মুসলিম উম্মাহর বিশেষ এক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার কালাম হিফজ করা। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে কুরআনুল কারিম হিফজ করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করতেন, যদি কেউ নতুন ইসলাম গ্রহণ করত তাকে কুরআন শিক্ষার উপদেশ দিতেন এবং কোনো মুসলিমের নিকট সোপর্দ করতেন, যে তাকে কুরআন শিক্ষা দিবে। এ কারণে শতাব্দীর পর শতাব্দী গত হওয়ার পরও কুরআন অক্ষত, অবিকৃত ও সংরক্ষিত রয়েছে। উবাদাহ ইবনে সামেত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুব ব্যস্ত ছিলেন, যদি কোনো ব্যক্তি হিজরত করে তার নিকট আসত, তিনি আমাদের কারো নিকট তাকে সোপর্দ করতেন, যে তাকে কুরআন শিক্ষা দিবে”। এ কারণে সাহাবিদের বৃহৎ সংখ্যা কুরআনুল কারিমের হাফিয ছিলেন, যেমন আবু বকর, ওমর, উসমান, আলী, তালহা, সাদ ও ইবনে মাসউদ প্রমুখগণ। কুরআনুল কারিম হিফয করা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত ও আদর্শ। তিনি হাফিয ছিলেন, রমদানের প্রতি রাতে জিবরীল ‘আলাইহিস সালামের সাথে তিনি কুরআনুল কারিম মুরাজা‘আহ করতেন। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে তাশাহহুদ শিক্ষা দিতেন, যেভাবে তিনি আমাদেরকে কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন”। তাশাহহুদ শিক্ষার গুরুত্বকে ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কুরআনুল কারিমের শিক্ষার সাথে তুলনা করেছেন, কারণ কুরআনুল কারিমের শিক্ষার গুরুত্ব সবার নিকট পরিচিত ছিল। আমাদের আদর্শ পুরুষগণ সর্বপ্রথম কুরআনুল কারিম হিফযের প্রতি মনোনিবেশ করতেন, কারণ কুরআন হচ্ছে জ্ঞানের উৎস ও সকল জ্ঞানের মাপকাঠি। তারা অনেকে সাবালক হওয়ার পূর্বে তারা হিফয শেষ করেছেন। মায়মুনি রহ. বলেন: “আমি একদা ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহিমাহুল্লাকে জিজ্ঞাসা করি, আমার ছেলেকে আগে কি শিক্ষা দিব কুরআন না-হাদিস, আপনি কি পছন্দ করেন? তিনি বললেন, তুমি আগে কুরআন শিক্ষা দাও। আমি বললাম, পূর্ণ কুরআন শিক্ষা দিব? তিনি বললেন: যদি তার পক্ষে পূর্ণ কুরআন হিফয করা কষ্টকর হয়, তাহলে অংশ বিশেষ শিক্ষা দাও”। খতিব বাগদাদি রহ. বলেন: “তালিবে ইলম বা ইলম অন্বেষণকারীর কর্তব্য সর্বপ্রথম কুরআনুল কারিম হিফয করা, কারণ কুরআনুল কারিম সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও সর্বোত্তম ইলমের ভাণ্ডার”। ইমাম আবু ওমর ইবনে আব্দুল বার রহ. বলেন: “ইলম অর্জন করার কয়েকটি ধাপ, স্তর ও বিন্যাস রয়েছে, যা লঙ্ঘন করা শিক্ষার্থীর জন্য বাঞ্ছনীয় নয়… অতএব ইলম অর্জন করার প্রথম ধাপ হচ্ছে কুরআনুল কারিম হিফয করা ও তা বুঝা”। ইমাম নববি রহ. বলেন: “সর্বপ্রথম কুরআনুল কারিম হিফয করা জরুরি। আদর্শ পুরুষগণ কুরআনুল কারিম হিফয করার পূর্বে কাউকে হাদিস ও ফিকহ শিক্ষা দিতেন না। কুরআন হিফয শেষে অন্যান্য ইলম তথা হাদিস-ফিকহে এতটুকুন মগ্ন হওয়া যাবে না, যার ফলে কুরআনুল কারিমের কোনো অংশ ভুলে যাওয়ার উপক্রম হয়”। ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ রহ. বলেন: “মানুষ যেসব জ্ঞানকে ইলম বলে, তার সর্বাগ্রে হচ্ছে কুরআনুল কারিম হিফয করা”। কুরআনুল কারিম হিফয করা খুব সহজ, তার সাথে মেধা অথবা বয়সের বড় সম্পর্ক নেই। অনেক মনীষী তাদের বার্ধক্য ও শেষ বয়সে কুরআনুল কারিম হিফয করেছেন, যারা আরবি জানে না তারাও হিফয করছেন। এ ক্ষেত্রে বড়দের চাইতে ছোটরা অনেক এগিয়ে। কুরআনুল কারিম হিফয করা শরীয়তের নির্দেশ। হিফয করে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, মুসলিম যখন দৃঢ় ইচ্ছা ও প্রচণ্ড আগ্রহসহ হিফয আরম্ভ করে, অতঃপর অলসতা-শিথিলতা বা ব্যস্ততার কারণে হিফয ত্যাগ করে, তবুও কোনো ক্ষতি নেই, যা হিফয করেছে তা বৃথা যাবে না, কোনো অংশ হিফয না করলেও হিফযের হালাকায় তিলাওয়াতের সাওয়াব থেকে কখনো মাহরূম হবে না। ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছেন: “যে কুরআনুল কারিম হিফয করল, সে তার বক্ষ ও পিঠের মাঝে নবুওয়তকে ধারণ করল”। অতএব মুসলিম হিসেবে সবাইকে এ গৌরব অর্জন করার নিমিত্তে ব্রত গ্রহণ করা জরুরি। আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দান করুন। ধন্যবাদ।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

