যেখান থেকেই দিন সমস্যা নেই,,,,,,, একটু জরুরি,,,, প্লিজ তাড়াতাড়ি দিবেন।।।। ধন্যবাদ
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

মানবসেবাই প্রকৃত ধর্ম। আল্লাহকে কাছে পাওয়ার আরেকটি অন্যতম মাধ্যম হলো মানবসেবা।

ইসলাম মানুষের সঙ্গে মানুষের ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের জন্যে অনুপ্রেরণা দেয়। মানুষের সেবা করতে এবং তার কষ্ট, অসুবিধা দূর করার জন্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন।

মানবসেবা ইসলামের একটি শাখা। আমাদের মুসলমান হিসেবে কর্তব্য মানুষের দুঃখে কষ্টে পাশে থাকা, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া। আল্লাহর প্রেরিত নবী রাসূল এবং পীর-আউলিয়ারা যারা ইসলাম প্রচারের জন্য এ দেশে এসেছিলেন, তারা সবাই মানবতার সেবায় নিবেদিত ছিলেন।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব কষ্টসমূহ থেকে কোনো কষ্ট দূর করবে কিয়ামতের কষ্টসমূহ থেকে আল্লাহ তার একটি কষ্ট দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোনো অভাবীকে দুনিয়াতে ছাড় দেবে আল্লাহ তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে ছাড় দেবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের দোষ গোপন রাখবে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ গোপন রাখবেন। আর আল্লাহ বান্দার সাহায্যে থাকেন যতক্ষণ সে তার ভাইয়ের সাহায্য করে যায়।’ (মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজি)।

মানুষের সেবা করা, দুখী মানুষের পাশে দাঁড়ানো একটি উত্তম ইবাদত। যুগে যুগে ইসলামী মনীষীগণ মানব সেবার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। বিদায় হজে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের তথা প্রতিটি মুসলমানের  জান, মাল, সম্পত্তি, ইজ্জত, শরীরের চামড়া যেভাবে আজকের এ মহান ইয়ামুন্নাহারের দিনে, এ পবিত্র জিলহজ মাসে এ পবিত্র হেরেম শরিফে হারাম ও সুরক্ষিত, ঠিক তেমনিভাবে সব দিন, সব মাস ও সর্ব স্থানে হারাম ও সুরক্ষিত বলে গণ্য হবে। খবরদার! তোমরা আমার অবর্তমানে পুনরায় কাফেরদের ন্যায় পরস্পর মারামারি, কাটাকাটিতে লিপ্ত হবে না।’ (বুখারি শরিফ)।

মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব- আশরাফুল মাখলুকাত। আমাদের আদি পিতা হজরত আদম আলাইহিস সালাম ও মা হজরত হাওয়া আলাইহিস সালাম হতে আমাদের মানবকূলের বংশ বিস্তৃত। সে হিসেবে আমরা একজন আরেকজনের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে জড়িত। প্রত্যেক মানুষ মানুষকে সাহায্য সহযোগিতার মাধ্যমে এই সুন্দর ভুবন গড়ে তোলা সম্ভব। ইসলাম এই শিক্ষা দিয়েছে। ইসলামে মুসলমান এবং বিধর্মী সবার সঙ্গেই ভালো ব্যবহার ও প্রয়োজনে তাদের সেবা ও উপকার করার কথা বলা হয়েছে।

ইসলামে বলা হয়েছে আর্ত, দুঃখিনীর সেবায় যথাসম্ভব নিজেকে নিয়োজিত করতে। ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম আমাদের জানিয়ে দিয়ে গেছেন কীভাবে জীবনে চলতে হবে। হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবনে কখনো কোনো সাহায্য প্রার্থীকে না বলেননি। মানব সেবাকে তিনি নিজের জীবনের ব্রত হিসেবে নিয়েছিলেন। নবীজি (সা.) তাঁর মহৎ কার্যক্রমের মাধ্যমে সেই সময় আরব সমাজের সর্বস্তরের মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছিলেন। মক্কার জনসাধারণ তাকে উপাধি দিয়েছিল আল-আমিন যার অর্থ হলো বিশ্বাসী।

