শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
manik

Call
শরয়ী পর্দা অবলম্বন বিষয়ে যে সব শর্তাবলী একত্র হওয়া জরুরি
 
এক: গ্রহণযোগ্য ও অগ্রগণ্য মতানুযায়ী নারীদের জন্য তাদের সম্পূর্ণ শরীর ডেকে রাখা:
কোন কোন আলেমের মতে যদি ফিতনার আশঙ্কা না থাকে, তখন চেহারা ও কব্জি-দ্বয় সতরের অন্তর্ভুক্ত নয়। অর্থাৎ, যদি নারী সুন্দরী না হয়ে থাকে, চেহারা ও হাতে কোন সজ্জা গ্রহণ না করে, তখন কব্জি-দ্বয় ও মুখ খুলে রাখাতে কোন অসুবিধা নাই।  আর মহিলাটি যে সমাজে বসবাস করে সে সমাজে এমন কোন খারাপ লোক বা দুর্বৃত্ত নাই যারা মহিলাদের দিকে কু-দৃষ্টি দেয়। তখন নারীদের জন্য তাদের চেহারা ও হাতের কব্জি-দ্বয় খোলা রাখাতে কোন অসুবিধা নাই। কিন্তু যদি উল্লেখিত শর্তগুলো না পাওয়া যায়, তখন নারীদের জন্য তার চেহারা ও হাত খুলে রাখার বিষয়ে ওলামাদের ঐক্য মত হল, তাদের চেহারা ও কব্জি-দয় খুলে রাখা কোন ক্রমেই বৈধ নয়।

দ্বিতীয়: পর্দা করা যেন সৌন্দর্য না হয়:
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا ﴾  ]سورة النــور: 31[
“আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না”।
 ﴿وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى ﴾] سورة الأحزاب :[33
“আর তোমরা প্রাক জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না”।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পর্দা করার নির্দেশ দিয়েছেন যাতে নারীরা তাদের সৌন্দর্যকে গোপন করে এবং তাদের সৌন্দর্য প-দর্শন না করে। কিন্তু পর্দা যদি এমন সুন্দর হয়, যা দেখে পুরুষরা নারীদের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং ফিতনার মুখোমুখি হয়, তাহলে এ ধরনের পর্দার কোন অর্থ হতে পারে না।

তিন. পর্দার জন্য মোটা ও ঢিলে-ঢালা কাপড় পরিধান করতে হবে যাতে কাপড়ের ফাঁক দিয়ে তাদের শরীর দেখা না যায়:
 কারণ, এ ধরনের কাপড় ছাড়া পর্দা বাস্তবায়ন হবে না। কারণ, চিকন –পাতলা- কাপড় পরিধান করলে, বাস্তবে মহিলারা উলঙ্গই থেকে যায়। তারা তাদের পর্দার ভিতর আর থাকল না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« سيكون في آخر أمتي نساء كاسيات عاريات , على رُؤوسهن كأسنمة البُخت , العنوهن فإنهن ملعونات  » [صحيح]
আমার আখেরি জামানার উম্মতদের মধ্যে এমন কতক নারীর আবির্ভাব হবে, যারা পোশাক পরিধান করলেও মূলত তারা উলঙ্গ। তাদের মাথা উটের চোটের মত উঁচা হবে। তোমরা তাদের অভিশাপ কর, কারণ, তারা অভিশপ্ত। তিনি আরও বলেন,
« لا يدخلن الجنة , ولا يجدن ريحها , وإن ريحها ليوجد من مسيرةِ كذا وكذا » [ مسلم ]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বিষয়ে আরও বলেন, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ অনেক দূর থেকে পাওয়া যাবে। [মুসলিম] এতে এ কথা স্পষ্ট হয়, নারীদের জন্য পাতলা ও মসৃণ কাপড় পরিধান করা মারাত্মক কবিরা গুনাহ।

চার. ঢিলা-ডালা কাপড় পরিধান করতে হবে, সংকীর্ণ কাপড় পরিধান করবে না। 
