পেলভিকে ব্যাথা কি?
পেলভিক ব্যাথা নাভির নিচে অবস্থিত যে কোন পেলভিক অঙ্গের অসুখের ফলে যে যন্ত্রণা হয় তাকে নির্দেশ করে। মহিলাদের মধ্যে এটি গর্ভাশয়, ডিম্বাশয় ও টিউবের অসুখ হতে পারে এবং পুরুষদের মধ্যে প্রোস্টেট সমস্যার ফলে পেলভিক ব্যাথা হতে পারে। নারী পুরুষ উভয়ের মধ্যেই ব্যাথাটি মূত্রাশয়ের পথে সংক্রমণ, ও পেলভিকের হার ও পেশীর রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে। যদিও এটি মহিলাদের মধ্যেই বেশী হয়ে থাকে।

পেলভিকে ব্যাথার প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
প্রধানত পেটের নিচের অংশেই ব্যাথাটি হতে দেখা যায়। ব্যাথাটি ক্রমান্বয়ে স্বল্প থেকে তীব্রতর হতে পারে যা যাওয়া আসা করতে পারে (মাঝে মাঝে ব্যথা)। এটি সাধারণত নির্দিষ্ট বা সীমাবদ্ধ (স্থানীয়) অংশে হয়ে থাকে। ব্যাথাটির কারণ তার প্রকৃতি বা তীব্রতার ওপর নির্ভর করে। ব্যাথার সঙ্গে প্রস্রাবের সময় জ্বালা, প্রস্রাবের সময় রক্তপাত, বমিভাব, ও বমি হতে পারে।

পেলভিকে ব্যাথার প্রধান কারণ কি কি?
নারী ও পুরুষ উভয়ের মধ্যে সাধারণত যে কারণ গুলি লক্ষ করা যায় সেগুলি হল কিডনিতে পাথর, কোলাইটিস বা বদহজম, পেলভিক পেশীর খিঁচুনি, মূত্রাশয়ের পথে সংক্রমণ, অসটিওপোরোসিস (মেনোপসের পর হাড়ের খনিজের ঘনত্ব কমে যায়) ও যৌন সংক্রামক রোগ।

মহিলাদের মধ্যে হওয়ার কারণ:

  • ওভারিয়ান সিষ্টস।
  • এনডোমেট্রিওসিস।
  • নিয়মিত ঋতুস্রাবের সময় তলপেটে খিঁচ ধরা বা যন্ত্রনা।
  • জরায়ু,যোনি বা যোনি পথে সংক্রমণ।
  • পেলভিকে যন্ত্রণাদায়ক রোগ
  • ফায়ব্রয়েডস। (ডিম্বাশয়ে ছোট ছোট টিউমারের মতো অংশ)।
  • গর্ভনালীর মধ্যে গর্ভধারণ।
  • পেল্ভিসে ক্যান্সার।


পুরুষদের মধ্যে হওয়ার কারণ:

  • প্রোস্টেটিটিস (প্রোস্টেট গ্রন্থিতে প্রদাহ)।
  • এপিডিডাইমিটিস (এপিডিডাইমিসে প্রদাহ)।
  • টেসটিকুলারে সংক্রমণ।
  • টরিসন অফ টেসসিস।
  • নিতম্বের এলাকাতে যদি ব্যাথা হয় তাহলে তা সম্ভবত কোনও হাড়ের রোগ বা চির ধরার কারণে হতে পারে এবং এটির বিস্তারিত মূল্যায়ন প্রয়োজন। ডান পাশের ব্যাথা ওভারিয়ান সিষ্ট অথবা অ্যাপেনডিক্সে ফোলা ভাবের (অ্যাপেনডিসাইটিস) কারণে হওয়া যন্ত্রনা কে নির্দেশ করে।


কিভাবে পেলভিক পেইন এর নির্ণয় করা হয়?
চিকিৎসক আপনার ব্যথার সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন করবেন যেমন-

  • কখন ও পেটের কোন স্থানে ব্যথা হয়?
  • ব্যথা কতক্ষণ থাকে?
  • ব্যথার অনুভূতি কেমন, অর্থাৎ তীব্র নাকি ভোঁতা?
  • কোন পরিস্থিতিতে ব্যথা শুরু হয়?
  • হঠাৎ করেই ব্যথা শুরু হয় কিনা?


এছাড়াও কিছু টেস্টের মাধ্যমে চিকিৎসক রোগ নির্ণয়ের চেস্টা করেন। টেস্ট গুলো হচ্ছে-

  • ব্লাড টেস্ট
  • প্রেগনেন্সি টেস্ট
  • ইউরিন টেস্ট
  • জরায়ু কোষের কালচার করা
  • আল্ট্রাসাউন্ড
  • কম্পিউটেড টোমোগ্রাফি বা CT Scan
  • MRI বা ম্যাগনেটিক রিজনেন্স ইমাজিং
  • লেপারোস্কপি
  • এক্সরে
  • কোলনোস্কপি
  • সিগ্ময়ডোস্কপি


পেলভিক পেইন এর চিকিৎসা:
পেলভিক পেইন এর নির্দিষ্ট চিকিৎসা নির্ভর করে রোগের কারণের উপর। অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিইনফ্লামেটরি বা পেইনকিলার সেবনের জন্য পরামর্শ দেয়া হয়। এছাড়াও ফিজিকেল থেরাপি ও ব্যয়ামের কথা বলা হয়। পুষ্টির পরিবর্তন ও পরিবেশের পরিবর্তনের ও পরামর্শ দেয়া হয়। পেশীতে টান ধরার ক্ষেত্রে পেশীর ক্ষেত্রে আরামদায়ক বা যন্ত্রণারোধক ওষুধগুলি প্রয়োগ করা হতে পারে । যদি কোন ক্ষত দেখা যায় সেক্ষেত্রে, অস্ত্রপচারের পরামর্শ দেওয়া হয়।

অঙ্গবিন্যাস রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে নিজের যত্ন গ্রহণের প্রয়োজন হয়। অন্যান্য থেরাপির মধ্যে রয়েছে আকুপ্রেসার, ভিটামিন ইনজেকশন এবং যোগব্যয়াম। কিছু নিয়মিত পদ্ধতি অনুসরনের মাধ্যমে ভালো ও দ্রুত সুস্থ হওয়া সম্ভব।




শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে