রিয়া কী? এবং  রিয়া সম্পর্কে ইসলাম  কি বলে? হাদিসের আলোকে যৌক্তিক ব্যাখ্যা  চাই। 
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
HMMOBAROKBD

Call

রিয়া সম্পর্কে আলোচনার আগে আমি কয়েকটি আয়াত ও হাদিস এনেছি এসম্পর্কে৷ 

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَمَا أُمِرُوا إِلاَّ لِيَعْبُدُوا اللهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ

অর্থাৎ, তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদত করতে। (সূরা বাইয়িনাহ ৫ আয়াত) তিনি আরো বলেছেন,

لاَ تُبْطِلُوا صَدَقَاتِكُمْ بِالمَنِّ وَالأَذَى كَالَّذِي يُنْفِقُ مَالَهُ رِئَاءَ النَّاسِ

অর্থাৎ, হে বিশ্বাসিগণ! দানের কথা প্রচার করে এবং কষ্ট দিয়ে তোমরা তোমাদের দানকে নষ্ট করে দিয়ো না; ঐ লোকের মত যে নিজের ধন লোক দেখানোর জন্য ব্যয় করে। (সূরা বাকারাহ ২৬৪ আয়াত)  তিনি অন্য জায়গায় বলেছেন,

إِنَّ الْمُنَافِقِينَ يُخَادِعُونَ اللّهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْ وَإِذَا قَامُواْ إِلَى الصَّلاَةِ قَامُواْ كُسَالَى يُرَآؤُونَ النَّاسَ وَلاَ يَذْكُرُونَ اللّهَ إِلاَّ قَلِيلاً

অর্থাৎ, নিশ্চয় মুনাফিক (কপট) ব্যক্তিরা আল্লাহকে প্রতারিত করতে চায়। বস্তুতঃ তিনিও তাদেরকে প্রতারিত করে থাকেন এবং যখন তারা নামাযে দাঁড়ায় তখন শৈথিল্যের সাথে নিছক লোক-দেখানোর জন্য দাঁড়ায় এবং আল্লাহকে তারা অল্পই স্মরণ করে থাকে। (সূরা নিসা ১৪২) 

আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, মহান আল্লাহ বলেন, আমি সমস্ত অংশীদারদের চাইতে অংশীদারি (শির্ক) থেকে অধিক অমুখাপেক্ষী। কেউ যদি এমন কাজ করে, যাতে সে আমার সঙ্গে অন্য কাউকে অংশীদার স্থাপন করে, তাহলে আমি তাকে তার অংশীদারি (শির্ক) সহ বর্জন করি। (অর্থাৎ তার আমলই নষ্ট করে দিই।)

(মুসলিম ৭৬৬৬)

রিয়া অর্থ লোক দেখানো ইবাদত। ইবাদত একান্ত আল্লাহর জন্য। ইবাদত করা দেখে অন্য কেউ দেখে ভালো বলুক এরূপ মনোভাব নিয়ে ইবাদত করলে প্রকৃত পক্ষে সে ইবাদত আল্লাহর উদ্দেশ্যে করা হয় না। এ কারণে রিয়াকে গোপন শিরক বলা হয়। 

-পবিত্র কোরআনের একাধিক আয়াতে রিয়ার অপকারিতা উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, রিয়ামিশ্রিত ইবাদত কখনও আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না বরং এর জন্য শান্তি অবধারিত। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি স্বীয় প্রভুর দর্শন লাভের আশা রাখে, সে যেন নেক কাজ করে এবং তার ইবাদতে যেন অপর কাউকে শরিক না করে।’ 

আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ওই সব নামাজি লোকদের জন্য ধ্বংস বা ওয়ায়েল দোজখ, যারা অন্যমনস্কভাবে নামাজ পড়ে এবং অন্যকে দেখায়। 

হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, এক ব্যক্তি হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা.) কোন কাজে মুক্তি ও পরিত্রাণ পাওয়া যাবে? নবী করিম (সা.) উত্তরে বললেন, তুমি আল্লাহতায়ালার ইবাদত করবে এবং তা মানুষকে দেখানোর ইচ্ছা করবে না।রাসুল (সা.) আরও বলেন, কিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে আল্লাহতায়ালার দরবারে হাজিরপূর্বক বলবেন, তুমি কি প্রকার ইবাদত করেছ? সে ব্যক্তি বলবে আমি নিজের প্রাণকে আল্লাহর রাস্তায় কোরবান করেছি। আমি জেহাদে যোগদান করলে কাফেররা আমাকে শহিদ করেছে।

আল্লাহতায়ালা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ, তুমি শুধু এই উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করেছিলে যে, লোকে তোমাকে বীরযোদ্ধা বলে আখ্যায়িত করবে। হে ফেরেশতাগণ! এ ব্যক্তিকে দোজখে নিয়ে যাও। অপর এক ব্যক্তিকে উপস্থিত করে জিজ্ঞাসা করা হবে তুমি কি প্রকারের ইবাদত করেছ? সে ব্যক্তি উত্তরে বলবে, আমার ধন-সম্পদ যা কিছু ছিল আমি তা আল্লাহর রাস্তায় দান-খয়রাত করেছি। আল্লাহপাক বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ, তুমি শুধু এ উদ্দেশ্য দান-খয়রাত করেছিলে যে, মানুষ তোমাকে দাতা বলে প্রশংসা করবে। অতএব এ ব্যক্তিকেও দোজখে নিক্ষেপ কর।

অতঃপর আরেক ব্যক্তিকে হাজির করে জিজ্ঞাসা করা হবে, তুমি কি প্রকারের ইবাদত করেছ? সে ব্যক্তি উত্তরে বলবে, আমি বহু পরিশ্রম করে বিদ্যা অর্জন করেছি এবং কোরআন শরিফ পাঠ করেছি। আল্লাহতায়ালা বলবেন, তুমি মিথ্যাবাদী, মানুষ তোমাকে আলেম বলবে এ উদ্দেশ্যে জ্ঞানার্জন করেছ। ফেরেশতাগণ! এ ব্যক্তিকেও দোজখে ফেলে দাও।

রাসুল (সা.) বলেছেন, আমি আমার উম্মতের জন্য ছোট শিরকের ভয় যত করছি, এত ভয় অন্য কোনো বিষয়ে করি না। উপস্থিত সাহাবারা জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! ছোট শিরক কি? হুজুর (সা.) উত্তর দিলেন, তা হচ্ছে- রিয়া। 

অন্য আরেক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, কেয়ামতের দিন লোক দেখানো ইবাদতকারীদের এভাবে আহ্বান করা হবে, ওহে রিয়াকার, ওহে বিশ্বাসঘাতক, ওহে হতভাগা! তোমার সমস্ত নেক আমল বিনষ্ট হয়েছে। তুমি যে ব্যক্তিকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে ইবাদত করেছিলে এখন তাদের নিকট তোমার পারিশ্রমিক প্রার্থনা করো।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