Call
জাহেলী যুগে একাধিক বিয়ের ক্ষেত্রে কোন বাধা নিষেধ বা কোন সীমারেখা ছিলো না। প্রাচীনকালে প্রায় সর্বত্রই স্বামীদের একাধিক স্ত্রী ছিলো। একজন পুরুষ যত ইচ্ছা বিয়ে করতে পারতো। এমনকি রাসুল (সাঃ) এর ১৩ জন স্ত্রী এবং তার সামর্থ্যও ছিল। এমনকি এই বিধান নাযিল হয়েছে রাসুল (সাঃ) এর বিয়ের পর।

কিন্তু ইসলাম এই রীতি বন্ধ করে দিয়েছে সুরা নিসার ৩ নাম্বার আয়াতে এবং চারটির বেশি বিয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

উম্মতের জন্য চারের অধিক বিবাহের অনুমতি নেই। আল্লাহ তায়ালা বলেন, নারীদের মধ্যে যাদেরকে তোমাদের ভালো লাগে তাদের দুই, তিন বা চারজনকে বিবাহ করতে পার। (সূরা নিসা আয়াতঃ ৩)

যেসব সাহাবার চারের অধিক স্ত্রী ছিলো, রাসুল (সাঃ) তাদের বলেছেন, তাদের মধ্যে চারজন বাছাই করে রাখো, অন্যদের তালাক দিয়ে দাও।

ইসলাম পূর্ব যুগে কারও কারও দশটি পর্যন্ত স্ত্রী থাকত। ইসলাম এটাকে চারের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে দিয়েছে। কায়েস ইবন হারেস (রাঃ) বলেন, আমি যখন ইসলাম গ্রহণ করি তখন আমার স্ত্রী সংখ্যা ছিল আট। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে আসলে তিনি আমাকে বললেন, এর মধ্য থেকে চারটি গ্রহণ করে নাও। (ইবন মাজাহ: ১৯৫২, ১৯৫৩)

ইসলাম একাধিক বিয়ের অনুমোদন শর্ত সাপেক্ষে দিয়েছে। সকল স্ত্রীর সাথে একই রকমের ব্যবহার এবং একই সুবিচার করতে হবে।

কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, যদি তোমাদের এই ভয় হয় যে, তোমরা ( একের অধিক হলে) ইনসাফ করতে পারবে না, তাহলে (তোমাদের জন্য) একজনই যথেষ্ট। (আন নিসাঃ আয়াত ৩)

তবুও আল্লাহ তায়ালা রাসূল (সাঃ) কে সকল মানুষের তুলনায় একটি বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন। চারজন স্ত্রী রেখে অন্যদের তালাক দেয়ার আদেশ তাকে দেয়া হয়নি। তবে এরপর বিয়ে করতে নিষেধ করা হয়েছে, যদি কোন নারীকে পছন্দ হয় তবুও।

আল্লাহর এই নিষেধের কথা নিম্নোক্ত আয়াতে বলা হয়েছেঃ হে নবী! এরপরে তোমার জন্যে এটা বৈধ নয় তুমি তোমার (বর্তমান) স্ত্রীদের বদলে (অন্য নারীদের গ্রহণ করে ) নেবে, যদিও সেসব নারীদের সৌন্দর্য তোমাকে আকৃষ্ট করে। (আহযাবঃ ৫২)

চারজন স্ত্রী রেখে অন্যদের তালাক দেওয়ার আদেশ আল্লাহ তায়ালা রাসুল (সাঃ) কে দেননি। তাকে এই আদেশ থেকে আলাদা রাখা হয়েছে। এর কারণ হচ্ছে, রাসুল (সাঃ) এর স্ত্রী হওয়ার ফলে উল্লেখিত মহিলারা বিশেষ সামাজিক মর্যাদা লাভ করেছেন। রাসুল (সাঃ) এর স্ত্রী হওয়ার কারণে তারা সমগ্র মুসলমানের মা হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, আল্লাহর নবী মোমেনদের কাছে তাদের নিজেদের চাইতেও বেশি প্রিয়।, নবীর স্ত্রীরা হচ্ছে তাদের মা (সমান)। (আহযাবঃ ৬)

মুসলমানদের মা হওয়ার বন্ধনের কারণে তাদের বিয়ে করা যেকোন মুসলমানের জন্য হারাম বা নিষিদ্ধ।

আল্লাহ তায়াল বলেন, তোমাদের কারো জন্যই এটা বৈধ নয় যে, তোমরা আল্লাহর রাসুলকে কষ্ট দেবে (না এটা তোমাদের জন্য বৈধ যে,) তোমরা তারপর কখনও তার স্ত্রীদের বিয়ে করবে, এটা আল্লাহ তায়লার কাছে একটি বড় (অপরাধের) ব্যাপার। (আহযাবঃ ৫৩)

চিন্তা করে দেখুন রাসুল (সাঃ) যদি চারজন স্ত্রী রেখে অন্যদের তালাক দিতেন তবে তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীদের বাকী জীবন অন্যকোন পুরুষের সাথে নিষিদ্ধ হতো। ফলে বাকী জীবন তাদেরকে স্বামী বিহীন অবস্থায় কাটাতে হতো।

রাসুল (সাঃ) এর সাথে বিয়ের কারণে তারা যে সামাজিক মর্যাদার অধিকারী হয়েছিলেন, তালাকের পর সে মর্যাদা থাকতো না। এর অর্থ হচ্ছে কোন অপরাধ না করেও তারা শাস্তি ভোগ করতেন এবং বঞ্চনার স্বীকার হতেন। তাছাড়া যদি তাকে এ আদেশ দেয়া হত যে, আপনি চারজন স্ত্রী রেখে বাকী স্ত্রীদের তালাক দিন তবে রাসুল (সাঃ) এর জন্যে কঠিন সমস্যার সৃষ্টি হতো। কারণ তিনি কাকে রেখে কাকে তালাক দিবেন?

তার দৃষ্টিতে সকল স্ত্রী ছিলেন সমান। শুধু তাই নয়, চারজন রেখে বাকীদের সামাজিক মর্যাদাহানি হতো। তারা মুসলমানদের মা হওয়ার যে গৌরবলাভ করেছিলেন সেই গৌরব থেকে বঞ্চিত হতেন। এ কারণে তার সকল স্ত্রী বহাল থাকা ছিল যুক্তির দাবী। তবে পরবর্তীতে অন্য কোন নারীকে বিয়ে করতে রাসুল (সাঃ) কে আল্লাহ তায়ালা নিষেধ করেছেন। এ সম্পর্কে ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।
ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