ধরুন আমি আজকে একটা বিষয় নিয়ে মানত করলাম ২০০ টাকা।  এখন ঐ বিষয়েই আমি ৩ দিন পর আরো ১০০ টাকা মানত করলাম।  এখন ঐ বিষয়ে আমার মোট মানত হলো ৩০০ টাকা । এখন আমার সেটা দেওয়ার সামর্থ্য নেই ।  এখন আমাকে কি দুইটা কাফফারা আদায় করতে  হবে নাকি একটা করলেই হবে?
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

মানত হলোঃ আমার অমুক কাজ হাসিল হলে বা অমুক বিপদ থেকে মুক্ত হলে এরূপ কিছু আল্লাহ তাআলার রাস্তায় দান করব। এটা পূরণ করা জরুরী। মানত একটি ইবাদত, তা একমাত্র আল্লাহ তাআলাকে রাজি-খুশী করার জন্য হতে হবে। আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার আনুগত্যের মানত করে, সে যেন অবশ্যই তা আদায় করে। আর যে ব্যক্তি তার নাফরমানীর মানত করে, সে যেন অবশ্যই তা না করে। জনাব! মানতের কাফফারা প্রতি বিষয় বা প্রতি দিনের জন্য আলাদা আলাদাই দিতে হবে। আর যদি একই কাজের জন্য একাধিকবার কসম খেয়ে মানত করে তা ভঙ্গ করলে একবার কাফফারা দিলেই হবে। কিন্তু পৃথক পৃথক কাজের জন্য কসম খেয়ে ভঙ্গ করলে পৃথক পৃথক কাফফারা দিতে হবে। উদাহরণঃ আপনি আজকে একটা বিষয় নিয়ে মানত করছেন ২০০ টাকা। এখন ঐ বিষয়েই ৩ দিন পর আরো ১০০ টাকা মানত করছেন এখন ঐ বিষয়ে মোট মানত হলো ৩০০ টাকা। এই ৩০০ টাকার মানতই পূরন করতে হবে। সুস্পষ্ট হাদীস যা আবূ দাঊদ, তিরমিযী নাসায়ী, ইবনু মাজাহ ও মুসলিম এর হাদীসে মানতের কাফফারা হলো কসমের কাফফারার মতো। কেউ যদি কোনো ভাল কাজ করার মানত করে তাহলে তাকে তা পালন করতে হবে। মানত পুরা করা ওয়াজিব না করলে গুনাহ হবে। মানত পুরা করা একটি ইবাদত। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ অর্থাৎঃ তারা যেন তাদের মানতসমূহ পূরণ করে। (সূরা আল হজ্জ আয়াতঃ ২৯) নযর বা মানত পূর্ণ করা ওয়াজিব হয়ে যায়, যদিও মূলতঃ তা ওয়াজিব ছিল না। তবে আলোচ্য আয়াত থেকে মূলতঃ তাই প্রমাণিত হয়। এতে মানত পূর্ণ করার আদেশ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ তোমরা যা কিছু ব্যয় কর অথবা যে কোনো মানত কর তা অবশ্যই আল্লাহ জানেন। (সূরা বাকারা আয়াতঃ ২৭০) মূলতঃ মানত পূরণ করা ইবাদাত। কিন্তু মানত করা ইবাদাত নয়। মানত করার ব্যাপারে শরীআত কাউকে উৎসাহ দেয়নি। বরং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানত কারো জন্য ভাল কিছু নিয়ে আসে না বরং মানত কৃপণের সম্পদ থেকে কিছু বের করে। (বুখারীঃ ৬৬০৮, ৬৬৯২, ৬৬৯৩) কিন্তু যদি কেউ মানত করে, তারপর যদি কাজটা সৎকাজ হয় তবে তা পূরণ করা ওয়াজিব। আর যদি অসৎকাজ হয় তাহলে তা পূরণ করা যাবে না। প্রশ্নে বলেছেন এখন আমার সেটা দেওয়ার সামর্থ্য নেই তাহলে করণীয়ঃ মানত যদি এমন হয় যা পূর্ণ করা মানতকারীর পক্ষে অসম্ভব, তাহলে সে মানত পূর্ণ করার দরকার নেই। তাহলে কি করবেন? ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এমন মানত করল যা পূর্ণ করার সামর্থ্য তার নেই, সে কসমের কাফফারা আদায় করবে। হাদীসটি আবু দাউদ বর্ণনা করেছেন। আর হাফেজ ইবনে হাজার (রহঃ) বুলুগুল মারাম কিতাবে এর সূত্রকে বিশুদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন। শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া (রহঃ) তার ৩৩/৪৯ নং ফতোয়ায় বলেছেনঃ যখন কোনো ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্যের মধ্যে থেকে মানত করে তখন তা পূর্ণ করতেই হয়। কিন্তু যদি পূর্ণ করতে অক্ষম হয়ে যায় তাহলে কসম ভঙ্গের কাফফারা আদায় করবে। পূর্ববর্তী অধিকাংশ আলেম উলামার অভিমত এটাই। কসম ভঙ্গের কাফফরাঃ যেমন, আল্লাহ তাআলা বলেন, আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করেন না তোমাদের অর্থহীন কসমের ব্যাপারে, কিন্তু যে কসম তোমরা দৃঢ়ভাবে কর সে কসমের জন্য তোমাদেরকে পাকড়াও করেন। সুতরাং এর কাফফারা হল দশ জন মিসকীনকে খাবার দান করা, মধ্যম ধরনের খাবার, যা তোমরা স্বীয় পরিবারকে খাইয়ে থাক, অথবা তাদের বস্ত্র দান, কিংবা একজন দাস মুক্ত করা। অতঃপর যে সামর্থ্য রাখে না তবে তিন দিন সিয়াম পালন করা। এটা তোমাদের কসমের কাফফারা, যদি তোমরা কসম কর, আর তোমরা তোমাদের কসম হেফাযত কর। এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তার আয়াতসমূহ বর্ণনা করেন যাতে তোমরা শোকর আদায় কর। (সূরা মায়েদা, আয়াতঃ ৮৯)

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