আপনার বড় ভাইয়ের উচিত কুরআন হেফজ্ করা । তার উচিত হাফেজ হওয়া। 

হাফেজ হওয়ায় গুরুত্ব সম্পর্কে নিচে বলা হলোঃ 

কোরআনে কারিম হিফজ বা মুখস্থ করা একটি ধারাবাহিক সুন্নত। হাদিসে আছে, জিবরাঈল আমিন (আ.) রমজানের প্রতি রাতে রাসুলের কাছে আসতেন এবং রাসুল (সা.) রাতব্যাপী তাকে কোরআনে কারিম মুখস্থ শোনাতেন। (বোখারি, মুসলিম)।


কোরআন তার সংরক্ষক তথা হাফেজকে জান্নাতের উচ্চাসনে আসীন করে দেবে। যেমন হাদিসে এসেছে, কেয়ামতের দিন হাফেজে কোরআনকে বলা হবে, তুমি দুনিয়ার মতো করে ধীরে ধীরে সুন্দর ও সুললিত সুরে কোরআন তেলাওয়াত করো এবং সিঁড়ি বেয়ে ওপরের দিকে উঠতে থাকো। কেননা সেখানেই তোমার বাসস্থান, যেখানে পৌঁছে তুমি কোরআনের শেষ আয়াতটি তেলাওয়াত করবে।


একজন হাফেজে কোরআন হলেন সর্বোচ্চ সম্মান এবং মর্যাদার উপযুক্ত। হাদিসে যেমন বর্ণিত হয়েছে, অবশ্যই আল্লাহর প্রতি সম্মান প্রদর্শন হলো বৃদ্ধ মুসলামানের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন, কোরআন সম্পর্কে বাড়াবাড়ি করে না এমন হাফেজকে মর্যাদা দান এবং ন্যায়পরায়ণ শাসকের প্রতি সম্মান প্রদর্শন। (সুনানে আবি দাউদ : ৪৮৪৫)।


কোরআন হিফজকারীরা আল্লাহর পরিবার এবং ‘খাস’ ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত। হাদিসে এসেছে, নবী করিম (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই মানব জাতির মধ্যে আল্লাহর দুইটি পরিবার রয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, তারা কারা? রাসুল (সা.) বললেন, কোরআনকে যারা নিজেদের পরিবারভুক্ত করতে পেরেছে।


ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ পাক এই গ্রন্থ তথা কোরআন মজিদ দ্বারা (তার ওপর আমলকারী) জনগোষ্ঠীর উত্থান ঘটান আবার এরই দ্বারা (এর অবাধ্য) অন্য গোষ্ঠীর পতনও সাধন করেন। (মুসলিম : ৮১৭)।


