অনেকে তারাবির নামাজ ২০ রাকাত পরে অনেকে আবার ৮-১০ রাকাত পরে চলে যায়। এখন তারাবির নামাজ ৮-১০ রাকাত পরে চলে গেলে কি কোন গুনাহ হবে, নাকি ২০ রাকাত ই পড়তে হবে? 
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
msemon

Call

সুন্নাত নামায আপনাকে পুরোপুরি পড়তে হবে। অর্থাৎ ২০ রাকাত ই পড়তে হবে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

তারাবির রাকাত সংখ্যা শরিয়তের বিশুদ্ধ দলিল-প্রমাণ দ্বারা প্রমাণিত। গ্রহণযোগ্য সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে বিশ রাকাত তারাবি পড়েছেন। সাহাবায়ে কেরামের আমলও তদ্রূপ ছিল। কেউ কেউ হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বিশ রাকাত তারাবি বিষয়ক হাদিসটিকে সূত্রের বিচারে অনির্ভরযোগ্য প্রমাণ করলেও বিশুদ্ধ সূত্রে সাহাবায়ে কেরামের আমলই প্রমাণ করে যে, হরজত রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে সাহাবায়ে কেরাম বিশ রাকাতের শিক্ষা পেয়েছেন। আমিরুল মুমিনীন হজরত উমর ফারুক (রা.)-এর খেলাফতকাল থেকে অবিচ্ছিন্ন কর্মধারায় এখন পর্যন্ত মক্কা শরিফের মসজিদুল হারাম ও মদিনা শরিফের মসজিদে নববীসহ সকল মসজিদে বিশ রাকাত তারাবি পড়া হয়। এ দীর্ঘ সময়ে কোথাও আট রাকাত তারাবির প্রচলন ছিল না।

সর্বপ্রথম ১২৮৪ সালে ভারতবর্ষের আহলে হাদিস আলেম আট রাকাতের ফতোয়া দিয়ে উম্মাহের ঐক্যমত্যপূর্ণ মাসয়ালায় বিভক্তি সৃষ্টি করেন। তখন অন্যান্য আহলে হাদিসরাও তার বিরোধিতা করেছে। অতঃপর আরবের কতিপয় বিচ্ছিন্ন আলেমও তার সঙ্গে একমত পোষণ করেন। কিন্তু আরববিশ্বের আলেমদের বেশিরভাগই বিশ রাকাত তারাবির অাদায় করেন।

হজরত উমর (রা.)-এর যুগে সাহাবিদের আমল
এক. ইয়াজিদ ইবনে খুসাইফা (রহ.) বলেন, সাহাবি সায়েব ইবনে ইয়াজিদ (রা.) বলেছেন, সাহাবায়ে কেরাম হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর যুগে রমজান মাসে বিশ রাকাত তারাবি পড়তেন। তিনি আরো বলেন যে, তারা নামাজে শতাধিক আয়াতবিশিষ্ট সূরাসমূহ পড়তেন এবং হজরত উসমান ইবনে আফফান (রা.)-এর যুগে দীর্ঘ নামাজের কারণে তাদের (কেউ কেউ) লাঠিসমূহে ভর দিয়ে দাঁড়াতেন। -আস সুনানুল কুবরা ও বাইহাকি, ২/৪৯৬/৪২৮৮

অপর সূত্রে সাহাবি সায়েব ইবনে ইয়াজিদ (রা.) বলেন, আমরা হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর যুগে বিশ রাকাত এবং বিতর পড়তাম। -আস সুনানুল কুবরা, বাইহাকি- ১/২৬৭-২৬৮

দুই. তাবেঈ ইবনে আবি যুবাব (রহ.) বলেন, হজরত উমর (রা.)-এর যুগে রমজানের কিয়াম তথা তারাবি ছিল ২৩ রাকাত। -মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস: ৭৭৩৩

হাদিসটির সূত্র বিশুদ্ধ। এতে ২৩ রাকাত দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, ২০ রাকাত তারাবি ও তিন রাকাত বিতর।

তিন. তাবেঈ আবদুল আজিজ ইবনে রুফাই (রহ.) বলেন, উবাই ইবনে কাব (রা.) রমজানে মদিনায় লোকদের নিয়ে বিশ রাকাত তারাবি এবং তিন রাকাত বিতর পড়তেন। -মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ২/২৮৫/৭৭৬৬

