দাম্পত্য মানেই একজন মানুষের সাথে নিজের বাকিটা জীবন কাটানো। যদিও আজকাল ডিভোর্স খুব সহজ একটি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে, কিন্তু তবুও যতটা সোজা ভাবা হয় বিষয়গুলো আসলে ততটা সহজ নয়। স্ত্রী এমন কেউ নন যে পছন্দ না হলেই বদলে ফেলবেন। বরং সে পরিস্থিতি যেন না হয়, সে কারণে বিয়ের আগেই কিছু খোঁজখবর করে নেয়া ভালো। বিয়েতে কিছু বিষয় একটু ভালো করে জেনে নেবেন। এতে সব শেষে লাভ হবে আপনাদের দুজনেরই।

হজরত আবু হাতেম মুজানি থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘যাদের ধর্মপরায়ণতা ও চারিত্রিক গুণাবলি সম্পর্কে তোমরা সন্তুষ্ট, তাদের কেউ (তোমাদের কন্যা বা অধীন কারও বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে) এলে তার সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দাও। অন্যথায় দুনিয়ায় ব্যাপক ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টি হবে।’ (তিরমিজি : ১০৯৩)। উল্লিখিত হাদিসে কনেপক্ষের জন্য পাত্র নির্বাচনে মৌলিক নীতি-আদর্শ রয়েছে। এর অন্যথা করলে পরিণতি কী হতে পারে, তার প্রতিও ইঙ্গিত রয়েছে। কনের অভিভাবক যদি ধনবান পাত্রের আশায় বিয়েতে বিলম্ব করে, তাহলে দিন দিন নারী-পুরুষ উভয়ের নীতি-নৈতিকতার অবক্ষয় দেখা দেবে। সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক নানা জটিলতার সৃষ্টি হবে, যা সমাজ সচেতন ব্যক্তিমাত্রই অবগত রয়েছেন। [তুহফাতুল আহওয়াজি : ৭/২০৪]। অন্যথায় তার সোনার সংসারে সুখের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। আল্লাহর নবী [সা.] বলেন, ‘যার দ্বীন ও চরিত্র তোমাদের মুগ্ধ করে, তার সাথে (তোমাদের ছেলেদের কিংবা মেয়েদের) বিয়ে দাও। যদি তা না করে (শুধু দ্বীন ও চরিত্র দেখে তাদের বিয়ে না দাও বরং দ্বীন বা চরিত্র থাকলেও শুধু বংশ, রূপ বা ধন-সম্পত্তির লোভে বিয়ে দাও) তবে পৃথিবীতে বড় ফিতনা ও মস্ত ফাসাদ, বিঘ্ন ও অশান্তি সৃষ্টি হবে।’ [ইবনে মাজাহ -১৯৭]।

মেয়ে বিয়ে দেয়ার সময় পাত্র ধার্মিক কি না তা লক্ষ্য রাখতে হবে। ধার্মিকতা ব্যতীত মানুষের অধিকার আদায় করা হয়না। যেমনটি দেখা যায় যে লোক ধার্মিক নয় সে মানুষের হক বা অধিকার আদায়ের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করে না। পাত্র সবদিক থেকে উপযুক্ত হয় কিন্তু দীনদার নয়। তবুও তার সঙ্গে মেয়ে বিয়ে দিবে না। [মালফুজাতে খাবরাত, খন্ড-৮, পৃষ্ঠা-৩২।]

যতক্ষণ মানুষ ধর্মপরায়ণ না হয় ততোক্ষণ তার কোনো কথা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, কোনো কাজের কোনো সীমা নেই অর্থাৎ তার কোনো দায়বদ্ধতা নেই। যদি বন্ধুত্ব হয় তাহলে সীমা ছাড়াবে আবার শত্রুতা হলেও সীমা লঙ্ঘন করবে। আর যার কাজের কোনো ভারসাম্য নেই সে নিশ্চত বিপদজনক। সব কিছু যথাযথ করাই সবচেয়ে বড় পূর্ণতা। আল ইফাজাত, খন্ড-৮, পৃষ্ঠা-২০২।

ধার্মিকতার পরিচয় : ধর্মের কি কি শাখা রয়েছে আজ মানুষ তা জানে না। ফলে তারা ধর্মকে নামাজ রোজার মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রেখেছে। ইসলামের মৌলিক শাখা হলো পাঁচটি ১. عقائد বিশ্বাস ২. عبادات ইবাদত ৩. معاملات লেনদেন ৪. معاشرات সামাজিক আদান প্রদান বা আচরণ ৫. تهذيب اخلاق و تربيت نفس চরিত্র গঠন ও আত্মশুদ্ধি। [হুকুকুল ইলম, পৃষ্ঠা-২।]

