শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

সাবান

তেল বা চর্বিকে কস্টিক সোডা বা কস্টিক পটাশ সহযোগে আর্দ্র-বিশ্লেষণ করে সোডিয়াম বা পটাশিয়াম সাবান তৈরি করা হয় । সাবান তৈরির এই বিক্রিয়াকে সাবানায়ন বিক্রিয়া বলে ।সাবান (Soap) আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অপরিহার্য পন্য । ছাই ও মসলার সঙ্গে চর্বি ও কাদার মিশ্রণ ঘটিয়ে প্রথমবারের মতো তৈরি হয় সাবান । খ্রিষ্টপূর্ব ২৩ শতকে মেসোপটেমিয়ায় উদ্ভাবিত সাবানের কাঁচামাল ছিল ছাই ও বিভিন্ন ধরনের মসলা । এও জানা যায়, বিশাল দেহাবশৈলী ষাঁড়ের চামড়ার নিচের চর্বিকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় সাবান হিসেবে ব্যবহার করতো রোমানরা । কালের পরিবর্তনে পরিবর্তন এসেছে সাবানের আঙ্গিকেও - হয়েছে আধুনিকায়ন, এসেছে নতুনত্ব । আজ সময়ের পথপরিক্রমায় রঙে-বর্ণে-গন্ধে সাবান পরিণত হয়েছে মনুষ্য সভ্যতার এক অন্যতম অনুষঙ্গ প্রসাধনে । সাবান  মাখামাখিতে রসায়নের রাসায়নিক আলিঙ্গনটা কি ? রঙ্গিন প্যাকেটে মোড়া সাবানগুলো তৈরির প্রক্রিয়ায় কি আছে রসায়নের কলকাঠির নড়াচড়া ? আর কিছু নয় সাবান হচ্ছে উচ্চ আণবিক ওজন বিশিষ্ট জৈব ফ্যাটি অ্যাসিড (যেমন- ওলিক অ্যাসিড (C17H33COOH), স্টিয়ারিক অ্যাসিড (C17H35COOH), পামিটিক অ্যাসিড (C15H31COOH) - এর সোডিয়াম বা পটাশিয়াম লবণ । সোজা কথা তাহলে সাবান হল সোডিয়াম ওলিয়েট (C17H33COONa) বা সোডিয়াম স্টিয়ারেট (C17H35COONa) বা সোডিয়াম পল্মিটেট (C15H31COONa) । অন্যভাবে বলা যায়, সাবান হল তেল/চর্বি ও ক্ষার মিশ্রিত এক ধরণের কঠিন পদার্থ । সাবান তৈরির জন্য নারিকেল, সয়াবিন, পাম, ইত্যাদি তেল এবং প্রাণীজ/উদ্ভিজ চর্বি ব্যবহার করা হয় । আমরা জানি তেল/চর্বি হচ্ছে ট্রাইগ্লিসারলের এস্টার, একে সাধারনত "ট্রাইগ্লিসারাইড" বলা হয় । এ ট্রাইগ্লিসারাইড সমূহকে সোডিয়াম বা পটাসিয়াম হাইড্রক্সাইডের সাথে বিক্রিয়া করলে গ্লিসারল এবং এক প্রকার ফ্যাটি এসিড তৈরি হয় । এই ফ্যাটি এসিড লবণটিকেই আমরা সাবান বলে জানি । আর সাবান তৈরীর এই প্রক্রিয়াকে 'স্যাপোনিফিকেশন' (Saponification) বা 'সাবানায়ন' বলা হয় ।


অর্থাৎ, ট্রাইগ্লিসারাইড + সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড (NaOH) / পটাসিয়াম হাইড্রক্সাইড (KOH) → গ্লিসারল + সাবান (Soap) তুলনামূলক শক্ত ধরনের সাবান তৈরীর জন্যে সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড (NaOH) এবং কোমল ধরনের সাবানের জন্যে পটাশিয়াম হাইড্রক্সাইড (KOH) ব্যবহার করা হয় । সাবান পানিতে মেশালে আর্দ্র-বিশ্লেষণ ঘটে ক্ষার উৎপন্ন করে আর সেজন্যই সাবান পানি পিচ্ছিল বোধ হয় । তবে চর্বি দিয়ে তৈরি সাবানে ফেনা একটু কম হয়, অন্যদিকে তেল ব্যবহার করলে সাবান ভালো হয় । সাবানকে শক্ত ও ভারী করার জন্য সোডিয়াম সিলিকেট (Na2SiO3) ব্যবহার করা হয় (পরিমাণমত যেন বেশি শক্ত হয়ে না যায়) । এছাড়া পরিমাণমত সুগন্ধি মেশানো হয় । সর্বোপরি এমন রঙ ব্যবহার করা উচিত যাতে ত্বকের ক্ষতি না করে এবং দ্রবণীয় হয় । সাবান তৈরির ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তেল/চর্বির সঙ্গে কষ্টিক সোডার সঠিক অনুপাত মেশানো । এটা ঠিক না হলে সাবানে বাড়তি তেল বা ক্ষার থেকে যাবে । সাধারণত ১০০ গ্রাম ওজনের তেল/চর্বির সাথে ১৪-১৯ ভাগ ওজনের কষ্টিক সোডা মেশানো হয় । জীবাণুনাশকের জন্য Triclosan (C12H7Cl3O2) নামক রাসায়নিক উপাদানটি এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও এন্টি-ফাংগাল এজেন্ট হিসেবে সাবানে দেয়া হয়ে থাকে । সাবানে গ্লিসারিনের উপস্থিতি ভালো কেননা এটা রুক্ষতা দূর করে ত্বকে আদ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে । চাইলে আপনিও ঘরে বসে অতি সহজে সাবান তৈরি করতে পারেন । সাবান তৈরী করা যতটা-ই না সহজ, তার চেয়ে ততটাই কঠিন এর গুনগত মান যাচাই করা । দেখা যায় প্রায় সব ধরনের সাবানের প্যাকেটের গায়ে TFM (Total Fatty Matter) দেয়া থাকে । এ TFM সাবানে উপস্থিত ফ্যাটি এসিডের পরিমাণকে নির্দেশ করে । সাধারণত ৬০% TFM এর নিচের সাবানগুলো ত্বকের জন্যে ক্ষতিকর । আর সবচেয়ে ভালো হয় ৭০% এর বেশি TFM সমৃদ্ধ সাবান ব্যবহার করলে। তাই, সাবান কেনার আগে অবশ্যই TFM এর পরিমাণ দেখে কেনাই ভালো । কেননা গোসলের জন্য সাবানে উপস্থিত TFM এর মান যত বেশি হবে, সাবানটি তত বেশি ব্যবহারের উপযোগী হবে । ময়লা ও জীবাণুমুক্ত রাখতে আমরা গোসলের সময় নিয়মিত শরীরে সাবান ব্যবহার করে থাকি । - এ যেন আমাগো গা এ সাবান নয় আস্ত রসায়ণের লেজ মাখছিimage    

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