Call

মাটিতে প্রয়োজনী পপুষ্টির অভাবে এরকম হহতে পারে।প্রথমত আপনার উচিত যে ঐ বাগানের মাটি পরীক্ষা করা।এতে সহজেই ধরা পড়বে যে আপনার বাগানের মাটিতে কোন পুষ্টির ঘাটতি রয়েছে? এবং তা যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে হবে।প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত সার বা কীটনাশক ব্যাবহার করবেন না।সব পরিমান মত দিবেন।প্রয়োজনে অভিজ্ঞ কোনো ব্যাক্তির সাহায্য নিন।সবসময় গাছ আগাছা মুক্ত এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সেচের ব্যাবস্থা করবেন। প্রয়োজনে কৃষি কর্মকর্তার সাহায্য নিন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

১.প্রথমত সঠিক। চারা(উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন) নির্ণয় করতে হবে। ২.ভালো চারা হতেই ভালো ফসল পাওয়া যায়। ৩.নির্দিষ্ট দুরত্ব বজায় রেখে চারা রোপন করেছেন কি না দেখুন,বেশি হলে কিছু গাছ উপড়ে ফেলে দিন। ৪.প্রয়োজনীয় সার কীটনাশক সঠিক মাত্রায় ব্যবহার করুন। ৫.কৃষকদের মতে গুণগত মানসম্পন্ন ভালো ফলন পেতে হলে লেবু চাষের জমিতে যতটুকু সম্ভব জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। মাটি পরীক্ষা করে মাটির ধরণ অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে হবে। তবে জৈব সার ব্যবহার করলে মাটির গুণাগুণ ও পরিবেশ উভয়ই ভালো থাকবে। বাড়িতে গবাদি পশু থাকলে সেখান থেকে গোবর সংগ্রহ করা যাবে। নিজের গবাদি পশু না থাকলে পাড়া-প্রতিবেশি যারা গবাদি পশু পালন করে তাদের কাছ থেকে গোবর সংগ্রহ করা যেতে পারে। এছাড়া ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে আবর্জনা পচা সার ব্যবহার করা যেতে পারে। বাড়ির আশেপাশে গর্ত করে সেখানে আবর্জনা, ঝরা পাতা ইত্যাদির স্তুপ করে রেখে পঁচা সার তৈরি করা সম্ভব।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

পুষ্টি মূল্য: ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল। ভেষজ গুণ: পাতা, ফুল ও ফলের খোসা গরম পানিতে সিদ্ধ করে পান করলে মৃগী, হাতপা কাঁপা ও প্রচন্ড কাশি রোগীর প্রশানি- আনয়ন করে। উপযুক্ত জমি ও মাটি: দোআঁশ ও পলি মাটিতে বাতাবি লেবু চাষের জন্য উত্তম। মধ্যম অম্লীয় মাটিতে এ ফল ভাল জন্মে। জাত পরিচিতি: বারি বাতাবি লেবু-১: এ জাতের পাতা বড় আকৃতির গাঢ় সবুজ। নিয়মিত ফল ধরে। ফলের আকৃতি প্রায় গোলাকার। ফল সুস্বাদু ও তিতাবিহীন, বেশ রসালো, শাঁসের রং লালচে, বেশ নরম, মিষ্টতা মাঝারি। পাকা ফলের রং হলদে। বারি বাতাবি লেবু-২: পাতা গাঢ় সবুজ, ডানাযুক্ত বৃত্তাকার। গাছে নিয়মিত ফল ধরে। ফল সুস্বাদু, বেশ রসালো, শাঁসের রঙ লালচে এবং বেশ মিষ্টি। শাঁস নরম এবং পাকা ফলের রঙ হলদে। বারি বাতাবি লেবু-৩: গাছের আকার মাঝারি, পাতা গাঢ় সবুজ ও হৃদপিন্ডাকার ডানাযুক্ত, প্রতি বছর নিয়মিত ফল ধরে। পাকা ফলের খোসা হলদে বর্ণের। ফলের শাঁস অত্যন্ত রসালো,নরম, মিষ্টি, তিতাবিহীন, গোলাপী বর্ণের এবং খেতে সুস্বাদু। বারি বাতাবি লেবু-৪: গাছের আকৃতি ছাতার মতো। ফলের আকৃতি গোলাকার, মাঝারি ধরণের। ফল সুস্বাদু, বেশ রসালো, শাঁসের রঙ সাদা ও বেশ মিষ্টি। এটি একটি নাবী জাত। চারা তৈরি: গুটি কলমের মাধ্যমে চারা তৈরি করা হয়। চারা রোপণ: মধ্য বৈশাখ থেকে মধ্য আশ্বিন মাসে চারা রোপণ করতে হয়। লাইন থেকে লাইন এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৫ মিটার রাখতে হয়। সার ব্যবস্থাপনা: প্রতি গর্তে ইউরিয়া সার ২২৫ গ্রাম, টিএসপি সার ৯০ গ্রাম, এমওপি সার ১৬০ গ্রাম এবং গোবর ১১ কেজি প্রয়োগ করতে হয়। তবে বয়স্ক গাছে সারের পরিমান বাড়াতে হয়। এ সার মধ্য মাঘ থেকে মদ্য পাল্গুণ, মধ্য বৈশাক থেকে মধ্য জৈষ্ঠ্য এবং মধ্য আশ্বিন থেকে মধ্য কার্তিক মাসে প্রয়োগ করতে হয়। সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা: শুকনা মৌসুমে ২-৩ বার সেচ দিতে হয়। বর্ষার সময় গাছের গোড়ায় যাতে পানি জমে না থাকে সেজন্য পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখা দরকার। প্রতি বছর ফল আহরণের পর অবাঞ্ছিত ডারপালা ছাঁটাই করতে হয়। ফসল তোলা: ফল কিছুটা হলদে বর্ণ ধারণ করলে ভাদ্রের প্রথম থেকে মধ্য আশ্বিন পর্যন্ত ফল সংগ্রহ করা যায়। এক নজরে লেবু চাষ পদ্ধতি লেবু (Lemon) পুষ্টি মূল্য: ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। ভেষজ গুণ: লেবুর রস মধু বা আদা বা লবণ এর সাথে মিশিয়ে পান করলে ঠাণ্ডা ও সর্দি কাশি উপশম হয়। উপযুক্ত জমি ও মাটি: হালকা দোআঁশ ও নিকাশ সম্পন্ন মধ্যম অম্লীয় মাটিতে লেবু ভাল হয়। জাত পরিচিতি: বারি লেবু-১ (এলাচী লেবু): উচ্চ ফলনশীল লেবু বারি লেবু-১। ঘ্রাণ এর প্রধান বৈশিষ্ট্য। গাছ আকারে বড়। পাতা বড় ও প্রশস্ত। পরিচর্যা পেলে গাছ বছরে দু’বার ফল দেয়। জুলাই-আগস্ট মাসে ফল খাওয়ার উপযুক্ত হয়। পূর্ণবয়স্ক গাছ ১৫০ টি পর্যন্ত ফল দিয়ে থাকে। আকারে বড়, ডিম্বাকৃতি এবং প্রতিটি ফলের গড় ওজন ১৯৫ থেকে ২৬০ গ্রাম। বৃহত্তর সিলেট এবং আরও অনেক এলাকায় এলাচী লেবুর খোসা খাওয়া হয়। বারি লেবু-২: বারি লেবু-২ উচ্চ ফলনশীল জাত। মধ্যম আকৃতির ও ঝোপের মতো গাছ। সারা বছর প্রচুর ফল দেয়। ফল গোলাকার, মধ্যম ওজনের। ত্বক মসৃণ এবং বীজের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। এই লেবু সারা দেশেই চাষাবাদের উপযোগী। বারি লেবু-৩: একটি দেরীতে হওয়া (নাবি) জাত বারি লেবু-৩। গাছ ও পাতা ছোট আকৃতির। ফল গোলাকার ও ছোট। ত্বক খুবই মসৃণ, খোসা পাতলা এবং বীজের সংখ্যাও কম ১৮-২২টি। রসের পরিমাণ খুব বেশি (৩৭.