কারণ, পর্দার উদ্দেশ্য হল, জাতিকে ফিতনা থেকে রক্ষা করা। কিন্তু যখন কোন মহিলা সংকীর্ণ কাপড় পরিধান করবে, তখন তার শরীরের গঠন একজন দর্শকের স্পষ্ট হবে। পুরুষের চোখে তা একেবারেই স্পষ্ট হবে। ফলে পুরুষরা তাদের এহেন অবস্থা দেখে ফিতনা-ফ্যাসাদের সম্মুখীন হবে। যা পর্দা না করার কারণে হয়ে থাকে। উসামা ইব্ন যায়িদ রা. বলেন,
 ] كساني رسول الله صلى الله عليه وسلم  قُبْطِيَّةً كثيفة مما أهداها له دِحْيَةُ الكلبي , فكسوتُها امرأتي , فقال: « ما لك لم تلبس القُبْطِيَّةً ؟,» قلت: ] كسوتُها امرأتي [ , فقال: « مُرها , فلتجعل تحتها غُلالة » – وهي شعار يُلْبَسُ تحت الثوب – « فإني أخاف أن تَصِفَ حجمَ عِظامِها » [ حسن ]

পাঁচ. মহিলার সু-গন্ধি ও আতর মাখিয়ে রাস্তায় বের হবে না।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« أَيُّما امرأةٍ استعطرت , فَمَرَّتْ على قومٍ ليجدوا ريحها , فهي زانية »  [حسن]
“যদি কোন নারী খোশবু ব্যবহার করে কোন পরুষ সম্প্রদায়ের নিকট দিয়ে অতিক্রম করে যাতে তারা তার সুগন্ধ উপলব্ধি করতে পারে। তাহলে সে নারী ব্যভিচারী”।

ছয়. নারীরা পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে না।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
  « ليس منا من تشبه بالرجال من النساء , ولا من تشبه بالنساء من الرجال » [ صحيح ]
“যে নারী পরুষের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করে এবং যে সব পুরুষ নারীর সাদৃশ্য অবলম্বন করে, তারা আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়”। আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
« لعن رسولُ الله صلى الله عليه وسلم  الرجلَ يَلْبَس لِبْسَةَ المرأة , والمرأة تلبَسُ لِبسَةَ الرجل. »  [ صحيح ]
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে পরুষ নারীদের বেশ-ভুষা অবলম্বন করে তাদের অভিশাপ করেছেন আবার যে সব পুরুষরা নারীদের বেশ-ভুষা অবলম্বন করে তাদের অভিশাপ করেছেন”। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
« ثلاث لا يدخلون الجنة , ولا ينظر الله إليهم يومَ القيامة: العاقُ والديه , والمرأةُ المترجلة المتشبهة بالرجال , والدَّيُّوث » الحديث.
[ صحيح ]
“তিন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না। কিয়ামতের দিন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদের প্রতি কোন করুণা করবে না। এক- যে মাতা-পিতার নাফরমানি করে, দুই- যে নারী পুরুষের আকৃতি অবলম্বন করে, তিন- দাইয়ূস (এমন ব্যক্তি যার পরিবারের মেয়েরা অশ্লীল কাজে লিপ্ত ও অশ্লীল পোষাক পরে অথচ সে তা সমর্থন করে”।

সাত. অমুসলিমদের মত পোশাক পরিধান করবে না।
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم  : « من تشبه بقوم فهو منهم ».  [صحيح]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি কোন কাওমের সাথে সাদৃশ্য রাখে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে”। [হাদিসটি বিশুদ্ধ]
وعن عبد الله بن عمرو رضي الله عنهما قال : " رأى رسول الله صلى الله عليه وسلم  عَلَيَّ ثوبين معصفرين , فقال : « إن هذه من ثياب الكفار فلا تَلْبَسها »   [ مسلم ]
