একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর সন্তানকে যৌনস্বাস্থ্য বিষয়ক শিক্ষা দেওয়া উচিত। আপাতদৃষ্টিতে বিষয়টি অস্বস্তিকর মনে হলেও আপনার সন্তানের জন্যই তা মঙ্গলজনক। কারণ যখন ‘যৌন’ শব্দটির সাথে ‘স্বাস্থ্য’ জড়িয়ে থাকে, তখন তা পুরো জীবন, এমনকি বংশবৃদ্ধির সক্ষমতার সঙ্গেও সম্পর্কিত। শিক্ষা দেওয়ার সঠিক সময় যেকোনো অভিভাবকের জন্যই অস্বস্তিকর তার সন্তানের সঙ্গে যৌনস্বাস্থ্য বিষয়ক কথাবার্তা বলা। কিন্তু এটা সন্তানের মঙ্গলের জন্যই করা জরুরি। আপনি এবং আপনার সন্তান যাতে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি না হন, সেজন্য কথা বলার জন্য বেছে নিতে হবে সঠিক সময়। সন্তানকে এসব বিষয়ে তখনই বলতে হবে যখন তার বোঝার এবং অনুধাবন করার মতো বয়স হবে। বয়ঃসন্ধিকালই এর জন্য সঠিক সময়। যখন সন্তানের শারীরিক পরিবর্তনগুলো শুরু হবে, তখনই বলা উচিত। সাধারণত এ বিষয়ে মেয়ে সন্তানকে মায়েরা এবং ছেলে সন্তানকে বাবারা বুঝিয়ে থাকেন। তবে এটা জরুরি নয়। যদি বাবার সঙ্গে মেয়ের সম্পর্ক বেশি সহজ থাকে, তাহলে মেয়েকে বাবাও বলতে পারেন। একই কথা খাটবে মা এবং ছেলের ক্ষেত্রেও। কেন দেবেন সন্তানকে কেন যৌনস্বাস্থ্য শিক্ষা দেওয়া উচিত, তার পেছনে রয়েছে বেশ কয়েকটি কারণ। আগেও বলেছি, যৌনস্বাস্থ্য বিষয়টি মানুষের সুস্থ জীবনযাপনের সাথে জড়িত। এ বিষয়ে জ্ঞান থাকলে সম্ভাব্য নানা রকম সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। জেনে নিন এমনই কিছু কারণ, যা আপনার সন্তানের সারাজীবনের ওপর প্রভাব ফেলবে। বয়ঃসন্ধিকালের সমস্যা বয়ঃসন্ধিকালে কিশোর-কিশোরীদের নানা রকম শারীরিক পরিবর্তন হয়। বিশেষ করে যৌন এলাকাগুলোতে। মেয়েদের শুরু হয় ঋতুস্রাব, ছেলেদেরও পুরুষ হয়ে ওঠার নানান লক্ষণ দেখা দেয়। এর ফলে তাদের মন-মানসিকতাতেও নানা ধরনের পরিবর্তন আসে। অনেকেই তাদের এই শারীরিক পরবর্তনের কারণে বিব্রতবোধ করে। যৌনস্বাস্থ্য সম্পর্কে জ্ঞান থাকলে তারা এই সমস্যাগুলো সহজেই মোকাবেলা করতে পারবে। মেনে নিতে পারবে এই শারীরিক পরিবর্তনগুলো। স্বাস্থ্য রক্ষা সুস্বাস্থ্য রক্ষায় শারীরিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অপরিহার্য। আর সন্তানকে যৌনস্বাস্থ্য সম্পর্কে শিক্ষা দিলে তার পক্ষে নিজের সঠিক পরিচর্যা করাটা সহজ হবে। এটা শুধু কৈশোরে নয়, বরং সারাজীবনের জন্যই সুফল বয়ে আনবে। কারণ এর সাথে সম্পর্কযুক্ত রয়েছে সন্তান উত্‍পাদন ক্ষমতা তথা বংশবৃদ্ধির ব্যাপারটি। স্বাস্থ্য রক্ষার সাথে যৌনস্বাস্থ্য রক্ষার বিষয়টিও জড়িয়ে আছে ওতপ্রোতভাবে। শারীরিক ও মানসিক বিকাশ যৌনস্বাস্থ্য শিক্ষা শারীরিক ও মানসিক বিকাশেও সহায়তা করে। জীবনে যৌনস্বাস্থ্য ঠিক রাখা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা আপনার সন্তান অনুধাবন করতে পারবে এবং সঠিকভাবে জীবনযাপন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। এছাড়া নিজের শরীর সম্পর্কে সচেতন হলে মানসিক বিকাশও যথাযথভাবে হয়। আপনার সন্তান নিজের দায়-দায়িত্ব নেওয়া শিখবে এখান থেকেই। কারণ তার যৌনস্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যাপারটি একান্তই তার নিজের দায়িত্ব। অনিয়মিত জীবনযাপন যৌনস্বাস্থ্য শিক্ষার আরেকটি সুদূরপ্রসারী সুফল হলো অনিয়মিত জীবনযাপন সম্পর্কে সতর্কতা। বিভিন্ন বাজে অভ্যাস, ধূমপান, ভুল খাদ্যাভাস যে যৌনস্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে এবং তা কতটা ক্ষতিকর হতে পারে, তা আপনার সন্তান যৌনস্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হলে তবেই না বুঝতে পারবে। তাই বিব্রত বা অস্বস্তিবোধ না করে সন্তানকে সঠিকভাবে শিক্ষা দিন। যৌনরোগ সম্পর্কে সচেতনতা আপনার সন্তান যদি কৈশোরেই যৌনস্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিক শিক্ষাটি পায়, তাহলে ভবিষ্যতে সে বিভিন্ন যৌনরোগ সম্পর্কেও সচেতন হবে। বিশেষ করে যেসব যৌনরোগ অপরিচ্ছন্নতার কারণে হয় সেসব সম্পর্কে আপনি নিজেও তাকে বলতে পারেন। আর যেসব রোগ যৌন সংসর্গের কারণে হয়, বড় হলে সে নিজে থেকেই এসব ব্যাপারে সতর্ক হবে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