ইদানিং আমি অল্পতেই রেগে যাই। খুব চেষ্টা করি না রাগতে।কিন্তু হঠাৎ করে এত রেগে যাই যে আমি তখন কী করব বুঝে উঠতে পারি না। আমার আগে এরকম ছিল না।কিন্তু কিছু সময় পরে আমি এক বিষণ্নতায় ভুগতে থাকি।তখন নিজেকে নিজের কাছে অসহ্যও লাগে।এতে আমার সম্পর্কে টানাপড়েন তৈরি করছে।
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
fahim99

Call

রাগ আমাদের আবেগের একটি স্বাভাবিক অংশ। কিন্তু এটি যখন নির্দিষ্ট সীমানা অতিক্রম করে তখন তা আর কোন স্বাভাবিক ব্যাপার থাকে না। সে সময় প্রয়োজন পড়ে একে নিয়ন্ত্রণের। নয়তো এটি আপনার ব্যক্তিগত, পারিবারিক, ক্যারিয়ার ও সামাজিক জীবনকেও করতে পারে ক্ষতিগ্রস্থ।

রাগ নিয়ন্ত্রণে অনুসরণ করতে পারেন বেশ কিছু সহজ উপায় :

উলটো সংখ্যা গুনুন :

সাধারনত আমরা বাচ্চাদের ঘুম পাড়ানোর সময় এই উপায়টা অবলম্বন করতে বলি। কিন্তু আপনি কি জানেন, যখন আপনি খুব রেগে আছেন ১০০ থেকে ১পর্যন্ত উলটো করে গুণলে আপনার রাগ কমে যাবে অনেকটাই! বিশ্বাস না হলে একবার চেষ্টা করেই দেখুন না।

রাগ ঝেড়ে ফেলুন :

অনেক সময় আমরা আমাদের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হই কিছু সময়ের জন্য। কিন্তু সেটা ভেতরে চাপা থেকেই যায়। এবং এই অবদমিত রাগ দেহ ও মনের উপর প্রভাব ফেলে। তাই আপনি যখন উত্তেজিত অবস্থা পেরিয়ে কিছুটা শান্ত বোধ করছেন, তখন রাগটা ঝেরে ফেলুন শান্তভাবে। যার উপর, যে বিষয় নিয়ে রাগ করেছেন তাকে বুঝিয়ে বলুন। তবে খেয়াল রাখবেন সেই ব্যক্তির উপর নিয়ন্ত্রন আরোপ বা তাকে কোনভাবে মানসিক আঘাত করে নয়।

ব্যায়াম করুন :

যখন কোন কারণে খুব রাগ লাগছে তখন সেই স্থান ত্যাগ করুন ও চেষ্টা করুন একটু হেঁটে, দৌড়ে বা প্রিয় কোন দৈহিক ব্যায়াম ৫-১০ মিনিটের জন্য করার। এটা আপনার মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ করে সচলতা বাড়াবে এবং আপনাকে রিলাক্স করতে সাহায্য করবে।

কিছু বলার আগে ভাবুন :

সাধারণত রাগের মাথায় আমরা সামনের মানুষটিকে এমন অনেক কিছু বলে ফেলি যার জন্য পরে আমাদের আফসোস করতে হয়। অথবা অযথাই সামনের মানুষটিকে আমরা এমন কিছু বলে আঘাত করি যা আসলে সত্য নয় বলে আমরাও জানি। তাই রাগের মাথায় কিছু বলার আগে একবার ভাবুন। কারন বলে ফেলা কথাটি আপনি আর চাইলেও ফিরিয়ে নিতে পারবেন না। কিছু বলার আগে ৫ মিনিট সময় নিন। নিজের চিন্তা ভাবনাগুলোকে জড়ো করুন এবং শেষবারের জন্য নিজেকে প্রশ্ন করুন আসলেই আপনি কথাটা বলবেন কিনা।

সম্ভাব্য সমাধানগুলো ভাবুন :

রাগ আসলে আমাদের ভয়াবহ একটা পরিস্থিতি ছাড়া আর কোন কিছুরই মুখোমুখি করে না। রাগের মাথায় নেয়া সিদ্ধান্তগুলোও অনেক সময় পরে আমাদের ভোগায়। তাই ভাবুন চিৎকার চেঁচামেচির বদলে সম্ভাব্য সমাধান কী হতে পারে। যেমন, আপনার স্বামী প্রায়ই রাতে খাবার সময় ফেরেন না। এর কারন হতে পারে তিনি অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকেন এবং চাইলেও পারছেন না। এক্ষেত্রে আপনার রাগ করা স্বাভাবিক। কিন্তু তার সাথে চিৎকার করে কি সমাধান সম্ভব? বরং সম্ভাব্য সমাধান হতে পারে সপ্তাহের কয়েকটা দিন আপনি একা খাবার অভ্যাস করুন, আর বাকি কয়েক দিন তার সাথে এবং সপ্তাহে একদিন বিশেষভাবে বাইরে কোথাও দুজন একান্তে ডিনার করতে পারেন। এভাবে সমাধান চিন্তা করুন। কাজে দেবে।

কথাগুলো বলুন, একটু অন্যভাবে :

