বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ছোঁয়ায় মানুষ এখন অনেক বেশি সচেতন, জ্ঞানবান ও যুক্তিবাদী হয়ে গেছে। সভ্যতার চাকাও এগিয়ে গেছে অনেকখানি। কিন্তু তা সত্ত্বেও আধুনিকতার ছদ্মাবরণে বহু অন্ধকার ও কুসংস্কার ঢুকে গেছে আমাদের সমাজে। ইসলাম সম্প্রীতি, সহযোগিতা, সৌহার্দ্য ও সহাবস্থানের কথা বলে। এর অর্থ এই নয় যে মুসলমানরা নিজেদের স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্র্যবোধ হারিয়ে ভিন্নধর্ম ও মতাদর্শকে গ্রহণ করবে। বিশেষত যেসব বিষয়ে শরিয়তের স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, সেসব বিষয়ে জ্ঞান অর্জন ও সচেতন হওয়া মুসলমানদের জন্য ফরজ। সম্প্রতি আমাদের মুসলিম সমাজে জ্যোতিষী ও গণকদের 'ভবিষ্যদ্বাণী'র প্রচার ও প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের সংস্কৃতিতে 'রাশিফল কালচার' যুক্ত হয়েছে। গণমাধ্যমে এর ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ করা যাচ্ছে। আশ্চর্য, একেক পত্রিকায় একই ব্যক্তির একই দিনের 'রাশিফল' সম্পূর্ণ বিপরীত ও ভিন্ন রকম প্রকাশ করছে। তবুও মানুষের বোধোদয় হচ্ছে না। অতিসম্প্রতি বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে জ্যোতিষীদের 'ভবিষ্যদ্বাণী' মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে। তবুও তাদের হুঁশ ফিরছে না। অনেকে গণকের কাছে নিজ ভাগ্যের কথা জিজ্ঞেস করে। বিদেশ যাত্রা, ব্যবসার উন্নতি-অবনতি, বিয়ে-শাদি ইত্যাদি বিষয়ে জানতে অনেকে জ্যোতিষীর কাছে যায়। বিভিন্ন গণনার মাধ্যমে গণকরা এসব বিষয়ে মতামত দেয়। অথচ ইসলামের দৃষ্টিতে গণকের গণনা ও তার কাছে যাওয়া উভয়টি অকাট্যভাবে হারাম ও নিষিদ্ধ। রাসুল (সা.) বলেছেন, 'যে ব্যক্তি জ্যোতিষীর কাছে গেল, অতঃপর তার কাছে কোনো কিছু জানতে চাইল, ৪০ দিন পর্যন্ত তার তাওবা কবুল হবে না। আর যদি সে তার কথা বিশ্বাস করে, তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে'- (তারগিব তারহিব : ৪৫৯৮) ।
শত আফসোস, অসংখ্য মুসলমান অবহেলার কারণে এই মারাত্মক গুনাহের মধ্যে লিপ্ত। অন্য হাদিসে এসেছে, 'যে ব্যক্তি কোনো গণক বা জ্যোতিষীর কাছে গেল এবং সে যা বলল, তাই বিশ্বাস করল, তাহলে সে মুহাম্মদের ওপর নাজিলকৃত শরিয়তের সঙ্গে কুফরি করল'- (আবু দাউদ : ৩৯০৪, ইবনে মাজাহ : ১৩৫)। অন্য হাদিসে এসেছে, 'যে ব্যক্তি জ্যোতিষশাস্ত্রের কোনো জ্ঞান চয়ন করল, সে জাদু-টোনার একটি শাখা চয়ন করল'- (আবু দাউদ : ৩৯০৫, ইবনে মাজাহ : ৩৭২৬)। 'রাশিফল' ও 'রাশিচক্রে'র নামে বর্তমানে আমাদের সমাজে যা চলছে, তা জ্যোতিষশাস্ত্রের অন্তর্ভুক্ত। অতএব, এটা বিশ্বাস করা কুফরি। রাশি হলো, সৌরজগতের কতগুলো গ্রহ-নক্ষত্রের কল্পিত প্রতীক। জ্যোতিষশাস্ত্রের ধারণানুযায়ী এসব গ্রহ-নক্ষত্রের গতি, স্থিতি ও সঞ্চারের প্রভাবে ভবিষ্যৎ শুভ-অশুভ নির্ণয় করা যায়। এ নির্ণয়কে ভাগ্য বিচারও বলা হয়। প্রথমত, ইসলামী আকিদা ও বিশ্বাসমতে, গ্রহ-নক্ষত্রের নিজস্ব কোনো প্রভাব নেই। আল্লাহ বলেন, 'নিশ্চয়ই সব ক্ষমতার মালিক একমাত্র আল্লাহ'- (সুরা আনআম : ৫৭)। দ্বিতীয়ত, এ ভাগ্যবিচারের মাধ্যমে ইসলামের অন্যতম মৌলিক আকিদা 'তাকদিরে বিশ্বাস'কে চ্যালেঞ্জ করা হয়। জ্যোতির্বিদদের খবরের অন্ধ বিশ্বাস কোনো কোনো ধর্মে থাকলেও ইসলামে তা শক্তভাবে পরিত্যাজ্য। একইভাবে মণি, মুক্তা, হিরা, চুন্নি, পান্না, আকিক প্রভৃতি পাথর ও রত্ন মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে, মানুষের ভাগ্যে পরিবর্তন ঘটাতে পারে- এমন বিশ্বাস রাখা মুশরিকদের কাজ, মুসলমানদের কাজ নয়। বড় বড় বাজারে, শহরে-বন্দরে, রাস্তার মোড়ে হস্তরেখা বিচারকদের কাছে স্বধর্মীয় লোকেরা যেতেই পারে; কিন্তু মুসলমানরা তাদের কাছে যাওয়া কুফরি। আমাদের দুর্ভাগ্য হলো, কোনো কোনো অবিশ্বাসী কুসংস্কার নির্মূলকারী ইসলামধর্মকেই কুসংস্কার বলছে! আসলে তারা ধর্মবিমুখ হয়ে আরো বেশি কুসংস্কারে জড়িয়ে পড়ছে।
তথ্যঃ দৈনিক কালেরকন্ঠ
রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন : ‘যে জ্যোতিষশাস্ত্রের একটি শাখা সম্পর্কে শিক্ষা গ্রহণ করল সে জাদুবিদ্যার একটি শাখার শিক্ষা গ্রহণ করল’ -সুনানে আবু দাউদ ও ইবন মাযাহ