নবীজি (সা.) ‘হিলফুল ফুজুল’ নামে একটি সংঘটন করে আর্তমানবতার সেবা, অসহায়দের সাহায্য-সহযোগিতা করে আরবের মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলে। রাসূলের এই মানব সেবামূলক কাজ বিধর্মীদের কাছেও প্রশংসনীয় ছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা নিজে না খেয়ে গরীব দুঃখীকে খাবার দিয়েছেন। অন্যকে সাহায্য করার জন্য নিজের প্রয়োজনকে ত্যাগ করে ছিলেন।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহর ইবাদত কর, দরিদ্রকে খাদ্য দান কর এবং উচ্চ শব্দে সালাম কর। নিরাপত্তা সহকারে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ এই ছিল মহানবী (সা.) এর শিক্ষা। মহানবী আমাদের ভোগ বিলাস ত্যাগ করে অন্যের সাহায্যে নিজেকে নিয়োজিত করার জন্যে উৎসাহ দিয়েছেন। অসহায়কে সাহায্য করাকে নবীজি (সা.) জিহাদের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে; তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘বিধবা ও অসহায়কে সাহায্যকারী ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর সমতুল্য।’ (বর্ণনাকারী বলেন,) আমার ধারণা তিনি আরো বলেন, ‘এবং সে ওই সালাত আদায়কারীর ন্যায় যার ক্লান্তি নেই এবং ওই সিয়াম পালনকারীর ন্যায় যার সিয়ামে বিরত নেই।’ (সহিহ বোখারি,সহিহ মুসলিম)।

মানুষের সেবার মাধ্যমে অতি সহজে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। তবে কেন এই ব্যাপারে আমরা উদাসীন হবো। হজরত আবু হুরায়রা ( রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘কেয়ামত দিবসে নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা বলবেন, ‘হে আদম সন্তান, আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমার শুশ্রূষা করোনি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার প্রতিপালক। আপনিতো বিশ্বপালনকর্তা কীভাবে আমি আপনার শুশ্রূষা করব?’ তিনি বলবেন, ‘তুমি কী জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল, অথচ তাকে তুমি দেখতে যাওনি। তুমি কী জান না, যদি তুমি তার শুশ্রূষা করতে তবে তুমি তার কাছেই আমাকে পেতে।’ ‘হে আদম সন্তান, আমি তোমার কাছে আহার চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে আহার করাওনি।?’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার রব, তুমি হলে বিশ্ব পালনকর্তা, তোমাকে আমি কীভাবে আহার করাব?’ তিনি বলবেন, ‘তুমি কী জান না যে, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাদ্য চেয়েছিল, কিন্তু তাকে তুমি খাদ্য দাওনি। তুমি কি জান না যে, তুমি যদি তাকে আহার করাতে তবে আজ তা প্রাপ্ত হতে।?’ ‘হে আদম সন্তান, তোমার কাছে আমি পানীয় চেয়েছিলাম, অথচ তুমি আমাকে পানীয় দাওনি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার প্রভু, তুমি তো রাব্বুল আলামীন তোমাকে আমি কীভাবে পান করাব?’ তিনি বলবেন, ‘তোমার কাছে আমার অমুক বান্দা পানি চেয়েছিল কিন্তু তাকে তুমি পান করাওনি। তাকে যদি পান করাতে তবে নিশ্চয় আজ তা প্রাপ্ত হতে।’ (মুসলিম : ৬৭২১; সহীহ ইবন হিব্বান : ৭৩৬)

ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনবিধান। ইসলামের সঙ্গে চলতে হলে ইসলামে দেখানো প্রতিটি বিষয় মেনে চলতে হয় তাই কেউ যদি মানুষের সেবা অথবা সাহায্য সহযোগিতা করার ব্যাপারে উদাসীন থাকে তবে সেক্ষেত্রে তার আমল পরিপূর্ণ হবে না। মানবসেবার জন্য পুকুর খনন, রাস্তাঘাট ও বাঁধ নির্মাণসহ নানা জনকল্যাণ মুলক কাজ করাও বিশেষ সাওয়াবের কাজ।

মানব সেবায় ইসলাম এতো উৎসাহ দিয়েছে যে রাস্তা ও চলার পথ হতে সামান্য পাথর সরিয়ে ফেলার জন্যেও রয়েছে সাওয়াব। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘ইমানের ৭২টি শাখা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে একটি হলো রাস্তা থেকে কোনো কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেওয়া।’ (মুসলিম শরিফ)।

