শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া নিকৃষ্ট হারাম এবং শিরকের বাহন

বর্তমানে আমরা সংস্কৃতির নামে, আধুনিকতার নামে অহরহ শিরক এবং ইসলাম বিরোধী হারাম কাজ করে চলেছি। স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ও একুশে ফেব্রুয়ারি আসলে আমরা শহীদ মিনার ও স্মৃতিসৌধে গিয়ে ফুলের স্তবক দেই, নীরবে দাঁড়িয়ে থাকি, শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাই। অথচ কারো কবর, মূর্তি বা স্তম্ভকে সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যে ফুল দেওয়া, সেগুলোর সামনে কিছুক্ষণ নীরবতা অবলম্বন করা মূর্তিপূজার অনুকরণের অন্তর্ভুক্ত। এটি একটি জঘন্য বিদ’আত এবং নিকৃষ্ট হারাম কাজ। এই কাজ শিরকের বাহন যা মানুষকে বড় শিরকের দিকে নিয়ে যায়।

খলীফা উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু এর সময় তাকে সংবাদ দেওয়া হল যে, কতিপয় মানুষ ঐ বৃক্ষের উদ্দেশ্যে যাতায়াত করে যে বৃক্ষের নিচে সাহাবীগণ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাতে বায়াআত করেছিলেন। অতঃপর তিনি ঐ বৃক্ষকে কেটে ফেলার নির্দেশ দিলেন। [ফাতহুল বারী, ৭/৪৪৮]


কারো স্মরণার্থে কোনো প্রাণীর আকৃতি ব্যতীত অন্যভাবে কোনো উপায়ে ভাস্কর্য বা স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা যেতে পারে। তবে এ শর্তে যে, সেখানে কোনো ফুল দিয়ে বা নীরবে দাঁড়িয়ে সেটাকে কোনো প্রকার সম্মান প্রদর্শন করা যাবে না। কেননা এটি সম্মান প্রদর্শনের ইসলামী পদ্ধতি নয়। বরং এ জাতীয় সম্মান প্রদর্শনকে ইসলাম বাড়াবাড়ি বলে মনে করে এবং এটাকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা বস্তুর পূজা হিসেবে গণ্য করে।

মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আনীত ধর্মে পুস্পস্তবক অর্পণের কোন বিধান নেই। মৃত ব্যক্তি বা কোন জড় বস্তুকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা মূলত খ্রিষ্টান জাতির সংস্কৃতি। হিন্দু ধর্মেও মূর্তিকে পুস্পস্তবক অর্পণ করা হয়। শুধু পুস্পস্তবক অর্পণ নয় বরং মিষ্টি, সন্দেশ, দুধ, কলার স্তবকও অর্পণ করা হয় দেবভোগ হিসেবে। আল কুরআনে ইবরাহীম আলাইহি সালাম এর ঘটনা বর্ণনা প্রসংগে বলা হয়েছেঃ অতঃপর সে তাদের দেবালয়ে গিয়ে ঢুকল এবং বলল, তোমরা খাচ্ছ না কেন? তোমাদের কি হল যে, কথা বলছ না? [সূরা সাফফাত, আয়াত ৯১-৯২]

মূলত পুস্পস্তবক অর্পণ মূর্তিপূজার অংশ। এটি একটি ইবাদত যা মূর্তিকে দেয়া হয়। কাজেই মুসলিমদের এ ধরনের কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের কোন সুযোগ নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি যে জাতির অনুকরণ করবে, সে ব্যক্তি সেই জাতিরই একজন বলে গণ্য হবে। [আবু দাউদ, হাদিস নং ৪০৩১]

ইবন তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ আল্লাহর কিতাব, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত, খোলাফায়ে রাশেদিনের আদর্শ ও সকল আলেম একমত যে, মুশরিকদের বিরোধিতা করতে হবে এবং তাদের সাদৃশ্য গ্রহণ করা যাবে না। [মাজমুউল ফাতওয়া, ২৫/৩২৭]

