যারা আমাদের প্রতি অন্যায় করে, তাদের আমরা ক্ষমা না করা পর্যন্ত আমরা আল্লাহর তরফ থেকে ক্ষমা লাভের প্রত্যাশা করতে পারি না। পরস্পরকে ক্ষমা করে দেয়া, এমনকি শত্রুকে পর্যন্ত ক্ষমা করা হলো ইসলামের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাগুলোর একটি।
একটি সুবিখ্যাত হাদিসে রাসূল (সা.) বলেছেন যে, আল্লাহ তাকে ন’টি বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন। এর একটি হচ্ছে, ‘তাদের ক্ষমা করা যারা আমার প্রতি অন্যায় করে।’
সুতরাং এই আলোচনাও হাদিস থেকে এটা প্রমাণিত হয় যে,ক্ষমা এক মহৎ গুণ৷ ক্ষমা দূর্বলতা নয়,বরং ক্ষমা এক মহা শক্তি৷
ক্ষমা একটি মহৎ গুণ। ক্ষমা কোনো দূর্বলতার পরিচয় নয়। বরং ক্ষমা একটি মানুষের মানসিকতার পরিচয়। সবাই অন্যায় করতে পারলেও, সবাই ক্ষমা করতে পারে না। এজন্য যদি কেউ আপনার সাথে অন্যায় বা জুলুম করে, আপনি তাকে ক্ষমা করে দিন। কিন্তু একই অপরাধ যদি বারবার সংঘটিত হবার আশংকা থাকে। অর্থাৎ ক্ষমা করার পর যদি, পুণরায় আপনার সাথে সেই অন্যায় কাজ সংঘটিত হবার সম্ভাবনা থাকে। তাহলে প্রতিশোধ গ্রহণ করুন। এমতাঅবস্থায় প্রতিশোধ গ্রহণ করা ক্ষমা অপেক্ষা শ্রেয়।
প্রতিশোধ জিনিস টা এমন, আপনার সাথে কেউ অন্যায় করলো আর আপনিও তার সাথে পালটা অন্যায় করার চিন্তায় আছেন। এতে করে অন্যায়ের পরিমানটা বেড়ে যায়। ফলোশ্রুতিতে একটা টাইমে দুই পক্ষের মধ্যে অনেক বড় বিবাদের সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ প্রতিশোধ পরায়নতা একটা ভুল পথের সৃষ্টি করে অন্যের অনুচিত কাজের প্রতি ক্রোধ সৃষ্টি করে সেই পথে নিজেকে চালিত করে। অনেকে ভাবে এটা শোধ নেওয়া। কিন্তু এটা অনুচিত প্রথমত ৩টা কারনে-
১. এটির দ্বারা সমস্যা বেড়ে যায়।
২. এটার দ্বারা নিজেকেও অন্যায় কাজে চালিত করা হয়।
৩. প্রতিশোধ পরায়নতা ক্রোধ এবং ইগো থেকে সৃষ্টি হয়। কিন্তু এটা চিরন্তন সত্য যে, ক্রোধ এবং ইগোর সাথে নেওয়া প্রতিটি স্বিদ্ধান্তে ভুলের পরিমান টায় বেশি।
এর মানে এই নয় যে প্রতিশোধ নেওয়ায় যাবেনা। এমন অনেক ক্ষেত্রই আছে যেখানে প্রতিশোধ নেওয়া বাধ্যতামূলক হয়ে যায়। যেটাকে অন্যায়ের শাস্তি হিসেবে ধরা হয় তবে সেটা যেন লিমিট ক্রস না করে। প্রতিশোধ পরায়নতা এমন, কেউ আপনাকে অনেক কষ্ট দিলো কোনভাবে আর আপনিও তাকে অনেক কষ্ট দেওয়ার চিন্তা স্থির করলেন। হোক সেটা আজ, কাল বা কোন একদিন।
ক্ষমার ক্ষেত্রে এই চিন্তা টা একটু পরিবর্তন হয়ে এমন আসে, আমাই তো কষ্ট দিয়েছেই উলটা তাকে কষ্ট দিয়ে তো আমার কষ্টের মুহূর্তগুলি ফিরে আসবেনা। মাঝখান থেকে সে কষ্টই পাবে। বাদ দেই। লাভ কি তাতে। আমার দূর্ভাগ্য ছিল সেটা। ভাল থাক সবাই বা সে। আমি আমার মত। লক্ষ করুন, এটা ভেবে আপনি ক্ষমা করে দিলেন। এতে যেগুলি ঘটলো-
১. উদারতার পরিচয় দিলেন।
২. কারো শুভ কামনা করলেন। মানে ক্রোধ থেকে নিজেকে সরালেন।
৩. সমস্যা টাকে আর বাড়তে দিলেন না।
তবে অনিষ্টকারীদের ক্ষমা করলেও তাদের সংস্পর্শে যাওয়া অনুচিত। তবে কাছের মানুষ হলে আর ভুলবশত কিছু করলে বা ঘটলে সেক্ষেত্রে অবশ্যই ক্ষমা করে সম্পর্কটা ঠিক রাখা উচিত।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন-
"যদি ক্ষমায় করতে পারবেনা, তবে ভালবাসো কেন?"
অর্থাৎ অন্তত ভালবাসার মানুষগুলির সাথে প্রতিশোধ জিনিসটা খুবই নিচু মনের পরিচয় দেয়। ভালবাসা থাকলে রাগ, অভিমান, ক্রোধ সবই থাকতে পারে তবে প্রতিশোধ নয়। যতক্ষণ ভালবাসা আছে ক্ষমা থাকবেই। ক্ষমা দূর্বলতা না বরং দূর্বলদের সুযোগ দেওয়া। আর এই সুযোগটি করে দিলেন আপনি। তাই আপনার অবস্থান টা অনেক ওপরে। আর কারো প্রতি মনে ভালবাসা রেখে প্রতিশোধ পরায়ন হবেন না। যেখানে ভালবাসা থাকে প্রতিশোধ জিনিস টা সেখানে একদমই মানায় না। ক্ষমা শুধু মহৎ না অনেক মহৎ একটি গুণ। যেটি সবাই অর্জন করতে পারেনা।