শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

মোমোতারো গল্পটি নিম্নরুপঃ- সে অনেক কাল আগের কথা। ছিল এক কাঠুরে আর তার বউ। তাদের অনেক বয়স হয়েছিল। একদিন কাঠুরে-বউ একগাদা জামাকাপড় নিয়ে যাচ্ছিল নদীর দিকে। নদীর জলে যত ময়লা ধুয়ে সাফ করবে বলে। নদীর জলে চোখ পড়তেই দেখল মস্ত বড় একটা পীচফল জলে ভেসে বেড়াচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে বুড়ির মনটা আনন্দে নেচে উঠল। মনে মনে বলল আজ রাতে তবে মিষ্টি এই ফল খেয়েই পেট ভরবে।- এই ভেবে সে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ল। তারপর সেটা নিয়ে রাখল ডাঙায়। জামাকাপড় ধুয়ে পীচফলটাকে কাঁধে চাপিয়ে সে এল বাড়িতে। বুড়ো তো বুড়িকে দেখে অবাক! বলল, এটা আবার কোথা থেকে আনলে? বুড়ি বুড়োকে বলল, এটা নদীতে ভেসে যাচ্ছিল, নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে তবে নিয়ে এসেছি। বুড়ো বলল, বাঃ আজ রাতে তবে ফল খেয়েই থাকতে পারব। সন্ধে হল। রাত হল। এবারে খাওয়া দাওয়ার পালা। খাওয়া বলতে আজ সারাদিনে আর কিছুই তো ভাগ্যে জোটেনি, এই ফলটুকু ছাড়া। একটা ধারালো ছুরি দিয়ে ফলটাকে কাটা হল। ফলটাকে কাটতেই দুজনে অবাক! এ যে বিশ্বাসই করা যায়না। একটা ছোট্ট ছেলে, খুবই ছোট্ট, ফলের মধ্যে কেমন ঘুমিয়ে আছে! বুড়োর মুখে কথা নেই।বুড়ির মুখে কথা নেই।কিছুক্ষণ পর বুড়ো বলল, ছেলেটাকে ভাবছি ডাকব মোমোতারো বলে। বুড়ি বলল, বেশ ভালো নাম রেখেছ। আমরা ওকে কোলেপিঠে মানুষ করব। দেখবে ছেলেটা আস্তে আস্তে ঠিক বড়ো হবে। দিন যায়। মাস যায়। মোমোতারো বড়ো হয়। দেখতে দেখতে মোমোতারো আরও বড়ো হয়ে উঠল। একদিন গম্ভীর গলায় সে তার বাবা-মাকে বলল, আমি এখন ওগ্‌রু দ্বীপে যাব। আমার জন্য কিছু গরম গরম পিঠে বানিয়ে দেবে কি? মা বাবা তো ভেবেই অস্থির। বলল, সেখানে গিয়ে তুই কি করবি? মোমোতারো বলল, শুনেছি সেখানে এক রাজা আছে। একবার রাজার কাছে যেতে দাও।আমি জানি সেখানে গেলেই আমাদের ভাগ্য খুলবে। মা বাবা আর কি বলেন! শুধু যাবার সময় পই পই করে বললেন, ঠিকমতো রাস্তা দেখে চলবি। রাস্তায় যাকে পাবি মিষ্টি করে কথা বলবি। সে যদি খেতে চায় খেতে দিবি। ভাল ব্যবহার করবি। কাউকে দুঃখ দিবি না। কারো সঙ্গে বেইমানি করবি না। কখনও মিথ্যে বলবি না। মোমোতারো মাথা নাড়িয়ে নাড়িয়ে সব কথা শুনল, তারপর কাঁধে পিঠের ব্যাগ ঝুলিয়ে রাস্তার দিকে পা বাড়াল। কিছুদূর যেতেই দেখা এক বানরের সঙ্গে। 'কিয়া' 'কিয়া' শব্দ করে বানরটা কাছে এসে বলল, মোমোতারো ভাই আমার, কোথায় যাচ্ছ তুমি? মোমোতারো যেতে যেতে বলল, আমি ওগরু দ্বীপে যাচ্ছি। শুনেছি সেখানে এক রাজা আছে। একবার রাজার কাছে যেতে দাও। আমি জানি সেখানে গেলেই আমাদের ভাগ্য খুলবে। জান তো, এতদূর যাব বলে আমার মা আমার জন্য গরম গরম পিঠে বানিয়ে দিয়েছে। বানরটা বলল, যদি তুমি আমাকে একটা পিঠে খেতে দাও, আমি তোমার সঙ্গে যেতে পারি। মোমোতারো আর কি করে!