শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

শার্লক হোমস ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগ ও বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগের একটি কাল্পনিক গোয়েন্দা চরিত্র। ১৮৮৭ সালে প্রথম আবির্ভূত এই চরিত্রের স্রষ্টা স্কটিশ লেখক ও চিকিৎসক স্যার আর্থার কোনান ডয়েল। হোমস একজন উচ্চমেধাসম্পন্ন লন্ডন-ভিত্তিক "পরামর্শদাতা গোয়েন্দা"। নির্ভুল যুক্তিসঙ্গত কার্যকারণ অনুধাবন, যে কোনো প্রকার ছদ্মবেশ ধারণ এবং ফরেনসিক বিজ্ঞানে দক্ষতাবলে জটিল আইনি মামলার নিষ্পত্তি করে দেওয়ার জন্য তাঁর খ্যাতি ভুবনজোড়া।

তার পুরো নাম উইলিয়াম শার্লক স্কট হোমস। শার্লক হোমসের জন্ম ১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দের ৬ জানুয়ারি শুক্রবার বিকেল বেলায়। বাবা সাইগার হোমস আর মা ভায়োলেট শেরিন ফোর্ড। বাবার যদিও ইচ্ছে ছিলো শার্লক বড় হয়ে হবেন ইঞ্জিনিয়ার, কিন্তু শার্লক হয়ে গেলেন বিশ্বের একমাত্র কনসাল্টিং গোয়েন্দা। তাঁর সঙ্গী, যোগ্য সহকারি বন্ধুবর লেখক ডাক্তার ওয়াটসন রহস্যোদঘাটনের চেষ্টা করেছেন কেন তিনি এই পেশায় এলেন। কিন্তু বারবার ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। পরে অবশ্য একদিন শার্লক নিজের মুখেই বলেছেন সেকথা।

ছেলেবেলা থেকেই শার্লক শিখে গিয়েছিলেন কী করে দুই চোখের ক্ষমতা দিয়ে চোখে দেখা জিনিসের খুঁটিনাটি বের করে ফেলা যায়। ১৮ বছর বয়সে যখন তিনি অক্সফোর্ড কলেজে আন্ডার গ্র্যাজুয়েটের ছাত্র, তখন তিনি বন্ধুবান্ধবহীন। চেহারা তেমন সুন্দর না হলেও তাঁর দিকে চোখ না ফিরিয়ে থাকা যায় না; একটা অসাধারণ আকর্ষণীয় ক্ষমতা ছিলো তাঁর। তবে দ্বিতীয় বছরে ভিক্টর ট্রেভর নামে এক বন্ধু জুটে গেলো তাঁর। ভিক্টরও শার্লকের মতো নিঃসঙ্গ।

১৮৯১ সালে দ্য স্ট্র্যান্ড ম্যাগাজিন পত্রিকায় প্রথম ছোটোগল্পের সিরিজটি প্রকাশিত হওয়ার পরই শার্লক হোমস চরিত্রটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ১৯২৭ সাল পর্যন্ত হোমসকে নিয়ে একগুচ্ছ ছোটগল্পের সিরিজ ও আরও দুটি ধারাবাহিক উপন্যাস প্রকাশিত হয়। হোমস কাহিনির পটভূমির সময়কাল ১৮৮০ থেকে ১৯০৭ সাল; শেষ ঘটনাটির সময়কাল অবশ্য ১৯১৪।

