প্রথমত, উল্লেখিত উক্তি গুলো গালি হিসেবে বলা হয়। ইসলামে অন্যকে গালি দেয়া সম্পূর্ণ হারাম। যেকোনো কারণেই হোক কাউকে গালি দেয়ার অনুমতি নেই। হাসি-কৌতুক ও ঠাট্টাচ্ছলেও অন্যকে গালি দেয়া ইসলামের দৃষ্টিতে অশোভনীয়। নাম নিয়ে যদি ঠাট্টা-বিদ্রূপ কেউ করে থাকে, তাহলে এটি হারাম; কোনো সন্দেহ নেই। এটা বড় ধরনের গুনাহর কাজ। আল্লাহ তায়াল কোরআনের মধ্যে নিষেধ করেছেন যে, ‘তোমরা তোমাদের নাম, উপাধি এগুলো নিয়ে কাউকে বিদ্রূপ করো না, দুর্ব্যবহার করো না।’ আবার এ নিয়ে আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেন, ‘ইমানদার ব্যক্তিদের ইমান আনার পরেই এই ধরনের কাজ অত্যন্ত নিকৃষ্টতম ফাসেকি কাজ। হাদিসে আছে, মুমিন কখনো দোষারোপকারী, অভিশাপদাতা, অশ্লীলভাষী ও গালিগালাজকারী হয় না। (তিরমিজি, হাদিস নং : ২০৪৩) আরেক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসেকি [আল্লাহর অবাধ্যাচরণ] এবং তার সঙ্গে লড়াই ঝগড়া করা কুফরি।’ (বুখারি, হাদিস নং: ৬০৪৫, ৭০৭৬; তিরমিজি, হাদিস নং: ১৯৮৩) তাহলে বোঝা যাচ্ছে যে, এটি একেবারেই ফাসেকি কাজ, গর্হিত কাজ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে এটি পছন্দনীয় কাজ নয়। এটি হারাম। আর মানুষকে আহত করার মতো কাজ তো ইসলামে অনুমোদন পেতেই পারে না।
উল্লেখ্য -এটা একটা মারাত্মক গোনাহ!মানুষকে কোন পশুর সাথে সম্বোধন করে অথবা কারো নামকে ব্যাঙ্গ করে ডাকা৷ মানুষকে মন্দ নামে, পশুর নামে ডাকা বা তাঁর নাম বিকৃত করে অপমানসূচক বা অশ্লীলভাবে সম্বোধন করা মারাত্মক গোনাহ, ও হারাম৷ মানুষ মাত্রই নিজেকে অন্যের নিকটে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে চায়। এটি মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। মানুষ এটাও চায় যে অন্যে তাঁকে উপযুক্ত ও উৎকৃষ্ট ভাষায় সম্বোধন করুক। কাউকে যত প্রীতিপূর্ণ ভাষা ও আবেগময় ভঙ্গিতে সম্বোধন করা হবে এতে সম্বোধনকারীর আন্তরিকতা ও বন্ধুত্বের ভাব ততবেশী প্রকাশিত হবে এবং পারস্পরিক ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় হবে। মানুষকে মন্দ নামে, পশুর নামে ডাকা বা তাঁর নাম বিকৃত করে অপমানসূচক বা অশ্লীলভাবে সম্বোধন করা আমাদের সমাজে অধিক লক্ষণীয়। এটি একটি কবিরা গুনাহ এটি আমরা ভুলেই গেছি। আমাদের বর্তমান সমাজে ইসলামিক নামগুলো হাসি-তামাশার খোরাক হয়ে উঠেছে। আমরা মুসলিম হয়েও অজ্ঞতাবশতঃ এই গুনাহের কাজ করেই চলছি।
সূরা হুজুরাতের ১১ নং আয়াতে বলেছেনঃ হে মুমিনগণ! কোন পুরুষ যেন অপর পুরুষকে উপহাস না করে কেননা সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী যেন অপর নারীকে উপহাস না করে কেননা সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। কেউ ঈমান আনার পর তাদের মন্দ নামে ডাকা গুনাহ। যারা এমন কাজ করার পর তওবা না করে তারাই জালিম।
-জিহ্বার হিফাজত সম্পর্কে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাঃ থেকে বর্ণিত, মহানবী সঃ বলেছেন, যার জিহ্বা ও হাত থেকে অন্য মুসলিম নিরাপদ, সে-ই প্রকৃত মুসলিম। আর যে আল্লাহর নিষিদ্ধ বিষয়গুলো পরিত্যাগ করে সে-ই প্রকৃত হিজরতকারী। (বুখারী ও মুসলিম) -আবার মানুষকে পশুর সাথে সম্বোধন করে ডাকাও হারাম। কোন মানুষকে গাধা, গরু, ভেড়া, ছাগল, কুকুর, শুয়োর, পাঁঠা ইত্যাদি বলে ডাকা মারাত্মক অপরাধ। প্রথমতঃ এটি মিথ্যা কারণ সে তো মানুষই। দ্বিতীয়তঃ এতে অপরের কাছে ক্লেশ পৌঁছে থাকে (আযকার নববীঃ ৩১৯ পৃষ্ঠা)।
আল্লাহ যেন আমাদেরকে এসব থেকে বিরত থাকার তাওফীক দান করেন, আমীন