শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

: আমাদের গ্রামটি বেশ উন্নত। এটি আমার প্রাণের চেয়েও প্রিয়। এর নাম কাছিপাড়া। এক কালে এ অঞ্চলটি বনভূমি ছিল। এ বনভূমির গভীর জঙ্গলে বাস করত অনেক বাঘ। জানি না কোন্ সাহসী লোক এ বনভূমি উজাড় করে বসবাস করার উপযুক্ত স্থান গড়ে তুলেছিল। এ গ্রাম পটুয়াখালী জেলার বাউফল থানায় অবস্থিত। এ গ্রামেই আমার বাল্যকাল ও কৈশোর কেটেছে শান্তিতে। আয়তন ও লোকসংখ্যা : আমাদের এ গ্রামটি বেশি বড় নয়। দৈর্ঘ্য প্রায় এক কিলোমিটার ও প্রস্থ আধা কিলোমিটার। এখানে তিন হাজারের বেশি লোক বাস করে। অধিবাসীদের অধিকাংশই মুসলমান। আর কিছু হিন্দু পরিবার রয়েছে। অধিবাসীদের পেশা : গ্রামের অধিকাংশ লোক কৃষির উপর নির্ভরশীল। তারা কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। কিছু লোক সরকারি চাকরি ও কিছু লোক ব্যবসা-বাণিজ্য করে। ঘরবাড়ি কাঠ ও টিনের তৈরি। গরীব গ্রহস্থদের ঘর বাঁশ, গোলপাতা ও ছনের তৈরি। বেশ কিছু ধনী লোক পাকা বাড়িতে বাস করে। প্রাকৃতিক দৃশ্য : গ্রামের পূর্বদিক দিয়ে বয়ে গেছে তেতুলিয়া নদী। এক সময় বর্ষার উদ্দামতায় নদীটিকে গ্রামের হৃদয়ে শিহরণ জাগাত। গ্রামের উত্তরে বনভুমি, দক্ষিণে বিস্তৃত মাঠ। গ্রামের মাঝে কাজল কাল জল ফুটে ওঠে প্রকাণ্ড দীঘিতে। প্রকৃতি এ গ্রামকে বছরের ছয়টি ঋতুতেই সাজায় বিশেষ সাজে। সারা গ্রামখানি লতায়-পাতায় ফুলে গন্ধে ভরে ওঠে। প্রতিষ্ঠান ও যোগাযোগ ব্যবস্থা : আমাদের গ্রামে একটি ডাকঘর, একটি সরকারি ডাক্তারখানা, একটি উচ্চ বিদ্যালয়, একটি বালিকা, বিদ্যালয় ও একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে ছোট ছোট ছেলেমেয়ে পড়ে। গ্রামে একটি পাকা মসজিদ আছে। গ্রামের উত্তর দিকে বীরপাশা বাজার নামে একটি বাজার রয়েছে। একটি পাকারাস্তা গ্রামের পাশ দিয়ে গিয়েছে। এটি বাইরের সাথে এ গ্রামের যোগাযোগ রক্ষা করছে। বছরের বার মাসই রাস্তা দিয়ে বাস, ট্রাক, সাইকেল, রিকশা, ভ্যান প্রভৃতি চলাচল করে। গ্রামের মধ্যে কয়েকটি কাঁচা রাস্তাও আছে। উৎপন্ন দ্রব্য : আমাদের গ্রামের প্রধান উৎপন্ন দ্রব্য ধান, পাট, আঁখ, ডাল, তামাক, সরিষা, মরিচ, হলুদ, শাক-সবজি প্রভৃতি শস্য। প্রতিটি বাড়িতে সারা বছর প্রচুর তরিতরকারি ও ফলমূল জন্মে। আর পুকুরে মাছের চাষ হয়। প্রতিদিন আমাদের গ্রাম থেকে সড়কপথে প্রচুর তরিতরকারি, মাছ, ডিম ইত্যাদি বিভিন্ন স্থানে নেওয়া হয়। উপসংহার : এত সম্পদেও অভাবের অন্ত নেই গ্রামে। শিক্ষার অভাব, চিকিৎসার অভাব, আর নানা অভাব, নানা রোগ, নানা ভাবনা গ্রামের সুখের নীড়ে এনেছে অশান্তি। এ সমস্যাগুলো দূর করতে সকলের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। তবেই আমাদের গ্রামে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ফিরে আসবে

