যুক্তিযুক্ত উত্তর আশা করছি
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

কোরআনের ঐশী গ্রন্থ হওয়ার কয়েকটি অকাট্য প্রমাণ: পবিত্র কোরআন যে আল্লাহ তায়ালারই বাণী এবয় এই ধরনের কিতাব যে মানুষের পক্ষে তৈরী করা আদৌ সম্ভব নয় এর অসংখ্য প্রমাণ স্বয়ং কোরআনেই বর্তমান। নিম্নে তা হতে কয়েকটি উদ্ধৃত হচ্ছে: এক: কোরআনের ভাষাগত ও সাহিত্যিক মান কোরআনের ভাষাগত ও সাহিত্যিক মান অত্যন্ত উচ্চাঙ্গের। এর ভাষা যেমন- স্বচ্ছ, তেমনি এর বাক্য বিন্যাসও অত্যন্ত নিখুঁত ও অভিনব। নবী করীম (সঃ) যখন কোরআন তেলাওয়াত করতেন, তখন এর ঝংকার ও সুরমাধুরী তাঁর সমভাষীদের মন মগজকে মোহিত করে তুলত। তারা বাস্তবভাবে উপলব্ধি করত যে, এ কালাম কিছুতেই মানুষের পক্ষে রচনা করা সম্ভন নয় তা সে আরবী সাহিত্যের যত বড় পন্ডিতই হোক না কেন। যদিও পূর্ব পুরুষের অন্ধ অনুকরণ, গোত্রীয় অহমিকা ও সংকীর্ণ স্বার্থবোধ কোরআনকে হোক বলে গ্রহণ করার পথে তাদের জন্য প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে রেখেছিল, কিন্তু তারা এ কথা ভালোভাবে উপলব্ধি করত যে, একজন উম্মী লোকের পক্ষে, যে কোনদিন পাঠশালার বারান্দাও মাড়ায়নি এ ধরনের উচ্চমানের কালাম রচনা করে পেশ করা কিছুতেই সম্ভব নয়। স্বয়ং কোরআনই একাধিকবার আরবদেরকে খোলাখুলি চ্যালেঞ্জ করেছে যে, “ তোমরা যতি একে নবীর (সঃ) রচিত বাণী বলে মনে কর, তাহলে তোমরা এ ধরনের বাণী তৈরী করে দেখাও।” মুশরেকদের প্রাণান্তর বিরোধিতার মুখে মক্কা শরীফে বিভিন্ন সময় উক্ত চ্যালেঞ্জ তিনবার প্রদান করা হয়্। রসূলের মাদানী জিন্দেগীর প্রথম দিকে আর একবার এ চ্যালেঞ্জ পুনরোক্তি করা হয়। মক্কায় একবার সুরা ইউনুসের ভিতরে, একবার সুরা হুদের ভিতরে আর একবার সুরা বনি ইসরাইলের ভিতরে নিম্নরূ চ্যালেঞ্জ দান করা হয়: ”এরা কি দাবী করে যে, কোরআন (আপনার) বানানো। আপনি বলুন, তোমরা যদি তোমাদের দাবীতে সত্যবাদী হও, তাহলে একটি সুরা অন্তত তৈরী করে নিয়ে এসো। আর এ ব্যাপারে আল্লাহ ব্যতীত যাদের সাহায্য প্রয়োজনবোধ করা। সাধ্যমত তাদেরকেও ডেকে নাও” (সুরা ইউনুস, আয়াত-৩৮) ”উহারা নাকি বলে যে, কোরআন রসূলের (সঃ) তৈরী করা, আপনি বলুন, তোমরা যদি সত্যবাদী হও, তাহলে এ ধরনের রচিত দশটি সুরা নিয়ে এসো। আর এ ব্যাপারে আল্লাহ ব্যতীত যাদের সাহায্য প্রয়োজন বোধ কর সাধ্যমত তাদেরকেও ডেকে নাও।” (সুরা হুদ, আয়াত-১৩) মহান আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, আপনি