তবে সব কিছু ছাড়িয়ে একজন হাফেজে কোরআনের জন্য সবচেয়ে বড় সুসংবাদ হলো, সে জাহান্নামে যাবে না। রাসুলে পাক (সা.) বড় চমৎকার একটি উদাহরণ দিয়ে এটি বুঝিয়েছেন যে, কোরআনকে যদি কোনো চামড়ায় রাখা হয় এবং তা আগুনে নিক্ষেপ করা হয় তবে তা কখনোই জ্বলবে না।


আবার একজন কোরআনের হাফেজ ব্যক্তি নামাজের জামাতেও ইমাম হওয়ার অধিক উপযুক্ত। যেমনটি হাদিসে এসেছে যে, অধিক শুদ্ধ তেলাওয়াতকারী ব্যক্তিই জামাতের ইমামতির হকদার। (সহিহ মুসলিম)।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

কুরআনুল কারীম এর হাফিয হওয়ার অসংখ্য ফজীলত রয়েছে। নিচে হাফেযের মর্যাদার ব্যাপারে কিছু দলিল পেশ করা হলোঃ- 

 ১. শয়তান থেকে ঘর নিরাপদ থাকে: সাধারণত হাফিয ও হিফয-শাখার ছাত্ররা সবচেয়ে বেশী কুরআন তিলাওয়াত করেন, তাই তাদের ঘর শয়তান থেকে নিরাপদ থাকে। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ্রلاَ تَجْعَلُوا بُيُوتَكُمْ مَقَابِرَ، إِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْفِرُ مِنَ البَيْتِ الَّذِي تُقْرَأُ فِيهِ سُورَةُ البَقرَةِগ্ধ. رواه مسلم “তোমাদের ঘরগুলোকে তোমরা কবরে পরিণত করো না, নিশ্চয় সে ঘর থেকে শয়তান পলায়ন করে, যেখানে সূরা বাকারাহ পাঠ করা হয়।” 
 ২. হাফিযগণ আল্লাহর পরিবার ভুক্ত: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ্রإِنَّ لِلَّهِ أَهْلِينَ مِنَ النَّاسِগ্ধ، قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَنْ هُمْ؟ قَالَ: ্রهُمْ أَهْلُ الْقُرْآنِ أَهْلُ اللَّهِ وَخَاصَّتُهُ “নিশ্চয় মানুষদের থেকে আল্লাহর কতক পরিবার (নিজস্ব লোক) রয়েছে, তারা বলল: হে আল্লাহর রাসূল তারা কারা? তিনি বললেন: তারা আহলে কুরআন, আল্লাহর পরিবার ও তার বিশেষ ব্যক্তিবর্গ”। কুরআনুল কারিমের হাফিয আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত, একজন মুসলিমের হিফয হওয়ার জন্য এ প্রেরণাই যথেষ্ট, এটা তাদের প্রতি আল্লাহর মহান অনুগ্রহ। 
 ৩. হাফিযগণ সময়ের সর্বোত্তম ব্যবহার করতে পারেন: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ্রاغْتَنِمْ خَمْسًا قَبْلَ خَمْسٍ: شَبَابَكَ قَبْلَ هِرَمِكَ، وَصِحَّتَكَ قَبْلَ سَقَمِكَ، وَغِنَاءَكَ قَبْلَ فَقْرِكَ، وَفَرَاغَكَ قَبْلَ شُغْلِكَ، وَحَيَاتَكَ قَبْلَ مَوْتِكَ “পাঁচটি বস্তুকে পাঁচটি বস্তুর পূর্বে গণিমত মনে কর: তোমার যৌবনকে তোমার বার্ধক্যের পূর্বে; তোমার সুস্থতাকে তোমার অসুস্থতার পূর্বে; তোমার সচ্ছলতাকে তোমার অভাবের পূর্বে; তোমার অবসরতাকে তোমার ব্যস্ততার পূর্বে এবং তোমার জীবনকে তোমার মৃত্যুর পূর্বে”। আহলে-কুরআন কখনো তিলাওয়াত করেন, কখনো হিফয করেন, কখনো গবেষণা করেন, কখনো তার উপর আমল করেন। এভাবে তারা প্রতি মুহূর্তের সর্বোত্তম ব্যবহার করতে পারেন। ৪. হাফিযদের ঈমান উত্তরোত্তর বর্ধিত হয়: হাফিযগণ সর্বাধিক কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত করেন, তাই তারা সবচেয়ে বেশী নবী-রাসূলদের বিজয়ের কাহিনী, কাফেরদের পরাজয়ের ঘটনা, মুমিনদের প্রতি আল্লাহর সন্তুষ্টি ও কাফেরদের প্রতি তার গোস্বার বাণী পড়েন ও শ্রবণ করেন, যার ফলে তাদের ঈমান বর্ধিত হয়। জুনদুব ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: ্রكُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَنَحْنُ فِتْيَانٌ حَزَاوِرَةٌ، فَتَعَلَّمْنَا الْإِيمَانَ قَبْلَ أَنْ نَتَعَلَّمَ الْقُرْآنَ، ثُمَّ تَعَلَّمْنَا الْقُرْآنَ فَازْدَدْنَا بِهِ إِيمَانًاগ্ধ. “আমরা যখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলাম, তখন সবেমাত্র কৈশোরে পদার্পণ করেছি। অতএব কুরআন শিখার আগে আমরা ঈমান শিখেছি, অতঃপর কুরআন শিখেছি, আর তার দ্বারা আমরা আমাদের ঈমান বৃদ্ধি করেছি”। 
 ৫. হাফিযগণ তাহাজ্জুদের স্বাদ অনুভব করে: হিফযের বদৌলতে হাফিযগণ তাহাজ্জুদের স্বাদ অনুভব করেন, হিফয না-থাকার কারণে অনেকে এ স্বাদ থেকে বঞ্চিত হয়। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ্রمَنْ قَامَ بِعَشْرِ آيَاتٍ لَمْ يُكْتَبْ مِنَ الْغَافِلِينَ، وَمَنْ قَامَ بِمِائَةِ آيَةٍ كُتِبَ مِنَ الْقَانِتِينَ، وَمَنْ قَامَ بِأَلْفِ آيَةٍ كُتِبَ مِنَ الْمُقَنْطِرِينَগ্ধ. “যে ব্যক্তি দশ আয়াত নিয়ে কিয়াম করল, তাকে গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত করা হয় না, আর যে এক-শো আয়াত নিয়ে কিয়াম করল, তাকে কানেতিন তথা ইবাদতকারীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়, আর যে এক-হাজার আয়াত নিয়ে কিয়াম করল, তাকে মুকানতিরিণ তথা অনেক সওয়াব অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়”। কুরআনুল কারিম হিফয করা ব্যতীত এ সাওয়াব অর্জন করা সম্ভব নয়। 
 ৬. হাফিযগণ অগ্রাধিকার প্রাপ্ত: সালাত ইসলামের দ্বিতীয় রোকন, তাতে ইমামতের হকদার কুরআনুল কারিমের হাফিযগণ। আবু মাসউদ আনসারি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ্রيَؤُمُّ الْقَوْمَ، أَقْرَؤُهُمْ لِكِتَابِ اللَّهِ، فَإِنْ كَانُوا فِي الْقِرَاءَةِ سَوَاءً، فَأَعْلَمُهُمْ بِالسُّنَّةِ، فَإِنْ كَانُوا فِي السُّنَّةِ سَوَاءً، فَأَقْدَمُهُمْ هِجْرَةًগ্ধ. “কওমের মধ্যে কুরআনের অধিক পাঠক (ধারক) তাদের ইমামত করবে; যদি তারা কিরাতে বরাবর হয়, তাহলে সুন্নত সম্পর্কে অধিক জ্ঞানী, যদি তারা সুন্নতে বরাবর হয়, তাহলে হিজরতে অগ্রগামী ব্যক্তি ইমামত করবে”। শুধু জীবিত অবস্থায় নয়, মৃত অবস্থায় কবরেও তারা অগ্রাধিকার প্রাপ্ত। জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদের শহীদদের দু’জনকে এক কাপড়ে কাফন দিচ্ছিলেন, অতঃপর বলতেন: ্রأَيُّهُمْ أَكْثَرُ أَخْذًا لِلْقُرْآنِ؟