মাসিকের সময় কিছু পরিমাণে পেটে ব্যাথা করতেই পারে, এতে ভয়ের কিছু নেই। কিন্তু যদি এমন ব্যাথা হয় যেটা সহ্য করায় কঠিন ব্যাপার হয়ে দাড়ায় তাহলে চিন্তার ব্যাপার। কিশোরী বয়সে মাসিক সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেওয়া জরুরি। এ ক্ষেত্রে মা, বড় বোন কিংবা অন্য নিকটাত্মীয়ের দায়িত্ব অনেক। বিষয়টি সেকেন্ডারি স্কুলপর্যায়ে পাঠ্য রয়েছে ঠিকই, তবে শ্রেণীকক্ষে শিক্ষিকার খোলামেলা বৈজ্ঞানিক আলোচনা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক তথ্য জানা থাকলে ভীতি কমবে। ভীতি কমলে ব্যথার তীব্রতা কম অনুভূত হবে। এ ছাড়া নিয়মিত ব্যায়াম, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, অশান্তির সঠিক সমাধান করা ইত্যাদি বিষয়ে খেয়াল রাখা। মাসিকে পেটে ব্যাথা ঋতুস্রাব বা মাসিকের সময় তলপেটে কোনো ব্যাথা বা কষ্টদায়ক অনুভূতি হয় না, এমন নারীর সংখ্যা কম। তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় এ ব্যাথার পরিমাণ যখন এমন হয় যে তা দৈনন্দিন স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত করে, তখনই কেবল এটাকে অসুস্থতা বা ডিজমেনোরিয়া বলে গণ্য করা হয়। ডিজমেনোরিয়া দুই ধরনের প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি। প্রাইমারি ডিজমেনোরিয়া সাধারণত ১৮ থেকে ২৪ বছরের তরুণীরা এতে বেশি ভোগেন। এর নির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা নেই, তবু কারণ হিসেবে কিছু বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়ে থাকে। যেমন, মাসিকের সময় ব্যথার প্রতি সংবেদনশীলতা বেড়ে যাওয়া, ঘরে-বাইরে অশান্তি, পরীক্ষার চাপ, বেকারত্ব, ভগ্নস্বাস্থ্য ইত্যাদি। এ ছাড়া গবেষণায় কিছু হরমোনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। তবে অন্তত একবার গর্ভধারণ এবং স্বাভাবিক প্রসবের পর এ সমস্যাটি আপনা আপনি সেরে যায়। গর্ভধারণ ও প্রসবের মাধ্যমে জরায়ু পরিপক্বতা লাভ করে এবং সাধারণত এরপর ডিজমেনোরিয়া হয় না। মাসিক শুরুর সঙ্গে এ ব্যাথা শুরু হয় এবং প্রথম দিনের পর আর ব্যাথা থাকে না। তলপেটে মোচড়ানো ধরনের ব্যাথা হয়। কোমরে ব্যাথা হতে পারে, ঊরু বা থাইয়ের ভেতরের অংশেও ব্যাথা হতে পারে। এ সময় ব্যাথার প্রভাবে রোগীকে বিমর্ষ দেখায়। তার বমি ভাব অথবা বমি হতে পারে। সেকেন্ডারি ডিজমেনোরিয়া অনেক গাইনি রোগের কারণে মাসিকের সময় ব্যথা হতে পারে, যেমন- তলপেটের ইনফেকশন, জরায়ুর টিউমার, পলিপ, জন্মগত ত্রুটি ইত্যাদি। বিবিধ কারণ থাকায় মাসিকের সময় ব্যথার ধরনও ভিন্ন হয়ে থাকে। সাধারণত