আমার বয়স ২৭ বছর। আমি দীর্ঘ ১০ বছর যাবত পুরুষ হয়েও বড় স্তন সমস্যায় ভুগছি। আমার স্তন দিনের পর দিন বড় হতে চলেছে। লজ্জায় কাউকে বলতে ও পারছিনা আবার সহ্য ও করতে পারছিনা। শার্ট-টি শার্ট কিছুই পরতে পারছিনা। জীবনটা বিষাক্ত হয়ে উঠেছে! বাইরে বের হতে লজ্জা হয়, ভয় হয়। অনেকে ছোটবেলায় এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেয়েছে, কিন্তু আমি বোকা হওয়ায় আজো এই মহা সমস্যা নিয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছি। এখন আমি যথা শীঘ্রই সম্ভব এই কঠিন সমস্যা থেকে মুক্তি চাই। কেউ সঠিক পথ জানা থাকলে আমাকে হেল্প করেন প্লিজ।
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
JAShakil

Call

আপনার উচিৎ ডাক্তারের সাথে দেখা করা । কারণ এটা খুবই জটিল একটি সমস্যা । আর স্তন ছোট করতে এই নিয়ম মেনে চলুন ১.অস্বাস্থ্যকর খাবার বর্জনঃঅস্বাস্থ্যকর খাবার, বিশেষ করে ফাস্টফুড খাবার বর্জন করতে হবে। এছাড়া চিনিজাতীয় খাবারও বর্জন করতে হবে। বিভিন্ন সফট ড্রিংক্স, জুস, আইসক্রিম, চিপস, তেলে ভাজা খাবার একদম খাবেন না। ২ । পুষ্টিঃস্বাস্থ্যকর খাবার, বিশেষ করে শাক-সবজী বেশী করে খাবেন। দুই ঘন্টা পর পর লো ক্যালোরীর খাবার খান। এতে আপনার শরীরের অতিরিক্ত ক্যালোরী ঝরে যাবে এবং আপনার শরীরের ওজনও কমে যাবে। এক্ষেত্রে “Kellogg’s Special K” ট্রাই করে দেখতে পারেন। তবে সফট ড্রিংক্স এবং জুস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন, কারণ এতে থাকা অতিরিক্ত চিনি আপনার স্তন কমানোর বদলে বৃদ্বি করতে সাহায্য করবে। ৩ : ব্যায়ামঃশরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট কমানোর জন্য ব্যায়ামের বিকল্প নেই। নিয়মিত ব্যায়াম করলে এবং নিয়মিত ডায়েট করলে আপনার শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট কমে যাবে। ব্যায়াম করলে আপনার শরীরের পেশীগুলো নতুন করে সুসংগঠিত হবে, ফলে আপনার স্তন ছোট হবে। তবে এধরণের ব্যায়াম পরিমিত করবেন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

পুরুষের অস্বাভাবিক স্তন বৃদ্ধিকে গাইনেকোমাস্টিয়া বলে। কখনো কখনো এটা দুধ নিঃসরণ ঘটাতে পারে। গাইনেকোমাস্টিয়া শব্দটি এসেছে গ্রিক ‘গাইনি’ ও মাস্টোস’ থেকে। গাইনি শব্দের অর্থ মহিলা এবং মাস্টোস শব্দের অর্থ স্তন। এ অবস্থাটি নবজাতক, বয়ঃসন্ধিকালে ও বৃদ্ধ বয়সে শরীরবৃত্তীয় কারণে হতে পারে। বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেদের এ অবস্থা সচরাচর মর্মবেদনার উদ্রেক করে, তবে অনেক ছেলের বয়ঃসন্ধিকালের বড় স্তন শারীরিক স্থূলতার কারণে হয় না, স্তনের বৃদ্ধি দু’বছরের মধ্যে ছোট হয় বা মিলিয়ে যায়।

সাধারণ গাইনেকোমাস্টিয়ার কারণগুলো নিয়ে এখনো সংশয় রয়েছে যদিও সাধারণভাবে সেক্স হরমোনের বৈষম্যকে এর জন্য দায়ী করা হয়। স্তন টিস্যুর বৃদ্ধির কারণেও স্তন বড় হতে পারে। অনেক সময় স্তনে অতিরিক্ত চর্বি জমলে স্তন বড় দেখায়, তবে এটা গাইনেকোমাস্টিয়া নয়। গাইনেকোমাস্টিয়া হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে পুরুষের শক্ত স্তন টিস্যু গঠিত হয়। এ স্তন টিস্যু সাধারণত দেড় ইঞ্চি ছ্টো হয় এবং সরাসরি এটা স্তনবৃন্তের নিচে অবস্থান করে। গানেকামাস্টিয়া একপাশে এবং দু’পাশেই হতে পারে। এ অবস্থা স্তনে ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।

কারণঃ

শরীরবৃত্তীয় গাইনেকোমোস্টিয়া নবজাতক, বয়ঃসন্ধিকালে বা বয়ঃসন্ধিকালের আগে এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে হতে পারে। অনেক গাইনেকোমাস্টিয়ার কারণে অজানা অর্থাৎ এদের নির্দিষ্ট কারণ জানা যায় না। গাইনেকোমাস্টিয়ার কিছু নির্দিষ্ট কারণের মধ্যে রয়েছে হরমোনসহ বিভিন্ন ওষুধ গ্রহণ, সিরাম ইস্ট্রোজেনের বৃদ্ধি, দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ, দীর্ঘস্থায়ী লিভারের রোগ, এইচআইভি এবং অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি রোগ। স্পাইনাল কর্ডে আঘাতের কারণে এবং দীর্ঘদিন অভুক্ত থাকার পর খাওয়ার পরে গাইনেকোমাস্টিয়া হতে পারে। ২৫ শতাংশ ক্ষেত্রে গাইনেকোমাস্টিয়ার কারণ জানা যায়নি।
বয়ঃসন্ধিকালের পরবর্তী পুরুষদের বিভিন্ন ওষুধ ১০-২০ শতাংশ ক্ষেত্রে গাইনেকোমাস্টিয়া ঘটায়। এসব ওষুধের মধ্যে রয়েছে সিমেটিডিন, ওমিপ্রাজল, স্পাইরোনোল্যাকটন, ইমাটিনিব মিসাইলেট, ফিনাস্টেরাইড এবং কিছু নির্দিষ্ট অ্যান্টি সাইকোটিক ওষুধ। কিছু ওষুধ সরাসরি স্তন টিস্যুর ওপর কাজ করে আবার কিছু ওষুধ ডোপামিনের কাজ বন্ধ করার মাধ্যমে পিটুইটারি থেকে প্রোলাকটিনের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। উল্লেখ্য, প্রোলাকটিন হলো স্তন তৈরির হরমোন। শক্তি বৃদ্ধিকারী ফুড সাপ্লিমেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত অ্যান্ড্রোসটেনেডিওন ইস্ট্রোজেনে অতিরিক্ত কার্যকারিতার মাধ্যমে স্তনের বৃদ্ধি ঘটাতে পারে। প্রোস্টেট ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ যেমন অ্যান্টি অ্যানড্রোজেন এবং জিএনআরএইচ অ্যানালগগুলো গাইনেকোমাস্টিয়া ঘটাতে পারে। মারিজুয়ানা গাইনেকোমাস্টিয়ার একটি কারণ, অবশ্য এ নিয়ে মতভেদ আছে।

কিছু নির্দিষ্ট অণ্ডকোষের টিউমার এবং হাইপারথাইরয়েডিজম রোগে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বেড়ে যায়। কিছু অ্যাড্রেনাল টিউমার অ্যান্ড্রোসটেনেডিওনের মাত্রা বাড়ায়। এই অ্যান্ড্রোসটেনেডিওন অ্যারোম্যাটেজ নামক এনজাইম দ্বারা ইস্ট্রোনে রূপান্তরিত হয়। এই ইস্ট্রোন হলো ইস্ট্রোজেনের একটি ধরন। অন্যান্য যেসব টিউমার এইচসিজি নিঃসরণ করে তা ইস্ট্রোজেনের পরিমাণ বাড়াতে পারে। লিভার সিরোসিস অসুখে গাইনেকোমাস্টিয়া হতে পারে। মোটা মানুষের ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বৃদ্ধির প্রবণতা থাকে।