ঘোষণা করে দিন, জগতের সমগ্র মানব ও জ্বীন জাতি মিলেও যদি এ ধরনে একখানা কোরআন তৈরী করার চেষ্টা করে, তাহলেও তারা তা পারবে না, যদিও তারা এ ব্যাপারে পরস্পরকে সাহায্য করে।” (সুরা বনী ইসরাইল, আয়াত-৮৮) নবী করীম (স:) মদীনায় হিজরত করার পরপরই আর একবার সুরায়ে বাকারার ভিতরে উক্ত চ্যালেঞ্জের পুনরাবৃ্ত্তি নিম্নরূপে করা হয়, আর যে কিতাব আমি আমার বান্দার (মুহাম্মদের) উপর নাযিল করেছি, তা আমার পক্ষ হতে কিনা? এ ব্যাপারে যদি তোমাদের কোন সন্দেহ থাকে. তাহলে অনুরূপ একটি সুরা তৈরী করে নিয়ে এসো। আর এ কাজে আল্লাহ ছাড়া তোমাদের অন্যান্য সাহয্যকারীদেরকে ডেকে নাও যদি তোমরা সত্যবাদী হও।” (সুরা বাকারা, আয়াত-২৩) আরবদের কঠিন বিরোধিতার মুখে যখন বার বার এ চ্যালেঞ্জ প্রদান করা হয়েছিল, তখন নিশ্চয়ই তারা চুপ করে বসে ছিল না। তাদের ভিতরে বেশ কিছু বড় বড় কবি এবং উচ্চমানের সাহিত্যিক বর্তমান ছিল। এহেন প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জের জওয়াব দানের জন্য ইসলাম বিরোধীরা এদের সকলের দ্বারেই ধর্ণা দিয়েছিল। কিন্তু তারা সকলেই তাদেরকে হতাশ করেছিল। তাদের কোন কবি কিংবা কোন সাহিত্যিক প্রতিভার পক্ষেই কোরআনের ছোট্ট একটি সূরার অনুরুপও কোন সূরা তৈরী করে দেয়া সম্ভব হয়েছিল না। আল্লাহ তায়ালা ঘোষিত উক্ত চ্যালেঞ্জ শুধু ঐ সময়ের জন্য সীমাবদ্ধ নয়। বরং কোরআন অবতীর্ণের সময় হতে আরম্ভ করে কিয়ামত পর্যন্ত সুদীর্ঘ সময়কালব্যাপী কোরআন বিরোধীদের জন্য এটা একটি খোলা চ্যালেঞ্জ। আজও মিসর, ফিলিস্তিন, সিরিয়া, লেবানন প্রভৃতি দেশে আরবী বংশজাত বহু খৃস্টান ও ইহুদী পরিবার বর্তমান, যাদের মধ্যে আরবী ভাষার বড় বড় পন্ডিতও আছে। ইচ্ছা করলে তারাও এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে ভাগ্য পরীক্ষা করে দেখতে পারে। হয়তো তারা তা করে দেখেছেও। কিন্তু পূর্ববর্তীদের ন্যায় তাদের ভাগ্যেও হতাশা ছাড়া আর কিছুই জুটবেনা। যারা আরবী ভাষার পন্ডিত এবং যাদের মাতৃভাষা আরবী তারা এটা ভালভাবেই অনুধাবন করতে পারে যে, কোরআনের ভাষার সাথে মানব রচিত কোন আরবী পুস্তকের ভাষার তুলনাই হয় না। বরং নবী করীমের (স:) ভাষাও কোরআনের ভাষার ন্যায় উচ্চমানের ছিল না। নবুয়ত প্রাপ্তির পূর্বে চল্লিশ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি যে সব কথাবার্তা বলেছেন, এমনকি নবুয়ত প্রাপ্তি পরও সাধারণভাবে নবী (স:) (ওয়াহী