ঈমান আনার পর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হচ্ছে নামাজ, পবিত্র কোরআনের বহু আয়াতে আল্লাহ নির্দিষ্ট সময়ে নামাজ আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। নামাজ আদায়ের গুরুত্ব বর্ণনা করে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কালামে এরশাদ করেন, ‘নির্দিষ্ট সময়ে নামাজ আদায় করা মোমিনের ওপর একান্ত অপরিহার্য।’ -সূরা নিসা : ১০৩ তবে ভুল-ত্রুটি, নিদ্রা, শারীরিক অসুস্থতা ইত্যাদি কারণে মানুষের নামাজ কাজা হয়ে যেতে পারে, আর কারও কোনো নামাজ কাজা হয়ে গেলে তা মাফ হয়ে যায় না বরং স্মরণ হওয়ার পর সে নামাজের কাজা আদায় করে নিতে হয়। বহু হাদিসে কাজা নামাজ আদায়ের গুরুত্ব বর্ণিত হয়েছে, এ সম্পর্কে হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘যদি কোনো ব্যক্তি নামাজ আদায়ের কথা ভুলে যায় তাহলে যখন স্মরণ হয় তখন সে যেন তার কাজা আদায় করে নেয়, এছাড়া তার ওপর অন্য কোনো কাফফারা নেই।’ কারণ আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘তোমরা আমার স্মরণের জন্য নামাজ কায়েম করো।’ -সহীহ বুখারি, হ. ৫৭২, সহীহ মুসলিম,হা. ১৫৯৮ অপর এক হাদিসে বর্ণিত আছে, হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো নামাজ আদায়ের কথা ভুলে যায় অথবা নামাজের সময় ঘুমিয়ে থাকে তাহলে তার কাফফারা হচ্ছে যখন স্মরণ হবে তখন কাজা আদায় করে নেয়া।’ -সহীহ মুসলিম, হা. ১৬০০ অনুরূপভাবে হজরত আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, লোকেরা নামাজের কথা ভুলে ঘুমিয়ে থাকা সম্পর্কে যখন রাসুলুল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞেস করেন তখন তিনি উত্তরে বলেন, ‘নিদ্রার ক্ষেত্রে কোনো কঠোরতা নেই। কঠোরতা হলো জাগ্রত অবস্থায় নামাজ না পড়ার ক্ষেত্রে, তোমাদের কেউ যদি নামাজের কথা ভুলে যায় তাহলে সে যেন স্মরণ হওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে কাজা আদায় করে নেয়।’ -জামে তিরমিজি, হা. ১৭ উপরে উল্লেখিত হাদিসগুলোতে রাসুলুল্লাহ সা. একটি মূলনীতি বর্ণনা করেছেন তা হচ্ছে, যদি কারও কোনো নামাজ কাজা হয়ে যায় তাহলে স্মরণ হওয়ার পর তাকে সে নামাজের কাজা আদায় করে নিতে হবে। কাজা নামাজ আদায়ের বিধান প্রসঙ্গে আল্লামা মুরাদি হাম্বলি মাজহাবের ফতোয়া বর্ণনা করে বলেন, ‘যার বহু নামাজ কাজা হয়ে গেছে, তার ওপর আবশ্যক হচ্ছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওইসব নামাজের কাজা আদায় করে নেয়া।’ -আল-ইনসাফ : ৪৪২ ইমাম শাফিয়ি রহ. বলেন, ‘যদি কারও এক ওয়াক্ত কিংবা তার চেয়ে বেশি নামাজ কাজা হয়ে যায় তাহলে তার ওপর অপরিহার্য হচ্ছে কাজা নামাজ আদায় করে নেয়া।’ -ফাতহুল জওয়াদ : ১/২৩৩ কাজা নামাজ আদায়ের ব্যাপারে ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) ফুকাহায়ে কেরামের মতামত উল্লেখ করার পর তাদের সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করে বলেন, ‘যার (জিম্মায়) কাজা নামাজ রয়েছে, তার ওপর কর্তব্য হচ্ছে যত দ্রুত সম্ভব কাজা নামাজ আদায় করে নেয়া। চাই সেসব নামাজ ইচ্ছাকৃতভাবে কাজা করুক কিংবা অনিচ্ছাকৃতভাবে কাজা করুক।’ -ফতওয়ায়ে ইবনে তাইমিয়া : ২৩/২৫৯