সঙ্গে সঙ্গে তাকে একটা পিঠে খেতে দিল। পিঠে খেয়ে বানর এবার মোমোতারোর সঙ্গে হেঁটে চলল। অনেক দূর চলে এসেছে অমনি দেখা এক ময়ূরের সঙ্গে।'কেন' 'কেন' শব্দ করে ময়ূর কাছে এসে বলল, মোমোতারো ভাই আমার, এই অবেলায় যাচ্ছ কোথায়? মোমোতারো যেতে যেতে বলল, আমি যাচ্ছি ওগরু দ্বীপে।শুনেছি সেখানে এক রাজা আছে। আমি জানি সেখানে গেলেই আমার ভাগ্য খুলবে। জানো তো, আমার মা আমার জন্য গরম গরম পিঠে বানিয়ে দিয়েছে। ময়ূর বলল, যদি তুমি আমাকে একটা পিঠে খেতে দাও, আমি তোমার সঙ্গে যেতে পারি। মোমোতারো বলল, এটা আর বলতে! এই নাও পিঠে, এক্ষুনি চলে এসো। পিঠে খেয়ে ময়ূর এবারে মোমোতারোর সংগে হেঁটে চলল। এবারে কিছুদূর যেতেই 'ঘেউ' 'ঘেউ' শব্দ করে একটা কুকুর দৌড়ে এল। বলল, মোমোতারো কোথায় যাচ্ছ শুনি? মোমোতারো যেতে যেতে বলল, আমি যাচ্ছি ওগরু দ্বীপে।জানো তো, আমার মা আমার জন্য গরম গরম পিঠে বানিয়ে দিয়েছে। কুকুর বলল, যদি তুমি আমাকে একটা পিঠে দাও, তোমার সঙ্গে আমিও যেতে পারি। মোমোতারো বলল, বেশ তো, এই নাও পিঠে, খেতে খেতে চলো। অনেক হাঁটাহাঁটির পর মোমোতারো এল ওগ্‌রু দ্বীপে। ওর সঙ্গে সঙ্গে এল বানর, ময়ূর আর সেই কুকুর। হাঁটতে হাঁটতে এসে পৌঁছোল রাজার বাড়ি। ওগ্‌রু দ্বীপের রাজা মোমোতারো কে দেখে বলল, তোমার নাম কি বাছা? এখানে কেন এসেছ? মোমোতারো বলল, আমার নাম মোমোতারো। আমি এসেছি ওগ্‌রু দ্বীপের রাজার কাছে। মানে আপনার কাছে। লড়াই করব বলে। রাজা মোমোতারোর সঙ্গী বানর, কুকুর আর ময়ূরকে দেখে অবাক হলেন। বললেন, আমি বুড়ো হয়েছি। লড়াই করে আর কাজ নেই বাছা। আমার ছেলেপুলে নেই। তুমি খুব বুদ্ধিমান আর শক্তিধর। তুমি এখানেই থেকে যাও। আমার পরে তুমিই এদেশের রাজা হবে। মোমোতারো বলল, তা হয় না রাজামশাই। আমার দুঃখী মা-বাবা আমার পথ চেয়ে বসে থাকবে। সিংহাসনের চেয়ে আমার কাছে অনেক বড়ো আমার মায়ের কোল। রাজা খুব খুশি হয়ে বললের, তোমাকে কিছু সোনাদানা উপহার দিচ্ছি। এই নিয়ে বাড়ি ফিরে যাও। সবাই খুশি হবে। তখনই মোমোতারোর কাছে এসে পৌঁছোল এক বস্তা ভর্তি সোনারূপো হিরে আর জহরত। আর এল একখানা কোট, সঙ্গে নীলটুপি। রাজা বললেন, শোনো, এই অদ্ভূত কোটটুপি পরলে তোমাকে কেঊ দেখতেও পাবে না। বিপদে আপদে শুধু এই কোটটুপি ব্যবহার করবে। কারোর ক্ষতি করবে না। মোমোতারো এত সব পেয়ে ভীষণ খুশি। বস্তাভর্তি সোনারূপো কাঁধে ঝুলিয়ে, একহাতে কোটটুপি নিয়ে, সে ছুট দিল বাড়ির দিকে। বানর, ময়ূর আর সেই কুকুরটাকেও সঙ্গে নিতে ভুলল না সে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

