বেতার তরঙ্গের বিভিন্ন এফএম রেডিও স্টেশনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা শ্রোতাদের মাতিয়ে রেখে স্টেশন আর শ্রোতাদের মাধ্যে যোগসূত্র রক্ষার কাজ করেন রেডিও জকি বা 'কথাবন্ধু'। ছোট কথায় 'আরজে'। এই আরজিং বা রেডিও জকি এখন অন্যতম আকর্ষণীয় পেশা। এই পেশায় আসার আগে আপনাকে যেসব ধাপ অতিক্রম করে আসতে হবে সেসব মনে করিয়ে দেই চলুন_
✿✿ কথার পিঠে কথা
রেডিও জকির কাজ গানের ফাঁকে ফাঁকে কথার পিঠে কথার মালা গাঁথা। তবে, অতিকথন বা বাজে বকা নয়। বিনোদনের সঙ্গে দরকারি তথ্য শ্রোতদের জানানো। যাকে বলে 'ইনফোটেনমেন্ট'। এই কথা বলার ক্ষমতা কেউ জন্ম থেকেই পায় না। চর্চার মাধ্যমে অর্জন করে। আপনি চর্চা চালিয়ে নিজেকে তৈরি করুন সবার আগে। প্রয়োজনে আয়নায় দাঁড়িয়ে প্র্যাকটিস চালিয়ে যান। আর মাথাটা খাটান।
✿✿প্রযুক্তির ধাক্কা
স্টুডিওতে থাকে কম্পিউটার কনসোল ও মাইক্রোফোন। কনসোল অপারেশন করে গানের সিডি বাজাতে হয়। ফলে, কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তিগত দিকটাও সামলাতে হয়। এতে আবার ভাববেন না আপনাকে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ জ্ঞান অর্জন করে এখানে আসতে হবে। সামান্য জানা থাকলেই হয়। বাকিটা রেডিও হাউস শিখিয়ে নেবে। আর ষোল আনা শিখে আসলে কে ঠেকায় আপনাকে!
✿✿ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা কুল কুল...
অনুষ্ঠান চলাকালে কোনো ভুল-ভ্রান্তি হলে কিংবা অযথাই কেউ শুরু করলো সমালোচনা। ফেসবুক পেজ কিংবা মেসেজে উপর্যপুরি চালিয়েই যাচ্ছে বিরূপ মন্তব্য। এই অবস্থায় আপনাকে কোনো ভাবেই মাথা গরম করা চলবে না। ঠাণ্ডা মাথায় এটা সামলানোর মনমানসিকতা রাখতে হবে। কারণ, আপনি শ্রোতাদের মনোরঞ্জনের জন্যই এখানে বসেছেন। তাদের চাহিদার কথা আপনাকে মাথায় রাখতে হবে। তাই যাদের মেজাজ হুটহাট গরম হয়ে যায়, তাদের বলি, রেডিওতে আসার আগে মেজাজটা ডিপ ফ্রিজে রেখে আসুন। তবেই ঝক্কিগুলো আপন হয়ে ধরা দেবে!
✿✿প্রশিক্ষকের মুখোমুখি
বর্তমানে বেশ কিছু ট্রেনিং ইনস্টিটিউট দেশে আরজে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। আমার কোন ধারনা নেই কে ভালো। তবে jobsA1 News Presentation & RJ Course ভালো হওয়ার কথা । খরচ মুটামুটি ৫০০০ টাকার মতো। প্রতিষ্ঠান ভেদে কম বেশি হতে পারে।
✿✿আত্নবিশ্বাসের পারদ
নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস এবং কোন বিষয়কে সুন্দরভাবে শব্দচয়নের মাধমে উপস্থাপন করার যোগ্যতা থাকলে তবে এফএম রেডিও স্টেশনে যোগাযোগ করতে পারেন। যদি প্রবল আত্মবিশ্বাস থাকে, থাকে টকাটক কথা, ফাটাফাট উত্তর, ঝাটঝাট প্রশ্ন, সাটাসাট রেফারেন্স দিয়ে শ্রোতাকে বিমোহিত করে রাখার ক্ষমতা, তবে দেরি কেন? কথা বলতে পারাটা একটা শিল্প। আর এটা যদি নেশা থেকে পেশা হয়; বলা যায়, এই চাকরির মন্দার বাজারে সোনায় সোহাগা!
