শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

আল্লাহ মানুষকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। এর পিছনে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও রয়েছে: মানবদেহ অত্যন্ত যত্ন সহকারে সৃষ্টি হয়েছে।মানুষের দেহের কোষগুলো অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় উন্নত।এছাড়া এর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুলো সব প্রাণী থেকে আলাদা।এগুলোর দ্বারা অনেক কঠিন কাজ সহজে করা যায়।এটা লিভারের মতো কাজ করে।মানুষের সবচেয়ে উন্নত অঙ্গ হলো তার মস্তিষ্ক।মস্তিষ্ক আমাদের শরীর পরিচালনা করে।এই মস্তিষ্ক সকল প্রাণী থেকে অনেক সুগঠিত। তাই,মানুষ পৃথিবীর শ্রেষ্ট জীব।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

এক কথায়; পৃথিবীর সকল সৃষ্টির মধ্যে ন্যায় অন্যায় বিচার বুদ্ধি একমাত্র মানুষেরই আছেx তাই মানুষকে শ্রেষ্ট জীব বলা হয়x

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

যার জীবন আছে সে-ই জীব। মনীষীদের মতে, আল্লাহ তাআলা জড় ও জীব মিলে সর্বমোট ৮০ হাজার বস্তু সৃষ্টি করেছেন। স্থলভাগে ৪০ হাজার এবং পানিতে ৪০ হাজার। এসব সৃষ্টির মধ্যে জিন, ফেরেশতা ও মানুষ সেরা; তবে মানুষই আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব।
মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘অবশ্যই আমি আদম সন্তানদের সম্মানিত করেছি এবং তাদের পানিতে ও স্থলে প্রতিষ্ঠিত করেছি, তাদের উত্তম জীবনোপকরণ প্রদান করেছি এবং তাদের অনেক সৃষ্টির ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।’ (সুরা ইসরা : ৭০) 

বিজ্ঞানের দিকঃ-

বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাঃ মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা রয়েছে । মানুষের সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সুন্দর রূপে গঠিত । মানুষের রয়েছে বিবেক-বুদ্ধি ও জ্ঞান। লক্ষ্য করলে  দেখা যাবে যে, পৃথিবীর সব জ্ঞান, রহস্য ও প্রযুক্তি সব কিছু মানুষ আবিষ্কার করেছে। মানুষের নিউরনও সুুুগঠিত। এ সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন  -- Click

ধর্মীয় দিকঃ-

মানুষের শ্রেষ্ঠত্বঃ পবিত্র কোরআন ও হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনা দ্বারা মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব সাব্যস্ত হয়েছে। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, "যখন আল্লাহ পৃথিবী সৃষ্টি করেন, তখন তা দুলতে থাকে। অতঃপর তিনি পর্বতমালা সৃষ্টি করে তার ওপর তা স্থাপন করেন। ফলে পৃথিবী স্থির হয়ে যায়।"

ফেরেশতারা পর্বতমালা দেখে আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করেন, "হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার সৃষ্টির মধ্যে পর্বত থেকে মজবুত কি কিছু আছে? আল্লাহ বলেন, হ্যাঁ, তা হলো লোহা।" ফেরেশতারা আবার প্রশ্ন করল, "হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার সৃষ্টির মধ্যে লোহা থেকে মজবুত কি কিছু আছে? আল্লাহ বলেন, হ্যাঁ আছে, তা হলো আগুন।" ফেরশতারা আবার প্রশ্ন করে, হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার সৃষ্টির মধ্যে আগুনের চেয়ে অধিকতর শক্তিশালী কি কোনো কিছু আছে? আল্লাহ বলেন, হ্যাঁ আছে, তা হলো বাতাস।" ফেরেশতা প্রশ্ন করে, "হে আমাদের রব! আপনার সৃষ্টির মধ্যে বাতাসের চেয়ে অধিক প্রবল কি কিছু আছে?" আল্লাহ বলেন, ‘হ্যাঁ আছে, তা হলো আদম সন্তান। সে ডান হাতে যা দান করে, বাঁ হাত থেকে তা গোপন রাখে।’ (মুসনাদ আহমদ, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৭৬)

অনন্য চরিত্রঃ মানুষের মধ্যে এমন কিছু গুণ আল্লাহ দান করেছেন, যা অন্য সৃষ্টির মধ্যে নেই। সুশ্রী চেহারা, সুষম দেহ, সুষম প্রকৃতি, অঙ্গসৌষ্ঠব ইত্যাদি একমাত্র মানুষকে দেওয়া হয়েছে, যা অন্য কোনো জীবকে দেওয়া হয়নি। তা ছাড়া বুদ্ধি ও চেতনায় মানুষকে বিশেষ স্বাতন্ত্র্য দান করা হয়েছে। ফলে মানুষ সমগ্র ঊর্ধ্বজগৎ ও অধোজগেক নিজের কাজে নিয়োজিত করতে পারে। তাকে বিভিন্ন সৃষ্ট বস্তুর সংমিশ্রণে বিভিন্ন শিল্পদ্রব্য প্রস্তুত করার শক্তি দেওয়া হয়েছে। বাকশক্তি ও পারস্পরিক মতবিনিময়ের যে নৈপুণ্য মানুষ লাভ করেছে, তা অন্য কোনো প্রাণীর মধ্যে নেই। ইঙ্গিতে মনের কথা অন্যকে বোঝানো, লেখা ও চিঠির মাধ্যমে গোপন ভেদ অন্য পর্যন্ত পৌঁছানো—এসব মানুষেরই স্বাতন্ত্র্য। সব প্রাণী একক বস্তু আহার করে। কেউ কাঁচা গোশত, কেউ মাছ আবার কেউ ফলমূল আহার করে। একমাত্র মানুষ সংমিশ্রিত খাদ্য প্রস্তুত করে ভক্ষণ করে। বিবেক-বুদ্ধি ও চেতনা মানুষের সর্বপ্রধান শ্রেষ্ঠত্ব। এর ফলে সে স্বীয় সৃষ্টিকর্তা ও প্রভুর পরিচয় এবং তাঁর পছন্দ ও অপছন্দ জেনে পছন্দের বিষয় গ্রহণ করে এবং অপছন্দের বিষয় বর্জন করে।