আব্দুল্লাহ ইব্ন আমরা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার আমাকে দুটি রঙিন কাপড় পরিহিত অবস্থায় দেখেন, তারপর তিনি বললেন, এ ধরনের কাপড় পরিধান করা কাফেরদের অভ্যাস তুমি এ ধরনের কাপড় পরিধান করো না”। [মুসলিম]

আট. মানুষের মধ্যে প্রসিদ্ধি লাভ করার মানসিকতা থাকতে পারবে না।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ومن لَبِسَ ثَوْبَ شُهْرَةٍ في الدنيا , ألبسه الله ثوبَ مَذَلَّةٍ يوم القيامة , ثم ألهب في ناراً » [ حسن ]
“যে ব্যক্তি দুনিয়াতে প্রসিদ্ধ পোশাক পরিধান করল, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কিয়ামতের দিন তোমাকে অপমান অপদস্থের পোশাক পরিধান করাবে। তারপর তোমাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে”।
প্রসিদ্ধ পোশাক হল, যে কাপড় পরিধান দ্বারা মানুষের মাঝে প্রসিদ্ধি লাভ করা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। এটি দুই ধরনের হতে পারে। এক- অনেক দামি ও মূল্যবান কাপড়, যা অহংকার করে পরিধান থাকে। দুই- নিম্নমানের কাপড় যা এ কারণে পরিধান করা হয়ে থাকে যাতে মানুষ তাকে ইবাদত-কারী, বুজুর্গ ও আল্লাহর অলি বলে আখ্যায়িত করবে। যেমন-সে এমন এক অসাধারণ কাপড় পরিধান করল, যার রঙ, জোড়া, তালি ও অভিনব সেলাই দেখে মানুষ তার দিকে তাকিয়ে থাকে এবং সে মানুষের উপর বড়াই ও অহংকার করে। 
হে মুসলিম মা বোনেরা! তোমরা সৌন্দর্য প্রদর্শন থেকে সতর্ক থাক!
যখন তুমি উপর উল্লেখিত শর্তগুলি বিষয়ে চিন্তা করবে, তখন তোমার নিকট একটি বিষয় স্পষ্ট হবে, বর্তমানে অসংখ্য নারী এমন আছে, যারা পর্দার নামে বিভিন্ন ধরনের পোশাক পরিধান করে থাকে, বাস্তবে তা পর্দা নয়। তারা অন্যায় করে অথচ অন্যায়কে ন্যায় বলে চালিয়ে দেয়। ফলে তারা সৌন্দর্য প্রদর্শনকে পর্দা বলে নাম রাখে আর অন্যায়কে ইবাদত বলে চালিয়ে দেয়।
ইসলামী জাগরণকে যারা সহ্য করতে পারে না এবং ইসলামী আদর্শকে যারা বরদাশত করতে পারে না, তারা ইসলামকে নির্মূল করার জন্য তাদের সর্বোচ্চ শক্তি ব্যয় করে।
কিন্তু আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদের সব চেষ্টাকে ধ্বংস করে দেন এবং তাদের সব ষড়যন্ত্রকে বানচাল করে দেয়। আর মুমিন নারী-পুরুষরা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আনুগত্য ও তার হুকুমের অটল ও অবিচল থাকে এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুমিনদের আল্লাহর অনুকরণের উপর অবিচল থাকার তাওফিক দেন। দুনিয়ার কোন মোহ তাদেরকে তাদের আদর্শ থেকে চুল পরিমাণও সরাতে পারে না।
ফলে তারা ইসলাম ও মুসলিমদের সাথে এমন সব অসভ্য আচরণ করতে আরম্ভ করল, যা তাদেরকে তাদের মূল লক্ষ্য থেকে দূরে সরিয়ে দিল। তারা এ বলে পর্দাকে বিকৃত করে মানুষের সামনে তুলে ধরল, পর্দা করা কোন গোঁড়ামি নয়, পর্দা হল এমন একটি মধ্যম পন্থা যা দ্বারা পর্দাশীল মহিলা তার প্রভুর সন্তুষ্টি লাভে সক্ষম হয়। কিন্তু তারা মুখে যাই বলুক বা দাবি করুক না কেন, বাস্তবে তারা দুটি বিপরীত বিষয়কে একত্রে ঠিক রাখতে চায় একটি সমসাময়িক পরিবেশ আর অপরটি আল্লাহর বিধান ও ইসলামী ঐতিহ্য।