চার. তাবেঈ ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ আনসারি (রহ.) বলেন, উমর (রা.) এক ব্যক্তিকে আদেশ করেন, তিনি যেন লোকদের নিয়ে বিশ রাকাত পড়েন। -মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ২/২৮৫/৭৭৬৪

পাঁচ. তাবেঈ ইয়াজিদ ইবনে রুমান (রহ.) বলেন, হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর যুগে লোকেরা রমজানে তেইশ রাকাত পড়তেন। -মুয়াত্তা মালিক, হাদিস: ৩৮০

হজরত আলী (রা.)-এর যুগে সাহাবিদের আমল
বিখ্যাত তাবেঈ ইমাম আবু আবদুর রহমান সুলামি (রহ.) বলেন, আলী (রা.) রমজানে হাফেজদের ডাকেন এবং তাদের একজনকে লোকদেরকে নিয়ে বিশ রাকাত পড়ার নির্দেশ দিলেন। তিনি বলেন, আলী (রা.) তাদের নিয়ে বিতর পড়তেন। -সুনানুল বাইহাকি: ২/৪৯৬-৪৯৭/৪২৯১

তাবেঈ আবুল হাসনা (রহ.) বলেন, আলী (রা.) এক ব্যক্তিকে আদেশ করেন, তিনি যেন লোকদের নিয়ে বিশ রাকাত তারাবি পড়েন।-মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ২/২৮৫/৭৭৬৩

উপরোক্ত বর্ণনাগুলোসহ আরও অন্যান্য বর্ণনাসমূহ এবং সাহাবি-তাবেঈনের সর্বসম্মতিক্রমে আমলের ভিত্তিতে এবং যুগ যুগ ধরে চলে আসা সম্মিলিত অবিচ্ছিন্ন কর্মের ভিত্তিতে আলেমদের অভিমত হলো বিশ রাকাত তারাবি সুন্নতে মোয়াক্কাদা। বিনা ওজরে এর কম পড়লে সুন্নতে মোয়াক্কাদা ছেড়ে দেওয়ার গোনাহ হবে।

যারা বর্তমানে আট রাকাত তারাবির প্রচার করছে, তাদের সবচেয়ে শক্তিশালী দলিল হলো বোখারি শরিফের একটি হাদিস, যা আসলে তারাবি সম্বন্ধে নয়, বরং ওই হাদিসটি হলো তাহাজ্জুদ সংক্রান্ত একটি হাদিস। তাতে বর্ণিত হয়েছে, রমজানে ও রমজানের বাইরে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) চার রাকাত করে আট রাকাত পড়তেন। অথচ আমরা জানি, রমজানের বাইরে কোনো তারাবি নেই এবং তারাবির নামাজ হলো দু’রাকাত করে। যদি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে আট রাকাতই প্রমাণিত হতো, তাহলে সাহাবায়ে কেরাম হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বিরুদ্ধাচরণ করে বিশ রাকাত পড়তেন না। নাউজুবিল্লাহ!

(বিডিনিউজ২৪)

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

নবীজি (সাঃ) এর প্রাণ প্রিয় খলিফা হযরত উমর (রা) এর আমলে তারাবির নামায বিশ রাকাত হওয়ার উপর সমস্ত সাহাবাদের ঐকমত বা ইজমাহ হয়েছে। সমগ্র দুনিয়ায় চার মাযহাবের অনুসারীরা বিশ রাকাত তারাবির উপর আমল করে যাচ্ছেন। রিয়াযুস স্বা-লিহীন। হাদিস নম্বরঃ ১১৯৫ আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সাওয়াবের আশায় রমযান মাসে কিয়াম তথা তারাবীহ পড়বে, তার পূর্বেকার পাপসমূহ মাফ করে দেওয়া হবে। (বুখারী ৩৫ ও মুসলিম ৭৬০) হাদিসের মানঃ সহিহ। হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত ৮/৯/১১/১৩ রাকাত বর্ণিত হাদিস পাওয়া যায় যা নবিজি (সাঃ) আদায় করেছেন। সেখানে আমরা তারাবীহ’র রাকাত সংখ্যা শুধুই আট রাকাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে পড়া মোটেই উচিত নয়। অনেকেই ৮-১০ রাকাত পরে চলে তারা সওয়াব কম পায়। গুনাহ হবে একথা সহিহ হাদিসের আলোকে বলতে পারবেনা। তাই ২০ রাকাত পড়াই উত্তম।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