পুরুষ হরমোন টেস্টোস্টেরনের উৎপাদন মাত্রা কমে গেলে গাইনেকামোস্টিয়া হতে পারে। এই টেস্টোস্টেরনের উৎপাদনের মাত্রা কমে যেতে পারে জন্মগত বা অর্জিত অণ্ডকোষের সমস্যার কারণে। হাইপোথ্যালামাস কিংবা পিটুইটারির রোগও টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমাতে পারে। অ্যানাবলিক অ্যান্ড্রোজেনিক স্টেরয়েডের অপব্যবহারও একই প্রভাব ফেলে।

সাধারণত যেসব ওষুধ খেলে গাইনেকামোস্টিয়া হয়, যদিও সেসব ওষুধ বন্ধ করলে গাইনেকোমাস্টিয়া আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারে, তবুও মাঝে মাঝে এ অবস্থা নির্মূল করতে অপারেশনের প্রয়োজন হয়। বয়ঃসন্ধিকালের আগের ছেলেদের কিছু হার্বাল তেল ও লোশন বারবার মাখলে গাইনেকোমাস্টিয়া হতে পারে। ধারণ করা হয় যে, এসব তেল বা লোশন তাদের ইস্ট্রোজেন ও অ্যান্টি অ্যান্ড্রোজেনজনিত ক্রিয়াকলাপ বাড়িয়ে দেয়।

রোগ নির্ণয়ঃ

একজন চিকিৎসক পরীক্ষা করে সাধারণ এ রোগ নির্ণয় করতে পারেন। মাঝে মাঝে রোগ নিশ্চিত করতে এক্স-রে অথবা আল্ট্রাসাউন্ডের প্রয়োজন হয়। যদি কোনো রোগের কারণে গাইনেকোমাস্টিয়া হয় তাহলে তা দেখতে রক্ত পরীক্ষার প্রয়োজন হয়।

রোগের উন্নতিঃ

গাইনেকোমাস্টিয়া সাধারণত শারীরিকভাবে ক্ষতিকর নয়, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটা জটিল অসুখ নির্দেশ করে। স্তনের যেসব বৃদ্ধি সাধারণত হরমোনজনিত উদ্দীপনা থেকে হয়, সেগুলো সচরাচর ব্যথা হয় কিংবা চাপ দিলে ব্যথা করে। এ রোগ রোগীকে সামাজিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে। স্থূলতার কারণে গাইনেকোমাস্টিয়া হলে ওজন কমালে এ অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে, তবে ওজন কমালেই স্তন গ্রন্থির টিস্যু কমবে না। রোগীর আশাও পূর্ণ হবে না। অতিরিক্ত ওজন কমালে বুকের কাছে টিস্যু ঝুলে যেতে পারে।

চিকিৎসাঃ

যেসব কারণে গাইনেকোমাস্টিয়া হয়, সেসব কারণের চিকিৎসা করালে অবস্থার উন্নতি হতে পারে। রোগী কী কী ওষুধ খাচ্ছেন তা অবশ্যই চিকিৎসককে অবহিত করতে হবে। প্রয়োজনে বিকল্প ওষুধ গ্রহণ করতে হবে। কিছু নির্দিষ্ট ইস্ট্রোজেন রিসেপ্টর মডুলেটর ওষুধ যেমন ট্যামক্সিফেন এবং কোমিফেন অথবা অ্যানড্রোজেন বা অ্যারোম্যাটেজ ইনহিবিটর যেমন লেট্রোজল ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে এগুলো গাইনেকোমোস্টিয়ার চিকিৎসায় সার্বজনীন গ্রহণযোগ্য নয়। প্রথম দু-তিন বছর অপেক্ষা করা যেতে পারে। এ সময়ে গাইনেকোমাস্টিয়া মিলিয়ে যেতে পারে। কিন্তু যদি তা মিলিয়ে না যায় এবং স্তন টিস্যু থেকে যায় তাহলে অপারেশনই হলো একমাত্র চিকিৎসা। এসব অপারেশনের মধ্যে রয়েছে লাইপোসাকশন, গ্ল্যান্ড এক্সিশন অর্থাৎ স্তন টিস্যু কেটে ফেলে দেয়া, স্কিন স্কাল্পচার, রিডাকশান ম্যামোপ্লাস্টি ইত্যাদি।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