হাদিসের মান সহ বলবেন।
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ" দেশরক্ষা র একদিন একরাতের প্রহরা ক্রমাগত এক মাসের রোজাও সারা রাত ইবাদততে কাটিয়ে দেয়ার চেয়ে উওম" ( মুসলিম )  এতে প্রমানিত হয়না কি যে দেশপ্রেম ইমানের অংশ???? 

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

‘দেশ প্রেম ঈমানের অঙ্গ’-এ কথাটি কোনো হাদীস নয়। জন্মভূমির মুহাব্বত, জন্মভূমির প্রতি মনের টান, হৃদয়ের আকর্ষণ ইত্যাদি মানুষের স্বভাবজাতীয় বিষয়। যা একটি মহৎগুণ বটে। অন্তরে জন্মভূমির প্রতি ভালবাসা, মায়া-মুহাব্বত, তার দিকে আগ্রহ থাকা ঈমান পরিপন্থী কিছু নয়। কিন্তু ঈমান ও দেশের প্রশ্নে ঈমানকেই প্রাধান্য দিতে হবে। আর দেশপ্রেম যে ঈমানের অঙ্গ, এ কথাটি রাসূল (সঃ) এর কোনো হাদীস নয়। তবে হ্যাঁ, রাসূল (সঃ) নিজের দেশকে ভালবাসতে উদ্বুদ্ধ করেছেন, কিন্তু এরকম করে কোনো হাদীসে বলা হয় নি যে, ‘দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ’। হয়তো এটি কোনো মনীষীর উক্তি। উল্লেখ্য, ‘দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ’-এ কথাটিকে আল্লামা হাসান বিন মুহাম্মদ সাগানী (রহঃ) জাল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। (রিজালাতুল মাওযুয়াত, ৭)

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
HMMOBAROKBD

Call

স্বদেশপ্রেম বা স্বদেশের প্রতি ভালোবাসার   আল্লাহর নবী সঃ উদ্বুদ্ধ করেছেন এ কথা ১০০% সত্য। কিন্তু (স্বদেশপ্রেম ইমানের অংশ,) এটি কোন হাদিস নয়।এবং কোরানেও এর কোন দলিল নেই।         

বহুল উদ্ধৃত একটি আরবী প্রবাদ ‘হুব্বুল ওয়াতানি মিনাল ঈমান’সদেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ। মুসলিম সমাজ যুগে যুগে দেশও জাতির প্রতি গভীর ভালবাসা ও অকৃত্রিম প্রীতির যে অবিস্মরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, উপরিউক্ত প্রবাদটি হচ্ছে তার বাস্তব প্রতিফলন। এই গুরুত্ববহ প্রবাদটি ধর্মপ্রাণ মানুষের হৃদয়মন জুড়ে এত প্রভাব বিস্তার করেছেন। এটি যে রাসুলুল্লাহ (স) বা কোন সাহাবীর উক্তি নয় তা সন্দেহাতীতভাবে বিপরীতও। আধুনিক কালের বিশ্ববিখ্যাত হাদীস বিশারদ শায়খ নাসীর উদ্দীন আলবানী যেমনি মন্তব্য করেছেন যে, উপরিউক্ত প্রবাদটি হাদীস তো নয়ই, উপরন্তু কুরআনেও বিপরীত। তিনি তাঁর কথার প্রমাণ হিসাবে কুরআনের যে আয়াত উল্লেখ করেছেন তা হচ্ছে: যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে, জীবন ও সম্পদ দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে এবং যারা (তাদেরকে) আশ্রয় দান করেছে ও সাহায্য করেছে তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। আর যারা ঈমান এনেছে কিন্তু হিজরত করে নাই তাদের দায়দায়িত্ব তোমাদের নেই যতক্ষণ না তারা হিজরত করে। (সূরা আনফাল: ৭২ আয়াত) 

