পড়াশুনা করার সময় অথবা কোন কাজ করার সময় মনোযোগ (concentration) হারিয়ে ফেলা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। ‘কাজে মন বসাতে পারছি না’ অভিযোগটি অধিকাংশ সময়ই শোনা যায়। কাজ বা পড়াশোনায় মনোযোগ (concentration in study) বৃদ্ধি করার কিছু সহজ পদ্ধতি রয়েছে(concentration tips)। তবে এসব পদ্ধতি প্রয়োগ করার আগে আত্মবিশ্বাসী হওয়াটা খুবই জরুরী।
১. কাজ শুরু করার আগে মনোযোগ নষ্ট করতে পারে এমন বিষয়গুলো দূরে রাখুন। কাজের গুরুত্ব বিবেচনা করে মোবাইল, টিভি ইত্যাদি বন্ধ রাখুন। পড়ার সময় এফ এম রেডিও এবং কম্পিউটার চালু রাখলে মনোযোগ বিচ্ছিন্ন হয়।
২. কিছু গবেষণায় দেখা যায়, কোন কোন কাজ বা পড়ার সময় নিচু শব্দে হাল্কা যন্ত্রসঙ্গীত শুনলে তা মনোযোগ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। গুগল করলেই পেয়ে যাবেন এমন অনেক যন্ত্রসঙ্গীত যা ব্যবহার করতে পারেন মনোযোগ বৃদ্ধি (increase concentration) করার উপায় হিসেবে। তবে গায়ক/গায়িকা পরিবেশন করছে এমন সঙ্গীত আপনাকে এ ব্যাপারে সাহায্য করবে না
৩. মেডিটেশন মনোযোগ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ভোরে এবং রাত্রে ঘুমানোর আগে ১০ মিনিট মেডিটেশন করলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ে। ফলে ধীরে ধীরে যে কোন বিষয়ে মনোনিবেশ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। কিভাবে মেডিটেশন করবেন তা জানতে পড়ুন এই লেখাটি।
৪. যত বেশি আপনি মস্তিষ্ককে ব্যস্ত রাখবেন গঠনমূলক কার্যক্রমে তত বেশি তার ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। এ ক্ষেত্রে ব্রেইন গেমগুলো খুবই কার্যকর (concentration exercises)। দাবা, সুডোকু, বিলিয়ার্ড, ক্রস ওয়ার্ড পাজল ইত্যাদি খেলাগুলো আপনার চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়াবে এবং মনঃসংযোগ বৃদ্ধি করবে। এছাড়া মোবাইল বা কম্পিউটারে খেলার জন্যেও প্রচুর ব্রেইন গেম রয়েছে।
৫. গবেষণায় দেখা গেছে কোন কাজ করার সময় চিউয়িং গাম চাবালে সে কাজে মনোযোগ দিতে সুবিধা হয়। তাই মনোযোগ বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করতে পারেন চিউয়িং গাম। তবে লক্ষ্য রাখবেন তা যেন অবশ্যই চিনি মুক্ত হয়।
৬. ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার গবেষণায় জানা গেছে লাল রঙ স্মৃতি শক্তি এবং মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে (improve concentration)। অফিসের বা পড়ার টেবিলে লাল কোন বস্তু, লাল রঙের জামা, কম্পিউটারে লাল ওয়ালপেপার ইত্যাদি ব্যবহার করে আপনার আশে পাশে বাড়াতে পারেন লাল রঙ এর প্রাচুর্য।
মনোযোগ বাড়াবেন,কিছু পরামর্শ হলো: বসে অথবা শবাসনে শুয়ে চোখ বন্ধ করুন। পায়ের আঙুল থেকে শুরু করে মাথার চুল, প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ মনের চোখ দিয়ে দেখার চেষ্টা করুন। ১৫-২০ মিনিট এভাবে চিন্তাশূন্য থেকে চেষ্টা করুন। আপনার শরীর ও মনের স্থিরতা ফিরে আসবে। বজ্রাসনে বসুন। দুই হাতে, দুই পায়ের গোড়ালি চেপে ধরুন। মাথার তালু দুই হাঁটুর মধ্যে মেঝেতে রাখতে হবে। নিঃশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে কোমর গোড়ালি থেকে যতটুকু সম্ভব ওপরে তুলতে হবে। মনে রাখবেন, এ অবস্থায় গোড়ালি লাগানো থাকবে ও মাথার তালু যতটুকু সম্ভব হাঁটুর কাছে থাকবে। কমপক্ষে ১০ সেকেন্ড এভাবে স্থির থাকবেন। খেয়াল রাখবেন, নিঃশ্বাস যেন স্বাভাবিক থাকে। ১০ সেকেন্ড পর কোমর ধীরে ধীরে নামিয়ে গোড়ালির ওপর রাখুন। এবার নিঃশ্বাস নিতে নিতে আগের অবস্থায় চলে আসুন। পরপর তিনবার করবেন। প্রতিবার করা শেষে শবাসনে ১০ থেকে ৩০ সেকেন্ড বিশ্রাম নেবেন। প্রথমে বজ্রাসনে বসুন। তারপর হাঁটুগেড়ে নিলডাউনে বসার ভঙ্গিমায় আসুন। ডান হাঁটু ও বাঁ হাঁটু ছয় ইঞ্চি করে ডানে ও বাঁয়ে নিন। অর্থার্যা দুই পায়ের পাতার ফাঁকে এক ফুট ফাঁকা থাকবে। দুই হাতের তালু দুই ঊরুর ওপর রাখুন। নিঃশ্বাস নিতে নিতে কোমর থেকে ওপরের অংশ যত সম্ভব পেছনে নিন এবং ডান হাতে ডান পায়ের ও বাঁ হাতে বাঁ পায়ের গোড়ালি চেপে ধরুন। মাথা সম্পূর্ণ পেছনে এলিয়ে দিন। এ অবস্থায় কমপক্ষে ১০ সেকেন্ড থাকুন। তারপর আবার নিলডাউনে চলে আসুন। এর পর বজ্রাসনে বসুন। এভাবে তিনবার অনুশীলন করুন। মনে রাখবেন, প্রতিবার আসন শেষে শবাসনে বিশ্রাম নিতে হবে।মনোযোগ বাড়াতে এসব আসন- অভ্যাস করলে আপনার মনই শুধু নয়, শরীরও সুস্থ থাকবে।