ব্যতীত) যেসব কথা বলতেন তাও ছিল কোরআনের ভাষা হতে নিম্নমানের। ওয়াহীর ভাষার সাথে তার কোন তুলনাই হতো না। সুতরাং কোরআন যে আল্লাহর কিতাব, তার উচ্চাঙ্গের সাহিত্যিক মান, সুনিপুন শব্দ গঠন প্রণালী, অভিনব বাক্যবিন্যাস আর মর্মস্পর্শী সুরঝঙ্কার প্রভৃতিই তার অকাট্য প্রমাণ। দুইঃ কোরআনের আলোচ্য বিষয়সমূহ কোরআনে যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহের আলোচনা করা হয়েছে এবং যেসব দুরূহ সমস্যার সমাধান দেওয়া হয়েছে। সেটাও কোরআনের ঐশী গ্রন্থ হওয়ার একটি উজ্জ্বল প্রমাণ। কেননা নবী করীম (স:) যে এলাকায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন সে এলাকা ছিল তখনকার সভ্য জগতের বাইরে। কোন সুসংগঠিত রাষ্ট্র ব্যবস্থাও যেমন সেখানে ছিল না, তেমনি কোন মার্জিত সভ্যতাও সেখানে গড়ে উঠেনি। দু একটি ছোটখাট শহর ব্যতীত আর সব এলাকার অধিবাসীরাই যাযাবর জীবন যাপন করতো। প্রতিটি গোত্রই আলাদা আলাদা গোত্রীয় শাসন অর্থাৎ গোত্র সর্দারের অনুশাসন মেনে চলত। কদাচিত এক-আধজন লোক সামান্য লেখাপড়া জানলেও কোথাও কোন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যেত না। এমন এক পরিবেশে জন্ম নিয়ে মুহাম্মদ (স:) শৈশবেই পিতৃ-মাতৃহীন এতিমে পরিণত হন। ফলে তাঁর ভাগ্যে কোনরূপ লেখাপড়াই জোটেনি। যৌবনে সিরিয়ার দিকে দুটি সংক্ষিপ্ত বাণিজ্যিক সফর ব্যতীত কোন শিক্ষামূলক সফরও তিনি করেননি। কোন শিক্ষিত জ্ঞানী ব্যক্তির সাহচর্যও তিনি আদৌ পাননি। এমতাবস্থায় এমন একজন উম্মি লোকেরে পক্ষে বহু বিচিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্বলিত কোরআনের মত একখানা গ্রন্থ রচনা করে পেশ করা যে আদৌ সম্ভব নয়, তা যে কোন সাধারণ জ্ঞানের লোকও অনুধাবন করতে পারে। সুতরাং কোরআনের আলোচ্য বিষয়সমূহই বলে দেয় যে, কোরআন আল্লাহর কিতাব। তিন: প্রাগৈতিহাসিক ঘটনাবলীর যথাযথ বর্ণনা পবিত্র কোরআনে এমন ঘটনাসমূহের উল্লেখ পাওয়া যায়, যা ঘটেছিল ইতিহাস সৃ্ষ্টির বহু পূর্বে এবং যার সম্পর্কে ষষ্ঠ শতাব্দীর দুনিয়া বিশেষ কোন খোঁজ-খবর রাখত না। প্রাগৈতিহাসিক যুগের কিছু কিছু ঘটনার উল্লেখ ইহুদীদের ধর্ম গ্রন্থে ছিল বটে, তবে তার অধিকাংশই ছিল অতিরঞ্জিত ও বিকৃত। আবার কিছু কিছু ঘটনার চর্চা যদিও আরব এবং পাশ্ববর্তী এলাকার লোকদের ভিতরে ছিল কিন্তু তা ছিল একেবারেই অস্পষ্ট ও সন্দেহপূর্ণ। আবার এমন বহু ঘটনার বর্ণনা কোরআনে দেখা যায়, যার উল্লেখ না ছিল ইহুদীদের ধর্মগ্রন্থে