শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Tonoydas

Call

অ্যাবাকাস-কেই গণনা সম্পাদনের সর্বপ্রাচীন যন্ত্র মনে করা হয় যা আনুমানিক খ্রীষ্টপূর্ব ২৭০০-২৩০০ অব্দে সুমেরীয় বা মেসোপটেমিয়া সভ্যতায় প্রথম ব্যবহার করা হয়। সুমেরীয় সভ্যতায় ব্যবহার করা অ্যাবাকাস-এর মধ্যে অনেকগুলি কলাম বা স্তম্ভ ক্রমান্বয়ে সাজানো থাকতো যার মাধ্যমে সুমেরীয়রা বিভিন্ন স্ংখ্যার মান প্রকাশ করতো। বিভিন্ন প্রাচীন সভ্যতায় গাণিতিক হিসাবের প্রয়োজনে অ্যাবাকাস-এর ব্যবহার প্রচলিত ছিল। এমনকি, পৃথিবীর কোন কোন জায়গায় আজও হিসাব-নিকাশের জন্য অ্যাবাকাস যন্ত্রটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। প্রথম ডিফারেন্সিয়াল গীয়ার-এর প্রয়োগ হয়েছিল দক্ষিণ-নির্দেশী রথ নামক একটি যানে আনুমানিক খ্রীষ্টপূর্ব ১১১০ সালে, প্রাচীন চীনদেশে। এই গীয়ার পরবর্তীকালে অ্যানালগ কম্পিউটারে ব্যবহার করা হয়েছিল। চীনদেশে গাণিতিক হিসাবের প্রয়োজনে অ্যাবাকাস-এর এক অপেক্ষাকৃত আধুনিক সংস্করণ তৈরী করা হয় খ্রীষ্টপূর্ব ২০০ অব্দ নাগাদ।

৫০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে ভারতবর্ষের ব্যাকরণবিদ পাণিনি সংস্কৃত ব্যাকরণেরী অষ্টধ্যায়ী নামক একটি বই লেখেন যার মধ্যে অত্যন্ত নিয়মানুগ ও প্রণালীবদ্ধ উপায়ে ব্যাকরণের ৩৯৫৯টি নিয়ম নথিবদ্ধ করা হয়। এই বইয়ে কিছু বিশেষ ধারণার যেমন মেটারুল (নিয়ম নথিভুক্তকরণের রীতি), রূপান্তরমূলক সৃষ্টিশীল ব্যাকরণ|রূপান্তর, রিকারশন বা পুনরাবৃত্তি  ইত্যাদির প্রয়োগ পাওয়া যায়। এই ধারণাগুলি আধুনিক কম্পিউটার-এর ভিত্তিস্বরুপ।১৯০১ সালে অ্যান্টিকিথেরা নামক গ্রীক দ্বীপের কাছে সমুদ্রগর্ভে একটি রোমান জাহাজের ধ্বংসাবশেষের মধ্য থেকে ১০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দের একটি অত্যাধুনিক গণনাযন্ত্র পাওয়া যায় যা অ্যান্টিকিথেরা যন্ত্র নামে পরিচিত হয়। এক্স-রে স্ক্যানের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা এটির পরীক্ষা করেন ও সিদ্ধান্তে আসেন যে এর দ্বারা প্রাচীনকালে রোমানরা জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিভিন্ন গণনার কাজ করতো। এটির কার্যপদ্ধতি আধুনিক অ্যানালগ কম্পিউটারের সাথে তুলনীয়।মধ্যযুগের ইসলাম দুনিয়াও বিজ্ঞানচর্চায় উন্নত ছিল। মধ্যযুগের বিশ্বখ্যাত আরবীয় শিক্ষাবিদ ও গবেষক আবু রায়হান আল বিরুনি যান্ত্রিক গীয়ারযুক্ত জ্যোতির্বিদ্যা-সংক্রান্ত যন্ত্র - অ্যাস্ট্রোলেব নিয়ে গবেষণা করেন ও আরবীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী জাবির ইবন আফলা টর্কেটাম নামক যন্ত্র তৈরী করেন। ব্রিটিশ বিজ্ঞান লেখক সাইমন সিং-এর মতে মুসলিম গণিতজ্ঞরা ক্রিপ্টোগ্রাফি বা সাংকেতিক-লিপির মতো বিষয়েও এগিয়ে ছিলেন। উদাহরণ হিসাবে প্রখ্যাত আরব পণ্ডিত আল-কিন্দিরকথা বলা যায়। বাগদাদের বানু মুসা ভাতৃত্রয়,স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রাদি নিয়ে কাজ করেন ও ইসমাইল আল-জাজারি অটোমাটা বা স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রবিদ্যা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে সাফল্য পান। আল-জাজারির বিখ্যাত কিছু আবিস্কার যেমন হাতি-ঘড়ি, দুর্গ-ঘড়ি ইত্যাদির কার্যনীতি প্রোগ্রামযোগ্য অ্যানালগ কম্পিউটারের মতো ছিল ও আজও বিস্ময়ের উদ্রেক করে।১৭ শতকের প্রথম দিকে জন নেপিয়ার কর্তৃক লগারিদম পদ্ধতি আবিষ্কারের পর তৎকালীন বিজ্ঞানীদের অনেকের মধ্যে বিভিন্নরকম গণনাযন্ত্র বানানোর আগ্রহ দেখা দেয়। উইলহেল্ম শিকার্ড ১৬২৩ সালে একটি গণনাযন্ত্রের নকশা করেন কিন্তু আগুন লেগে নির্মাণের প্রোটোটাইপটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তা সম্পূর্ণতা পায় না। ১৬৪০ সাল নাগাদ ফরাসী গণিতবিদ ব্লায়েস পাস্কাল একটি যান্ত্রিক যোগফল গণনাকারী যন্ত্র বানাতে সক্ষম হন যার ভিত্তি হিসাবে ব্যবহার হয় গ্রিক গণিতবিদ হিরোন অফ আলেকজান্দ্রিয়া দ্বারা সৃষ্ট একটি নকশা। ১৬৭২ সালে গটফ্রিড উইলহেল্ম লিবিনিজ স্টেপড্ রেকনার(ডিজিটাল সংখ্যা গণকযন্ত্র) আবিষ্কার করেন যা ১৬৯৪ সালে সম্পন্ন হয়।১৮৩৭ খ্রীষ্টাব্দে চার্লস ব্যাব্যজ একটি বিশ্লেষণধর্মী বা অ্যানালিটিকাল ইঞ্জিন-এর খসড়া তৈরী করেন যার মূল সুবিধাগুলি ছিল - এক্সপ্যান্ডেবেল মেমরি (বিস্তারযোগ্য যান্ত্রিক স্মৃতিশক্তি), গাণিতিক হিসাব করার ক্ষমতা, যুক্তিনির্ভর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা, লুপ ও কন্ডিশনাল ব্রাঞ্চিং(যা আধুনিক প্রোগ্রামিং ভাষাগুলিতে পাওয়া যায়) ইত্যাদি। এই যন্ত্রটিকে বিজ্ঞানীরা বিশ্বের প্রথম কম্পিউটার বলে স্বীকার করে থাকেন এবং ট্যুরিংসমতুল্য বলেও মনে করা হয়।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Waruf

Call

জন ভন নিউম্যানের আবিষ্কার থেকেই আধুনিক কম্পিউটার আসে। 

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