৭%)। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে ফল খাওয়ার উপযুক্ত হয়। সার ও পানির ব্যবস্থা করলে বছরে দু’বার ফল পাওয়া যায়। সারা দেশেই চাষাবাদের জন্য উপযোগী। চারা রোপণ: গুটি কলম ও কাটিং তৈরি করে মধ্য বৈশাখ থেকে মধ্য আশ্বিন মাসে ২.৫ মিটার দূরে দূরে রোপণ করা হয়। মধ্য বৈশাখ থেকে মধ্য আশ্বিন মাস চারা রোপণের জন্য উপযুক্ত। সার ব্যবস্থাপনা: প্রতি গাছে টিএসপি সার ৪০০ গ্রাম, এমওপি সার ৪০০ গ্রাম, ইউরিয়া সার ৫০০ গ্রাম ও গোবর ১৫ কেজি প্রয়োগ করতে হয়। সার তিনভাগে যার প্রথম কিস্তি মধ্য ভাদ্র থেকে মধ্য কার্তিক মাসে, ২য় কিস্তি মধ্য মাঘ থেকে মধ্য ফাল্গুন মাসে এবং ৩য় কিস্তি মধ্য জৈষ্ঠ্য থেকে মধ্য আষাঢ় মাসে প্রয়োগ করতে হয়। অঙ্গ ছাঁটাই: প্রতি বছর মধ্য ভাদ্র থেকে মধ্য কার্তিক মাসে গাছের অবাঞ্ছিত শাখা ছাঁটাই করতে হয়। সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা: খরা মৌসুমে ২-৩ বার সেচ দেয়া দরকার। পানি যাতে না জমে থাকে সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। পোকা মাকড় ব্যবস্থাপনা পোকার নাম: লেবুর প্রজাপতি পোকা ক্ষতির নমুনা: এ পোকার কীড়া পাতার কিনারা থেকে খেতে শুরু করে এবং সম্পূর্ণ পাতা খেয়ে ফেলে। ব্যবস্থাপনা: ডিম ও কীড়াযুক্ত পাতা সংগ্রহ করে মাটির নীচে পুঁতে বা পুড়িয়ে ফেলতে হয়। আক্রমণ বেশি হলে ডাইমেক্রন ১০০ ইসি ১ মি.লি অথবা সেভিন ৮৫ এসপি ১ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন পর পর সেপ্র করতে হয়। পোকার নাম: লেবুর লাল ক্ষুদ্র মাকড় ক্ষতির নমুনা: মাইট লেবু গাছের পাতা ও ফলের সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে। ফলে পাতা হলুদ হয়ে যায় এবং ফলের গায়ে সাদা আবরণ দেখা যায়। পাতার নীচের দিকে লক্ষ্য করলে ক্ষুদ্র মাইট চলাচল করতে দেখা যায়। ব্যবস্থাপনা: মাকড় সহ আক্রান্ত পাতা তুলে ধ্বংস করা। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে প্রতি লিটার পানিতে ২ মি.লি ইথিয়ন ৪৬.৫ তরল বা নিউরণ ৫০০ তরল মিশিয়ে লেবুর পাতা ভিজিয়ে সেপ্র করা। ফসল তোলা : ফল পূর্নতা প্রাপ্তি হলে সবুজ থাকা অবস্থায় সংগ্রহ করতে হবে। লেবুর চাষ পদ্ধতি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে লেবুর চাহিদা অনেক। লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। তাছাড়া বাজারে লেবুর সব সময়েই চাহিদা রয়েছে এবং এর ভালো দামও পাওয়া যায়। লেবু সাধারণত দুই ধরনের গোল লেবু এবং কাগজি লেবু। এর মধ্যে বিচিবিহীন কাগজি লেবুর জনপ্রিয়তা এবং চাহিদা তুলনামূলকভাবে বেশি। চাষিরা ব্যবসায়িক ভিত্তিতে লেবুর