বর্তমান বাজারে পর্দার নামে এমন সব কাপড়-চোপড় পাওয়া যায়, যা প্রাথমিক অবস্থায় বিরোধিতা করা হয়েছিল। অথচ এ গুলো নারীদের সৌন্দর্য প্রদর্শন ও আকর্ষণ তৈরি করা ছাড়া আর কিছুই নয়। ব্যবসায়ীরা তাদের বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য এ ধরনের পোশাক বাজারে ছাড়ে।  যেমন কোন এক কবি বলেন, ‘মনে রাখবে, তুমি যে ধরনের পর্দা ব্যবহার করছ, তাকে শরয়ী পর্দা বলা হতে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করবে, যে পর্দা করলে আল্লাহ ও তার রাসূলের সন্তুষ্টি লাভ হয়। যে ব্যক্তি তোমার এ ধরনের আমলকে ধন্যবাদ দেয়, তোমাকে সত্যিকার উপদেশ না দেয়,  তাদের কথা দ্বারা ধোঁকা পড়া হতে তোমাকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। সাবধান! তুমি ধোঁকায় পড়ে এ ধরনের কথা বলা থেকে বেঁচে থাক, ‘আমি সৌন্দর্য প্রদর্শনকারী নারীদের থেকে উন্নত’। কারণ, তুমি যে অবস্থার মধ্যে আছ, তা কোন আদর্শ হতে পারে না। তাও অন্যায় যেমনটি সৌন্দর্য প্রদর্শন করা অন্যায়। আর জাহান্নামের বিভিন্ন স্তর আছে যেমনি-ভাবে জান্নাতের বিভিন্ন ক্লাস আছে। তোমার করনীয় হল, তুমি সে মহিলাদের অনুকরণ করবে যারা প্রকৃত পর্দা অবলম্বন করে এবং পর্দার যাবতীয় শর্তাবলী সহ যথাযথ পর্দা পালন করে।’ 
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
رُوي عن رسول الله - صلى الله عليه وسلم  - أنه قال: « انظروا إلى مَنْ هو أسفل منكم في الدنيا , وفوقَكم في الدين , فذلك أجدرُ أن لا تَزْدَرُوا »– أي تحتقروا –« نعمةَ الله عليكم »  [ضعيف] , وتلا عمر بن الخطاب – رضي الله عنه – قولَه عز وجل: ]إِنَّ ٱلَّذِينَ قَالُواْ رَبُّنَا ٱللَّهُ ثُمَّ ٱسۡتَقَٰمُواْ تَتَنَزَّلُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ أَلَّا تَخَافُواْ وَلَا تَحۡزَنُواْ وَأَبۡشِرُواْ بِٱلۡجَنَّةِ ٱلَّتِي كُنتُمۡ تُوعَدُونَ ٣٠ ﴾ [سورة فصلت : 31]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমরা দুনিয়া বিষয়ে তোমাদের থেকে যারা নিম্নে তাদের দিকে দেখবে, আর দ্বীনের ব্যাপারে যে তোমাদের চেয়ে বড় তার দিকে দেখবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নেয়ামতকে ছোট মনে না করার জন্য এটি তোমাদের উত্তম ও উপযুক্ত পদক্ষেপ। অর্থাৎ, তোমরা তোমাদের উপর আল্লাহর নেয়ামতসমূহকে ছোট মনে করবে না। [দুর্বল হাদীস] তারপর ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. এ আয়াত-[إِنَّ ٱلَّذِينَ قَالُواْ رَبُّنَا ٱللَّهُ ثُمَّ ٱسۡتَقَٰمُواْ تَتَنَزَّلُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ أَلَّا تَخَافُواْ وَلَا تَحۡزَنُواْ وَأَبۡشِرُواْ بِٱلۡجَنَّةِ ٱلَّتِي كُنتُمۡ تُوعَدُونَ ٣٠ ]  তিলাওয়াত করেন, “নিশ্চয় যারা বলে, ‘আল্লাহই আমাদের রব’ অত:পর অবিচল থাকে, ফেরেশতারা তাদের উপর নাযিল হয়, [এবং বলে,] ‘তোমরা ভয় পেয়ো না, দুশ্চিন্তা করো না এবং জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ কর, তোমাদেরকে যার ওয়াদা দেয়া হয়েছিল”।
 فقال: « استقاموا والله لله بطاعَتِهِ , ولم يَرُ وغُوا رَوَغَانَ الثعالب ».
