কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে এক ওয়াক্ত নামায না পরে তবে সে কাফের হয়ে যাবে না।
কেবলমাত্র যে ব্যক্তি নামায ফরয হওয়ার কথা অস্বীকার করে এবং ইচ্ছাকৃত তা ত্যাগ করে সে ব্যক্তি উলামাদের সর্বসম্মতভাবে কাফের।
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি অবহেলায় অলসতার দরুন নামায ত্যাগ করে, সে ব্যক্তিও উলামাদের শুদ্ধ মতানুসারে কাফের।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মানুষ এবং কুফর ও শিরকের মাঝে (অন্তরাল) নামায ত্যাগ।
তিনি আরো বলেন, আমাদের মাঝে ও ওদের মাঝে চুক্তিই হল নামায। যে ব্যক্তি তা পরিত্যাগ করে সে কাফের।
এখানে কাফের বা কুফর বলতে সেই কুফরকে বুঝানো হয়েছে, যা মানুষকে ইসলাম থেকে খারিজ করে দেয়।
যেহেতু মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযকে মুমিন ও কাফেরদের মাঝে অন্তরাল বলে চিহ্নিত করেছেন। আর এ কথা বিদিত যে, কুফরীর মিল্লাত ইসলামী মিল্লাত থেকে ভিন্নতর। সুতরাং যে ব্যক্তি ঐ চুক্তি পালন না করবে সে কাফেরদের একজন।
আব্দুল্লাহ বিন শাক্বীক্ব উকাইলী বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবাবৃন্দ নামায ছাড়া অন্য কোন আমল ত্যাগ করাকে কুফরী মনে করতেন না।
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি পর পর তিনটি জুমআ পরিত্যাগ করবে, সে ইসলামকে পিছনের দিকে নিক্ষেপ করল।
রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি পরপর তিনটি জুমআ বিনা ওজরে ও ইচ্ছা করে ছেড়ে দেবে, আল্লাহ তাআলা ঐ ব্যক্তির অন্তরে মোহর মেরে দেবেন।
অপর এক হাদীসে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, জুমআ ত্যাগকারী লোকেরা হয় নিজেদের এই খারাপ কাজ হতে বিরত থাকুক। অর্থাৎ জুমআর নামাজ আদায় করুক, নতুবা আল্লাহ তাআলা তাদের এই গোনাহের শাস্তিতে তাদের অন্তরের ওপর মোহর করে দেবেন। পরে তারা আত্মভোলা হয়ে যাবে। অতপর সংশোধন লাভের সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হয়ে যাবে।
জনাব! ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত তরককারী অথবা সালাতের ফরযিয়াতকে অস্বীকারকারী ব্যক্তি কাফির ও জাহান্নামী। ঐ ব্যক্তি ইসলাম হতে বহিষ্কৃত। কিন্তু যে ব্যক্তি ঈমান রাখে, অথচ অলসতা ও ব্যস্ততার অজুহাতে সালাত তরক করে কিংবা উদাসীনভাবে সালাত আদায় করে ও তার প্রকৃত হেফাযত করে না, সে ব্যক্তি সম্পর্কে শরীআতের বিধান সমূহ নিম্নরূপঃ
আল্লাহ বলেন, অতঃপর দুর্ভোগ ঐ সব মুসল্লীর জন্য যারা তাদের সালাত থেকে উদাসীন। যারা লোক দেখানোর জন্য তা করে। (মাঊনঃ ১০৭/৪-৬)।
সালাত তরক করাকে হাদীসে ‘কুফরী’ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। সাহাবায়ে কেরামও একে ‘কুফরী’ হিসাবে গণ্য করতেন। তারা নিঃসন্দেহে জাহান্নামী।
তবে এই ব্যক্তিগণ যদি খালেস অন্তরে তাওহীদ, রিসালাত ও আখেরাতে বিশ্বাসী হয় এবং ইসলামের হালাল-হারাম ও ফরয-ওয়াজিব সমূহের অস্বীকারকারী না হয় এবং শিরক না করে, তাহলে তারা ‘কালেমায়ে শাহাদাত’কে অস্বীকারকারী কাফিরগণের ন্যায় ইসলাম থেকে খারিজ নয় বা চিরস্থায়ী জাহান্নামী নয়। কেননা এই প্রকারের মুসলমানেরা কর্মগতভাবে কাফির হলেও বিশ্বাসগতভাবে কাফির নয়।
(রিয়াযুস স্বা-লিহীন, হাদিস নম্বরঃ ১১৫৭, সহিহ তারগিবঃ ৭৩২ তিরমিযী, আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, মুসলিম)।