আর না ছিল তার চর্চা আরবদের ভিতরে। পবিত্র কোরআন প্রাগৈতিহাসিক যুগের বিভিন্ন ঘটনা বিভিন্ন প্রসঙ্গে সংক্ষিপ্ত অথচ এমন নিখুঁতাভাবে বর্ণনা করেছে যার সত্যতাকে আপ পর্যন্ত কেউ চ্যালেঞ্জ করতে পারেনি। বরং অধুনা প্রত্নতত্ত্ববিদের ঐতিহাসিক নিদর্শনসমূহের নব নব আবিষ্কার এর সত্যতাকে আরও সন্দেহাতীত করে তুলেছে। আল্লাহ তায়ালার অলৌকিক মহিমায় কয়েক লক্ষ লোকসহ লোহিত সাগর অতিক্রম। অতঃপর মুসার তুর পাহাড়ে গমন এবং খোনে শরীয়িত প্রাপ্তি ইত্যাতি ঘটনা বর্ণনা করার পরে আল্লাহ তাঁ প্রিয় নবীকে উদ্দেশ্য করে বলেন,”এভাবেই আমি আপনার কাছে অতীত ঘটনাবলী বর্ণনা করছি। আর অবশ্যই আমি আপনাকে নিজের নিকট হতে একটি উপদেশনামা দিয়েছি।” (সুরা তাহা আয়াত-৯৯) সুতরাং একথা একন জোর করে বলা জলে যে, প্রাগৈতিহাসিক যুগের এসব ঘটনাবলী সেই মহান সত্তাই বর্ণা করেছেন, যিনি ইতিহাস সৃষ্টি পূর্ওে ছিলেন, এখনও আছেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন। কারণ কোরআন তাঁরই শ্বাশতবাণী আর তিনিই উক্ত ঘটনাবলী নবীর কাছে ওয়াহী মারফত বর্ণনা করেছেন। চার: ভবিষ্যত ঘটনাবলী সম্পর্কে সংবাদ দান কোরআন শরীফে এমন বহু ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়, যা সংঘটিত হওয়ার বহু পূর্বেই আল্লাহ ওয়াহীর মাধ্যমে রসূলকে জানিয়ে দিয়েছিলেন। নিম্নে কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করা হচ্ছে, (ক) ভবিষ্যদ্বানী সম্পর্কীয় ধরনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার বর্ণনা আমরা দেখতে পাই পবিত্র কোরআনের সুরায়ে রোমের প্রথমে। রসুলেন হিজরতের প্রায় সাত বছর আগে মক্কা শরীফে এ সুরাটি অবতীর্ণ হয়। সুরার প্রথমে যে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি উল্লেখ করা হয়েছে, তা হল রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াস কর্তৃক পারস্য সম্রাট খসরুকে পরাজিত করার ভবিষ্যদ্বানী। ঘটনাটি ঘটার প্রায় নয় বছর পূর্বে আল্লাহর রবী ওয়াহীর মাধ্যমে এ খবর শুনিয়ে দিয়েছিলেন। ঘটনাটি ছিল নিম্নরূপ: ইসলামের অভ্যত্থানের সামান্য আগে সারা পৃথিবীতে দুটি রাষ্ট্রই ছিল বৃহৎ ও শক্তিশালী। আর এদের সীমানওি ছিল পরস্পর সন্নিহিত। এর একটি হল পারস্য সাম্রাজ্য এবং অপরটি হল রোম সাম্রাজ্য। দুনিয়ার অপরাপর ছোট-খাট রাষ্ট্র ছিল এদের প্রভাবাধীন। এ দুটি শক্তিশালী রাষ্ট্রের ভিতরে প্রায়ই যুদ্ধ বিগ্রহ লেগে থাকতো। ৬১৫ খৃষ্টাব্দে