উইকিপিডিয়া থেকে সংরক্ষিত।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

টুকটাক গোয়েন্দাগল্প পড়েন, অথচ শার্লক হোমসের নাম শোনেননি, এমন পাঠক খুঁজে পাওয়া সত্যি বিরল। ব্রিটিশ লেখক স্যার আর্থার কোনান ডয়েল-এর লেখা ‘আ স্টাডি ইন স্কারলেট’ গল্পে প্রথম বিশ্বখ্যাত প্রাইভেট গোয়েন্দা শার্লক হোমসকে দেখা যায়, লেখক নিজেই যাঁকে একজন ‘কনসালটেটিভ গোয়েন্দা’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন। গোয়েন্দা শার্লক হোমস মূলত তাঁর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা, ফরেনসিক সায়েন্স বিষয়ে গভীর জ্ঞান ও ঘটনার যৌক্তিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে আপাতচোখে একেবারেই ক্লু-লেস ঘটনার সঠিক সমাধান দিয়ে থাকেন। তিনি কোথায় থাকেন? ২২১/বি, বেকার স্ট্রিট, লন্ডনে আড়াইতলা বাড়ির দোতলায় থাকতেন তিনি। মিসেস হাডসন ছিলেন তাঁর বাড়িওয়ালি। তাঁর বন্ধু, সহযোগী ও পরে তাঁর বায়োগ্রাফার ডা. ওয়াটসন বলতে গেলে জীবনের বেশির ভাগ সময় কাটান শার্লক হোমসের সঙ্গে রিজেন্টস পার্ক–লাগোয়া এই বাড়িতে। ডা. জন ওয়াটসনের বিয়ের আগে এবং তাঁর স্ত্রী বিয়োগের পরও মিসেস হাডসনের বাড়িতেই শার্লক হোমসের সঙ্গে ভাড়া থাকতেন। ওয়াটসনের এক প্রশ্নের উত্তরে হোমস বলেন, যেকোনো ঘটনার ডিটেকশন মানেই বিজ্ঞানমনষ্ক পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা, আবেগ কিংবা রোমান্টিসিজমের কোনো জায়গা সেখানে নেই। মনে রেখো বন্ধু, নিছক চেয়ে থাকার নাম দেখা নয়। সাধারণ মানুষ যা দেখে, আমি তার চেয়ে অনেকটা বেশি দেখি ও বোঝার চেষ্টা করি। তফাতটা এখানেই। মজার ব্যাপার হলো এই, কোনান ডয়েল তাঁর গোয়েন্দা চরিত্র শার্লক হোমসকে প্রথম জনসমক্ষে আনেন ১৮৮৭ সালে, যখন কিনা তাঁর বয়স মধ্যগগনে। শার্লক হোমস দীর্ঘ ২৩ বছর গোয়েন্দাগিরি করেন। তাঁর মক্কেল বা ক্লায়েন্টের মধ্যে যেমন প্রভূত ক্ষমতাধর মনার্ক বা রাজপরিবারের সদস্যরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন সম্ভ্রান্ত মানুষজন, শিল্পপতি বা একেবারেই গরিব পনব্রোকার কিংবা মামুলি গভর্নেস। এমনকি তাঁর ভাই মাইক্রফ্ট হোমস, যিনি কিনা উঁচুমাপের একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন, তিনিও একটি দলিল চুরির কেসে শার্লক হোমসের সাহায্য নিয়েছিলেন। সেই অর্থে মি. হোমসের মক্কেলদের ক্ষেত্রে যেমন বিষয় বৈচিত্র্য ছিল, তেমনি দেখা যায় পেশাগত তারতম্যও। ছয় ফুট তিন ইঞ্চি হাইট, চৌকো মুখমণ্ডল, প্রায়ই কালো বা ছাইরঙা ওভারকোটে পরিদৃশ্যমান, সংগীত ও গিটারে আসক্ত এই প্রাইভেট গোয়েন্দার পড়ালেখা প্রচুর। তিনি তাঁর মক্কেলকে দেখেই বলে দিতে পারেন তিনি ঠিক কোন পেশায় রয়েছেন। এমনকি মিসেস হাডসনের বাসার নিচে সিঁড়িতে জুতার শব্দ শুনেও তিনি বুঝতে পারতেন মক্কেল ঠিক কী রকম বিপদে পড়েছেন! তাঁকে প্রধান চরিত্র করে