মানুষের জন্যে যার মনে কোনো দয়া নেই আল্লাহ তায়ালার রহমতও তার ওপর নেই। হাদিস শরীফে এসেছে- ‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া প্রদর্শন করে না আল্লাহও তার প্রতি রহমত করেন না।’ (তিরমিযী শরীফ)।

আল্লাহ তায়ালা সূরা বাকারার ২৬১ নম্বর আয়াতে বলেন, ‘যারা আল্লাহর পথে তাদের সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি বীজের মতো, যা উৎপন্ন করল সাতটি শিষ, প্রতিটি শিষে রয়েছে ১০০ দানা। আর আল্লাহ যাকে চান, তার জন্য বাড়িয়ে দেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’  গরীব, দুঃখী, অসহায়, সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের নিয়ে কাজ করলে একটি সমাজ সুন্দর হয়ে ওঠে। হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবনে কখনো কোনো সাহায্য প্রার্থীকে না বলেননি।

আমাদের জীবনে চলার পথে অনেকে আছে যারা বিপদে পড়ে যায়। তাদের সেই মুহূর্তে সাহায্য করাটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব ও বটে। পবিত্র কোরানের সূরা বাকারায় আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, যদি তোমরা দান-সদকাহ বা সাহায্য-সহযোগিতা প্রকাশ্যে কর তাও ভালো। আর যদি এমন কাজ গোপনে বা অপ্রকাশ্যে কর, তা আরো ভালো। ইসলাম আমাদের মানবতার একটি আদর্শরেখা চিনিয়ে দেয়। ইসলামে আশপাশে প্রতিবেশীদের সর্বদা খোঁজ-খবর নেয়ার ব্যাপারেও তাগিদ দেয়া হয়েছে।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের মাঝে যারা তার প্রতিবেশীকে উপোস রেখে খাবার গ্রহণ করে, সে আমার অনুসারী নয়।’ এই হাদিসের মাধ্যমে ইসলামে মানবসেবার গুরুত্ব ফুটে উঠেছে। ইসলাম প্রতিটি স্তরে এভাবে সাম্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছে আমাদের। তাই আমাদের এই সব বিধি আহকাম সম্পর্কেও সজাগ থাকতে হবে।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের দুঃখী অভাবী মানুষের কষ্ট অনুধাবন করতে পারার জন্যে রমজানের সিয়াম ফরজ করে দিয়েছেন। জাকাত ফরজ এবং সাদাকুল ফিতর ওয়াজিব করে দিয়েছেন যাতে করে অভাবী দুঃখী মানুষের অভাব মোচন হয়। ইসলামে এমনভাবে জাকাত দেয়ার নির্দেশ আছে যাতে করে কোনো অসহায় ব্যক্তি আগামী বছর অন্যকে জাকাত দিতে পারে। নিয়মিত ও সুষ্ঠুভাবে জাকাত প্রদানের মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে সমাজ হতে দুঃখী মানুষের সংখ্যা কমে যায়। সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য তৈরি হয়।

আমাদের সমাজে অনেক সময় দেখা যায় অনেকে নানা দুঃখ-কষ্টে জর্জরিত হচ্ছে কিন্তু খোঁজ-খবর নেয়ার কেউ নেই। এটি হওয়ার কারণ হলো, আমাদের মাঝে এই ধরনের বিষয় সমূহে উদাসীনতা চলে এসেছে। মানবসেবার বিভিন্ন দিক আছে। যদি তা ছোট ক্ষেত্রও হয়, তবে তার দিকে লক্ষ্য রাখা উচিত। শীতকালে প্রচণ্ড শীতে অনেকে কষ্ট পায়। তাদের কষ্ট লাঘবে শীতবস্ত্র বিতরণ করা উচিত। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে এমনকি প্রাণীকুলের জন্যেও সেবা করার নির্দেশ ও শিক্ষা ইসলাম দেয়।

ইসলাম শান্তির ধর্ম। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সঠিক আমল মেনে চলার তাওফিক দিন। আল্লাহুম্মা আমিন।
(সংগৃহিত)

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