রসূলের (স) হিজরতের সাত বছর পূর্বে পারস্য সম্রাট দ্বিতীয় খসরুর সেনাবাহিনীর হাতে রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াসের বাহিনী ভীষণভাবে পরাজিত হয়। পারসিয়ানরা জেরুজালেমস্থ রোমদের পবিত্র স্থানগুলো ধ্বংস করে দিয়ে খৃস্টানদের পবিত্র ক্রুশ নিয়ে যায়। এ যুদ্ধে সম্রাট তার গোটা এশিয়ান এলাকাই হারিয়ে কনস্ট্যান্টিনোপলে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। আর এ সংঘর্ষে রোমক শক্তি এমনভাবে পর্যুাদস্ত হয়েছিল যে, দুর ভবিষ্যতেও তার পুনরুত্থানের কোন সম্ভাবনাই পরিলক্ষিত হচ্ছিল না। পারস্য সম্রাটের এ বিজয়ের খবর যখন মক্কায় পৌঁছে তখন ছিল নবুয়তের পঞ্চম বর্ষ। পারসিয়ানরা পৌত্তলিক হওয়ার কারণে এ বিজয়ের সংবাদে মক্কার পৌত্তলিকেরাও বিশেষভাবে উৎফুল্ল হয়েছিল এবং মুসলমানদের এ বরে তারা বিদ্রুপ করছিল যে, যেভাবে আহলে কিতাব খৃস্টানরাজ রোম সম্রাট পৌত্তলিক পারসিয়ান সম্রাটের হাতে পর্যুদস্ত ও পরাভূত হয়েছে, তেমনি ভবিষ্যতে কিতাবধারী মুহম্মদ (স) এবং তাঁর অনুসারীরাও পৌত্তলিক কোরায়েশদের হাতে পর্যুদস্তু হবে। মোট কথা উক্ত ঘটনাকে মুশরিকগণ মুসলামানদের বিরুদ্ধে তাদের বিজয়ের একটি শুভ ইঙ্গিত বলে দাবী করছিল। আর প্রকৃত ব্যাপার ছিল এই যে, এই যুদ্ধের সূচনা হতেই পৌত্তলিক কোরায়েশদের মানসিক সমর্থন ছিল পারসিয়ানদের পক্ষে। আর রোমকরা আহলে কিতাব হওয়ার কারণে মুসলমানদের সমর্থন ছিল রোমকেদের পক্ষে। অতঃপর পারসিয়ানদের বিজয় সংবাদে মক্কার পৌত্তলিকরা যখন বিজয়োৎসব করছিল, তখন রোমকদের বিজয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করে আল্লাহ তার নবীর উপরে নিম্নোক্ত আয়াত অবতীর্ণ করেন, ”রোমানরা আরবদের নিকটবর্তী ভূ-খন্ডে পরাজয়বরণ করেছে। অতঃপর তারা দশ বছরেরও কম সময়ের ভিতরে বিজয় লাভ করবে। প্রকৃতপক্ষে প্রথমাবস্থায়ও (পরাজয়কালে) যেমন চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী তিনিই। আর সেদিন (রোমকদের বিজয়কালে) মুসলমানেরা আল্লাহ তায়ালার সাহয্যপ্রাপ্ত হয়ে আনন্দোৎসব করবে।” (সুরা রুম আয়াত ১-৫) আল্লাহ তায়ালাম উপরোক্ত ভবিষ্যদ্বানী রসূল (স) যখন পাঠ করে শুনালেন, তখন মক্কার মুশরিকেরা এ নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ শুরু করে দিল। কেননা রোমান শক্তি পারসিয়ানদের হাতে এমনভাবে পর্যুদস্ত হয়েছিল যে, তাদের পক্ষে পুনরায় একটি বৃহত্তর শক্তি হিসেবে দাঁড়াবার