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

আমাদের গ্রাম


নাম ও অবস্থান : আমাদের গ্রামটি বেশ উন্নত। এটি আমার প্রাণের চেয়েও প্রিয়। এর নাম কাছিপাড়া। এক কালে এ অঞ্চলটি বনভূমি ছিল। এ বনভূমির গভীর জঙ্গলে বাস করত অনেক বাঘ। জানি না কোন্ সাহসী লোক এ বনভূমি উজাড় করে বসবাস করার উপযুক্ত স্থান গড়ে তুলেছিল। এ গ্রাম পটুয়াখালী জেলার বাউফল থানায় অবস্থিত। এ গ্রামেই আমার বাল্যকাল ও কৈশোর কেটেছে শান্তিতে।

আয়তন ও লোকসংখ্যা : আমাদের এ গ্রামটি বেশি বড় নয়। দৈর্ঘ্য প্রায় এক কিলোমিটার ও প্রস্থ আধা কিলোমিটার। এখানে তিন হাজারের বেশি লোক বাস করে। অধিবাসীদের অধিকাংশই মুসলমান। আর কিছু হিন্দু পরিবার রয়েছে।

অধিবাসীদের পেশা : গ্রামের অধিকাংশ লোক কৃষির উপর নির্ভরশীল। তারা কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। কিছু লোক সরকারি চাকরি ও কিছু লোক ব্যবসা-বাণিজ্য করে। ঘরবাড়ি কাঠ ও টিনের তৈরি। গরীব গ্রহস্থদের ঘর বাঁশ, গোলপাতা ও ছনের তৈরি। বেশ কিছু ধনী লোক পাকা বাড়িতে বাস করে।

প্রাকৃতিক দৃশ্য : গ্রামের পূর্বদিক দিয়ে বয়ে গেছে তেতুলিয়া নদী। এক সময় বর্ষার উদ্দামতায় নদীটিকে গ্রামের হৃদয়ে শিহরণ জাগাত। গ্রামের উত্তরে বনভুমি, দক্ষিণে বিস্তৃত মাঠ। গ্রামের মাঝে কাজল কাল জল ফুটে ওঠে প্রকাণ্ড দীঘিতে। প্রকৃতি এ গ্রামকে বছরের ছয়টি ঋতুতেই সাজায় বিশেষ সাজে। সারা গ্রামখানি লতায়-পাতায় ফুলে গন্ধে ভরে ওঠে।

প্রতিষ্ঠান ও যোগাযোগ ব্যবস্থা : আমাদের গ্রামে একটি ডাকঘর, একটি সরকারি ডাক্তারখানা, একটি উচ্চ বিদ্যালয়, একটি বালিকা, বিদ্যালয় ও একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে ছোট ছোট ছেলেমেয়ে পড়ে। গ্রামে একটি পাকা মসজিদ আছে। গ্রামের উত্তর দিকে বীরপাশা বাজার নামে একটি বাজার রয়েছে।

একটি পাকারাস্তা গ্রামের পাশ দিয়ে গিয়েছে। এটি বাইরের সাথে এ গ্রামের যোগাযোগ রক্ষা করছে। বছরের বার মাসই রাস্তা দিয়ে বাস, ট্রাক, সাইকেল, রিকশা, ভ্যান প্রভৃতি চলাচল করে। গ্রামের মধ্যে কয়েকটি কাঁচা রাস্তাও আছে।

উৎপন্ন দ্রব্য : আমাদের গ্রামের প্রধান উৎপন্ন দ্রব্য ধান, পাট, আঁখ, ডাল, তামাক, সরিষা, মরিচ, হলুদ, শাক-সবজি প্রভৃতি শস্য। প্রতিটি বাড়িতে সারা বছর প্রচুর তরিতরকারি ও ফলমূল জন্মে। আর পুকুরে মাছের চাষ হয়। প্রতিদিন আমাদের গ্রাম থেকে সড়কপথে প্রচুর তরিতরকারি, মাছ, ডিম ইত্যাদি বিভিন্ন স্থানে নেওয়া হয়।

