শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

বিশিষ্ট মার্কসবাদী তাত্ত্বিক ও রাজনীতিক বদরুদ্দীন উমরের ভাষায়


‘সাম্প্রদায়িকতা হচ্ছে এক ধরনের মনোভাব। কোন ব্যক্তির মনোভাবকে তখনই সাম্প্রদায়িক বলে আখ্যা দেওয়া হয় যখন সে এক বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায়ভুক্তির ভিত্তিতে অন্য এক ধর্মীয় সম্প্রদায় এবং তার অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধচারণ এবং ক্ষতিসাধন করতে প্রস্তুত থাকে’।১২  

আরেক মার্কসবাদী লেখক ও শিক্ষাবিদ সলিমুল্লাহ খান মনে করেন ‘নিজের বাসভূমে নিজের অধিকার দাবি করা সাম্প্রদায়িকতা নহে, অন্যের অধিকার অস্বীকার করাই সাম্প্রদায়িকতা’।১৩


মার্কসবাদী সাংবাদিক ফারুক ওয়াসিফ মুসলমানদের সাম্প্রদায়িক চেতনাকে সাম্প্রদায়িকতা বলতে নারাজ।ফারুক ওয়াসিফ মনে করেন- ‘বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের সংকুচিত দশা, হিংসাবাদী মতবাদের প্রভাব, দেশী রাষ্ট্রের স্বৈরাচারী আচরণে হুমকিগ্রস্থ বোধ করা থেকে যে সম্প্রদায় চেতনা শক্তিশালী হয়, তাকে সাম্প্রদায়িকতার দিকে ঠেলে দেওয়া বেশি কঠিন না।তবে সম্প্রদায় চেতনা আর সাম্প্রদায়িকতা এক না।সম্প্রদায় চেতনা থেকে নিজ সম্প্রদায়ের পরিচয়ে পরিচিত হতে চাওয়া, তাদের ভালবাসাকে সাম্প্রদায়িকতা বলেনা।কিন্তু তা যখন অপর সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ আর হিংসা হিসেবে পেকে ওঠে, তখন তাকে সাম্প্রদায়িকতা বলি আমরা’।১৪


বহুভাষাবিদ, গবেষক ও সাহিত্যিক ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌র দেয়া সাহিত্যে সাম্প্রদায়িকতার সংজ্ঞা থেকেও আমরা একটা সংজ্ঞা পেতে পারি।সাহিত্যে সাম্প্র্রদায়িকতা বলতে কি বুঝায় বলতে গিয়ে শহীদুল্লাহ্‌ বলেন;


“সাহিত্যে সাম্প্র্রদায়িকতা বলতে আমি বুঝি সাহিত্যের ভিতর দিয়ে অন্য সম্প্রদায় বা ধর্ম বিশেষের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা চালানো, কোনও জাতির ঐতিহাসিক চরিত্রকে বা কোনও ধর্মাবলম্বীর সম্মানিত পুরুষদের হীন বা বিকৃত করা। দেশের সাম্প্র্রদায়িক বিবাদের মূলে এই সাম্প্র্রদায়িক সাহিত্য”।১৫  

বদরুদ্দিন উমর তাঁর আরেকটি লেখায় বলেন, ‘ধর্মের যে কোনো সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ব্যবহারকেই সাম্প্রদায়িক আখ্যা দেয়া এক মহাতাত্ত্বিক ও বাস্তব ভ্রান্তি। সাম্প্রদায়িকতা হলো ধর্মের এই ব্যবহারের একটি রূপমাত্র, যেখানে এক ধর্মীয় সম্প্রদায় অন্য একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বিরোধিতা করতে নিযুক্ত থাকে, অন্য সম্প্রদায়ভুক্ত লোকের ক্ষতি করা তার লক্ষ্য হয়’।১৬  


মার্কসবাদী লেখক, সাহিত্যিক এবং ঢাকা ইউনিভার্সিটির এমেরিটাস প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘সাম্প্রদায়িকতার কারণে দুটি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীর মানুষ পরস্পরকে ঘৃণা করে। ঘৃণা পারস্পরিক সংঘর্ষেরও জন্ম দেয়। রক্তপাত ঘটে’।১৭


সর্বশেষে, আমরা দেখি মুসলিম ধর্মতত্ত্ব সাম্প্রদায়িকতা সম্পর্কে কি বলে।মুফতি আবুল হাসান মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আরবী শব্দ ‘আসাবিয়্যাত’ এর বাংলা করেছেন সাম্প্রদায়িকতা হিসেবে।১৮ ‘আসাবিয়্যাত’ মানে কি এমন প্রশ্নের জবাবে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন ‘অন্যায় কাজে স্বগোত্র-স্বজাতির পক্ষে দাঁড়ানো’।১৯ অন্য আরেকটি হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,


‘’যে ব্যক্তি মানুষকে আসাবিয়্যাত এর দিকে আহবান করবে (অর্থাৎ অন্যায় কাজে নিজ দল, গোত্র, জাতিকে সাহায্য করতে বলবে) সে আমাদের (মুসলমানদের) দলভুক্ত নয়। যে এমন সাম্প্রদায়িকতার কারণে মৃত্যুবরণ করবে সেও আমাদের দলভুক্ত নয়’’।

http://www.muldharabd.com/?p=1904


ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