Call

এইচআইভি ভাইরাস মোটামুটি তিন প্রকারের ছড়াতে সক্ষম। 1)যৌনমিলনের সময় 2)রক্ত লসিকার মাধ্যমে  3)মা থেকে সন্তানের                                                       এইচআইভি সংক্রামণের বেশির ভাগ ঘটনাই অরক্ষিত যৌনমিলনের কারণে ঘটে থাকে। বায়ু,জল, খাদ্য অথবা সাধারণ ছোঁয়ায় বা স্পর্শে এইচআইভি ছড়ায় না। এইচআইভি মানবদেহের কয়েকটি নির্দিষ্ট তরল পদার্থে (রক্ত, বীর্য, বুকের দুধ) বেশি থাকে। ফলে, মানব দেহের এই তরল পদার্থগলো আদান-প্রদানের মাধ্যমে এইচআইভি ছড়াতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে যে যে উপায়ে এইচআইভি ছড়াতে পারে তা হল:১) এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত রোগীর রক্ত সুস্থ ব্যক্তির দেহে পরিসঞ্চালন করলে ২) আক্রান্ত ব্যক্তি কর্তৃক ব্যবহৃত সূঁচ বা সিরিঞ্জ অন্য কোনো সুস্থ ব্যক্তি ব্যবহার করলে ৩) আক্রান্ত ব্যক্তির কোনো অঙ্গ অন্য ব্যক্তির দেহে প্রতিস্থাপন করলে ৪) এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত মায়ের মাধ্যমে (গর্ভাবস্থায়, প্রসবকালে বা সন্তানের মায়ের দুধ পানকালে) ৫) অনৈতিক ও অনিরাপদ দৈহিক মিলন করলে(যৌণ মিলন কতটা স্থায়ী কিংবা বীর্যপাত হলো কি না তার উপরে এর সংক্রমণ নির্ভর করেনা, অরক্ষিত যৌণ মিলনে অধিকাংশ সময়ে এর সংক্রমণ ঘটতে পারে।

তথ্য সূত্র; উইকিপ‌িডিয়া
Talk Doctor Online in Bissoy App

এইচ.আই.ভি. (ইংরেজি: HIV; পূর্ণরূপ: Human Immunodeficiency Virus হিউম্যান ইমিউনো ডেফিশিয়েন্সি ভাইরাস) বা মানব প্রতিরক্ষা অভাবসৃষ্টিকারী ভাইরাস লেন্টিভাইরাস (Lentivirus) গোত্রের অন্তর্গত এক ধরনের ভাইরাস যার সংক্রমণে মানবদেহে এইডস (AIDS) রোগের সৃষ্টি হয় । মূলত এইডস একটি রোগ নয়, এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অভাব জনিত নানা রোগের সমাহার । এইচ.আই.ভি ভাইরাস মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (অনাক্রম্যতা) নষ্ট করে দেয়, ফলে নানা সংক্রামক রোগ ও কয়েক রকম ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে রোগী মৃত্যু মুখে ঢলে পড়ে । এইচআইভি ভাইরাস শরীরে ঢোকার পর অনাক্রম্যতা কমতে কমতে এইডস ঘটাবার মত অবস্থায় পৌছতে অনেক বছর লাগে । তবে শরীরে এই ভাইরাস একবার সংক্রমিত হলে তা কমানো সম্ভব হলেও সম্পূর্ণ দূর করা এখনো সম্ভব নয় তাই শেষপর্ষন্ত সেই রোগীর এইডস হওয়া বন্ধ করা সম্ভব নয় । 

