রথমত, প্রমাণ থাকলে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের প্রশ্নই আসে না। বিশ্বাসের প্রয়োজন হয় তখনই যখন প্রমাণের অপ্রতুলতা থাকে। ঈশ্বরকে যেহেতু বিশ্বাস করতে হয়, তার অর্থ হচ্ছে ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে যেসমস্ত যুক্তিপ্রমাণ (এভিডেন্স) উত্থাপন করা হয় তা অপ্রতুল।

দ্বিতীয়ত, ঈশ্বরে বিশ্বাসের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় মানুষের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা থেকে। যতদুর পর্যন্ত মানুষ প্রাকৃতিক নিয়মে ব্যাখ্যা করতে পারে, ততদুর পর্যন্ত ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রয়োজন হয় না। যেখানে গিয়ে মানুষের অজ্ঞতা শুরু, সেখান থেকেই প্রয়োজন হয় একজন ঈশ্বরের। একসময় মানুষ বিশ্বাস করত, ঈশ্বর/কোন দেবদুত বৃষ্টিপাতের পেছনে দায়ী। আজ বিজ্ঞানের কল্যাণে আমরা জানি যে, প্রাকৃতিক নিয়ম পানিচক্রের কারণেই বৃষ্টিপাত হয়। একই কথা বন্যা, ভুমিকম্প, জলোচ্ছাস প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এককালে মানুষ এগুলোর পেছনে ঈশ্বরের গজব খুজে পেত (ইরান ইত্যাদি বর্বর দেশের অসহানুভুতিশীল লোকেরা এখনো পায়)। কিন্তু আজ আর কেউ দুর্যোগের শিকার লোকদের পাপী বান্দা না ভেবে তাদের প্রতি সহানুভুতিশীল হয় বিজ্ঞানের কল্যাণে। তবে সাধারণ মানুষ এখনো তাদের ধী-শক্তির উর্ধ্বে যা কিছু রয়েছে তার পেছনে ঈশ্বরের ছায়া খুজে বেড়ায়। মানুষ যতই প্রকৃতিকে জানবে, ততই ঈশ্বরের ভুমিকা কমে আসবে। একজন আস্তিক তার অজ্ঞতাকে যেমন ঈশ্বর দ্বারা পূরণ করেন, নিজের প্রয়োজনে; একজন নাস্তিক তার অজ্ঞতাকে পূরণ করেন অজানাকে জানার অদম্য কৌতুহল দ্বারা। তাই তার জন্য ঈশ্বরে বিশ্বাসের প্রয়োজন হয় না।

তৃতীয়ত, ঈশ্বরকে উপস্থাপন করা হয় মহাবিশ্বের আদি কারণ হিসেবে। মহাবিশ্ব সৃষ্টির পর থেকে এর অভিযাত্রায় ঈশ্বরের স্বক্রিয় হস্তক্ষেপ রয়েছে, নাকি সবকিছু প্রাকৃতিক নিয়মে চলছে তা নিয়ে ঈশ্বরে বিশ্বাসীদের মধ্যেও মতভেদ রয়েছে। আমার জানা তাদের মতগুলো নিম্নরূপঃ
১. ঈশ্বর সবকিছু স্বক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন। তার অনুমতি ছাড়া গাছের পাতা নড়ে না, চোর চুরি করে না, ধর্ষক ধর্ষণ করতে পারে না, খুনি খুন করতে পারে না, পরম করুনাময়-অসীম দয়ালু রাষ্ট্রপতি ক্ষমা প্রদর্শন করতে পারে না।
২. ঈশ্বর মহাবিশ্ব সৃষ্টি করে কিছু নিয়মে আবদ্ধ করে দিয়েছেন (যাকে প্রাকৃতিক নিয়ম/ল'জ অব নেচার বলা হয়ে থাকে)। এরপর থেকে সবকিছু এই নিয়মের মধ্যেই চলছে। এই নিয়মের মধ্যেই মানুষ এবং অন্যান্য বুদ্ধিসম্পন্ন জীব (যেমন, জ্বীন, দেব-দেবী, শয়তান)দের চিন্তার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা আছে। ঈশ্বর কেয়ামতের পর সব হিসাব নিকাশ মেলাবেন।
৩. অনেকে আবার দুইটার সংমিশ্রণে অদ্ভুত একধরণের বিশ্বাস রাখেন, যেখানে ঈশ্বরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এবং চিন্তার স্বাধীনতা দুইটাই নিশ্চিত করা হয় (কীভাবে সম্ভব আমি বুঝি না)।
যাই হোক, বিজ্ঞানের কল্যাণে আমরা জানি যে, মহাবিশ্ব সৃষ্টির পর থেকে যা কিছু ঘটেছে তা প্রাকৃতিক নিয়ম দ্বারা ব্যাখ্যা করা সম্ভব; এজন্য ঈশ্বরের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নাই। তবে একটা বিষয় ব্যাখ্যা করার জন্য ঈশ্বরের প্রয়োজন হতে পারে। সেটা হলঃ "এই মহাবিশ্ব (প্রাকৃতিক নিয়মসমূহ সহকারে) সৃষ্টির আদি কারণ কি?"
এই প্রশ্নের উত্তর দুইভাবে পাওয়া যায়। এক, একটি কাল্পনিক সত্ত্বার আশ্রয় নেয়া, দুই, নিজেদের অজ্ঞতা স্বীকার করে নিয়ে প্রশ্নের উত্তর খুজে বেড়ানো/খোঁজার জন্য অপেক্ষা করা। নাস্তিকেরা দ্বিতীয় সমাধানে আস্থাশীল।

চতুর্থত, মহাবিশ্ব সৃষ্টির আদি কারণ হিসেবে কোন একটি বিশেষ সত্ত্বাকে যদি মেনে নেয়াও হয়, তবুও ধর্মসমূহে বর্নীত ঈশ্বরসমূহ যেসমস্ত পরস্পরবিরোধী বৈশিষ্টসমূহ (যেমন, সর্বশক্তিমানতা, সর্বজ্ঞতা ও সর্বশক্তিমানতা, সর্বজ্ঞতা ও স্বাধীন ইচ্ছা ইত্যাদি) ধারণ করে তা বিবেচনা করে সেই ঈশ্বরসমূহকে খারিজ করে দেয়া যায়।

একারনেই নাস্তিকেরা ঈশ্বর, বিশেষত ধর্মগ্রন্থে বর্নীত মানব বৈশিষ্ট্যবিশিষ্ট ঈশ্বরের অস্তিত্বে আস্তিকদের মত বিশ্বাস স্থাপন করতে ইচ্ছুক নয়।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