، فَإِذَا أُشِيرَ لَهُ إِلَى أَحَدِهِمَا قَدَّمَهُ فِي اللَّحْدِ، وَقَالَ: أَنَا شَهِيدٌ عَلَى هَؤُلَاءِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَأَمَرَ بِدَفْنِهِمْ فِي دِمَائِهِمْ، وَلَمْ يُغَسَّلُوا، وَلَمْ يُصَلَّ عَلَيْهِمْগ্ধ. “তাদের মাঝে কুরআনের অধিক ধারক কে”? যখন তাদের কাউকে চিহ্নিত করা হত, তিনি তাকে কবরে আগে রাখতেন; এবং বলতেন: “কিয়ামতের দিন আমি তাদের সাক্ষী হব”। তিনি তাদেরকে তাদের রক্তসহ দাফন করার নির্দেশ দেন, তাদের গোসল দেওয়া হয়নি এবং তাদের উপর সালাত আদায় করাও হয়নি”। অতএব কুরআনুল কারিমের হাফিয জীবিত ও মৃত উভয় অবস্থায় অগ্রাধিকার প্রাপ্ত। 
 ৭. হাফিযগণ জান্নাতের উঁচু মর্যাদার অধিকারী: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ্রيُقَالُ لِصَاحِبِ الْقُرْآنِ: اِقْرَأْ وَارْتَقِ وَرَتِّلْ كَمَا كُنْتَ تُرَتِّلُ فِي الدُّنْيَا، فَإِنَّ مَنْزِلَتَكَ عِنْدَ آخِرِ آيَةٍ تَقْرَؤُهَا . “কুরআনের ধারককে বলা হবে, ‘তুমি পড় ও চড় এবং তারতীলসহ পড়, যেভাবে তারতীলসহ দুনিয়াতে পড়তে। কারণ, তোমার মর্যাদা সর্বশেষ আয়াতের নিকট, যা তুমি পড়বে।” অপর হাদিসে এসেছে: ্রيَجِيءُ الْقُرْآنُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيَقُولُ: يَا رَبِّ حَلِّهِ فَيُلْبَسُ تَاجَ الْكَرَامَةِ، ثُمَّ يَقُولُ: يَا رَبِّ زِدْهُ فَيُلْبَسُ حُلَّةَ الْكَرَامَةِ، ثُمَّ يَقُولُ: يَا رَبِّ ارْضَ عَنْهُ فَيَرْضَى عَنْهُ، فَيُقَالُ لَهُ: اقْرَأْ وَارْقَ وَتُزَادُ بِكُلِّ آيَةٍ حَسَنَةً. “কিয়ামতের দিন কুরআন আসবে ও বলবে: হে আমার রব, তাকে পরিধান করাও, তাকে সম্মানের টুপি পড়ানো হবে। অতঃপর সে বলবে: হে আমার রব, তাকে বৃদ্ধি করে দাও, তাকে সম্মানের অলঙ্কার পড়ানো হবে, অতঃপর সে বলবে: হে আমার রব তার উপর সন্তুষ্ট হও, তিনি তার উপর সন্তুষ্ট হবেন। অতঃপর তাকে বলা হবে: পড় ও উপড়ে চর এবং প্রত্যেক আয়াতের মোকাবিলায় একটি করে নেকি বর্ধিত করা হবে”। 
 ৮. হাফিযগণ ঈর্ষার পাত্র: আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ্রلَا حَسَدَ إِلَّا فِي اثْنَتَيْنِ: رَجُلٌ عَلَّمَهُ اللَّهُ الْقُرْآنَ فَهُوَ يَتْلُوهُ آنَاءَ اللَّيْلِ وَآنَاءَ النَّهَارِ، فَسَمِعَهُ جَارٌ لَهُ، فَقَالَ: لَيْتَنِي أُوتِيتُ مِثْلَ مَا أُوتِيَ فُلَانٌ فَعَمِلْتُ مِثْلَ مَا يَعْمَلُ، وَرَجُلٌ آتَاهُ اللَّهُ مَالًا فَهُوَ يُهْلِكُهُ فِي الْحَقِّ، فَقَالَ رَجُلٌ: لَيْتَنِي أُوتِيتُ مِثْلَ مَا أُوتِيَ فُلَانٌ فَعَمِلْتُ مِثْلَ مَا يَعْمَلُ “দু’জন্য ব্যক্তি ব্যতীত কোনো হিংসা নেই, এক ব্যক্তি যাকে আল্লাহ কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন, সে তা দিন-রাতের বিভিন্ন অংশে তিলাওয়াত করে। অতঃপর তার এক প্রতিবেশী শুনে বলে: যদি আমাকে অনুরূপ দেওয়া হত, যেরূপ অমুককে দেওয়া হয়েছে তাহলে আমিও তার মত আমল করতাম। আর অপর ব্যক্তি-যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন, সে তা সত্য পথে খরচ করে। এক ব্যক্তি বলল: যদি অমুককে যেরূপ দেওয়া হয়েছে আমাকেও সেরূপ দেওয়া হয়, তাহলে আমিও করব যেরূপ সে করে”। 