চাষ করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে পারেন। বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে গোল এবং কাগজি লেবু ছাড়া আরও বেশ কয়েক জাতি লেবু উৎপন্ন হয় এবং এসব লেবু বিদেশে বিশেষ করে লন্ডন ও মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন শহরে প্রচুর পরিমাণে রপ্তানি হয়ে থাকে। তবে লন্ডনে ‘জাড়া’ লেবুর কদর সবচেয়ে বেশি। এতে দেশ প্রচুর পরিমাণে  বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে থাকে। এখানে লেবু চাষ পদ্ধতি সম্বন্ধে কিছু আলোচনা করা হল- মাটি নির্বাচন : লেবু চাষের জন্য উঁচু দো-আঁশ এবং উর্বর মাটির প্রয়োজন। পানি জমে থাকে না এমন মাটি লেবু চাষের জন্য উপযোগী। তবে গোবর, পচন সার ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারলে যে কোন মাটিতে লেবুর চাষ করা যায়। অবশ্য মাটি কিছু ঢিলা হওয়া প্রয়োজন যাতে মাটিতে ভালোভাবে বাতাস চলাচল করতে পারে। সামান্য উঁচু টিলা রকমের ভূমি লেবু চাষের জন্য উপযুক্ত স্থান। জাত নির্বাচন : বিচিহীন কাগজি লেবুর জাতটাই ভালো এবং জনপ্রিয়। এ জাত থেকে বছরের প্রায় সবসময়ই সুন্দর বিচিবিহীন ফল পাওয়া যায়। এ জাতীয় লেবুর কাটিং যে কোন নার্সারি বা প্রতিষ্ঠান থেকে সংগ্রহ করা সম্ভব। সরকারের বিভিন্ন কৃষি খামারও এ জাতীয় লেবুর কাটিং বা কলম পাওয়া যায়। নির্দিষ্ট পরিমাণের কাটিং সংগ্রহ করতে না পারলে ২/৩টি কাটিং সংগ্রহ করে মাতৃগাছ হিসেবে রোপণ করতে পারলেই হয়। পরবর্তী পর্যায়ে এ মাতৃগাছ থেকে কাটিং তৈরি করে অন্যত্র রোপণ করা যায়। এ জাতীয় লেবুর কাটিং মাটির টবে রৌদ্র পড়ে, বাতাস চলাচল করে এমন স্থানে রেখেও চাষ করা যায়। আজকাল দেশের বিভিন্ন শহরে বাড়ির ছাদে এ জাতীয় লেবুর প্রচুর চাষ করতে দেখা যায়। এতে পরিবারের চাহিদা মিটিয়েও পাড়া প্রতিবেশী এবং আত্মীয়-স্বজনদের বিলানে যায়। রোপণ পদ্ধতি : কাগজি লেবুর ডাল কাটিং সংগ্রহ করে নির্বাচিত জমিকে ভালো করে চাষ করে মই দিয়ে সমান করে নিতে হয়। তারপর রোপণের জন্য গর্ত করতে হয়। এক গর্ত করতে হবে অন্য গর্ত থেকে ৩ মিটিার দূরে। প্রতিটি গর্তের আকার হবে ০.৫ মিটার ঢ ০.৫ মিটার ঢ ০.৫ মিটার। গর্ত প্রস্তুত করার পর গর্তে আবার দো-আঁশ মাটি পচন সার ইত্যাদির মিশ্রণ (১:১) দিয়ে ভর্তি করে দিতে পারলে ভালো হয়। এরপর ১৫/২০ দিন পর কাটিং রোপণ করতে হয়। কাগজি লেবুর ফলন রোপণের উপযুক্ত সময় হচ্ছে মে-জুন মাস। রোপণের জন্য ৬ মাস বয়সের কাটিং নির্বাচন করতে হয়। কাটিংগুলো রোগ- পোকা থেকে মুক্ত হওয়া উচিত। সার প্রয়োগ : লেবু গাছের বয়স অনুযায়ী সার প্রয়োগের পরিমাণ আলাদা হয়। নিম্নের ছকে এর মান উল্লেখ করা হল- উল্লেখ্য লেবু গাছের