শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

কপিরাইট মূলত দুটি শব্দের সম্মিলন। কপি এবং রাইট। কপি অর্থ নকল বা প্রতিলিপি বা অনুলিপি বা অনুকৃতি বা অনুকরণ বা অনুসৃতি ইত্যাদি। আর রাইট হচ্ছে অধিকার বা স্বত্ব বা সত্য বা ন্যায় ইত্যাদি। সহজ ভাষায় বলতে পারি, কপিরাইট হচ্ছে নকল করার অধিকার বা নকলাধিকার। যিনি নতুন কিছু সৃষ্টি করেন, তিনি তাঁর সেই সৃষ্টি অন্যকে জানাতে চান বা অন্যকে ব্যবহার করতে দিতে চান। তখন সেই সৃষ্টিকর্মের আরো অনুলিপি বা নকল বা কপি প্রয়োজন হয়। এই ধরনের কপি বা অনুলিপি বা নকল করার অধিকার রাখেন কেবল সেই সৃষ্টিকর্মের স্রষ্টা। আর রাখেন তিনি, যাকে সেই শিল্পস্রষ্টা বৈধ অনুমতি দিয়েছেন। আমাদের দেশে গ্রন্থের ক্ষেত্রেই এই ধারণাটি সমধিক প্রচলিত। বাংলায় কপিরাইটের বহুল প্রচলিত পারিভাষিক অর্থ করা হয়েছে ‘মেধাস্বত্ব’। বাংলা একাডেমী ইংলিশ- বেঙ্গলি ডিকশনারিতেও কপিরাইটের অর্থ ‘মেধাস্বত্ব’; ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ‘কোনো লেখক বা শিল্পী কর্তৃক তাঁর সৃষ্টিকর্মের উপর একটি নির্দিষ্ট সময়ে স্থায়ী অধিকার।’ কপিরাইটের মৌলিক তাৎপর্যের সঙ্গে এই অর্থের কোনো বিরোধ না থাকলেও কপিরাইটের যে ক্রমসম্প্রসারমান ক্ষেত্র ও পরিধি, তা এই ব্যাখ্যায় পূর্ণ-প্রতিফলিত নয়। এটি বরং ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি-র বাংলা পারিভাষিক শব্দ হিসেবে অধিক সঙ্গতিপূর্ণ। কপিরাইট ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টির একটি অংশ, অন্য অংশ ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল রাইট, যার মধ্যে রয়েছে প্যাটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক। তাই কপিরাইটের তাৎপর্য আলাদাভাবে অনুধাবনযোগ্য। কপিরাইট কেবল লেখক বা শিল্পীর বিষয় নয়, এটি যে কোনো সৃষ্টিশীল মানুষের সৃষ্টিস্বত্বের চর্চাক্ষেত্র। কেবল বৃহত্তর জনসাধারণ নয়, কপিরাইট সম্পর্কে আমাদের শিক্ষিত সমাজের ধারণাও যে খুব গোছালো ও সময়ানুগ নয়, এই পরিভাষা ও ব্যাখ্যা তার একটি সহজ উদাহরণ।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

মেধাস্বত্ব বা কপিরাইট (ইংরেজি: Copyright) বিভিন্ন রাষ্ট্রে বিদ্যমান একটি আইনি অধিকার, যাতে কোনও মৌলিক সৃষ্টিকর্মের মূল সৃষ্টিকর্তা ব্যতীত অন্য কোনও পক্ষ সেই সৃষ্টিকর্ম ব্যবহার করতে পারবে কি না কিংবা কোন শর্তে ব্যবহার করতে পারবে, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেওয়ার ব্যাপারে ঐ মূল সৃষ্টিকর্তাকে একক ও অনন্য অধিকার প্রদান করা হয়। মেধাস্বত্ব সাধারণত একটি সীমিত মেয়াদের জন্য কার্যকর হয়। ঐ মেয়াদের পর কাজটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ক্ষেত্রের বা জনক্ষেত্রের (পাবলিক ডোমেইনের) অন্তর্গত হয়ে যায়। মেধাস্বত্ব ছাড়াও আরেক ধরনের মেধা সম্পদ অধিকার বা স্বত্ব আছে, সেটি হল শিল্প সম্পত্তি স্বত্ব। এই অনন্য অধিকারগুলি পরম অধিকার নয়, বরং এগুলির সীমাবদ্ধতা ও ব্যতিক্রম আছে (যেমন নায্য ব্যবহার বা ফেয়ার ইউজ)।মেধাস্বত্বের ইংরেজি পরিভাষা "কপিরাইট" বলতে আক্ষরিক অর্থে কোন মৌলিক সৃষ্টির "অনুলিপি তৈরির অধিকার" বোঝায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই অধিকারগুলো সীমিত সময়ের জন্য সংরক্ষিত থাকে। মেধাস্বত্ব বা কপিরাইটের আন্তর্জাতিক চিহ্ন হল © (এতে ইংরেজি Copyright শব্দের আদ্যক্ষর C-কে একটি বৃত্তের ভেতরে স্থাপন করা হয়েছে), এবং কিছু কিছু স্থানে বা আইনের এখতিয়ারে এটার বিকল্প হিসেবে (c) বা (C) লেখা হয়।

