প্রশ্নটা পুরোপুরি ননসেন্স টাইপের হলেও উত্তরটা দেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলাম। যদিও এ প্রশ্নের উত্তর বুঝাতে গেলে অনেক কিছুই আলোচনায় চলে আসে, তবুও সব উপেক্ষা করে সাধারণ একটা কনসেপ্ট দিচ্ছি- মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণী ছোটবেলা থেকে কিছু বিশেষ ধাপে জীবন সম্পর্কে শিক্ষা লাভ করে। পূর্বপুরুষের প্রথার অনুকরণ করার পাশাপাশি প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন প্রথার প্রবর্তন কিংবা পুরনো প্রথা বর্জন করার ধারা সৃষ্টির শুরু থেকেই চলে আসছে। সকল প্রথার মাঝে সংস্কৃতি নামক অংশটা আমাদের কেউ হাতে ধরে শিখিয়ে দেয়না, আমরা চারপাশের লোকজনের চালচলন দেখে নিজেরাও সেগুলোর অনুকরণ করি। সংস্কৃতি পরিবর্তনশীল, আর এই পরিবর্তন অনেকভাবে ঘটতে পারে। বর্তমানে সংস্কৃতি পরিবর্তনের যে কারনটি প্রভাব বিস্তার করছে তা হলো "বিশ্বায়ন"। দুটি ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষ একত্রিত হলে তাদের মাঝে কিছু সাংস্কৃতিক প্রথার বিনিময় ঘটা খুবই স্বাভাবিক, তবে কাদের প্রথা বেশি প্রভাব বিস্তার করবে সেটি নির্ভর করে এর বিস্তৃতির উপর। অর্থাৎ যে সংস্কৃতি যত বেশি বিস্তৃত, সে সংস্কৃতি বাকিরা অধিক হারে গ্রহণ করবে। বিশ্বায়নের প্রাইমারি প্লাটফর্ম হলো ইন্টারনেট, আর ইন্টারনেটে পশ্চিমা সংস্কৃতির অ্যাপিয়ারেন্স তথা বিস্তৃতি সবচেয়ে বেশি। যে নতুন দেশগুলো ইন্টারনেট জগতে প্রবেশ করছে তারা প্রথমেই পশ্চিমা সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হচ্ছে। এই সংস্কৃতির রাজত্ব দেখে নিজের সংস্কৃতিকে মামুলি মনে করা স্বাভাবিক। এভাবেই এক পর্যায়ে নিজের সংস্কৃতি উপেক্ষা করে অন্য সংস্কৃতি ধারণ করার অভিপ্রায় সৃষ্টি হয়। চীন নিজেদের ভার্চুয়ালি বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে একরকম বিচ্ছিন্ন রাখতে সক্ষম হয়েছে, যার ফলে তাদের সংস্কৃতি এখনও অরিজিনাল। অন্যদিকে আমরা ভার্চুয়াল জগতে নিজদের অস্তিত্বের জানান দেয়ার বদলে অন্যদের অনুসরণ করা শুরু করেছি। আমাদের ভার্চুয়াল অ্যাপিয়ারেন্স আর পশ্চিমা বিশ্বের অ্যাপিয়ারেন্স প্রায় একরকম হয়ে পড়ায় আমরা অনেক আগেই নিজেদের অরিজিনালিটি হারিয়েছি। এখন ইন্টারনেটে কেউ শুদ্ধ বাংলা সংস্কৃতির চর্চা করলে তা আমাদের নিকট স্বাভাবিক মনে হওয়ার বদলে উলটো হাস্যকর মনে হবে। শরীরের কোনো অংশ নয়, আমাদের নির্বুদ্ধিতাই সংস্কৃতি বিকৃতির জন্য দায়ী।