✿✿সবজান্তা
আরজেদের প্রচুর জানতে হয়। অনেক সময় নির্দিষ্ট স্ক্রিপ্ট থাকে না প্রোগ্রামের। তাৎক্ষণিকভাবে কথার পিঠে কথা সাজিয়ে নিতে হয়। এক কথায় রেডিও জকি হলেন কথার 'জাদুকর'। কিন্তু কোন সময়ে কী কথা বলবেন, তার মাত্রাজ্ঞান থাকা দরকার। বিষয়ের ক্ষেত্রে বৈচিত্র আনতে বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা চাই। নিজের কণ্ঠস্বর রেকর্ড করে শুনলে অনেক দোষ-ত্রুটি সংশোধন করা যায়। এটি একটি পারফর্মিং আর্ট। ভেতরে সুরের মাত্রাজ্ঞান না থাকলে যেমন কণ্ঠশিল্পী হওয়া যায় না, তেমনই সহজত দক্ষতা না থাকলেও ভালো ট্রেনিং নিলে উপকৃত হওয়া যায়।
✿✿এফএম জার্নাল
আরজে নির্বাচনের ক্ষেত্রে এফএম চ্যানেলগুলোর নির্দিষ্ট বোর্ড থাকে। প্রাথমিকভাবে শতাধিক আগ্রহী প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেয় তারা। তারপর ২৫-৩০ জন বাছাই করে। ভয়েস টেস্ট, গ্রুমিংসহ কয়েকটি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে চূড়ান্ত নির্বাচন সম্পন্ন হয়।
তাছাড়া একজন আরজে প্রার্থীকে সাধারণ জ্ঞান, বাচনভঙ্গি ও সৃষ্টিশীলতায় পারদর্শী হতে হয়। তাকে হতে হয় শৈল্পিক মনের অধিকারী। আর নিজেকে জানতে হয় সবচেয়ে ভালোভাবে। নিজের গুণাবলির ওপর দিতে হয় জোর। তারপর স্বপ্নের পথে এগিয়ে যেতে থাকে।
✿✿কাজের সময়সীমা এবং বেতন
প্রাথমিকভাবে একজন রেডিও জকি পার্টটাইম এবং ফুলটাইম_ দুইভাবে কাজ করতে পারেন। পার্টটাইম হিসেবে একজন আরজেকে তিন ঘণ্টা অনুষ্ঠান পরিচালনা করার লক্ষ্যে কমপক্ষে পাঁচ ঘণ্টা অফিস করতে হয়। আর ফুলটাইমের ক্ষেত্রে এই সময়সীমা ৮ ঘণ্টা থেকে তারও বেশি হয়ে থাকে। বেতন ১০ হাজার থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে কর্মদক্ষতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেতন-সম্মানীও বাড়ে। বর্তমানে জনপ্রিয় আরজেরা এক লাখ টাকাও বেতন পাচ্ছেন।
✿✿✿✿আরজেতেই শেষ নয়
এফএম রেডিও স্টেশনে যোগ্যতার ওপর ভিত্তি করে অন্যান্য পদের পদন্নোতি হয়। যেমন-
✿প্রডিউসার : অনুষ্ঠান সম্প্রচার পরিকল্পনার দায়িত্বে থাকেন। তার কাজ অনুষ্ঠান প্রযোজনা, স্ক্রিপ্ট তৈরি, কথোপকথনের বিষয় বাছাই করা।
✿মিউজিক ম্যানেজার : রেডিও জকি অনুষ্ঠানে কোন কোন গান বাজাবেন, কখন বাজাবেন, কতক্ষণ বিরতির পর সেই গান পুনঃপ্রচার করা হবে_ এইসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
✿স্টেশন ম্যানেজার : স্টেশন পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব থাকেন স্টেশন ম্যানেজার।
✿অন্য পেশায় যেতে পারেন: কণ্ঠস্বরের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে রেডিও জকি ছাড়াও ফ্রি-ল্যান্স অনুষ্ঠান সঞ্চালনা, টিভিতে ভয়েস ওভার দেওয়া, সিনেমা, অ্যানিমেশন ফিল্ম ডাবিং করে ভালো আয় করা যায়।
RJ পেশাতে যোগ্যতা হিসেবে বিভিন্ন রেডিও স্টেশন অনুসারে স্নাতক পাসকে মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। তবে যোগ্যতাসম্পন্ন স্নাতক অধ্যয়নরতরা এই পেশাতে ক্যারিয়ার শুরু করার জন্য আবেদন করতে পারেন। এই পেশার মূল যোগ্যতা হিসেবে শিক্ষাগত যোগ্যতা শেষ কথা নয়। মূলত সমসাময়িক ঘটনাবলি সম্বন্ধে স্বচ্ছ ধারণাজ্ঞান এবং উপস্থাপনায় স্বাচ্ছন্দ্যতা এই পেশায় মূল যোগ্যতা হিসেবে পরিগণিত হয়। রেডিও জকিদের নিজস্বতা এবং শ্রোতাদের আকৃষ্ট করার স্বতন্ত্রতার পাশাপাশি গলার স্বর ভালো হতে হয় এবং সুস্পষ্ট উচ্চারণ এবং ভাষাজ্ঞানে দক্ষতা অর্জন করতে হয়। আমাদের দেশে এই পেশার প্রতি তরুণ-তরুণীদের আগ্রহের কারণে বর্তমানে বেশ কয়েকটি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট দেশে আরজে ট্রেনিং প্রদান করছে। নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস এবং কোনো বিষয়কে সুন্দরভাবে শব্দচয়নের মাধমে উপস্থাপন করার যোগ্যতা থাকলে আরজে হতে অগ্রহীরা এফএম রেডিও স্টেশনে যোগাযোগ করতে পারেন। প্রাথমিকভাবে একজন রেডিও জকি পার্টটাইম এবং ফুলটাইম দুইভাবে কাজ করতে পারে। এক্ষেত্রে সাধারণ সময়সীমা ব্যতীত তাদের সুনির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী কাজ করে যেতে হয়। পার্টটাইম হিসেবে একজন আরজেকে তিন ঘণ্টা অনুষ্ঠান পরিচালনা করার লক্ষ্যে কমপক্ষে পাঁচ ঘণ্টা অফিস করতে হয়। আর ফুলটাইমের ক্ষেত্রে এই সময়সীমা ৮ ঘণ্টা থেকে তদূর্ধ্ব হয়ে থাকে।