এই আয়াতের শেষাংশে দেখা যায়, আল্লাহ তা’আলা মু’মিনদের কাছে শুধু তাদের ঈমানই চান নি আর একটি জিনিস চেয়েছেন আর তা হচ্ছে তাদের হিজরত বা দেশ ত্যাগ, যেহেতু ঈমান ও দেশত্যাগ আল্লাহর কাম্য সেহেতু দেশপ্রেম ঈমানের অংগ হতে পারে না বলে শায়খ আলবানী অভিমত রেখেছেন।

মূলত এই আয়াতটির প্রতি গভীরভাবে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে দেখা যায়, একটি জাতির পারস্পরিক ঐক্য ও সংহতি এবং আমাদের মহৎ দেশপ্রেমের উজ্জ্বল হিদায়াত নিহিত রয়েছে পূর্ণ আয়াতটি জুড়ে। একটি দেশের মু’মিন মুসলিমের জন্য হিজরতের আবশ্যকতা তখনই দেখা দেয়, যখন তার দেশে তার ঈমান নিয়ে টিকে থাকা সম্ভব হয় না। যেমনিভাবে রাসূলুল্লাহ (সা) র মক্কী জীবনে তাঁর ও তাঁর অনুসারী মু’মিনদের ঈমান নিয়ে টিকে থাকা সম্ভব ছিল না বলেই তাঁদের প্রতি আল্লাহর নির্দেশ আসে মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনা মুনাওয়ারায় আশ্রয় নেয়ার। মু’মিন জীবনে এই হিজরত বা দেশত্যাগের বিধান হচ্ছে একটি মৌলিক ভিত্তি যা তাকে দেশপ্রেমে উৎসাহিত করে। একজন মু’মিন সহজেই ভাবতে পারে তার ঈমান নিযে তাকে তার দেশে, তার সমাজে বেঁচে থাকতে হবে তার ঈমানহারা হওয়ার পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত। আর এ জন্যই তার ঈমানের দাবির বদৌলতে তিনি তার দেশ ও জাতিকে ঈমানের দাওয়াত দেন। তার ঈমান নিয়ে স্বদেশে বেঁচে থাকার জন্যই তিনি দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হিফাজতে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করেন। তিনি বিশ্বাস করেন, তাঁর দেশ বহিশশত্রুর দ্বারা আক্রান্ত না হলে তিনিও আক্রান্ত হবেন না, আক্রান্ত হবে না তাঁর ঈমানও। সুতরাং তাঁর ঈমান ইসলামকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই তাঁকে তাঁর স্বদেশকেও টিকিয়ে রাখতে হবে স্বাধীনভাবে।

একজন মু’মিনের জন্য হিজরত বা দেশত্যাগের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তার ঈমান ত্যাগের পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে। এতে প্রমাণিত হয় যে, ইসলামে দেশপ্রেমের এতই গুরুত্ব যে, ঈমানহারা হয়ে যাওয়ার পূর্বমূহূর্ত পর্যন্ত স্বদেশকে আঁকড়ে ধরা চাই; স্বদেশের মানুষের মধ্যে ঈমানের দাওয়াত দেওয়া চাই; স্বদেশবাসীকে নিয়ে একটি মু’মিন সমাজ গড়ে তোলা চাই। ঈমানকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য শেষ মুহুর্তে আল্লাহ দেশত্যাগ করার নির্দেশ দিয়ে হয়ত এই ইঙ্গিত প্রদান করেছেন যে, ঈমানপ্রেমের মত দেশপ্রেমও মু’মিনের অস্তিত্বের অংশ, তবে দেশে টিকতে না পারলে তার ঈমানের ডাকে সাড়া দিতে হবে দেশত্যাগ করে হলেও। এটা প্রমাণ করে দেশ ও জাতির প্রতি ভালোবাসা ঈমান ও আদর্শভিত্তিক হওয়া প্রয়োজন। ঈমান ও আদর্শ বিমুখ উগ্র ভালবাসা দেশ ও জাতির কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। আল্লাহর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হচ্ছে ‘তিনি মু’মিনদের থেকে তাদের প্রাণ ও সম্পদ ক্রয় করে নিয়েছেন জান্নাতের বিনিময়ে’। এতে এ কথা প্রমাণিত হয় না যে মু’মিনদের প্রাণ ও সম্পদের কোনই মূল্য নেই বরং বিপরীত দিকে প্রমাণিত হয় যে, মু’মিনদের প্রাণ ও সম্পদের এতই মূল্য যে, তা জান্নাতের বিনিময় হতে পারে। এরূপভাবে ঈমানের জন্য দেশত্যাগের কথা বলার দ্বারা প্রমাণিত হয় না যে, দেশপ্রীতির কোনই মূল্য নেই বরং প্রমাণিত হয় দেশের এত অধিক গুরুত্ব যে, তা কেবল ঈমানের স্বার্থেই ত্যাগ করা যায়।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