অত:পর তিনি বললেন, তোমরা অটল অবিচল থাক, আল্লাহর শপথ করে বলছি আল্লাহর আনুগত্যের অবিচল থাক। শিয়ালের মত বক্রতা অবলম্বন কর।  
 وعن الحسن رحمه الله قال: " إذا نظر إليك الشيطان فرآك مُداوِمًا في طاعة الله , فبغاك , وبغاك- أي طلبك مرة بعد أخرى- فرآك مُداوِمًا , مَلَّكَ , ورفضك , وإذا كنت مرةً هكذا , ومرة هكذا , طَمِعَ فيك ".
হাসান রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “শয়তান যখন তোমাকে আল্লাহর বিধানের আনুগত্যের উপর অটল ও অবিচল দেখবে। তখন সে তোমাকে আল্লাহর আনুগত্য হতে বার বার সরানোর চেষ্টা করবে। কিন্তু তারপরও যখন তোমাকে অবিচল দেখতে পাবে, তখন সে তোমাকে ছেড়ে চলে যাবে। আর যখন শয়তান তোমাকে দুর্বল দেখতে পাবে এবং তোমার মধ্যে টালমাটাল দেখতে পাবে, তখন সে তোমার প্রতি ঝুঁকবে। তোমাকে গোমরাহ করার জন্য লালায়িত হবে”।
সুতরাং তোমরা আল্লাহর ইবাদত ও তাওহীদের উপর অটল অবিচল থাক, এদিক সেদিক করো না। আর হিদায়েতের উপর অবিচল থাক যার মধ্যে কোন গোমরাহি নাই। আর তোমরা আল্লাহর দরবারে তওবা খালেস তওবা কর, তারপর আর কোন অপরাধ করবে না।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করে বলেন,
﴿وَتُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٣١﴾ [سورة النور:31 ]
“হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার”।
আমরা শুনলাম ও আনুগত্য করলাম
সত্যিকার মুসলিম ব্যক্তি যখনই আল্লাহর কোন নির্দেশ বা হুকুমের সম্মুখীন হয়, তখন সে সাথে সাথে তা বাস্তবায়ন করা বা আমল করার চেষ্টা করে। আল্লাহর আদেশ বাস্তবায়ন করা বা তদনুযায়ী আমল করতে সে খুব পছন্দ করে। সে আল্লাহর আদেশের খেলাপ করা বা বিরোধিতাকে পছন্দ করে না। সে ইসলামের সম্মান, আল্লাহর দেয়া শরিয়তের মর্যাদা এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নতের আনুগত্য করাকে পছন্দ করে। এর বিনিময়ে তার উপর কি বর্তাবে বা তাকে কোন অনাকাংখিত  পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় কিনা তার প্রতি সে কোন প্রকার ভ্রুক্ষেপ বা কর্ণপাত করে না। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যারা তার আনুগত্য করা ও তার রাসূলের অনুকরণ করা হতে বিরত থাকে তাদের ঈমানকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿وَيَقُولُونَ ءَامَنَّا بِٱللَّهِ وَبِٱلرَّسُولِ وَأَطَعۡنَا ثُمَّ يَتَوَلَّىٰ فَرِيقٞ مِّنۡهُم مِّنۢ بَعۡدِ ذَٰلِكَۚ وَمَآ أُوْلَٰٓئِكَ بِٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٤٧  وَإِذَا دُعُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ لِيَحۡكُمَ بَيۡنَهُمۡ إِذَا فَرِيقٞ مِّنۡهُم مُّعۡرِضُونَ ٤٨﴾ [سورة النور: 47-48]
তারা বলে, ‘আমরা আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছি এবং আমরা আনুগত্য করেছি’, তারপর তাদের একটি দল এর পরে মুখ ফিরিয়ে নেয়। আর তারা সত্যিকার মুমিন নয়। আর যখন তাদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি এ মর্মে আহ্বান করা হয় যে, তিনি তাদের মধ্যে বিচার-মীমাংসা করবেন, তখন তাদের একটি দল মুখ ফিরিয়ে নেয়।”