গোড়ায় বছরে ২ বার সার প্রয়োগ করতে হয়। প্রথমে ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাস আর পরবর্তী পর্যায়ে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে। সার প্রয়োগ করার সময় গাছের গোড়া থেকে ১৫-৪৫ সেন্টিমিটার দূরত্ব পর্যন্ত জমি বাদ দিয়ে বাকি গাছের সব ডাল পাতা আবৃত করে রাখা জমিতে পাতলা কোদাল দিয়ে মাটি সরিয়ে সার প্রয়োগ করতে হয়। সার প্রয়োগ করার পর আবার পাতলা করে কোদাল দিয়ে সার মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। সার প্রয়োগের সময় মাটিতে রস থাকা দরকার। সার প্রয়োগের পর তার ওপর আবার হালকা করে মাটি দিয়ে দিলে ভালো হয়। গাছে নতুন করে পাতা আসার সময় অর্থাৎ বসন্ত ঋতুতে মাইক্রনিউট্রিয়েন্ট-২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে স্প্রে করতে হয়। পরিচর্যা : লেবু গাছের গোড়া সব সময় আগাছা মুক্ত রাখতে হয়। অন্যথায় রোগ পোকার আক্রমণ বেশি হয়। বর্ষার সময় গাছের গোড়ায় পানি যাতে জমে না থাকে সেদিকে বেশি করে লক্ষ রাখতে হয়। এজন্য প্রয়োজনে নালা করে পানি সরে যাওয়ার পথ করে দিতে হবে। সেপ্টেম্বর-অক্টেম্বর মাসে লেবু গাছের শুকনো এবং রোগাক্রান্ত ডালগুলো কেটে ফেলতে হয়। গাছের বয়স দুই বছর হওয়ার পর লেবু গাছের ৫০ সেন্টিমিটার ওপরে ২/৩টি ডাল রেখে বাকি সবগুলো ডাল কেটে দেয়া দরকার। এ ডালগুলো এমনভাবে রাখতে হবে যাতে নতুন কুঁড়ি দিয়ে চারদিকে বিস্তার লাভ করতে পারে। নিয়মিত পরিচর্যা সার ও পানি প্রয়োগ করার ফলে লেবু গাছ থেকে সারা বছরই ফল পাওয়া যায়। চাষি ভাইয়েরা পরিকল্পিত উপায়ে লেবু চাষ করে আর্থিক উপার্জন বৃদ্ধি করতে পারবেন। বেকারত্ব দূরীকরণে লেবু চাষ সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে, সন্দেহ নেই। লেবুজাতীয় ফলের ঝরে পড়া সমস্যা ও প্রতিকার অপরিপক্ব অবস্থায় লেবুজাতীয় ফল ঝরে পড়া এক জটিল সমস্যা। এক সমীক্ষা মতে, ফল তোলার ৩-৪ মাস আগ থেকে লাল মাল্টার ৫৭.২ শতাংশ এবং মোসম্বিতে ৫৪.৯ শতাংশ ফল ঝরে পড়ে। এছাড়াও কমলালেবুর অনেক ফল আমাদের এ অঞ্চলে ঝরে পড়তে দেখা যায়। লেবুজাতীয় গাছের ফল অনেক কারণে ঝরে পড়তে পারে। এর মধ্যে হরমোনজনিত, খাদ্যজনিত, রোগজনিত এবং পোকাজনিত কারণই প্রধান। গাছের বৃদ্ধি, ফুল-ফল দেয়া, ফলের বৃদ্ধি এবং পরিপক্ব অবস্থা পাওয়া এসব নানা ধরনের হরমোনের ওপর নির্ভর করে। গাছের বৃদ্ধির কোন অবস্থায় এ হরমোনের তারতম্য ঘটলে গাছের বৃদ্ধি, ফুল দেয়া এসব কার্য ব্যাহত হয় এবং ফল ঝরে পড়ে। আমাদের বৃদ্ধি ও উৎকর্ষের জন্য যেমন খাদ্যের প্রয়োজন তেমনি গাছের বৃদ্ধি এবং ফল-ফুল দেয়ার জন্য সুসম হারে খাদ্যের প্রয়োজন। গাছের প্রধান খাদ্য যেমন- নাইট্রোজেন জাতীয়, ফসফেট