উত্তম মর্যাদার অধিকারীঃ মহানবী (সা.) বলেন, বিচার দিবসে আল্লাহর কাছে মানুষ অপেক্ষা অন্য কোনো সৃষ্টি অধিক সম্মানের হবে না। জিজ্ঞেস করা হয়, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর নিকটবর্তী ফেরেশতাদের ক্ষেত্রেও কি এটা প্রযোজ্য হবে? অর্থাৎ নিকটবর্তী ফেরেশতাদের চেয়েও কি মানুষের মর্যাদা বেশি? মহানবী (সা.) প্রত্যুত্তরে বলেন, ‘নিকটবর্তী ফেরেশতারাও এক শ্রেণির মানুষের চেয়ে অধিক মর্যাদাবান হবে না।’ (বায়হাকি, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৭৪)

পৃথিবীর সব কিছু মানুষের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি : আল্লাহ তাআলা এ ধরার সব কিছু মানুষের কল্যাণের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘তিনি সেই সত্তা, যিনি তোমাদের (মানবের) কল্যাণার্থে পৃথিবীর সব কিছু সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা বাকারা : ২৯) বস্তুত চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র, আলো, বাতাস, জীবজন্তু—সবই মানুষের কল্যাণে সদা নিয়োজিত আছে।

মানুষ সম্মানের পাত্র : মহানবী (সা.) বিদায় হজের ভাষণে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করে বলেছেন, ‘তোমাদের এই পবিত্র শহরে, এই পবিত্র মাসে আজকের এই দিনটি যেমন পবিত্র ও মর্যাদাবান, তেমনি তোমাদের পরস্পরের রক্ত, তোমাদের পরস্পরের ধন-সম্পদ এবং পরস্পরের মান-সম্মানও তেমনই পবিত্র ও মর্যাদাপূর্ণ। (বুখারি শরিফ, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৩৪)

মানব হত্যা মহাপাপ : পৃথিবীতে বিদ্যমান সব ধর্মেই জীব হত্যা হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘...যে কেউ প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ (কিসাস) ছাড়া অথবা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে কাউকে হত্যা করল, সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করল। আর যে কারো জীবন রক্ষা করল, সে যেন সবার জীবন রক্ষা করল।’ (সুরা মায়েদা : ৩২) মানবদেহ খুবই মর্যাদা ও সম্মানের। সুতরাং মানবদেহের কর্তিত বা বিচ্ছিন্ন অংশ হিফাজত করা আবশ্যক। হিফাজতের উত্তম পন্থা হলো মাটির নিচে পুঁতে ফেলা। মহানবী (সা.) মানবদেহের সাতটি জিনিস পুঁতে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন—কর্তিত পশম, নখ, নির্গত রক্ত, ঋতুস্রাবের রক্ত, দাঁত, বিচ্ছিন্ন অংশ ও বমি। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘একজন মুমিনকে হত্যা করা আল্লাহর কাছে গোটা পৃথিবী ধ্বংসের চেয়ে মারাত্মক।’ (নাসায়ি, ৭/৮৩)

মানুষের স্তরঃ প্রথম স্তরের মানুষ হলেন নবী-রাসুলরা, তারপর তাঁদের অনুসারীরা। নবী-রাসুলের মধ্যে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) হলেন সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী, তারপর তাঁর সাহাবিরা, তারপর তাবেয়িরা, তারপর তাবেতাবেয়িরা। মহানবী (সা.) বলেন, শ্রেষ্ঠ যুগ আমার যুগ। তারপর সাহাবিদের যুগ, তারপর তাবেয়িদের যুগ, তারপর তাবেতাবেয়িদের যুগ (তিরমিজি, হাদিস নম্বর : ৩৩০৮) কোনো কোনো মনীষী বলেছেন, মানুষ চার স্তরে বিভক্ত। প্রথম স্তরের মানুষ হলো, যারা অন্যের উপকার করে এবং নিজেরও উপকার করে। তারা হলো উত্তম মানুষ। এমন মহৎ মানুষকে গ্রিক দার্শনিক ডাইওজিন কালবিকে প্রদীপ হাতে নিয়ে খোঁজ করতে দেখে পথিক জিজ্ঞেস করেন, দার্শনিক সাহেব, আপনি দিবসে প্রজ্বলিত প্রদীপ নিয়ে কী খোঁজ করছেন। তিনি প্রত্যুত্তরে বলেন, আমি ভালো মানুষ তালাশ করছি। দ্বিতীয় স্তরের মানুষ হলো, যারা অন্যের উপকার করার দ্বারা নিজেরাও উপকৃত হওয়ার ফন্দি করে। তারা হলো প্রতাপশালী স্বৈরাচারী। তৃতীয় স্তরের মানুষ হলো, যারা নিজের উপকার করে কিন্তু অন্যের উপকার করে না, তারা হলো লোভী কুকুরসদৃশ। 

তাই বলা যায়, মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব ।


ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