উপসংহার : এত সম্পদেও অভাবের অন্ত নেই গ্রামে। শিক্ষার অভাব, চিকিৎসার অভাব, আর নানা অভাব, নানা রোগ, নানা ভাবনা গ্রামের সুখের নীড়ে এনেছে অশান্তি। এ সমস্যাগুলো দূর করতে সকলের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। তবেই আমাদের গ্রামে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ফিরে আসবে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Pori Moni

Call

                  রচনা : আমাদের গ্রাম


ভূমিকা :

‘বাঁধিলাম ঘর এই শ্যামা আর খঞ্জনার দেশ ভালবেসে,

ভাসানের গান শুনে কতবার ঘর আর খড় গেল ভেসে।

মাথুরের পালা বেঁধে কতবার ফাঁকা হল খড় আর ঘর।’

---- জীবনান্দ দাশ।

এদেশ গানের দেশ, কবিতার দেশ, সবুজের দেশ। বাংলার নিসর্গ ছবি, গাছের ফুল, শ্যামল প্রকৃতি, ফসলের মাঠ, পাখির কল-কাকলী, রাখালের সুরধ্বনি, নদীর কলতান, মেঠো পথ প্রভৃতি মানুষকে মুদ্ধ করে; কবির মনে দোলা দেয়। গ্রামে স্নেহ-প্রেম-ভালোবাসা আছে, আছে সৌন্দর্য শ্যামলিমা, আছে সরল প্রাণের চঞ্চলতা। কবির ভাষায়-

‘আমাদের দেশের রাঙা মাটির

আকুল করা ঘ্রাণ

ছুটিয়ে নেয় গাঁয়ের পথে

ভরিয়ে দিতে প্রাণ।’


আবহমান গ্রামবাংলা : গ্রামের আম-জাম-কাঁঠালের ছায়া সুনিবিড় পথে বাউল মন উদাস হয়ে ফেরে। এখানে যেন চিরন্তন বাংলাদেশের হৃদয়ের স্পর্শ মেলে। তার অবারিত প্রসন্ন আকাশ, দিগন্তশায়ী শস্য-প্রান্তর, দোয়েল-খঞ্জনা-শালিক-বউকথাকও পাখির কল-কূজন যেন এক স্বপ্নালোকের ইন্দ্রজাল রচনা করে দেয়। তার বনের পত্র-মর্মরে এবং স্নেহশালিনী নদীর কলগুঞ্জনে, মায়ের স্নেহ-সম্ভাষণের মতো যেন জড়িয়ে আছে এক মায়াময় স্নিগ্ধ রূপশ্রী।


গ্রামের আকর্ষণ : চারদিকে দিগন্তশায়ী বিস্তীর্ণ মাঠ, মাঝখানে সবুজ দ্বীপের মতো স্বপনমাখা একখানি গ্রাম। প্রভাত-কাকলির মধ্যে প্রতিদিন উঠে আসে রক্তিম সূর্য। গরু-চরা মাঠ এবং প্রসন্ন আকাশ পূর্ণ করে বাজতে থাকে রাখালিয়া বাঁশি। আঁকাবাঁকা মেঠোপথে হেঁটে আসে নিঃসঙ্গ পথিক। আম-কাঁঠাল-নিম-অর্জুন-শিরিষের ছায়া, দীঘির কলমী লতা, বনতুলসী-ভুটফুলের ব্যাকুল ঘ্রাণ আর দোয়েল-শ্যামা-শালিক-খঞ্জনার কল-কাকলি তাকে গ্রামের অন্তপুরে আমন্ত্রণ জানায়। পথের দু’ধারে তরুশাখা পেলব বাহুতে পথিকের গলা জড়িয়ে প্রশ্ন শুধায়।

‘হে বন্ধু, আছ তো ভালো?’