মাসিক চক্রের শেষ সপ্তাহে তলপেটে ভার ভার অনুভূত হয়। মাসিক শুরুর তিন- চার দিন আগে থেকেই ব্যথা হয়। মাসিক শুরু হলে ব্যথা কমতে থাকে। সেকেন্ডারি ডিজমেনোরিয়ার জন্য আলাদা কোনো চিকিৎসা নেই। প্রথমে অন্তর্নিহিত রোগটি সঠিকভাবে নির্ণয় করতে হবে। এরপর সে রোগের চিকিৎসাতেই ভালো হবে প্রতি মাসের এ যন্ত্রণা। মাসিকে পেটে ব্যাথা সমাধান সাধারণ পদ্ধতিঃ কোন বোতলে গরম পানি ভরে বা কাপড় গরম করে তলপেটে ২০/২৫ মিনিট ছ্যাক লাগাতে হবে। এটা সপ্তাহে টানা ৩/৪ দিন করে করতে হবে। এতে ধীরে ধীরে মাসিকের সময় ব্যাথা কমে যাবে। এছাড়া আরেকটা পদ্ধতি আছে- সিজ বাথঃ ৩ মিনিট গরম পানিতে কোমর ডুবিয়ে বসে থাকতে হবে। পরের ২/১ মিনিট ঠাণ্ডা পানিতে। এভাবে ২০/২৫ মিনিট সিজ বাথ নিতে হবে। এটাও সপ্তাহে টানা ৩/৪দিন নিতে হবে। শুধু পানি বা পানিতে কিছু লবন, বেকিং সোডা বা ভিনেগারও ব্যবহার করা যায়। আরেকটা পদ্ধতি আছে- কেজেল ব্যায়ামঃ কেগেল ব্যায়াম/কেগেল এক্সারসাইজ/ কেজেল এক্সারসাইজ (Kegel Exercises) প্রস্রাবের উপর নিয়ন্ত্রণ এবং শ্রোণী এলাকা (পেলভিস) অর্থাৎ তলপেটের নিম্নভাগের মাংশপেশীর সমস্যা রোধ করতে সাহায্য করে। এখানে কেগেল ব্যায়াম কিভাবে সঠিক ভাবে করতে হয় তার একটা স্টেপ বাই স্টেপ গাইড দেয়ার চেষ্টা করা হলো। কেগেল ব্যায়াম শ্রোর্ণী মেঝের পেশীকে দৃঢ এবং শক্তিশালী করে যা জরায়ু, মূত্রথলি এবং পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাকে সাহায্য করে। আপনি প্রায় যে কোনো সময়ে শুয়ে বা বসে কেগেল ব্যায়াম করতে পারেন। এমনকি গর্ভবতী অবস্থায়ও করা যেতে পারে। কেন কেগেল ব্যায়াম গুরুত্বপূর্ণ সেটা আগে বুঝতে হবে। অনেক কারণে আপনার শ্রোর্ণী মেঝের মাংসপেশী দুর্বল হয়ে যেতে পারে। গর্ভাবস্থা থেকে সন্তান প্রসব, বয়স বৃদ্ধি, এমনকি মুটিয়ে গেলে বা ওজন বৃদ্ধি পেলেও এমন হতে পারে। এ কারণে শ্রোণী অঙ্গ থেকে যোনির অনেক পেশী ঢিলা হয়ে নিচের দিকে নেমে যেতে পারে। এতে প্রস্রাবের চাপ সহ্য করার ক্ষমতা কমে যাওয়া সহ আরো অনেক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। কেগেল ব্যায়াম কিছু অবশ্যম্ভাবী ঘটনাকে বিলম্বিত করে, শ্রোর্ণী অঙ্গ স্থানচ্যুতি এবং সম্পর্কিত উপসর্গ প্রতিরোধ করে আপনার তারুণ্য অনেকদিন ধরে রাখতে পারে। এছাড়া যাদের চরমপূলক লাভে সমস্যা হয় তাদের জন্যও এটা উপকার হতে পারে। কিভাবে কেগেল ব্যায়াম করতে হয়- সেটা জানার আগে আপনার শ্রোর্ণী মেঝের পেশী চিহ্নিত করে নিতে হবে এবং কিভাবে পেশী সংকুচন এবং প্রসারণ করতে হয়।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