আমরা জানি মোট আসমানি কিতাব ১০৪ খানা। ১০০ খানা সহিফা বা ছোট কিতাব। আর ৪ খানা বড় কিতাব
প্রশ্নের প্রথম ভাগের উত্তরঃ একমাত্র নাজাতদাতা হলেন আল্লাহ্।
একমাত্র নাজাতদাতা হলেন আল্লাহ। কেননা, আল্লাহর রহমত ব্যতীত শুধু আমলের দ্বারা কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কস্মিনকালেও তোমাদের কাউকে তার নিজের আমল কক্ষনো নাজাত দিবে না। তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনাকেও না? তিনি বললেনঃ আমাকেও না। তবে আল্লাহ আমাকে তার রহমত দিয়ে আবৃত রেখেছেন। তোমরা যথারীতি আমল করে নৈকট্য লাভ কর। তোমরা সকালে, বিকালে এবং রাতের শেষভাগে আল্লাহর ইবাদাত কর। মধ্য পন্থা অবলম্বন কর। মধ্য পন্থা তোমাদেরকে লক্ষ্যে পৌঁছাবে। (মুসলিমঃ ৫০/১৭, হাঃ ২৮১৬ আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬০১৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬০১৯ হাদিসের মানঃ সহিহ)। হাদীসটি প্রমাণ করে যে, আল্লাহর রহমত ব্যতীত শুধু আমলের দ্বারা কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। হাদিসের মানঃ সহিহ। শরীয়তের পরিভাষায় কল্যাণ লাভ অথবা অকল্যাণ প্রতিহত করার আশায় অপরের জন্য মধ্যস্ততা করাকে শাফায়াত বলে। শাফায়াত দুই প্রকার। যথাঃ- প্রথমতঃ শরীয়ত সম্মত শাফায়াত। কুরআন ও সুন্নাহয় এ প্রকার শাফায়াতের বর্ণনা এসেছে। তাওহীদপন্থীগণ এ ধরণের শাফায়াতের হকদার হবে। আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ)কে জিজ্ঞাসা করলেনঃ কিয়ামতের দিন কোন ব্যক্তি আপনার শাফায়াতের বেশী হকদার হবে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে আবু হুরায়রা! তোমার হাদীস শেখার আগ্রহ দেখে আমার ধারণা ছিল যে, তোমার পূর্বে এ বিষয় সম্পর্কে কেউ জিজ্ঞাসা করবে না। যে ব্যক্তি অন্তর থেকে ইখলাসের সাথে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করবে, কিয়ামতের দিন সে ব্যক্তি আমার শাফায়াতের সবচেয়ে বেশী হকদার হবে। এ প্রকার শাফায়াতের জন্য ৩টি শর্ত রয়েছে। ১। শাফায়াতকারীর উপর আল্লাহর সন্তষ্টি থাকা। ২। যার জন্য সুপারিশ করা হবে, তার উপরও আল্লাহর সন্তষ্টি থাকা। ৩। শাফায়াতকারীর জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে শাফায়াত করার অনুমতি থাকা। আল্লাহ তাআলা এই শর্তগুলো কুরআন মাজীদে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ বলেনঃ আকাশে অনেক ফেরেশতা রয়েছেন, যাদের কোন সুপারিশ ফলপ্রসু হয়না। কিন্তু আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা ও যাকে পছন্দ করেন এবং যাকে শাফায়াত করার অনুমতি দেন তার কথা ভিন্ন। (সূরা নাজমঃ ২৬) আল্লাহ বলেনঃ কে এমন আছে যে, সুপারিশ করবে তার কাছে তার অনুমতি ছাড়া? (সূরা বাকারাঃ ২৫৫) আল্লাহ বলেনঃ দয়াময় আল্লাহ যাকে অনুমতি দেবেন এবং যার কথায় সন্তুষ্ট হবেন সে ছাড়া কারও সুপারিশ সেদিন কোন উপকারে আসবে না। (সূরা ত্বো-হাঃ ১০৯) আল্লাহ তাআলা বলেনঃ তারা শুধু তাদের জন্যে সুপারিশ করবেন, যাদের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট। (সূরা আম্বিয়াঃ ২৮) সুতরাং শাফায়াত পাওয়ার জন্য উপরোক্ত তিনটি শর্ত থাকা আবশ্যক। এই শাফায়য়াত আবার দুই প্রকারঃ ১। সাধারণ শাফায়াতঃ সাধারণ শাফায়াতের অর্থ হল, সৎ বান্দাদের মধ্যে থেকে যাকে ইচ্ছা এবং যার জন্য ইচ্ছা আল্লাহ শাফায়াত করার অনুমতি দিবেন। এই ধরণের শাফায়াত আল্লাহর অনুমতি পেয়ে আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, অন্যান্য নবী-রাসূল, সত্যবাদীগণ, শহীদগণ এবং নেককারগণ করবেন। তাঁরা পাপী মুমিনদেরেকে জাহান্নামের আগুন থেকে বের করে আনার ব্যাপারে সুপারিশ করবেন। ২। বিশেষ ও নির্দিষ্ট সুপারিশঃ এই ধরণের শাফায়াত নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্য নির্দিষ্ট। এই শাফায়াতের মধ্যে সবচেয়ে বড় হল হাশরের মাঠের শাফায়াত। হাশরের মাঠে মানুষ যখন বিপদে পড়ে যাবে এবং অসহনীয় আযাবে গ্রেপ্তার হবে, তখন তারা একজন সুপারিশকারী খুঁজে ফিরবে। যাতে করে তারা এই ভীষণ সংকট থেকে রেহাই পেতে পারে। প্রথমে তারা আদম (আঃ) এর কাছে গমণ করবে। অতঃপর পর্যায়ক্রমে নূহ, ইবরাহীম, মূসা, ঈসা (আঃ)এর কাছে যাবে। তারা কেউ সুপারিশ করতে সাহস করবেন না। অবশেষে তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে আসবে। তিনি মানুষকে এই বিপদজনক অবস্থা হতে মুক্ত করার জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবেন। আল্লাহ তার দুআ এবং শাফায়াত কবূল করবেন। এটিই হল সুমহান মর্যাদা, যা আল্লাহ তাকে দান করেছেন। জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি রাসূলদের সরদার, কোন গর্ব নয়। আমি সর্বশেষ নবী, কোন গর্ব নয়, আমি সর্বপ্রথম সুপারিশকারী এবং আমার সুপারিশ সর্বপ্রথম গ্রহণ করা হবে, কোন গর্ব নয়। (সুনান আদ-দারেমী, হাদিস নম্বরঃ ৫০)