কোন সম্ভাবনাই দেখা যাচ্ছিল না। এমনাবস্থায় এ ধরনের একটি পর্যুস্ত শক্তি মাত্র দশ বছরেরও কম সময়ের ভিতরে একটি বৃহত্তর শক্তিকে পুনর্গঠিত হয়ে বিজয়ী পারসিয়ানদেরকে পরাভূত করবে, এটাকে কল্পনা বিলাসীর কল্পনা বলেই মনে হত। কোরআন মহান আল্লাহর কালাম বলেই তার পক্ষেই এই ধরনের নিখুঁত ভবিষ্যদ্বাণী সম্ভব ছিল। কেননা আল্লাহর কাছে অতীত ও ভবিষ্যৎ বর্তমানের ন্যায়। এতদ্ব্যতীত হাশর-নাশর, পরকাল-পুনরুত্থান হিসাব-নিকাশ, বেহেশত-দোযখ ইত্যাদি সম্পর্কীয় অসংখ্য ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে যা প্রতিফলিত হওয়ার সময় এখনও আসেনি। এসব নিখুঁত ভবিষ্যদ্বানী নিশ্চয়ই এ কথা প্রমাণ করে যে, কোরআন আল্লাহর কিতাব, কেননা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ ভবিষ্যতের জ্ঞান রাখে না। পাঁচ: মানব জীবনের জন্য সূদুর প্রসারী ও মৌলিক ব্যবস্থা দান কোরআন মানব জীবনের বিভিন্ন ‍দিক সম্পর্কে যে সমস্ত সুসামঞ্জস্য, সুপরিকল্পিতও সূদুরপ্রসারী ব্যবস্থা দান করেছে, তাও কোরআনের ঐশীগ্রন্থ হওয়ার একটি জাজ্জল্যমান প্রমাণ। কোরআনের এসব চমৎকার বিধানবলীর প্রশংসা করতে গিয়ে প্রসিদ্ধ পাশ্চাত্য পন্ডিত স্যার ডায়মন্ডবার্স লিখেছেন, “কোরআনের বিধানবলী শাহানশাহ থেকে আরম্ভ করে পর্ণকুটীরের অধিবাসী পর্যন্ত সকলের জন্যই সমান উপযোগী ও কল্যাণকর। দুনিয়ার জন্য কোন ব্যবস্থায় এর বিকল্প খুঁজে পাওয়া একেবারেই অসম্ভব।” ডক্টর অসওয়েল জনসন বলেন, “কোরআনের প্রজ্ঞাপূর্ণ বিধানবলী এতই কার্যকরী এবং সর্বকালেন উপযোগী যে, সর্বযুগের দাবীই উহা পূরণ করতে সক্ষম। কর্ম-কোলাহলপূর্ণ নগরী, মুখর জনপদ, শুণ্য মরুভূমি এবং দেশ হতে দেশান্তর পর্যন্ত সব জায়গায় এ বাণী সমভাবে ধ্বনিত হতে দেখা যায়।” গীবন বলেন, “জীবনের প্রতিটি শাখার কার্যকরী বিধান কোরআন মওজুদ রয়েছে” বিবাহ-তালাক সম্পর্কীয় যাবতীয় বিধান, উত্তরাধিকার সম্পর্কীয় ব্যবস্থাবলী, রাষ্ট্রীয় ও আর্থিক মূলনীতিসমূহ, যুদ্ধ-সন্ধি সম্পর্কীয় নিয়ম কানুন ইত্যাদি নিঃসন্দেহে প্রমাণ করে যে, কোরআন আল্লাহর কিতাব। কেননা যে নবীর মুখ থেকে আমরা এ কিতাব পেয়েছি তিনি ছিলেন উম্মি। সুতরাং তিনি কোন আইনের কিতাবও অধ্যয়ন করেননি, কিংবা কোন আইনজ্ঞের কাছে কোন পাঠও গ্রহণ করেননি। কাজেই নবী না হলে তাঁর পক্ষে এ ধরনের চমৎকার বিধানবলী পেশ করা সম্ভব ছিল না। (সংগৃহীত)

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