সুন্দর তাকে বলা হবে যার নাক, কান, চোখ সব সুন্দর। প্রত্যেক অঙ্গ যথাযথ। যদি সব ঠিক কিন্তু চোখ কানা অথবা নাক বোঁচা তাহলে সে সুন্দর নয়। এমনিভাবে ইসলাম তার সকল শাখার সমন্বিত একটি নাম। তাজদিদে তালিম, পৃষ্ঠা-২২৭।

সামাজিক আচরণ, আদান প্রদানও ইসলামের একটি শাখা। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এটাকে সামান্য বিষয় মনে করে এবং ওজিফা (পীর কর্তৃক নির্ধারিত প্রতিদিনের নফল ইবাদত) কে দীনদারী ও আবশ্যক মনে করে। সামাজিক শিষ্টাচারের মূলকথা হলো, তার থেকে কেউ কষ্ট পাবে না। যদি কারো ... ঠিক হয়ে যায় এবং সে নামাজ পড়ে তাহলে সে ধার্মিক বা দীনদার। আল্লাহর নৈকট্য সে লাভ করবে। হুসনুল আজিজ, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-৬৩।

৮টি বিষয় না জেনে কোনো ছেলের কাছে বিয়ে বসা উচিত না : মেয়ের বিয়ে নিয়ে খুব চিন্তিত। আশানুরূপ কোনো প্রস্তাব আসছে না। যার সাথে সম্পর্ক করা যায়। যদি কোনো জায়গা থেকে দাড়িঅলা ছেলের প্রস্তাব আসলে দেখা যায় হতদরিদ্র। যাদের আর্থিক অবস্থা ভালো থাকে দেখা যায় তার দাড়ি সাফ। কিছু প্রস্তাব শুধু এজন্য ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। দোয়া করবেন আল্লাহ যেন ইজ্জত রক্ষা করেন। মেয়ে বিয়ে দিতে গিয়ে লজ্জার মুখোমুখি হতে না হয়। অনেকে বলছে, ভাই এই খেয়াল ছেড়ে দিন। আজকাল দাড়িঅলা ছেলে সহজে মিলবে না। উত্তরে হজরত থানবী রহ. লিখেন, বাস্তবেই কঠিন। আমি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিচ্ছি না। আমার ধারণা বর্তমান সময়ে ধার্মিকতা পুরোপুরি দাড়িতে নিহিত নয়। একজন দাড়ি কামানোর গুণাহ করছে। অপরজন প্রবৃত্তি পূজার গুণাহ করছে। তাহলে শুধু দাড়ি দিয়ে কি হবে। হলে সত্যিকার ধার্মিক হও। যা খুবই দুঃপ্রাপ্য। যদি নিচের বিষয়গুলো খেয়াল করা হয় তাহলে ভালো হয়।

১. শুধু কয়েকটি বিষয় দেখে নিবে। যেমন, ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের ব্যাপারে কোনো সন্দেহ করে না অথবা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে না।

২. স্বভাব-চরিত্র ভালো হয়। যেমন, আলেম ও বুযুর্গদেরকে সম্মান করে।

৩. নম্র স্বভাবের হবে।

৪. পরিবার পরিজনের অধিকার আদায়ের আশ্বাস পাওয়া।

৫. প্রয়োজনীয় আর্থিক সামর্থ থাকা আবশ্যক। কারো মধ্যে এ সব গুলাবলি পাওয়া গেলে তাকে বেছে নিবে। এরপর যখন আসা যাওয়া হবে। মিল মহববত তখন অসম্ভব নয় এই ছেলে দাড়ি রেখে দিবে। [মালফুজাতে আশরাফিয়া, পৃষ্ঠা-৩১১ পাকিস্তান থেকে প্রকাশিত।]

৬. উপার্জনে সক্ষম হবে।

৭. অন্যের তুলনায় বেশি পার্থক্য হবে না।

৮. ধার্মিকতার অন্যান্য বিষয়গুলো তালাশ করবে না। নতুবা হাদিসে যে হুশিয়ারী এসেছে বাস্তবায়িত হবে। ইরশাদ হয়েছে, যখন স্বভাব-চরিত্র ও ধার্মিকতার ক্ষেত্রে কুফুু পাওয়া যায় তখন বিয়ে দিয়ে দাও। অনেক বড় বিশৃংখলা হবে। [ইসলাহে ইনকিলাব, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-৩১।]

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