শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
RafiaBegum

Call

আল্লাহর নামগুলো নির্দিষ্ট সংখ্যায় সীমিত নয়। সহীহ হাদীছে এর দলীল হল, اللَّهُمَّ إِنِّي عَبْدُكَ وَابْنُ عَبْدِكَ وَابْنُ أَمَتِكَ نَاصِيَتِي بِيَدِكَ مَاضٍ فِيَّ حُكْمُكَ عَدْلٌ فِيَّ قَضَاؤُكَ أَسْأَلُكَ بِكُلِّ اسْمٍ هُوَ لَكَ سَمَّيْتَ بِهِ نَفْسَكَ أَوْ عَلَّمْتَهُ أَحَدًا مِنْ خَلْقِكَ أَوْ أَنْزَلْتَهُ فِي كِتَابِكَ أَوِ اسْتَأْثَرْتَ بِهِ فِي عِلْمِ الْغَيْبِ عِنْدَكَ হে আল্লাহ! আমি আপনার বান্দা এবং আপনার এক বান্দা ও বান্দীর সন্তান। আমার কপাল আপনার হাতে। আমার ব্যাপারে আপনার হুকুম বাস্তবায়িত হয়ে থাকে। আপনার ফায়সালাই ন্যায় সম্মত। আপনার প্রতিটি নামের উসীলা দিয়ে আপনার কাছে দু’আ করছি। যে নামের মাধ্যমে আপনি নিজের নাম কারণ করেছেন বা আপনার কোন সৃষ্টিকে (বান্দাকে) শিক্ষা দিয়েছেন অথবা আপনার কিতাবে অবতীর্ণ করেছেন অথবা যে নামগুলোকে আপনি নিজের জ্ঞান ভান্ডারে সংরক্ষিত করে রেখেছেন। আর এ কথা শতসিদ্ধ যে, আল্লাহর জ্ঞান ভান্ডারে যে সমস্ত নাম সংরক্ষিত রেখেছেন, তা একমাত্র আল্লহ ছাড়া কেউ জানে না। আর যা অজ্ঞাত তা সীমিত হতে পারে না। إِنَّ لِلَّهِ تِسْعَةً وَتِسْعِينَ اسْمًا مِائَةً إِلَّا وَاحِدًا مَنْ أَحْصَاهَا دَخَلَ الْجَنَّةَ “আল্লাহর এমন নিরানব্বইটি নাম রয়েছে যে ব্যক্তি এগুলো মুখস্ত করবে, সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে।” হাদীছে এটা বুঝা যাচ্ছেনা যে, আল্লাহর নাম মাত্র নিরানব্বইটি। বরং হাদীছের অর্থ এই যে, আল্লাহর নাম সমূহের মধ্যে এমন নিরানব্বইটি নাম রয়েছে, যা মুখস্ত করলে জান্নাতে যাওয়া যাবে। এতে বুঝা যায় যে, এই নিরানব্বইটি ব্যতীত আল্লাহর আরো নাম রয়েছে। এখানে (من أحصاها) বাক্যটি পূর্বের বাক্যের পরিপূরক। নতুন বাক্য নয়। যেমন আরবরা বলে থাকে আমার এমন একশটি ঘোড়া রয়েছে, যা আমি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের জন্য প্রস্তত করে রেখেছি। বাক্যটির অর্থ এই নয় যে, তার কাছে ঘোড়ার সংখ্যা মাত্র একশটি। বরং তার কাছে এমন একশটি ঘোড়া আছে, যা আল্লাহর রাস্তায় জেহাদের জন্য প্রস্তত রয়েছে। অন্য কাজের জন্য আরো ঘোড়া থাকতে পারে। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) এই মর্মে হাদীছ বিশারদগণের ঐক্যমত বর্ণনা করেছেন যে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে আল্লাহর নামসমূহের নির্দিষ্ট সংখ্যার বর্ণনা সহীহ সূত্রে সাব্যস্ত হয়নি। তিনি সত্যই বলেছেন। এর প্রমাণ উলামাদের এতে বিরাট ধরণের এখতেলাফ বিদ্যমান রয়েছে। কারণ যারা তিরমিযীতে ৯৯টি নাম সম্বলিত হাদীছটিকে সহীহ বলার চেষ্টা করেছেন, তারা বলেন, এ বিষয়টি অত্যন্ত বিরাট। কারণ তা জান্নাতে পৌঁছিয়ে দিবে বলা হয়েছে। সাহাবীগণ এ বিষয়টি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে নির্ধারণ করতে বলবেন না- এটা হতে পারে না। সুতরাং বুঝা গেল যে, আল্লাহর নিরানব্বইটি নাম নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকেই নির্ধারিত। এর উত্তরে বলা যেতে পারে যে, এটি আবশ্যক নয়। কারণ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে যদি নির্ধারিত হত, তাহলে পরিস্কারভাবে নামগুলো জানা থাকত এবং বুখারী-মুসলিম এবং অন্যান্য হাদীছের কিতাবে উল্লেখ থাকত। কারণ এটি এমন বিষয়, যা বর্ণনা এবং হেফাজত করার প্রয়োজন। সুতরাং কিভাবে তা সহীহ সূত্রে বর্ণিত না হয়ে দূর্বল এবং পরস্পর বিরোধী সূত্রে বর্ণিত হতে পারে? নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামগুলো বিশেষ এক উদ্দেশ্যে বর্ণনা করেন নি। তাহলো মানুষ যেন আল্লাহর কিতাব এবং রাসূলের সুন্নাত হতে খোঁজে বের করে। এতে করেই সৎকাজের প্রতি কে প্রকৃত আগ্রহী এবং কে আগ্রহী নয়, তা প্রকাশিত হয়ে যাবে। আল্লাহর নামগুলো শুধু কাগজে লিখে মুখস্ত করা উদ্দেশ্য নয়। বরং উদ্দেশ্য হলঃ ১) ভালভাবে নামগুলো মুখস্ত করা। ২) নামগুলোর অর্থ অনুধাবন করা। ৩) নামগুলোর দাবী অনুযায়ী আল্লাহর এবাদত করা। আর তা দু’ভাবে হতে পারেঃ (ক) আল্লাহর নাম সমূহের উসীলা দিয়ে তাঁর নিকট দু’আ করা। আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ )وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا( “আল্লাহর অনেক সুন্দর সুন্দর নাম রয়েছে, সেই নামগুলোর উসীলায় তাঁর কাছে দু’আ কর।” (সূরা আরাফঃ ১৮০) আপনি যা কামনা করেন তার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ একটি নাম নির্বাচন করে সেই নামটি উল্লেখ করে দু’আ করবেন। যেমন ক্ষমা চাওয়ার সময় আপনি বলবেনঃ يا غفور اغفر لى ইয়া গাফুর! ইগফিরলী। অর্থঃ হে ক্ষমাশীল! আমাকে ক্ষমা করুন। ক্ষমা চাওয়ার সময় এটা বলা কখনই উপযোগী নয় যে, يا شديد العقاب اغفرلى হে কঠোর শাস্তি দাতা! আমাকে ক্ষমা করুন। এটা এক ধরণের ঠাট্টা করার শামিল। বরং বলতে হবে, হে কঠোর শাস্তি দাতা! আমাকে আপনার শাস্তি হতে রেহাই দিন। ২) আপনার এবাদতের মধ্যে এমন কিছু থাকা চাই, যা আল্লাহর নামগুলোর দাবীকে আবশ্যক করে। রাহীম নামের দাবী হল রহমত করা। সুতরাং আপনি এমন আমল করবেন, যা আল্লাহর রহমত নাযিল হওয়ার কারণ হয়। এটাই আল্লাহর নাম সমূহ মুখস্ত করার অর্থ। আল্লাহর নামসমূহের দাবীকে আবশ্যক করার মত আমলই জান্নাতে প্রবেশের মূল্য হতে পারে। বিষয়/প্রশ্নঃ (৩১) গ্রন্থের নামঃ ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম বিভাগের নামঃ ঈমান লেখকের নামঃ শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ) অনুবাদ করেছেনঃ আবদুল্লাহ শাহেদ আল মাদানি - আবদুল্লাহ আল কাফী

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