অনুরূপভাবে এক মিনিট নীরবতা পালন করাও হারাম। কায়েস ইবনু আবী হাযেম বলেনঃ আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) যায়নাব নামক আহমাস গোত্রীয় এক মহিলার নিকট গেলেন। তিনি দেখলেন, সে কথা বলে না। তিনি বললেন, সে কথা বলে না কেন? লোকেরা বলল, তার হজ্বটি এমন যাতে সে নীরবতা পালন করছে। আবু বকর তাকে বললেন, তুমি কথা বল। তোমার এ নীরবতা পালন অবৈধ। এটি জাহেলিয়াতের যুগের কাজ। অতঃপর সে মহিলাটি কথা বলল। [সহীহ বুখারী]

বদর, উহুদ, আহযাব, খাইবার, মুতাহ, তাবুক যুদ্ধ সহ অনেক যুদ্ধে যে সকল সাহাবাগণ শহীদ হয়েছিলেন তাদেরকে স্মরণের জন্য বা তাদের কবরকে কেন্দ্র করে কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন স্মৃতি স্থাপনা তৈরি করেছিলেন কিংবা সেখানে কি পুস্পস্তবক অর্পণ করার কোন নিয়ম চালু করেছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা সাহাবাগণ শহীদদের স্মরণ করার জন্য কোথাও কোন সৌধ নির্মাণ করে প্রতি বছর তাতে ফুল দিয়ে তাদের স্মরণ করেছিলেন এমন কোন প্রমাণ কিয়ামত পর্যন্ত কেউ কি দেখাতে পারবেন? তাহলে আমরা মুসলিম হয়ে এগুলো কেন করছি? আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্যে রসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে। [সূরা আহযাব, আয়াত ২১]

মনে রাখা উচিত যে, পৃথিবীতে সর্বপ্রথম মূর্তিপূজা এভাবেই শুরু হয়েছিল। আদম আলাইহিস সালামের সময়ে পৃথিবীতে শিরক বলতে কিছুই ছিল না। তখন সবাই তাওহীদের অনুসারী একই উম্মতভুক্ত ছিল। কিন্তু আদম ও নূহ আলাইহিস সালাম এর মধ্যবর্তী সময়কালে ওয়াদ, সুওয়া, ইয়াগূস, ইয়াঊক্ব ও নাসর নামক পাঁচজন ব্যক্তি নেককার ও সৎকর্মশীল বান্দা হিসাবে প্রসিদ্ধ ছিলেন। তাঁদের মৃত্যুর পর ভক্ত অনুসারীগণকে শয়তান এই বলে প্ররোচনা দেয় যে, এই সব নেককার মানুষের মূর্তি সামনে থাকলে তাদের দেখে আল্লাহর প্রতি ইবাদতে অধিক আগ্রহ সৃষ্টি হবে। ফলে তারা তাদের মূর্তি বানায়। অতঃপর উক্ত লোকদের মৃত্যুর পরে তাদের পরবর্তীগণ শয়তানের ধোঁকায় পড়ে ঐ মূর্তিগুলোকেই সরাসরি উপাস্য হিসাবে পূজা শুরু করে দেয়। আর এভাবেই পৃথিবীতে প্রথম মূর্তিপূজার সূচনা হয়।

নূহ আলাইহিস সালামের সম্প্রদায় যেমন শুধুমাত্র সম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে নেক নিয়তে তাদের সম্মানিত ব্যক্তিদের মূর্তি তৈরি করেছিল, ঠিক তেমনি আমরাও আল্লাহর কিছু বান্দাকে সম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে শহীদ মিনার, স্মৃতিসৌধ তৈরি করেছি। আমরা কেউই উক্ত স্তম্ভগুলোকে আমাদের উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করিনি। কিন্তু হয়তো আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম নূহের সম্প্রদায়ের মত শয়তানের ধোঁকায় পড়ে এগুলোকেই উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করবে এবং সরাসরি এগুলোর পূজা করা শুরু করবে। অবশ্য আমরা বর্তমানে সম্মান প্রদর্শনের নামে যা করছি তাও শিরকের চাইতে কম কিছু নয়। এ সমস্ত কাজ শিরকের বাহন যা মানুষকে বড় শিরকের দিকে নিয়ে যায়।

সূত্রঃ এখানে। ধন্যবাদ।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