ভাইরাসটি প্রধানত মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার প্রধান কোষগুলো যেমন সাহায্যকারী টি কোষ (helper T cells) (বিশেষ করে সিডি৪+ CD4+ টি কোষ সমূহ) ম্যাক্রোফেজ এবং ডেনড্রাইটিক কোষগুলোকে আক্রমণ করে । প্রধানত ৩টি প্রক্রিয়ায় এটি সিডি৪+ কোষের সংখ্যা কমিয়ে দেয় । যখন এই সিডি৪+ কোষের সংখ্যা একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ের নিচে নেমে যায় তখন দেহের কোষীয় অনাক্রমন্যতা (Cell-mediated immunity) নষ্ট হয়ে যায় এবং দেহ সুযোগসন্ধানী সংক্রোমন (Opportunistic infection) এর প্রতি বেশি সংবেদনশীল হয়ে পড়ে । এইচ.আই.ভি-১ দ্বারা আক্রান্ত এবং চিকিৎসা না হওয়া বেশিরভাগ মানুষ এইডস রোগের শিকার হয় এবং তাদের বেশিরভাগ মারা যায় সুযোগসন্ধানী সংক্রোমন অথবা ম্যালিগন্যানসির (Malignancy) যা ক্রমশ কমতে থাকা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার ফলাফল । এইচ.আই.ভি সংক্রমন থেকে এইডস হওয়ার হার নির্ভর করে ভাইরাস, পোষক এবং পরিবেশ প্রভৃতি প্রভাবকের উপর । বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাধারনত এইচ.আই.ভি সংক্রোমন থেকে এইডস হতে ১০ বছর সময় লাগে তবে কোন কোন ক্ষেত্রে এর চেয়ে কম না বেশি সময় লাগতে পারে । রেট্রোভাইরাসরোধী (Antiretroviral drug) চিকিৎসা ভাইরাসটির সংক্রমনজনিত অসুস্থতা এবং মৃত্যু প্রবনতা দুটোই কমায় কিন্তু নিয়মিতভাবে এই চিকিৎসাসেবা সব দেশে পাওয়া যায় না । রেট্রোভাইরাসরোধী চিকিৎসা এইচ.আই.ভি আক্রান্ত রোগীদের জীবনসীমা আশানুরূপভাবে বৃদ্ধি করতে পারে । এমন কি ২০০৫ সালের তথ্য অনুযায়ী এইডস পর্যায়ে পৌছে যাওয়া আক্রান্ত রোগীদের জীবনসীমা গড়ে ৫ বছর বৃদ্ধি করা সম্ভব এই চিকিৎসার মাধ্যমে । রেট্রোভাইরাসরোধী চিকিৎসা ছাড়া সাধারনত একজন এইডস আক্রান্ত রোগী ১ বছরের মধ্যে মারা যায় ।

ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (WHO - World Health Organization) মানবদেহে এইচ.আই.ভি ভাইরাসের সঙ্ক্রমনকে প্যান্ডেমিক (Pandemic) হিসাবে চিহ্নিত করেছে । ১৯৮১ সালে ভাইরাসটি আবিষ্কারের পর থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এইডস রোগ কারনে ২ কোটি ৫০ লক্ষেরও বেশি মানুষ মারা যায় । পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ০.৬% এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত । ২০০৫ সালে এইডস ২২ থেকে ৩৩ লক্ষ মানুষের জীবন কেড়ে নেয় যার মধ্যে ৫ লক্ষ ৭০ হাজারের ও বেশি ছিল শিশু । এই মৃত্যুর এক-তৃতীয়াংশ ঘটে সাহারা-নিম্ন আফ্রিকা (Sub-Saharan Africa) অঞ্চলে । তখন ধারণা করা হয়েছিল ভাইরাসটি আফ্রিকার প্রায় ৭ কোটি মানুষকে আক্রান্ত করবে ।

এইচআইভি / এইডস একটি বিশ্বব্যাপী মহামারী । 2018 সালের হিসাবে, প্রায় ৪ কোটি  মানুষ বিশ্বব্যাপী এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়েছে । 2018 সালে এইডস থেকে প্রায় ৮ লাখ লোক মারা গিয়েছিল । ২০১৫ সালের গ্লোবাল বার্ডেন অফ ডিজিজ স্টাডি, দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়েছে যে, এইচআইভি সংক্রমণের বিশ্বব্যাপী ঘটনাগুলি ১৯৯৭ সালে (প্রতি বছর ৩৩ লাখ) শীর্ষে পৌঁছেছিল । ১৯৯৭ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বৈশ্বিক ঘটনা দ্রুত হ্রাস পেয়ে প্রতি বছরে প্রায় ২৬ লাখ হয়ে দাঁড়িয়েছিল । দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ২০১০ সালে আনুমানিক ৪০ লাখ এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়েছে, এর মধ্যে প্রায় ২৫ লাখ ভারতে রয়েছে । ২০১৭ সালে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১০ লাখ মানুষের এইচআইভি ছিল ।


জিনগত ইতিহাসের পুনর্গঠন থেকে দেখা যায় যে, এইচআইভি মহামারীটির প্রায় ১৯২০ সালের দিকে কঙ্গোর গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী কিনশায় জন্মগ্রহণ করেছিল ।  এইডস প্রথমে ১৯৮১ সালে স্বীকৃত হয়েছিল, ১৯৮৩ সালে এইচআইভি ভাইরাসটি এইডসের কারণ হিসাবে সনাক্ত এবং সনাক্ত করা হয়েছিল এবং ২০০৯ সালের মধ্যে এইডস প্রায় ৩ কোটি মানুষের মৃত্যু ঘটায় ।