মোমোতারোর গল্পঃ- **বিশ্বের অতিকথা** জাপানি উপকথা মেঘনা নাথ (আর্টেমিস) -জাপানের এক গাঁয়ে ছিল এক বুড়ো আর বুড়ি। তাদের কোনো ছেলেপুলে ছিল না। এই নিয়ে তাদের মনে খুব দুঃখ ; প্রায়ই তারা ভাবত এরপর যখন তাদের বয়স আরো বাড়বে, কে তাদের দেখাশোনা করবে? নিজেদের ছেলেমেয়ে না থাকায় গাঁয়ের সব ছেলেমেয়েকেই বুড়োবুড়ি খুব ভালোবাসত। এমনকী গাঁয়ের কুকুর, বিড়াল, পাখি, কাঠবিড়ালি সব্বাই জানত এই বুড়োবুড়ি ওদের বন্ধু। ওদের কুঁড়েঘরের দরজার পাশের চেরী গাছের মত এত সুন্দর চেরী ফুল আর কোথাও ফুটত না, আর ওদের উইলো গাছের নরম থোকা থোকা ফুলের ওপর সারাদিন মৌমাছিরা গুনগুন করত। একদিন বুড়ো বলল, ” আজ আমাকে পাহাড়ের উপর ঘাস কাটতে যেতে হবে। ইশশ আমার যদি একটা তাগড়াই জোয়ান ছেলে থাকতো, তাহলে তাকে নিয়ে এতটা পথ যেতে পারতাম। যাকগে, যা নেই তা নিয়ে অভিযোগ করবোনা, কারণ আমরা দুজন দুজনকে পেয়েছি”। এই বলে সে পাহাড়ের দিকে হাসি মুখে হাঁটা দিল। তখন বুড়ি ভাবলো, “আমার কর্তা যখন আজ একা একা অতদূর যাবে, আমিও সারাদিন কোনো কাজ নিয়ে কাটিয়ে দেবো, আমি বরং নদীতে গিয়ে জামাকাপড় গুলো কেচে ফেলি”। এই ভেবে সে একরাশ জামাকাপড় নিয়ে নদীতে কাচতে বসলো, আর তার মাথার উপর ছোট্ট ছোট্ট পাখিরা এসে গান গাইতে শুরু করল। “আমাদের এই ছোট্ট বন্ধুরা কি খুশি আজ! এমন কিচিরমিচির করছে যেন আমায় কি একটা বলতে চাইছে!”, বুড়ি ভাবলো। ঠিক তখনই নদীর ওপার থেকে জলের স্রোতে কি একটা ভাসতে ভাসতে এসে বুড়ির কাচা পরিষ্কার কাপড়গুলোর মধ্যে আটকে গেল। একটা কাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে সেটাকে বার করে বুড়ি দেখলো বেশ বড়সড় একটা পীচ ফল। “আজকে বুড়ো ফিরলে রাতে এইটা ওকে দেবো”, বুড়ি মনে মনে ঠিক করল, “সারাদিন এত খাটনি করে খুব ক্লান্তও থাকবে, আর এই ফলটা দেখে মনে হচ্ছে খেতে এটা দারুণ হবে, ওর ভালো লাগবে”। পাখিগুলোর ফূর্তি তখন দ্যাখে কে! সন্ধেবেলা বুড়ো যখন পাহাড় থেকে ফিরলো, বুড়ি বললো, “দ্যাখো তোমার রাতের খাবারের জন্য কী এনেছি। নদীতে কাপড় কাচতে গিয়ে এটা পেলাম.. আমার কেমন যেন মনে হচ্ছে, পাখিগুলোই এটা আমার কাছে পাঠিয়েছে; কারণ যখন এটা পেলাম, ওরা খুব খুশি হয়ে গান করছিল।” বুড়ো বলল, “তা বেশ। একটা ছুরি আনো, এটাকে দু টুকরো করে দুজনে ভাগাভাগি করে খাই”। যেই না ওরা পীচ ফল টাকে খুললো, ওমা! ভিতরে দ্যাখে এক ছোট্ট গোলগাল ফুটফুটে ছেলে ওদের দিকে চেয়ে হাসছে। পীচ ফলের মধ্যে শুয়ে থাকা অবস্থায় ওকে পেয়েছে বলে ওরা ওকে “মোমোতারো” (জাপানি ভাষায় “মোমো”-পীচ ফল, “তারো”- পরিবারের বড় ছেলে) বলে ডাকতে শুরু করল, আর ঈশ্বরের উপহার