লেখা কোনান ডয়েলের উল্লেখযোগ্য উপন্যাস আ স্টাডি ইন স্কারলেট, দ্য সাইন অব ফোর, দ্য হাউন্ড অব বাস্কারভিলস, দ্য ভ্যালি অব ফিয়ার। ছোটগল্পের মধ্যে রয়েছে ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চারস অব শার্লক হোমস’, ‘দ্য মেমরিজ অব শার্লক হোমস’, ‘দ্য রিটার্ন অব শার্লক হোমস’, ‘হিজ লাস্ট বো’ এবং ‘দ্য কেসবুক অব শার্লক হোমস’। বলা বাহুল্য, তাঁর প্রতিটি গল্প বা উপন্যাস কিন্তু হোমসের সহযোগী ও বন্ধু ডা. জন ওয়াটসনের বয়ানে লেখা হয়েছে। হোমস নিজেই স্বীকার করেছেন যে ডা. ওয়াটসনের মতো বিশ্বস্ত থেকে আর কেউ তাঁর কাহিনি লিখতে পারতেন না। উল্লেখ্য, ইংল্যান্ডের পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স দ্য স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড অনেক কেসেই শার্লক হোমসের সাহায্য নিয়েছেন। কিন্তু তাই বলে মি. হোমস পুলিশের প্রতি বিরূপভাব বা তুচ্ছার্থক কোনো ইঙ্গিত কখনো করেননি, বরং পুলিশ ইন্সপেক্টর বারটন, স্যাম ব্রাউন, পিটার, গ্রেগরি, হিল বা ফরেস্টার সাহেবের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করেছেন। হোমস প্রায়ই বলতেন, খেলাটা মগজের। তাই এই খেলায় কেউ কারও প্রতিপক্ষ নয়। যার মগজ যত শাণিত, সে তত চৌকস গোয়েন্দার মর্যাদা পাবে। তবে পুলিশের সঙ্গে তাঁর গোয়েন্দাগিরির মূল পার্থক্য এই, শুরুতেই তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে সন্দেহের তালিকায় না নিয়ে বরং ঘটনার আনুপূর্বিক ব্যাখ্যা- বিশ্লেষণ করে তারপর রিট্রোডাকশন বা সবচেয়ে সহজ ও সম্ভব ব্যাখ্যাটিকে গ্রহণ করে সেই মতো তদন্তকাজ পরিচালনা করতেন। কোনো কোনো সময় কবজির মোচড়ে গুগলি বল ছোড়ার মতো প্রকৃত অপরাধীকে কিছু বুঝতে না দিয়ে তার সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন হোমস এবং একটু একটু করে পানি থেকে জাল গুটিয়ে নেন। আন্দাজে ঢিল ছোড়া শার্লক হোমস মোটেও পছন্দ করতেন না। তাঁর বক্তব্য এই, না বুঝলে বোঝার চেষ্টা করো, কিন্তু তদন্তকে ভুলপথে পরিচালিত কোরো না। তাতে গোয়েন্দার নিজের ওপরই আস্থা উঠে যায়। সবচেয়ে বড় কথা, হোমসের পড়াশোনা ছিল প্রচুর। তিনি সামান্য রশির নট বা গিঁট দেখেই বুঝতে পারতেন, সম্ভাব্য অপরাধী কে। কালপ্রিট মামুলি কেউ, নাকি নৌবাহিনীর সদস্য! কখনো কখনো তিনি ‘ডাক টেস্টের’ সাহায্য নিতেন। অর্থাৎ কিছু একটা দেখতে হাঁসের মতো, সাঁতার কাটে হাঁসের মতো, ডাকেও হাঁসের মতো, তার মানে ওটা হাঁসই হবে। অর্থাৎ বিষয়ের অভ্যাসগত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে হোমস আসল অপরাধীকে শনাক্ত করতেন। এতে অবশ্য খুব সতর্ক পর্যবেক্ষণের দরকার হয়, কারণ অনেক সময় আমরা যা দেখি বা বুঝি তা সত্যি না–ও হতে পারে। যারা অপরাধী, প্রায়ই তারা নিজের চেহারা ও চরিত্র লুকিয়ে রাখতে পারে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