 ৯. হাফিযগণ দজ্জালের ফিতনা থেকে নিরাপদ: দজ্জালের আত্মপ্রকাশ কিয়ামতের সবচেয়ে বড় আলামত, দুনিয়াতে তার চেয়ে বড় কোনো ফিতনা নেই। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ্রمَنْ حَفِظَ عَشْرَ آيَاتٍ مِنْ أَوَّلِ سُورَةِ الْكَهْف عُصِمَ مِنَ الدَّجَّالِ . “যে ব্যক্তি সূরা কাহাফের প্রথম থেকে দশটি আয়াত মুখস্থ করবে তাকে দজ্জাল থেকে নিরাপদ রাখা হবে”। 
 ১০. কুরআনুল কারিমের হিফয নেককার নারীদের দেন মোহর: অনেক আদর্শ পূর্বপুরুষ কুরআনুল কারিমের কতক মুখস্থ সূরার বিনিময় নেককার নারীদের বিয়ে করেছেন। সাহাল ইবনে সাদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, জনৈক নারী নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল, আমার নফস আপনাকে হেবা করতে এসেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে তাকালেন। অতঃপর তার দিকে তাকালেন ও অবনত করলেন, অতঃপর তিনি মাথা ঝুঁকালেন। মহিলাটি যখন দেখল, তিনি তার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন না বসে পড়ল। তার সাহাবিদের থেকে একজন উঠে বলল: হে আল্লাহর রাসূল, যদি আপনার তাকে প্রয়োজন না হয়, আমার নিকট তাকে বিয়ে দিয়ে দিন। তিনি বললেন: তোমার কিছু আছে? সে বলল: না, হে আল্লাহর রাসূল। তিনি বললেন: বাড়িতে যাও, দেখ কিছু পাও কিনা? সে গেল, অতঃপর ফিরে আসল ও বলল: হে আল্লাহর রাসূল কিছু পায়নি। তিনি বললেন: দেখ, যদিও একটি লোহার আঙ্কটি পাও; সে বলল: তবে আমার এ লুঙ্গি আছে, তার জন্য তার অর্ধেক। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: ্রمَا تَصْنَعُ بِإِزَارِكَ، إِنْ لَبِسْتَهُ لَمْ يَكُنْ عَلَيْهَا مِنْهُ شَيْءٌ، وَإِنْ لَبِسَتْهُ لَمْ يَكُنْ عَلَيْكَ شَيْءٌগ্ধ. “সে তোমার লুঙ্গি দিয়ে কি করবে, যদি তুমি পরিধান কর তার উপর কোনো কাপড় থাকবে না, আর সে পরিধান করলে তোমার উপর কোনো কাপড় থাকবে না”? লোকটি বসে পড়ল, দীর্ঘক্ষণ বসে ছিল, অতঃপর দাঁড়ালো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখলেন সে চলে যাচ্ছে, তাকে ডাকলেন, যখন সে আসল, তিনি বললেন: ্রمَاذَا مَعَكَ مِنَ الْقُرْآنِ؟গ্ধ. “তোমার সাথে কুরআনের কতটুকু অংশ আছে? সে বলল: আমার সাথে অমুক, অমুক ও অমুক সূরা রয়েছে, সে সবগুলো গণনা করল। তিনি বললেন: ্রأَتَقْرَؤُهُنَّ عَنْ ظَهْرِ قَلْبِكَ؟গ্ধ. তুমি কি এগুলো মুখস্থ পড়তে পার? সে বলল: হ্যাঁ, তিনি বললেন: ্রاذْهَبْ فَقَدْ مَلَّكْتُكَهَا بِمَا مَعَكَ مِنَ الْقُرْآنِগ্ধ. “যাও, তোমার সাথে কুরআনের যে অংশ আছে, তার বিনিময়ে আমি তোমাকে তার মালিক বানিয়ে দিলাম”। এভাবে উক্ত সাহাবি কুরআনুল কারিম হিফযের বিনিময়ে বিয়ে করেছেন। হিফযের বিনিময়ে কেউ যদি আপনার নিকট মেয়ে বিয়ে না দেয় ধৈর্য দরুন, হিফযকে মোহর ধার্য করে জান্নাতে অনেক হুর বিয়ে করতে পারবেন। আরো অনেক ফজীলত রয়েছে। (ব্লগস্পট থেকে প্রকাশিত)
ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