শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

এই আর্টিকেলটি পড়ুন আশাকরি উত্তর পাবেন- ‘ধর্ষণের পর হত্যার শাস্তি একমাত্র মৃত্যুদন্ড’-এমন বিধান দিয়ে ১৯৯৫ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের তিনটি ধারাকে অসাংবিধানিক বলে রায় দিয়েছেন বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। যে আইনটিকে রহিত করে ২০০০ সালে‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন’ করে বাংলাদেশ সরকার। সে আইনে ধর্ষণ ও হত্যার সাজা মৃত্যুদন্ডের পাশাপাশি যাবজ্জীবনের বিধানও রাখা হয়। তবে নতুন এ আইনেরও একটি ধারাকেও অসাংবিধানিক বলেছেন আপিল বিভাগ। যে ধারায় বলা হয়েছিল- ‘১৯৯৫ সালের আইনে করা মামলা সেই পুরোনো আইনেই চলবে’। আপিল বিভাগের এই রায়ের ফলে ধর্ষণের পর হত্যা সংক্রান্ত পুরাতন ও নতুন সব ধরনের মামলায় সর্ব্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও হতে পারে।যেখানে ১৯৯৫ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এ ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে সাজা হিসেবে শুধু মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছিল। আইনজীবীদের মতামত, কোনো অপরাধেরই একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হতে পারে না। অপরাধের ধরন অনুযায়ী অন্য শাস্তিও হতে পারে। দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করলে কেউ কম অপরাধী, আবার কেউ বেশি অপরাধীও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া সংবিধান পরিপন্থী। কারণ, অপরাধের ধরন অনুযায়ী সাজা কম বা বেশি হতে পারে। মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের বেঞ্চ একটি রিট মামলার আপিলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে এ রায় দেন। বেঞ্চের অপর তিন সদস্য হলের বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। রিটটি করেছিল মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)। আপলি বিভাগের রায়ে বলা হয়,  রহিত হওয়া নারী নির্যাতন আইন, ১৯৯৫-এর তিনটি ধারা ও ২০০০ সালের নতুন আইনেরও একটি ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাই এই চারটি ধারাকে অবৈধ ঘোষণা করা হলো। এদিকে পুরাতন আইনের তিনটি ধারা অসাংবিধানিক হওয়ায় এ আইনের মামলা গুলোর ভবিষ্যত নিয়ে জানতে চাইলে রিট আবেদনের পক্ষের আইনজীবী এম আই ফারুকী বলেন, সুপ্রিম কোর্টের পূর্নাঙ্গ রায় না পাওয়া পযন্ত কিছু বলা যাবে না। এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানান, ২০০০ সালে সংশোধন হওয়ার পর ওই আইনে ফাঁসির দণ্ডের পাশাপাশি যাবজ্জীবনও রাখা হয়েছিল। তবে সংশোধন হওয়ার আগে যেসব অপরাধে যাদের সাজা হয়েছে, এই আইন বাতিল করায় তাদের সাজা বাতিল হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আগের আইনে যাদের সাজা হয়েছে, তাদের ২০০০ সালের নতুন আইনে বিচার করতে কোনো বাধা নেই’। তবে লিখিত রায় হাতে পাওয়ার পর এ বিষয়ে আদালতের দেওয়া আরো কিছু পর্যবেক্ষণ সহ বিস্তারিত জানা যাবে বলে তিনি জানান। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, অপরাধের ধরন অনুযায়ী শাস্তির ধরনও ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। সে জন্য আদালত ১৯৯৫ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের তিনটি ধারা ও ২০০০ সালের একটি ধারা অসাংবিধানিক ঘোষণা করে বাতিল করেছেন আপিল বিভাগ। ওই ধারাগুলোতে অপরাধের একমাত্র শাস্তিই ছিল মৃত্যুদণ্ড।’ সুপ্রিম কোর্ট সূত্র জানায়, ২০০১ সালে মানিকগঞ্জের শিবালয় থানার শিবরামপুর গ্রামের বাসিন্দা শুকুর আলী (১৪) একই গ্রামের সাত বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করে। এ ঘটনায় ২০০১ সালের ১২ জুলাই মানিকগঞ্জের একটি আদালত শুকুর আলীকে নারী নির্যাতন আইনের ১৯৯৫ অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড দেন। ২০০৪ সালে হাইকোর্ট এবং পরের বছর আপিল বিভাগও তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে রিভিউ করলেও তার রিভিউ আবেদন খারিজ করেন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত। শুকুর আলী বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। এ অবস্থায় তার প্রাণভিক্ষার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করা হয়েছে, যা ১০ বছর ধরে অনিষ্পন্ন অবস্থায় রয়েছে। ওই সময়ে ১৪ বছরের একটি শিশুকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ায় ব্লাস্টের পক্ষ থেকে নারী নির্যাতন আইনের এ চারটি ধারা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৫ সালে হাইকোর্টে রিট করা হয়। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালে হাইকোর্ট নারী নির্যাতন আইনের এই ধারাগুলোকে অবৈধ করে রায় দেন। তবে শুক্কুর আলীর দণ্ডের বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য একটি সনদ দিয়ে আপিল করার অনুমিত দেন হাইকোর্ট। সে সনদ পেয়ে ব্লাস্ট আপিল করলে চূড়ান্ত শুনানি শেষে মঙ্গলবার রায় দেন সুপ্রিম কোর্ট। এ রায়ের ফলে শূক্কুর আলীর দণ্ড কমবে কিনা কিংবা খালাস পাবেন কিনা এ প্রশ্নের জবাবে আইনজীবীরা বলেন, পূর্নাঙ্গ রায় বের হলে তা জানা যাবে। এদিকে এ রায়ের তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় নারী ও শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী-পরিচালক এডভোকেট সালমা আলী বলেন, "একই অপরাধে একেক অপরাধী যেন একেক ধরনের শাস্তি না পায়। তাতে অপরাধীর মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়। যতটুকু জেনেছি এ রায়ে ধর্ষনের পর হত্যার ক্ষেত্রে এখন অপরাধী তার অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী শাস্তি পাবে।এর আগে ১৯৯৫ সালের আইনে করা মামলায় এ ধরনের আসামিদের জন্য শাস্তি ছিল শুধু মৃত্যুদন্ড। আর ২০০০ সালের আইনে করা মামলার আসামিদের জন্য ছিল মৃত্যুদন্ডসহ ভিন্ন মাত্রার শাস্তি। তবে পূর্ণাঙ্গ রায় পেলেই আরো বিস্তারিত জানা যাবে"। (সংগৃহিত)

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