বেশি স্বাস্থ্যবান ও আকারের তুলনায় মোটা গরুর মাংসে চর্বি বেশি হয়, তাই বেশি স্বাস্থ্যবান ও মোটা গরু না কেনাই ভালো। ভারতীয় বা নেপালি গরু না কিনে দেশী গরু কেনা উত্তম। মাঝারি আকারের অথচ অধিক স্বাস্থ্যবান গরু বা মহিষ কিনবেন না, কারণ ব্যাপারিরা ওষুধ খাইয়ে এগুলোকে মোটাতাজা করে থাকে। গরু বা মহিষের ক্ষেত্রে দুই বছর এবং ছাগল বা ভেড়ার ক্ষেত্রে ছয় মাসের কম বয়সী পশু কেনা ঠিক নয়। পশুর সামনে খাবার ধরলে যদি জিহ্বা দিয়ে টেনে নেয় এবং মুখের ওপরটা ভেজা থাকে, তাহলে বুঝতে হবে পশু সুস্থ আছে। অসুস্থ পশু খাবার খেতে চায় না। পশু কেনার সময় শিং ভাঙা, লেজ, জিহ্বা, ক্ষুর, গোড়ালি, মুখ বা সারা দেহে কোনো ক্ষত আছে কিনা, তা দেখে নিতে হবে।
দেশি গরু কিনতে চেষ্টা করুন। কারণ সীমান্ত পার হয়ে আসা গরুগুলো অনেক দূর থেকে আসে বলে ক্লান্ত হয়, আর অনেক সময় ছোট-খাট আঘাতপ্রাপ্তও হয়। আর দুর্বল গরু সুস্থ নাকি অসুস্থ সেটা বোঝা বেশ কষ্টকর নিচের বিষয়গুলোর মাধ্যমে ভালো গরু চিনে নেওয়া সম্ভবঃ - স্টেরয়েড ট্যাবলেট খাওয়ানো বা ইনজেকশন দেয়া গরু হবে খুব শান্ত। ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারবে না। পশুর ঊরুতে অনেক মাংস মনে হবে। - অতিরিক্ত হরমোনের কারণে পুরো শরীরে পানি জমে মোটা দেখাবে। আঙ্গুল দিয়ে গরুর শরীরে চাপ দিলে সেখানে দেবে গিয়ে গর্ত হয়ে থাকবে। - গরুর মুখের সামনে খাবার ধরলে যদি নিজ থেকে জিব দিয়ে খাবার টেনে নিয়ে খেতে থাকে তবে বোঝা যাবে গরুটি সুস্থ। যদি অসুস্থ হয়, তবে সে খাবার খেতে চায় না। - সুস্থ গরুর নাকের উপরটা ভেজা ভেজা থাকে। - সুস্থ গরুর পিঠের কুঁজ মোটা ও টান টান হয়। - বিশেষ করে গরুর পা ও মুখ ফোলা, শরীর থলথল করবে, অধিকাংশ সময় গরু ঝিমাবে, সহজে নড়াচড়া করবে না। এসব গরু অসুস্থতার কারণে সবসময় নিরব থাকে। ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারে না। খাবারও খেতে চায় না। বর্ণিত বিষয়গুলো দেখে শুনে বুঝে গরু কিনতে হবে, তাহলেই আপনি ঠকবেননা।
আপনার প্রশ্নের উত্তর যা প্রত্যেক কুরবানিকারীর জন্য অতিব জরুরী: কুরবানী শুদ্ধ হওয়ার জন্য কিছু শর্ত রয়েছেঃ- ১। কুরবানীর পশু যেন সেই শ্রেণী বা বয়সের হয় যে শ্রেণী ও বয়স শরীয়ত নির্ধারিত করেছে। আর নির্ধারিত শ্রেণীর পশু চারটি; উঁট, গরু, ভেঁড়া ও ছাগল। অধিকাংশ উলামাদের মতে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট কুরবানী হল উঁট, অতঃপর গরু, তারপর মেষ (ভেঁড়া), তারপর ছাগল। আবার নর মেষ মাদা মেষ অপেক্ষা উত্তম। যেহেতু এ প্রসঙ্গে দলীল বর্ণিত হয়েছে।[1] পশু যেন নিম্নোক্ত ত্রুটিসমূহ থেকে মুক্ত হয়; (ক) এক চোখে স্পষ্ট অন্ধত্ব। (খ) স্পষ্ট ব্যাধি। (গ) স্পষ্ট খঞ্জতা। (ঘ) অন্তিম বার্ধক্য। এ ব্যাপারে আল্লাহর রসূল (সা.) বলেন, ‘‘চার রকমের পশু কুরবানী বৈধ বা সিদ্ধ হবে না; (এক চক্ষে) স্পষ্ট অন্ধত্বে অন্ধ, স্পষ্ট রোগা, স্পষ্ট খঞ্জতায় খঞ্জ এবং দুরারোগ্য ভগ্নপদ।’’[10] অতত্রব এই চারের কোন এক ত্রুটিযুক্ত পশু দ্বারা কুরবানী সিদ্ধ হয় না। ইবনে কুদামাহ (রহ.) বলেন, ‘এ বিষয়ে কোন মতভেদ আমরা জানি না।’[11] [1] (আযওয়াউল বায়ান ৫/৬৩৪) [2] (মুসলিম ১৩১৮নং) [3] (নাইলুল আওত্বার ৮/১২৬) [4] (ফাতাওয়া শায়খ মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম ৬/১৪৯) [5] (মাজালিসু আশরি যিলহাজ্জাহ, শুমাইমিরী, ২৬পৃঃ আল-মুমতে’ ইবনে উসাইমীন ৭/৪৬২-৪৬৩) [6] (মানারুস সাবীল ১/২৮০) [7] (মুসলিম ১৯৬৩নং) [8] (মুসনাদে আহমাদ ২/৪৪৫, তিরমিযী) [9] (বুখারী ২১৭৮, মুসলিম ১৯৬৫নং) [10] (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ) [11] (মুগনী ১৩/৩৬৯)