, আর তার নূর আল্লাহর নূর থেকে সৃষ্টি। তারা এ মর্মে হাদিস বর্ণনা করে: “আমি আল্লাহর নূর, আর প্রত্যেক বস্তু আমার নূর থেকে সৃষ্ট”। তারা আরো বর্ণনা করে: “আল্লাহ তা‘আলা সর্বপ্রথম মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নূর সৃষ্টি করেছেন”। এ জাতীয় হাদিসের কোনো ভিত্তি আছে কি? তাদের আরেকটি হাদিস নিম্নরূপ: " أنا عرب بلا عين أي رب أنا أحمد بلا ميم أي أحد " “আমি আরব আইন ব্যতীত অর্থাৎ আমি رب (রব), আমি আহমদ মীম ব্যতীত অর্থাৎ আমি أحد (আহাদ), একক সত্ত্বা বা আল্লাহ”। এ জাতীয় কথার কোনো ভিত্তি আছে কি? উত্তর: আলহামদুলিল্লাহ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহর নূর যদি এ অর্থে বলা হয় যে, তিনি আল্লাহর জাতি ও সত্ত্বাগত নূর, তাহলে তা কুরআন বিরোধী, কারণ কুরআনে তাকে মানুষ বলা হয়েছে। আর যদি তাকে এ অর্থে নূর বলা হয় যে, তার নিকট আল্লাহর কাছ থেকে নূর বা ওহী এসেছে, যা মানুষের হিদায়েতের উসিলা, যা দ্বারা আল্লাহ যাকে ইচ্ছা হিদায়েত করেন, তাহলে এ অর্থ ঠিক আছে। ‘লাজনায়ে দায়েমাহ’ থেকে এ বিষয়ে একটি ফতোয়া প্রকাশিত হয়েছে, এখানে হুবহু তা উল্লেখ করছি: [নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নূর অর্থ তার মধ্যে বিদ্যমান রিসালাত ও হিদায়েতের নূর, যে নূর দ্বারা আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের থেকে যাকে ইচ্ছা হিদায়েত করেন। এ নূর আল্লাহ প্রদত্ত। আল্লাহ তা'আলা বলেন: ﴿وَمَا كَانَ لِبَشَرٍ أَن يُكَلِّمَهُ ٱللَّهُ إِلَّا وَحۡيًا أَوۡ مِن وَرَآيِٕ حِجَابٍ أَوۡ يُرۡسِلَ رَسُولٗا فَيُوحِيَ بِإِذۡنِهِۦ مَا يَشَآءُۚ إِنَّهُۥ عَلِيٌّ حَكِيمٞ ٥١ وَكَذَٰلِكَ أَوۡحَيۡنَآ إِلَيۡكَ رُوحٗا مِّنۡ أَمۡرِنَاۚ مَا كُنتَ تَدۡرِي مَا ٱلۡكِتَٰبُ وَلَا ٱلۡإِيمَٰنُ وَلَٰكِن جَعَلۡنَٰهُ نُورٗا نَّهۡدِي بِهِۦ مَن نَّشَآءُ مِنۡ عِبَادِنَاۚ وَإِنَّكَ لَتَهۡدِيٓ إِلَىٰ صِرَٰطٖ مُّسۡتَقِيمٖ ٥٢ صِرَٰطِ ٱللَّهِ ٱلَّذِي لَهُۥ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِۗ أَلَآ إِلَى ٱللَّهِ تَصِيرُ ٱلۡأُمُورُ ٥٣ ﴾ [الشورى: ٥١، ٥٣] “কোনো মানুষের এ মর্যাদা নেই যে, আল্লাহ তার সাথে সরাসরি কথা বলবেন, ওহীর মাধ্যম, পর্দার আড়াল অথবা কোনো দূত পাঠানো ছাড়া। তারপর আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে তিনি যা চান তাই ওহী প্রেরণ করেন। তিনি তো মহীয়ান, প্রজ্ঞাময়। অনুরূপভাবে (উপরোক্ত তিনটি পদ্ধতিতে) আমি তোমার কাছে আমার নির্দেশ থেকে ‘রূহ’কে ওহী যোগে প্রেরণ করেছি। তুমি জানতে না কিতাব কী এবং ঈমান কী? কিন্তু আমি একে আলো বানিয়েছি, যার মাধ্যমে আমি আমার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা হিদায়েত দান করি। আর নিশ্চয় তুমি সরল পথের দিন নির্দেশনা দাও। সেই আল্লাহর পথ, যিনি আসমানসমূহ ও জমিনে যা কিছু আছে তার মালিক। সাবধান! সব বিষয়ই আল্লাহর কাছে ফিরে যাবে”।[1] এ নূর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাধনায় লব্ধ নূর নয়, যেমন অনেক জিন্দিক ও বদ্বীন ধারণা করে। তিনি রক্ত, মাংস ও হাড্ডির সমন্বিত মানুষ ছিলেন। চিরাচরিত নিয়ম পিতা-মাতার সমন্বয়ে তার সৃষ্টি হয়েছে, তার জন্মের পূর্বে কখনো তার সৃষ্টি হয়নি। আর কতক মানুষ যা বলে: “আল্লাহ তা‘আলা সর্বপ্রথম নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নূর সৃষ্টি করেছেন”। অথবা বলে: “আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় চেহারা থেকে একমুষ্টি নূর গ্রহণ করেন, সে মুষ্টিই হচ্ছে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম। অতঃপর আল্লাহ তার দিকে দৃষ্টি দেন, ফলে তাতে বহু নূরের জ্যোতি ছিটকে পড়ে, যার প্রত্যেক টুকরো থেকে তিনি একজন করে নবী সৃষ্টি করেছেন। অথবা আল্লাহ তা‘আলা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নূর থেকে সকল মখলুক সৃষ্টি করেছেন”। এ হাদিস ও এ জাতীয় অন্যান্য হাদিস নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত নয়।] পূর্বের ফতোয়া থেকে স্পষ্ট এ জাতীয় বিশ্বাস বাতিল। এ ছাড়া আরো বর্ণনা করা হয় যে, أنا عرب بلا عين ‘আমি আরব আইন ব্যতীত’, অথবা বলা হয় أنا أحمد بلا ميم ‘আমি আহমদ মীম ব্যতীত’ তার কোনো ভিত্তি নেই। আল্লাহর রুবুবিয়াতের কোনো সিফাত, অথবা আল্লাহর সাথে খাস কোনো সিফাত দ্বারা কাউকে ভূষিত করা বৈধ নয়, এ জাতীয় সিফাত একমাত্র আল্লাহর সাথেই খাস, অতএব কাউকে ‘রব’ বলা কিংবা কাউকে ‘একক সত্ত্বা’ বলা বৈধ নয়। কোনো রাসূল বা কোনো মখলুককে রব বা একক সত্ত্বা বলে আখ্যায়িত করা বৈধ নয়। সাল্লাল্লাহু ‘আলা নাবিয়্যিনা মুহাম্মদ ওয়ালিহি, ওয়াসাহবিহি ওয়াসাল্লাম”।[2] ফতোয়াটি এখানে শেষ।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