সৃষ্টিশীল, বুদ্ধিবৃত্তিক কিংবা শিল্পের বিভিন্ন প্রকার কাজের একটা বিরাট পরিব্যাপ্তিতে মেধাস্বত্ব থাকতে পারে বা হওয়া সম্ভব। কবিতা, অভিসন্দর্ভ, নাটক এবং অন্যান্য সাহিত্যকর্ম, চলচ্চিত্র, নৃত্যবিন্যাস (নাচ, ব্যালে ইত্যাদি), সঙ্গীত রচনা, ধারণকৃত শব্দ, চিত্রকর্ম, অঙ্কন, মূর্তি বা প্রতিকৃতি, আলোকচিত্র, সফটওয়্যার, বেতার ও টেলিভিশনের সরাসরি ও অন্যান্য সম্প্রচার, এবং কিছু কিছু এখতিয়ারে শিল্প-নকশা (ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিজাইন) এর অন্তর্গত।

নকশা বা শিল্প-নকশাগুলোর (ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিজাইন) জন্য কোন কোন এখতিয়ারে আলাদা বা যুগপৎ/অধিক্রমণকারী (ওভারল্যাপিং) আইন থাকতে পারে। মেধাস্বত্ব আইন, বুদ্ধিবৃত্তিক বা মেধা সম্পদ (ইন্টেলেকচুয়্যাল প্রোপার্টি) সংক্রান্ত একটি ব্যাপ্ত বিষয়ের অধীনে অনেকগুলি আইনের একটি।

মেধাস্বত্ব আইন শুধুমাত্র ঠিক কী উপায়ে বা কী রূপে ধারণাসমূহ (আইডিয়া) অথবা তথ্য পরিবেশিত হবে সেটা বিবেচনা করে। এটা মেধাস্বত্ব সংরক্ষিত কাজের মূল ধারণা, মূলনীতি (কনসেপ্ট), সত্য (ফ্যাক্ট), ধরন (স্টাইল) অথবা পদ্ধতিটিকে আওতাভুক্ত করে না বা করার চেষ্টা করে না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মিকিমাউস কার্টুন বিষয়ে যে মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ করা আছে, এটা অননুমদিত কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক এই কার্টুন বিতরনের অধিকার রহিত করে এবং অননুমদিত কেহ ডিজনীর সৃষ্ট মানুষসদৃশ মিকিমাউসের মত একই রকম কোন ছবির অনুলিপি বা নকল করতে পারবে না; কিন্তু এই আইন সাধারণভাবে মানুষের মত দেখতে অন্য কোন ইঁদুর আঁকতে বা সৃষ্টি করতে বাধা দেয় না - যতক্ষণ সেগুলো ডিজনীর মূল নকশা থেকে যথেষ্ট অন্যরকম থাকে এবং ওটার (মিকিমাউসের) নকল বা অনুলিপির মত না হয়। কিছু কিছু এখতিয়ারে, মেধাস্বত্ব সংরক্ষিত কাজের বিদ্রুপাত্মক বা ব্যাখ্যামূলক কাজ প্রকাশেরও উপায় থাকে। ট্রেডমার্ক এবং প্যাটেন্ট-এর মত অন্যান্য আইনের ধারা পুনঃপ্রকাশ বা পুনঃউৎপাদন কিংবা ব্যবহারের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করে, যেটা মেধাস্বত্ব আইন করে না ।

মেধাস্বত্ব আইনগুলোকে কোন কোন দেশে বার্ন আন্তর্জাতিক সমঝোতার মত আন্তর্জাতিক সমঝোতার মাধ্যমে স্বীকৃত ও প্রমিতকরণ করা হয়েছে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মত আন্তর্জাতিক সংস্থা বা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্য দেশগুলিতে এটা প্রয়োজন হয়।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