গ্রামের সৌন্দর্য : গ্রামের পল্লবঘন আম্রকানন, তার রাখালের স্বপ্নময় খেলা, আর স্তব্ধ-অতল দীঘি-কালোজলের নিশীথ-শীতল স্নেহ বাঙালীর সম্মুখে রূপময় অন্তরলোকের আনন্দ-দুয়ার যেন খুলে দেয়। তার শাপলা-দীঘিতে হাঁসেরা খেলা করে। ঝুলন্ত সজিনার ডালে বকের ধ্যানমগ্নতায়, হিজল-ডালে মাছরাঙার মৎস্য তপস্যায়, ঘুঘুর কান্নায়, শঙ্খচিলের মর্ম-বিদারী আর্ত বিলাপে, ধীর প্রবাহিনী নদীর কল-গুঞ্জনে, তার আজানের ডাকে সৌন্দর্য-ভিখারী মনটি চুরি হয়ে যায়। আর এজন্যই কবি জীবনান্দ দাশ বলেছেন-

‘তোমার যেখানে সাধ চলে যাও- আমি এই বাংলার পারে রয়ে যাবো।’


গ্রামের কর্মব্যস্ততার রূপ : গ্রামের চাষীরা হাল-বলদ নিয়ে মাঠে চাষে, বীজ বোনে, পাকা ফসল তোলে। জেলেরা মাঝ ধরে, কুমারেরা হাঁড়ি-কলসী তৈরি করে, কামারেরা লোহার জিনিসপত্র বানায়, তাঁতী তাঁত বোনে। আর গ্রামের মেয়েরা নৃত্যময় ছন্দে ঢেঁকিতে ধান ভোনে। এইভাবে গ্রামের জীবন-ছন্দ প্রতিদিন বিচিত্র ভঙিতে বিকশিত হয়ে ওঠে।


গ্রামের সাংস্কৃতিক জীবন : যুগ যুগ ধরে পূজা-পার্বণ ও উৎসব-অনুষ্ঠান ইত্যাদির মধ্য দিয়ে গ্রামের সাংস্কৃতিক জীবন বিকশিত হয়ে উঠেছে। ঈদ, নানা পূজা-পার্বণ, আচার-অনুষ্ঠান, নববর্ষ, মেলা ইত্যাদি উৎসব তো তার লেগেই আছে।


গ্রামের অতীত ও বর্তমান : হরিতে-হিরণে, সবুজে-শ্যামলে, সুজল-সুফলা, শস্য-শ্যামলা আমাদের এই দেশ বাংলাদেশ- যার মূলভিত্তি ‘ছায়া-সুনিবিড় শান্তির নীড় ছোট ছোট গ্রামগুলো’। প্রায় বিরানব্বই হাজার গ্রাম (বর্তমান পরিসংখ্যান অনুযায়ী) নিয়ে গঠিত এই দেশের শতকরা ৮৫ জন লোক পল্লীগ্রামে বাস করে। পল্লীর সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা রূপ নিয়ে কবির কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছিল,

‘আমাদের গ্রামখানি ছবির মতন

মাটির তলায় এর ছড়ানো রতন’

কিন্তু পল্লীর সে-সৌন্দর্য এখন আর দেখা যায় না, আমাদের অবহেলার কারণে পল্লীগ্রামগুলো আজ শ্রীহীন হয়ে পড়েছে। মানুষ কেবলই –

‘ইটের পর ইট মাঝে মানুষ কীট, নেইকো ভালোবাসা নেইকো মায়া’ এমনি কৃত্রিম সুখের অন্বেষণে শহরের দিকে ধাবিত হচ্ছে। অথচ কৃষিনির্ভর এই দেশের উন্নয়ন কখনোই সম্ভব নয়, যদি না গ্রামের উন্নয়ন হয়। গ্রামের উন্নতি মানে দেশের উন্নতি।


উপসংহার : গ্রাম হল “ছায়া-সুনিবিড় শান্তির নীড়”। স্বাধীনতার পর তিনটি দশকে গ্রামের দারিদ্র্যক্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে ব্যাপক ও সার্বিক কোনো কার্যক্রম গৃহীত হয় নি। ফলে বিপুল সংখ্যক গ্রামবাসী মানবেতর জীবন যাপন করছে। আমাদের জাতীয় অর্থনীতির মূল উৎস গ্রাম। গ্রামের উন্নয়ন ব্যতীত দেশের সর্বমুখী ও সর্বজনীন কল্যাণ সম্ভব নয়। গ্রামের অবস্থান ও উন্নয়নের উপর বাংলাদেশের অস্তিত্ব নির্ভরশীল। তাই গ্রামকে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও আত্মনির্ভরশীল করে তুলতে হবে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