হিসেবে পাওয়া এই ছেলেকে মনপ্রাণ দিয়ে আদর যত্ন করে বড় করল। ছেলে বড় হতে ওরা দেখলো, এ ছেলে সত্যিই অতুলনীয়। যেমনি তার গায়ের জোর, তেমনি তার মেধা। গাঁয়ের সব লোকজন, জঙ্গলের জীবজন্তু ওকে সমান ভালোবাসে। আর ছেলেও তেমনি খেয়াল রাখে যাতে তার মা বাবাকে আর কোনো পরিশ্রম করতে না হয়। আরো বড় হয়ে মোমোতারো একদিন শুনলো একানদোজি বলে এক দৈত্যের কথা। সে দৈত্য অনেকদিন আগে গাঁয়ের লোকেদের থেকে অনেক সোনাদানা, ধনসম্পত্তি হাতিয়ে নিয়ে চলে গেছে। সে এতই শক্তিশালী, আর তার এতই ক্ষমতা যে কেউ তার কাছে গিয়ে তাদের ধনসম্পত্তি ফিরিয়ে আনার কথা ভাবতেও পারেনা। সব শুনে মোমোতারো বললো, “আমি যাবো সেই দৈত্যের কাছে, গিয়ে সব উদ্ধার করে আনবো। আর কে কে যাবে আমার সাথে?” কিন্তু গাঁয়ের লোক সব এর ওর মুখের দিকে চায়, কেউ মুখে রা টি কাড়ে না। তখন মোমোতারো ঠিক করলো, সে একাই গিয়ে সব উদ্ধার করে নিয়ে আসবে। বুড়োবুড়ির তাদের ছেলের সাহস দেখে খুব গর্ব হলেও ছেলে একা যাচ্ছে এটা ভেবেই ওদের বুক দুরুদুরু করতে লাগলো। বুড়ি বুড়োকে বলল, “তুমি আমাকে একটু যব গুঁড়ো করে দাও তো, আমি বরং কটা পিঠে বানিয়ে দি মোমোতারো কে, পিঠে খেলে ও একানদোজির সাথে লড়াই করার শক্তি পাবে”। বুড়ো যব গুঁড়ো করে দেওয়ার পর বুড়ি কতগুলো পিঠে বানিয়ে দিল, আর মোমোতারো সেগুলো ওর ঝোলার মধ্যে নিয়ে রওনা দিলো। যেতে যেতে হঠাৎ এক কুকুরের সাথে দেখা। সে মোমোতারোর ঝোলাটা শুঁকছে দেখে মোমোতারো ভাবল, ” ওকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে ওর খুব খিদে পেয়েছে। আমি ওকে একটা পিঠে দিয়ে দি। আমার গায়ে অনেক জোর, খিদে আমি ঠিক সহ্য করে নিতে পারবো”। যেই না পিঠে খাওয়া, অমনি কুকুরটা মানুষের ভাষায় বলে উঠল, “তুমি তোমার নিজের খাবার আমায় দিয়ে দিলে, আর তো তোমায় একা যেতে দিতে পারিনা, আমিও তোমার সাথে যাব।” ওরা দুজনে কিছুদূর গিয়ে দেখল এক হনুমান মাটিতে শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। মোমোতারো ওর কাছে গিয়ে কান পেতে শুনল হনুমান বিড়বিড় করে বলছে, “ওহ যদি একটু খাবার পেতাম, তাহলে হয়তো আরো কদিন বেঁচে থাকতে পারতাম।” তখন মোমোতারো ওকে আর একটা পিঠে দিল। পিঠে খেয়ে হনুমান অনেকটা সুস্থ হলে সে বলল, ” তুমি আমার এত উপকার করলে, আমাকেও তোমার সাথে নাও, বলা যায় না, তোমার কোনো কাজে লেগে যেতে পারি।” তারপর ওরা তিনজন একসাথে পথ চলা শুরু করল। আরও কিছুদূর যাওয়ার পর একটা রংবেরঙের পাখি ওদের কাছে এসে ডানা ঝাপটাতে লাগলো। ওর কোনো বিপদ হয়েছে ভেবে মোমোতারো জিজ্ঞেস জিজ্ঞেস করল, “কী হয়েছে তোমার?” পাখি তখন পাখিদের ভাষায় বলল, “আমার বাচ্চাদের মুখে একটু খাবার তুলে দেওয়ার মতো আমি কিছু