জাতীয় ও পটাশ জাতীয় খাদ্য ছাড়াও গাছের নানা ধরনের অনু খাদ্যের প্রয়োজন। এ অনু খাদ্য খুব কম পরিমাণে দরকার যদিও সময়মতো এসব প্রয়োগ না করার ফলে বা গাছ অনু খাদ্য না পাওয়ার জন্য অপরিপক্ব অবস্থায় অনেক ফল ঝরে পড়ে। নানা ধরনের রোগের আক্রণের ফলে লেবুজাতীয় গাছের ফল অপরিপক্ব অবস্থায় ঝরে যায়। লেবুজাতীয় গাছে নানা ধরনের রোগ যেমন ক্যান্সার, গামোসিস, এ্যানথ্রাকনোজ, গ্রিনিং এবং শ্লো ডিক্লাইন বা ধীরে ধীরে গাছ মরে যাওয়া রোগ হয়। গাছে এসব রোগ হলে ফুল-ফল কম ধরে এবং ফুল-ফল শুকিয়ে ঝরে পড়ে। লেবুজাতীয় গাছের অপরিপক্ব অবস্থায় ফল ঝরে যাওয়ার অন্যতম কারণ হল পোকার আক্রমণ। নানাবিধ পোকার মধ্যে ডাল ও কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা, সাইলা, মিলিবাগ, লিফমাইনার, ফল ছিদ্রকারী পোকা এবং ফল শোষক পোকার আক্রমণের ফলে ফল ঝরে পড়ে। লেবুর ডাল ও কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা ডাল এবং কাণ্ডের ভেতরে প্রবেশ করে ভেতরের অংশ কুড়ে কুড়ে খায়। এদের আক্রমণের ফলে শাখা বা গাছ ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায় এবং যে ডালে এর আক্রমণ হয় সে ডালটিতে হওয়া ফুল এবং ফল ঝরে পড়ে। লেবুর পাতা ছিদ্রকারী পোকা বা লিফমাইনার পোকার শূঁককীট পাতায় ঢুকে ওপরের ও নিচের ত্বকের মধ্যে থাকা সবুজ অংশ খেয়ে নেয়। পাতার ওপরের ত্বকে সাদা রূপালী আঁকাবাঁকা রেখা দেখা যায়। আক্রান্ত পাতা কুঁকড়ে যায় এবং এ ধরনের গাছে হওয়া ফল ঝরে পড়ে। সাইলা পোকা লেবুজাতীয় গাছের কঁচি ডাল এবং পাতাতে আক্রমণ করে এবং রস শোষে খায়। রস শোষার সময় এ পোকা গাছে এক ধরনের বিষাক্ত পদার্থ ঢুকিয়ে দেয়। এর আক্রমণের ফলে ডালগুলো শুকিয়ে যায়। সে ডালগুলোর ফুল এবং ফল ঝরে পড়ে। মিলিবাগ পোকার প্রাপ্তবয়স্ক মাতৃপোকা মাটিতে ডিম পাড়ে এবং সে ডিম থেকে বের হওয়া শূঁককীট ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত গাছে উঠে। গাছে উঠে পোকাগুলো কচি ডালের রস চোষে খায় এবং ফল হওয়ার সময় সেগুলো বা ফলধারক ডালটির রস খায়। ফলে ফল ঝরে পড়ে। এ পোকা পাতার ওপর এক ধরনের মিষ্টিরস নিঃসরণ করে এবং এ রসের ওপর এক প্রকার ছত্রাক জন্মে থাকে। তাই পাতার ওপরে এক কালো আস্তরন পড়ে এবং গাছের খাদ্য প্রস্তুত করার ক্ষমতা কমে যায়। ফলে ফল ঝরে পড়ে এবং যেগুলো ফল গাছে থাকে তা পুষ্ট হয় না। ফল চোষক পোকা লেবুজাতীয় ফলের রস চুষে খায়। রস চোষার সময় তার মুখ থেকে নির্গত পদার্থ ফলের ভেতরে প্রবেশ করে। এর ফলে ২-৩ দিনের মধ্যে ফল ঝরে পড়ে। রস চোষা অংশে বাদামি রঙের দাগ দেখা যায়। প্রতিরোধ ব্যবস্থা লেবুজাতীয় গাছের অপরিপক্ব অবস্থায় ফল ঝরে পড়া বন্ধ করার জন্য নানা ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে। ১. গাছে সুষম হারে সার প্রয়োগ করতে হবে। ২. গাছে অনু খাদ্যের অভাবের লক্ষণ দেখা দিলে অনু খাদ্যের মিশ্রণ প্রয়োগ করা দরকার। বাজারে পাওয়া তৈরি অনু খাদ্য যেমন মাল্টিপ্লেকস, এগ্রোমীণ, ট্রেসেল-২, প্লাই এইড, এগ্রোমর বা প্লান্টফিড প্রভৃতির যে কোন একটি পরিমাণমতো প্রয়োগ করতে হবে। ৩. হরমোন জাতীয় কারণে ফল ঝরে পড়লে গাছে হরমোন স্প্রে করা দরকার। এর জন্য ২, ৪-ডি নামক হরমোন ১০ পিপিএম গাছে ২ বার স্প্রে করতে হবে। প্রথমবার আগস্ট মাসের এবং পরের বার অক্টোবর মাসে স্প্রে করা দরকার। এ ওষুধ বাজারে পাওয়া না গেলে ১০-২০ পিপিএম শক্তি যুক্ত প্লেনোফিকস হরমোন ফুলে আসার সময় এবং একবার একমাস পরে স্প্রে করতে হবে। ৪. বিভিন্ন ধরনের রোগের জন্য সময়মতো প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেয়া দরকার। গাছের গোড়ায় যাতে পানি জমে না তা দেখতে হবে। গাছের গোড়ায় আঠা নিঃসরণ হতে দেখলে অর্থাৎ গামোসিস রোগ হলে সে অংশ পরিষ্কার করে তাতে বর্ডোমলম লাগাতে হবে। ক্যাঙ্কার এবং এ্যানথ্রাকনোজ রোগ হলে আক্রান্ত কচি ডালপালা, পাতা ছেটে ফেলে দূরে নিয়ে ধ্বংস করতে হবে। পরে গাছে তাম্রঘটিত ওষুধ যেমন- ব্লাইটকস/ফাইটোলান (৪ গ্রাম/ লিটার পানি) অথবা ইন্দোফিল এম-৪৫ (২.৫ গ্রাম/লিটার পানিতে) স্প্রে করতে হবে। ৫. গাছে ডাল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ হলে আক্রান্ত ডালগুলো কেটে ধ্বংস করতে হবে। কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকার প্রাপ্তবয়স্ক পোকা এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বের হয়ে গাছে বসে। সে সময় এগুলো ধরে মেরে ফেলা উচিত। কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকার গর্তে পেট্রোল বা কেরোসিন ডুবানো কার্পাস তুলো ঢুকিয়ে তা কাদামাটি দিয়ে ঢেকে দিলে পোকা ভেতরে মরে যাবে। ফল খাওয়া পোকা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ফল মার্বেলের মতো সাইজ হওয়ার সময় এন্ডাসালফান ওষুধ ০.০৭ শতাংশ স্প্রে করে প্রথম স্প্রে করার ৭ দিন পরপর ফলের বৃদ্ধির সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত স্প্রে করতে হবে। ফলের মাছি এবং ফল চোষা পোকা নিয়ন্ত্রণের জন্য ৫ লিটার পানিতে মিশিয়ে সেখানে কিছু কমলা লেবুর রস মিশিয়ে গাছে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। পোকা এ গুড় মিশ্রিত রস খেয়ে মরে যাবে। পোকা আক্রান্ত ফলগুলো সংগ্রহ করে গর্তে পুঁতে রাখলে পরবর্তী ফসলে পোকার আক্রমণ কম হবে। এ ব্যবস্থাগুলো নিয়ে লেবুর ফল ঝরে পড়ে যাওয়া সমস্যা অনেকাংশে বন্ধ করা যাবে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