 একটু পরে গিয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও বলেন,
﴿إِنَّمَا كَانَ قَوۡلَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ إِذَا دُعُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ لِيَحۡكُمَ بَيۡنَهُمۡ أَن يَقُولُواْ سَمِعۡنَا وَأَطَعۡنَاۚ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ٥١   وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَيَخۡشَ ٱللَّهَ وَيَتَّقۡهِ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡفَآئِزُونَ ٥٢﴾ ]سورة النور .[৫২ ,৫১
মুমিনদেরকে যখন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি এ মর্মে আহ্বান করা হয় যে, তিনি তাদের মধ্যে বিচার, মীমাংসা করবেন, তাদের কথা তো এই হয় যে, তখন তারা বলে: ‘আমরা শুনলাম ও আনুগত্য করলাম।’ আর তারাই সফলকাম। আর যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে এবং  তাকওয়া অবলম্বন করে, তারাই সফলকাম।”
সুফিয়া বিনতে সাইবাহ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«بينما نحن عند عائشة – رضي الله عنها – قالت فَذَكَرْنَ نساءَ قريشٍ وفضلَهن , فقالت عائشة – رضي الله عنها- : ( إن لنساء قريش لفضلاً , وإني والله ما رأيتُ أفضلَ من نساءِ الأنصار: أشَدَّ تصديقًا لكتاب الله , ولا إيمانًا بالتنزيل , لقد أُنزِلَتْ النور: {وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ} (31) سورة النــور  فانقلب رجالهن إليهن يتلون عليهن ما أنزل الله إليهم فيها , ويتلو الرجل على امرأته , وابنته , وأخته , وعلى كُلِّ ذِي قَرابته , فما منهن امرأةٌ إلا قامت إلى مِرْطِها المُرَحَّلِ, فاعْتَجَرَتْ, به تصديقًا وإيمانًا بما أنزل الله من كتابه , فأصبحن وراءَ رسولِ الله-صلى الله عليه وسلم - مُعْتَجِراتٍ كأن على رؤوسهن الغربان».
“একদিন আমরা আয়েশা রা. এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তখন আমরা কুরাইশী নারীদের আলোচনা ও তাদের গুণাগুণ বর্ণনা করতে ছিলাম। তখন আয়েশা রা. আমাদের বলল, অবশ্যই কুরাইশ বংশের নারীদের মর্যাদা আছে, যা আমরা অস্বীকার করতে পারি না। তবে আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, আনসারী নারীদের মত এত বেশি আল্লাহর কিতাবের উপর বিশ্বাসী ও আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়নকারী আর কোন নারীকে আমি কখনো দেখিনি। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যখন সূরা নূর নাযিল করল, তখন তাদের পুরুষরা তাদের নিকট ফিরে গিয়ে তাদের প্রতি যে কোরআন নাযিল করা হল, তা তিলাওয়াত করল- পুরুষ তার স্ত্রীকে, তার মেয়েকে, বোনকে এবং প্রতিটি নিকটাত্মীয়কে শোনাল। তিলাওয়াত শোনা মাত্রই সাথে সাথে আনসারী নারীরা তাদের নকশী করা কাপড় নিয়ে তাদের দেহকে ডেকে ফেলল। তারা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনর কথার উপর বিশ্বাস করতে এবং তার প্রতি ঈমান আনতে কোন প্রকার বিলম্ব করল না। তাদের অবস্থা এমন হল, তারা সবাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিছনে তাদের মাথা ও চেহারা ডেকে রাখল, যেন তাদের মাথার উপর কাক”।