খুঁজে পাচ্ছি না। কী যে করব বুঝতে পারছিনা।” মোমোতারো ওকেও পিঠে দিয়ে বলল, “এক্ষুণি এটা তোমার বাচ্চাদের খাওয়াও। আর যদি কোনোদিন তোমাদের খাওয়ার কোনো অসুবিধা হয়, তুমি আমার কাছে এসো। আমি থাকতে তোমায় না খেতে পেয়ে কষ্ট পেতে হবেনা।” পাখি চলে যাওয়ার পরে অনেকদূর হাঁটতে হাঁটতে ওরা এসে পৌঁছল সমুদ্রের তীরে; এখান থেকে নৌকা নিয়ে দৈত্যের দ্বীপে যেতে হবে। সবে নৌকা ছাড়তে যাবে, এমন সময় সেই পাখি উড়ে এসে নৌকায় বসে বলল, “মোমোতারো, তুমি আমার এত উপকার করলে, তোমায় আমি একা বিপদের মুখে যেতে দেব না, আমিও যাব তোমাদের সাথে।” অনেকক্ষণ নৌকা বেয়ে চলার পরে ওরা একানদোজির দ্বীপে পৌঁছল। এখান থেকে একটা খাড়া পাহাড় পেরিয়ে তার দুর্গ। এইবারে হনুমান দেখাল তার খেল। চার হাত পা আর লেজ দিয়ে সে খুব সহজেই সবাইকে নিয়ে দুর্গের দরজায় পৌঁছে গেল। দুর্গের প্রকাণ্ড দরজায় পৌঁছে ওরা চারজন তারস্বরে চিৎকার করতে লাগলো। মানুষের চিৎকার, কুকুরের ঘেউ ঘেউ, পাখি আর হনুমানের কিচিরমিচির মিলিয়ে সে এক হইহই ব্যাপার। আর তার সাথে দরজা লক্ষ্য করে বড় বড় পাথর ছুঁড়তে শুরু করল। দুর্গের ভিতরের লোকজন এসব শুনে ভাবল নিশ্চয়ই বিরাট বড় এক সৈন্যদল ওদের আক্রমণ করতে এসেছে। তাই দরজা খুলে তারা যে যেদিকে পারে ছুট লাগালো। মোমোতারো এবার একানদোজি কে খুঁজতে গিয়ে দেখে সে বিরাট এক পাথর তার দিকে তাক করেছে ছুঁড়বে বলে। পাথরের থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে মোমোতারো দৈত্যকে শক্ত করে চেপে ধরতে হনুমান তাড়াতাড়ি লম্বা লম্বা দড়ি দিয়ে দৈত্যর হাত পা সব বেঁধে ফেলল। তারপর চারজন মিলে কী মার মারল তাকে সে আর বলার নয়। অনেক মার খেয়ে একানদোজি শেষে রাজি হলো সব সম্পত্তি ফিরিয়ে দিতে। তার নির্দেশে তার লোকজন গিয়ে সব ধনসম্পত্তি মোমোতারোর নৌকাতে রেখে আসল। ওরা চারজন যখন পালে হাওয়া লাগিয়ে ফিরে আসছে, পিছনে একানদোজির দ্বীপ ছোট হতে হতে আস্তে আস্তে মিলিয়ে গেল। গাঁয়ের সব লোক তো ওদের ফিরে আসতে দেখে খুব খুশি, তবে সব থেকে বেশি খুশি হলো বুড়ো আর বুড়ি। গাঁয়ের সব লোক মোমোতারোকে নিয়ে খুব গর্ব করলে সে বলল, “যা করার সব আমার তিন সঙ্গীই করেছে, তোমরা ওদেরও কৃতিত্ব দাও।” মোমোতারো তারপরে অনেকদিন বেঁচে ছিল, আশপাশের সমস্ত গ্রাম থেকে লোকজন এসে ওর থেকে পরামর্শ নিয়ে যেত। একবার ওর গাঁয়ের লোকেরা এসে ওকে সোনা দিয়ে তৈরি অপূর্ব সুন্দর একটা পীচ ফল দিয়ে বলল, ” আমাদের সম্পত্তি ফিরিয়ে দিয়েছ, সে জন্য তোমাকে অনেক ধন্যবাদ, কিন্তু তার থেকেও তোমার দয়ালু ব্যবহার আর তোমার অগাধ জ্ঞানের জন্য তোমাকে আমরা মনে রাখব মোমোতারো”।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