দেশ প্রেম ঈমানের অংশ এটি একটি অতি প্রচলিত বাক্য। ‘‘দেশপ্রেম ঈমানের অংশ।’’ হাদীস হিসেবে কথাটি একেবারেই ভিত্তিহীন, মিথ্যা ও বানোয়াট। এছাড়া কথাটির অর্থও ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গির সাথে ততটা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। কাজেই একে আলিমগণের কথা বা ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গির কথা বলে চালানোরও যৌক্তিকতা নেই। ঈমান ও ইসলাম ঐ সব কর্মের সমষ্টি যা মানুষ তার স্বাধীন ইচ্ছা শক্তির মাধ্যমে স্বেচ্ছায় করতে পারে বা অর্জন করতে পারে। প্রাকৃতিকভাবে বা জন্মগতভাবে সে সকল বিষয় অর্জিত হয় তাকে ঈমানের বা ইসলামের অংশ বলা হয় না। কারণ এগুলো ঐচ্ছিক বা ইচ্ছাধীন কর্ম নয়। জন্মস্থান, আবাসস্থল, বন্ধুবান্ধব, স্ত্রী, সন্তান, পরিজন ও পিতামাতার প্রতি ভালবাসা একটি প্রকৃতিগত বিষয়। মানুষ সৃষ্টিগত ভাবে এদের প্রতি ভালবাসা অনুভব করে। এগুলো কোনটিই ঈমানের অংশ নয়। এজন্য পিতামাতার আনুগত্য ও সেবাকে ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলা হয়েছে, পিতামাতার ভালবাসাকে নয়। অনুরূপভাবে দেশের প্রতি, আবাসস্থলের প্রতি, পাড়া প্রতিবেশীর প্রতি মুসলিমের অনেক দায়িত্ব রয়েছে, যা তিনি ইচ্ছাধীন কর্মের মাধ্যমে পালন করবেন। কিন্তু প্রাকৃতিক ভালবাসাকে ঈমানের অংশ বলা ইসলামী ধারণার সাথে পুরোপুরি মেলে না। কেউ যদি প্রকৃতির নিয়মকে লঙ্ঘন করে, নিজ সন্তান, স্ত্রী, পিতামাতা, আবাসস্থল বা দেশকে ভাল না বাসে তাহলে আমরা তাকে অপ্রকৃতিস্থ, পাগল ইত্যাদি বলব। আর যদি এ অবস্থা তাকে উপর্যুক্ত দায়িত্বাদি পালন থেকে বিরত রাখে তাহলে আমরা তাকে পাপী ও আল্লাহর অবাধ্য বলব। যেহেতু দেশ প্রেম আত্নপ্রেম ও ধন প্রেমের মতোই মানুষের প্রকৃতিগত আচরণ। সুতরাং সে প্রেম দ্বারা কেউ প্রশংসিত হতে পারে না এবং তা ঈমানের কোন জরুরী জিনিসও নয়। বলা বাহুল্য, দেশপ্রেম মুমিন কাফের সকলেই সমান। (সিঃ যায়ীফাহ, সাখাবী, আল-মাকাসিদ, পৃ: ১৯৫, নং ৩৮৬, মোল্লা আরী কারী, আল-আসরার, পৃ: ১০৯, নং ৪১৩, আল-মাসনূ‘য়, পৃ: ৬৯, নং ১০৬, আজলূনী, কাশফুল খাফা ১/৪১৩, যারকানী, মুখতাসারুল মাকাসিদ, পৃ: ৯৫, নং ৩৬১)।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