রাগ প্রকাশ করুন, চেপে রাখবেন না। কিন্তু একটু অন্যভাবে। যেমন আপনার সঙ্গী যদি ভীষণ অগোছালো হয়ে থাকেন এবং ঘরের কোন কাজে আপনাকে সহযোগিতা না করেন। তাহলে আপনি রাগ করে দুটো কথা তো তাকে শোনাতেই পারেন। “ঘরের সব কাজ তো আমিই করি, তুমি তো কিছু করো না” এভাবে বললে আপনার সঙ্গী কষ্ট পেতে পারেন। তাই বরং এভাবে বলতে পারেন, “আমার খুবই মন খারাপ হয় যখন তুমি আমাকে সহযোগিতা করো না এবং আমাকে একা একাই কষ্ট করে ঘর গোছাতে হয় ” এভাবে বললে তিনি তার ভুল বুঝতে পারবেন ও আপনার কষ্ট তার মনেও সহমর্মিতা জাগাবে।

ক্ষমা করে দিন :

বিষয়টা তত সহজ নয় যদিও, তবু একবার ভাবুন তো, আশপাশের সবাই ঠিক আপনার মনের মত হবে না। আপনি কারো ক্ষতি করেননি বলেই যে কেউ আপনার ক্ষতি করবে না তা ভাবাটা বোকামী। কারো অপরাধের শাস্তি নিজে না দিয়ে প্রকৃতির হাতেই ছেড়ে দিন। ক্ষমা করে দিন। একদিন রাগ করে চেঁচিয়ে দেখুন আর আরেকদিন ক্ষমা করে দিয়ে দেখুন, কোনটায় বেশী তৃপ্তি পাচ্ছেন আপনি?

নিজেকে পরামর্শ দিন :

যখন খুব রেগে আছেন নিজেকে কয়েকবার নিজেই বলুন, ‘শান্ত হও’, ‘সব ঠিক হয়ে যাবে’, ‘এগুলো জীবনের অংশ’... নিজেকে নিজেই নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করুন। এই অটোসাজেশন আপনার রাগ নিয়ন্ত্রনে আনতে সাহায্য করবে অনেকটাই।

বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন :

যদি উপরের কোন উপায়ই আপনার কাজে না লাগে তবে পরামর্শ নিন একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের। তার পরামর্শ আপনাকে সহযোগিতা করবে এই অবস্থা থেকে উত্তরণের।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

হঠাৎ রেগে যাওয়ার সমস্যাটি অনেকেরই রয়েছে। ঠিক আপনারই মত। হঠাৎ করেই রেগে যান আবার হঠাৎ করেই রাগ থেমে যায়। হঠাৎ রেগে যাওয়ার সমস্যাটি আসলে বংশগত কারণেই হয়ে থাকে। এটি আসলে চরিত্রগত একটি বৈশিষ্ট্য। তবে এই বৈশিষ্ট্যটি একজনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে দেয়। তাই এই অভ্যাসটিকে নিয়ন্ত্রণে আনা উচিত। এর জন্য যা যা করতে পারেন। ১) মনোযোগ অন্যদিকে সরানোর চেষ্টা করুন হঠাৎ রাগ উঠলে তা প্রকাশ না করে মনোযোগ তাৎক্ষণিকভাবে অন্যদিকে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করুন। যতোবার রাগ উঠবে ততোবারই নিজের মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে নিন যে কোনো ধরণের কাজ করে। এতে করে ধীরে ধীরে নিজের উপরে আপনার নিয়ন্ত্রণ চলে আসবে যা অতিরিক্ত হঠাৎ রাগ কমাতেও সহায়তা করবে। ২) প্রতিদিন আয়নায় নিজেকে দেখে বলুন ‘আমার রাগ নেই’ : সাইকোলজিস্টগণ অতিরিক্ত রাগী বা হঠাৎ রেগে যাওয়া মানুষের রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি মজার কাজ করতে বলেন, আর তা হলো আয়নায় নিজের মুখের দিকে তাকিয়ে বারবার বলা ‘আমার রাগ নেই’। এই কাজটি বিশেষ করে তখন করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন সাইকোলজিস্টগণ যখন রাগ বেশি উঠে যায়। এতে করেও রাগ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। ৩) প্রতিদিন অন্তত ১০ মিনিট মেডিটেশন করুন : যোগব্যায়াম রাগ কমানোর আরেকটি অব্যর্থ কৌশল। মেডিটেশন আমাদের মস্তিষ্ককে শান্ত রাখতে বেশ উপযোগী। সাইকোলজিস্টদের মতে প্রতিদিন মাত্র ১০ মিনিটের মেডিটেশনে আমরা আমাদের মনের আবেগ অনুভূতিগুলো বেশ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারি। তাই রাগের মতো আবেগটিও এই মেডিটেশনের মাধ্যমে কমিয়ে ফেলা সম্ভব। ৪) রাগ ঝেড়ে ফেলুন : রাগ যতো পুষে রাখা হয় ততো বাড়তে থাকে। তাই রাগ জিনিসটি পুষে রাগবেন না বিশেষ করে তা যদি ছোটোখাটো ও বেশি ক্ষতিকর ধরণের রাগ না হয়ে থাকে। সাইকোলজিস্টগন বলেন, যারা অনেক ছোটো খাটো রাগও প্রকাশ না করে নিজের ভেতরে পুষে রাখেন তারা ভেতরে ভেতরে যেমন কষ্ট পেতে থাকেন এবং ভবিষ্যতে তাদের সেই ছোটো রাগই বেশ বড় আকার ধারণ করে। এতে ক্ষতি সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই রাগ কমাতে কিছু কিছু রাগ ঝেড়ে ফেলারও পরামর্শ দিয়ে থাকেন সাইকোলজিস্টগণ। ধন্যবাদ

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