অনেকে বলেন, বাচ্চাকে কাছে রেখে খাওয়ানোর ফলে মা ও শিশুর মাঝে অনুভূতির গাঢত্ব বাড়ে, যা বাচ্চার মস্তিষ্কের উন্নতি করে, কার ধারণা মাতৃদুগ্ধে রয়েছে বিশেষ কোনো উপাদান যা বাচ্চার উপকারে আসে। অথবা বাচ্চাকে নিজের দুধ খাওয়ান, এমন মায়েদের মাঝে হয়তো এমন কোনো বৈশিষ্ট্য আছে যার ফলে তার সন্তানেরা হয়ে ওঠে অন্যদের চাইতে বেশি উন্নত।
The Journal of Pediatrics এ প্রকাশিত গবেষণায় দেখা যায়, মূলত যেসব মায়েরা বাচ্চাদেরকে নিজের দুধ খাওয়ান তাদের দুইটি বিশেষ কাজের জন্য বাচ্চাদের এই উন্নতি হয়। এসব মায়েরা বাচ্চাদের অনুভুতি বুঝতে পারেন অনেক বেশি সহজে এবং তাতে অনুরূপভাবে সাড়া দেন। আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, তারা বাচ্চাদের বয়স মোটামুটি ৯ মাস হবার পর থেকেই তাদেরকে বিভিন্ন শিশুতোষ বই থেকে গল্প, ছড়া ইত্যাদি পড়ে শোনান যার থেকেও বাচ্চাদের বুদ্ধিমত্তায় উন্নতি দেখা যায়।
মায়ের দুধের প্রাকৃতিক উপাদান বাচ্চাদের বেড়ে ওঠায় সাহায্য করে এটা সত্যি, কিন্তু বাচ্চাদের বুদ্ধিমত্তার উন্নতি ঘটানোর ক্ষেত্রে তার চাইতেও বেশি ভুমিকা রাখে মায়ের প্রচেষ্টা। এতে বাচ্চাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ে এবং তারা নিজেদের উন্নতি করার চেষ্টা করতে থাকে।
এ গবেষণার জন্য ৭,৫০০ জন মা ও তাদের নবজাতক থেকে শুরু করে পাঁচ বছর বয়সি বাচ্চাদের পর্যবেক্ষণ করা হয়। বাড়ির পরিবেশ, বাবা-মা কতোটা সময় তাদেরকে বই পড়ে শোনান, মায়ের সাথে বাচ্চার অনুভুতির সংযোগ কতখানি এসব ব্যাপারে তথ্য নেওয়া হয়। এর পর বাচ্চা কতখানি বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন তা একটি ছোট পরীক্ষা করে দেখা হয়।
গবেষণায় আরও দেখা যায়, যেসব বাচ্চাদের মা অথবা বাবা তাদের প্রতি যথেষ্ট মনোযোগ দিতে পারেন না, তাদের বাচ্চাদের বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নতি কম হবার আশংকা থেকে যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, পিতৃহীন বাচ্চাদের ক্ষেত্রে যদি মা হয়ে থাকেন কর্মজীবী, তবে তার প্রতি যথেষ্ট মনোযোগ দেবার কেউ থাকে না। যেসব বাচ্চার বাবা-মায়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা কম তারাও অনেক সময়ে বাচ্চার উন্নতির জন্য কি কি করা দরকার তার ব্যাপারে যথেষ্ট অবগত থাকেন না। শুধু মা-ই নয়, একি পরিমাণ মনোযোগ এবং ভালবাসা নিয়ে পরিবার এমনকি পরিবারের বাইরের কারও পক্ষেও বাচ্চার বুদ্ধিমত্তায় উন্নতি আনা সম্ভব।