মোট কথা, আল্লাহর আদেশের সামনে কোন প্রকার ঘড়ি-মসি করা ও মতামত ব্যক্ত করার কোন অধিকার নাই। আল্লাহর নির্দেশ আসার সাথে সাথে বলতে হবে ‘আমরা শুনলাম এবং মানলাম’। এটি হল, প্রকৃত ও সত্যিকার ঈমান। হে মুসলিম রমণীরা! যদি তোমরা সত্যিকার অর্থে আল্লাহকে রব হিসেবে স্বীকার কর, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রাসূল হিসেবে মেনে নাও, আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী, মেয়ে এবং ঈমানদার নারীদের আদর্শ হিসেবে মান, তাহলে তোমরা আল্লাহর দরবারে তওবা করে নিজের অপকর্ম ও পাপাচারের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর। হে আল্লাহর বান্দা-বান্দিরা তোমরা এ ধরনের কথা বলা হতে বিরত থাক- আমরা তওবা করব, অচিরেই সালাত আদায় করব, অচিরেই পর্দা করব ইত্যাদি। কারণ, তওবাকে বিলম্ব করা অপরাধ, তা হতে তোমাদের অবশ্যই তওবা করতে হবে। তোমরা মুসা আ. যে ধরনের কথা বলছে, তোমরা সে ধরনের কথা বল।
﴿ وَعَجِلۡتُ إِلَيۡكَ رَبِّ لِتَرۡضَىٰ ٨٤ ﴾  [سورة طه:]
“হে আমার রব, আমি তাড়াতাড়ি করে আপনার নিকট এসেছি, যাতে আপনি আমার উপর সন্তুষ্ট হন।”
এবং তোমরা এমন কথা বল, যে কথা তোমাদের পূর্বে মুমিন নর-নারীরা বলছিল,
﴿وَقَالُواْ سَمِعۡنَا وَأَطَعۡنَاۖ غُفۡرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيۡكَ ٱلۡمَصِيرُ ﴾  ]سورة البقرة.[২৮৫
আর তারা বলে, আমরা শুনলাম এবং বললাম। হে আমাদের রব! আমরা আপনারই ক্ষমা প্রার্থনা করি, আর আপনার দিকেই প্রত্যাবর্তনস্থল।
 
আল্লাহ আমাদের পর্দা করা ও আল্লাহর আনুগত্য করার তাওফীক দান করুন।



[1] পর্দা বিষয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুমিনদের নির্দেশ দিয়েছেন এবং মুমিন নারীদেরকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সৌন্দর্য প্রদর্শন করতে নিষেধ করেছেন। সুতরাং মুমিনদের অবশ্যই পর্দা করতে হবে এবং আল্লাহর আদেশ মানতে হবে। যখন একজন মুমিন আল্লাহর আদেশ পালন করবে, তা হবে আল্লাহর আদেশের আনুগত্য করা ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুকরণ করা।
[2] আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষকে তার কর্মের ধরন অনুযায়ী শাস্তি দেবেন। কর্ম যেমন হবে, তার শাস্তিও তেমন হবে। যেমন, এখানে হাদিসে বর্ণিত, দুনিয়াতে যে নারী উলঙ্গ-বে-পর্দা- হবে, আখেরাতে সে নারীকে নগ্ন ও উলঙ্গ করে শাস্তি দেয়া হবে।
[3] যখন কোন মানুষ পর্দা করে তখন অবশ্যই তার অন্তরে আল্লাহর ভয় থাকে। এছাড়াও যে মহিলা পর্দা করে, তার পর্দা তাকে অনেক অন্যায় ও পাপাচার থেকে রক্ষা করে। এ কারণেই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পর্দাকে তাকওয়ার পোশাক বলে আখ্যায়িত করেন।

[4] পর্দা না করা এবং সৌন্দর্য প্রদর্শন করা জাহিলিয়্যাতের নারীদের স্বভাব। জাহিলিয়্যাতের যুগে নারীরা সৌন্দর্য প্রদর্শন করত এবং তারা উলঙ্গ হয়ে ঘুরে বেড়াত।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