মুসলিম উম্মাহর বিশেষ এক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার কালাম হিফজ করা। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে কুরআনুল কারিম হিফজ করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করতেন, যদি কেউ নতুন ইসলাম গ্রহণ করত তাকে কুরআন শিক্ষার উপদেশ দিতেন এবং কোনো মুসলিমের নিকট সোপর্দ করতেন, যে তাকে কুরআন শিক্ষা দিবে। এ কারণে শতাব্দীর পর শতাব্দী গত হওয়ার পরও কুরআন অক্ষত, অবিকৃত ও সংরক্ষিত রয়েছে। উবাদাহ ইবনে সামেত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুব ব্যস্ত ছিলেন, যদি কোনো ব্যক্তি হিজরত করে তার নিকট আসত, তিনি আমাদের কারো নিকট তাকে সোপর্দ করতেন, যে তাকে কুরআন শিক্ষা দিবে”। এ কারণে সাহাবিদের বৃহৎ সংখ্যা কুরআনুল কারিমের হাফিয ছিলেন, যেমন আবু বকর, ওমর, উসমান, আলী, তালহা, সাদ ও ইবনে মাসউদ প্রমুখগণ। কুরআনুল কারিম হিফয করা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত ও আদর্শ। তিনি হাফিয ছিলেন, রমদানের প্রতি রাতে জিবরীল ‘আলাইহিস সালামের সাথে তিনি কুরআনুল কারিম মুরাজা‘আহ করতেন। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে তাশাহহুদ শিক্ষা দিতেন, যেভাবে তিনি আমাদেরকে কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন”। তাশাহহুদ শিক্ষার গুরুত্বকে ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কুরআনুল কারিমের শিক্ষার সাথে তুলনা করেছেন, কারণ কুরআনুল কারিমের শিক্ষার গুরুত্ব সবার নিকট পরিচিত ছিল। আমাদের আদর্শ পুরুষগণ সর্বপ্রথম কুরআনুল কারিম হিফযের প্রতি মনোনিবেশ করতেন, কারণ কুরআন হচ্ছে জ্ঞানের উৎস ও সকল জ্ঞানের মাপকাঠি। তারা অনেকে সাবালক হওয়ার পূর্বে তারা হিফয শেষ করেছেন। মায়মুনি রহ. বলেন: “আমি একদা ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহিমাহুল্লাকে জিজ্ঞাসা করি, আমার ছেলেকে আগে কি শিক্ষা দিব কুরআন না-হাদিস, আপনি কি পছন্দ করেন? তিনি বললেন, তুমি আগে কুরআন শিক্ষা দাও। আমি বললাম, পূর্ণ কুরআন শিক্ষা দিব? তিনি বললেন: যদি তার পক্ষে পূর্ণ কুরআন হিফয করা কষ্টকর হয়, তাহলে অংশ বিশেষ শিক্ষা দাও”। খতিব বাগদাদি রহ. বলেন: “তালিবে ইলম বা ইলম অন্বেষণকারীর কর্তব্য সর্বপ্রথম কুরআনুল কারিম হিফয করা, কারণ কুরআনুল কারিম সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও সর্বোত্তম ইলমের ভাণ্ডার”। ইমাম আবু ওমর ইবনে আব্দুল বার রহ. বলেন: “ইলম অর্জন করার কয়েকটি ধাপ, স্তর ও বিন্যাস রয়েছে, যা লঙ্ঘন করা শিক্ষার্থীর জন্য বাঞ্ছনীয় নয়… অতএব ইলম অর্জন করার প্রথম ধাপ হচ্ছে কুরআনুল কারিম হিফয করা ও তা বুঝা”। ইমাম নববি রহ. বলেন: “সর্বপ্রথম কুরআনুল কারিম হিফয করা জরুরি। আদর্শ পুরুষগণ কুরআনুল কারিম হিফয করার পূর্বে কাউকে হাদিস ও ফিকহ শিক্ষা দিতেন না। কুরআন হিফয শেষে অন্যান্য ইলম তথা হাদিস-ফিকহে এতটুকুন মগ্ন হওয়া যাবে না, যার ফলে কুরআনুল কারিমের কোনো অংশ ভুলে যাওয়ার উপক্রম হয়”। ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ রহ. বলেন: “মানুষ যেসব জ্ঞানকে ইলম বলে, তার সর্বাগ্রে হচ্ছে কুরআনুল কারিম হিফয করা”। কুরআনুল কারিম হিফয করা খুব সহজ, তার সাথে মেধা অথবা বয়সের বড় সম্পর্ক নেই। অনেক মনীষী তাদের বার্ধক্য ও শেষ বয়সে কুরআনুল কারিম হিফয করেছেন, যারা আরবি জানে না তারাও হিফয করছেন। এ ক্ষেত্রে বড়দের চাইতে ছোটরা অনেক এগিয়ে। কুরআনুল কারিম হিফয করা শরীয়তের নির্দেশ। হিফয করে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, মুসলিম যখন দৃঢ় ইচ্ছা ও প্রচণ্ড আগ্রহসহ হিফয আরম্ভ করে, অতঃপর অলসতা-শিথিলতা বা ব্যস্ততার কারণে হিফয ত্যাগ করে, তবুও কোনো ক্ষতি নেই, যা হিফয করেছে তা বৃথা যাবে না, কোনো অংশ হিফয না করলেও হিফযের হালাকায় তিলাওয়াতের সাওয়াব থেকে কখনো মাহরূম হবে না। ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছেন: “যে কুরআনুল কারিম হিফয করল, সে তার বক্ষ ও পিঠের মাঝে নবুওয়তকে ধারণ করল”। অতএব মুসলিম হিসেবে সবাইকে এ গৌরব অর্জন করার নিমিত্তে ব্রত গ্রহণ করা জরুরি। আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দান করুন। ধন্যবাদ।
আপনার বড় ভাইয়ের উচিত কুরআন হেফজ্ করা । তার উচিত হাফেজ হওয়া।
হাফেজ হওয়ায় গুরুত্ব সম্পর্কে নিচে বলা হলোঃ
কোরআনে কারিম হিফজ বা মুখস্থ করা একটি ধারাবাহিক সুন্নত। হাদিসে আছে, জিবরাঈল আমিন (আ.) রমজানের প্রতি রাতে রাসুলের কাছে আসতেন এবং রাসুল (সা.) রাতব্যাপী তাকে কোরআনে কারিম মুখস্থ শোনাতেন। (বোখারি, মুসলিম)।
কোরআন তার সংরক্ষক তথা হাফেজকে জান্নাতের উচ্চাসনে আসীন করে দেবে। যেমন হাদিসে এসেছে, কেয়ামতের দিন হাফেজে কোরআনকে বলা হবে, তুমি দুনিয়ার মতো করে ধীরে ধীরে সুন্দর ও সুললিত সুরে কোরআন তেলাওয়াত করো এবং সিঁড়ি বেয়ে ওপরের দিকে উঠতে থাকো। কেননা সেখানেই তোমার বাসস্থান, যেখানে পৌঁছে তুমি কোরআনের শেষ আয়াতটি তেলাওয়াত করবে।
একজন হাফেজে কোরআন হলেন সর্বোচ্চ সম্মান এবং মর্যাদার উপযুক্ত। হাদিসে যেমন বর্ণিত হয়েছে, অবশ্যই আল্লাহর প্রতি সম্মান প্রদর্শন হলো বৃদ্ধ মুসলামানের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন, কোরআন সম্পর্কে বাড়াবাড়ি করে না এমন হাফেজকে মর্যাদা দান এবং ন্যায়পরায়ণ শাসকের প্রতি সম্মান প্রদর্শন। (সুনানে আবি দাউদ : ৪৮৪৫)।
কোরআন হিফজকারীরা আল্লাহর পরিবার এবং ‘খাস’ ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত। হাদিসে এসেছে, নবী করিম (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই মানব জাতির মধ্যে আল্লাহর দুইটি পরিবার রয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, তারা কারা? রাসুল (সা.) বললেন, কোরআনকে যারা নিজেদের পরিবারভুক্ত করতে পেরেছে।
ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ পাক এই গ্রন্থ তথা কোরআন মজিদ দ্বারা (তার ওপর আমলকারী) জনগোষ্ঠীর উত্থান ঘটান আবার এরই দ্বারা (এর অবাধ্য) অন্য গোষ্ঠীর পতনও সাধন করেন। (মুসলিম : ৮১৭)।
তবে সব কিছু ছাড়িয়ে একজন হাফেজে কোরআনের জন্য সবচেয়ে বড় সুসংবাদ হলো, সে জাহান্নামে যাবে না। রাসুলে পাক (সা.) বড় চমৎকার একটি উদাহরণ দিয়ে এটি বুঝিয়েছেন যে, কোরআনকে যদি কোনো চামড়ায় রাখা হয় এবং তা আগুনে নিক্ষেপ করা হয় তবে তা কখনোই জ্বলবে না।
আবার একজন কোরআনের হাফেজ ব্যক্তি নামাজের জামাতেও ইমাম হওয়ার অধিক উপযুক্ত। যেমনটি হাদিসে এসেছে যে, অধিক শুদ্ধ তেলাওয়াতকারী ব্যক্তিই জামাতের ইমামতির হকদার। (সহিহ মুসলিম)।
কুরআনুল কারীম এর হাফিয হওয়ার অসংখ্য ফজীলত রয়েছে। নিচে হাফেযের মর্যাদার ব্যাপারে কিছু দলিল পেশ করা হলোঃ-