এছাড়া HIV মানুষের মধ্যে ছড়ানোর  আরও একটি অসমর্থিত কারণ, বানরের সাথে মানুষের যৌনমিলন । ভারতের হিন্দুরা হনুমানকে দেবতা রূপে পূজা করে থাকে । হনুমান দেবতাকে তুষ্ট করার জন্য তারা নৈবেদ্য বা ভোগ দেবার জন্য, অতি গোপনে দলিত সম্প্রদায়ের কুমারী মেয়ে বা অপহরণ করে আনা মেয়েদের ভাং বা ধুতরায় ভেজানো পানি পান করিয়ে বেহুস অবস্থায় নগ্ন করে, বানরের সাথে যৌনমিলন করতে দিত । এভাবেই প্রথম HIV মানুষের মধ্যে বিস্তার লাভ করেছিলো, খুব সম্ভবত । বানরের রক্তে HIV থাকে । 


( বিশেষ দ্রষ্টব্য:  অসমর্থিত বলার কারণ, হিন্দুরা কখনও এই বিষয়গুলো স্বীকার করেনা । তবে এজন্য হিন্দু ধর্মের দোষ দিয়ে লাভ নেই । কোনও ধর্মের অনুসারীদের দেখে ধর্মের বিচার অনুচিত । হিন্দু ধর্মের বা সনাতন ধর্মের, বর্তমানে বা পূর্বে প্রচলিত অনেক প্রথা মূল হিন্দু ধর্মে নেই । যেমন সতীদাহ প্রথা, হোলি উৎসব, মন্দিরে সেবাদাসী রাখা, ঘন্টা বাজানো ইত্যাদি । সতীদাহ প্রথা এসেছে বিধবাদের সম্পদ আত্নসাৎ করার প্রবণতা থেকে । যার মূল মানুষের লোভ । মন্দিরে সেবাদাসী রাখা শুরু হয়েছিলো নারীলোভী পুরোহিতদের জন্য । মন্দিরে সেবাদাসীদের অত্যাচার করার সময় তাদের চীৎকার গোপন করার জন্য ঘন্টা বাজানোর প্রচলন আরম্ভ হয়েছিলো । সতীদাহ করার সময় বিধবাদের চীৎকার ঢাকার জন্য ঢোল, কাঁসা, শিঙ্গা ইত্যাদি বাজানো হতো । হোলি উৎসবের প্রচলন হয় অবৈধ যৌনমিলনের পর কাপড়ে রক্তের দাগ লুকানোর চেষ্টা থেকে । এসব অনাচার মানুষের লোভ, লালসা রিপু দমন না করতে পারা থেকে শুরু । মানুষের কৃতকর্মের দোষ আশা করি কেউ, কোনো ধর্মের উপর দিবেন না ।  )


সংক্রমণ:

এইচআইভি ভাইরাস মোটামুটি তিন প্রকারে ছড়াতে সক্ষম ।

১) যৌনমিলনের সময়          

২) রক্ত (blood) বা লসিকার (lymph)মাধ্যমে        

৩) মা থেকে সন্তানে          

৪) এইচআইভি সংক্রামণের বেশির ভাগ ঘটনাই অরক্ষিত যৌনমিলনের কারণে ঘটে থাকে ।


বায়ু,জল, খাদ্য অথবা সাধারণ ছোঁয়ায় বা স্পর্শে এইচআইভি ছড়ায় না। এইচআইভি মানবদেহের কয়েকটি নির্দিষ্ট তরল পদার্থে (রক্ত, বীর্য, বুকের দুধ) বেশি থাকে । ফলে, মানব দেহের এই তরল পদার্থগুলো আদান-প্রদানের মাধ্যমে এইচআইভি ছড়াতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে যেইসব উপায়ে এইচআইভি ছড়াতে পারে তা হল:

১) এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত রোগীর রক্ত সুস্থ ব্যক্তির দেহে পরিসঞ্চালন করলে 

২) আক্রান্ত ব্যক্তি কর্তৃক ব্যবহৃত সূঁচ বা সিরিঞ্জ অন্য কোনো সুস্থ ব্যক্তি ব্যবহার করলে ৩) আক্রান্ত ব্যক্তির কোনো অঙ্গ অন্য ব্যক্তির দেহে প্রতিস্থাপন করলে 

৪) এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত মায়ের মাধ্যমে (গর্ভাবস্থায়, প্রসবকালে বা সন্তানের মায়ের দুধ পানকালে) 

৫) অনৈতিক ও অনিরাপদ দৈহিক মিলন করলে (যৌণ মিলন কতটা স্থায়ী কিংবা বীর্যপাত হলো কি না তার উপরে এর সংক্রমণ নির্ভর করেনা, অরক্ষিত যৌণ মিলনে অধিকাংশ সময়ে এর সংক্রমণ ঘটতে পারে) ।


প্রতিরোধ:

এইচআইভি রোগীদের অতি প্রয়োজনীয় ওষুধ ‘নেভিরাপিন’ । সচেতনতাকেই এর একমাত্র প্রতিরোধক বিবেচনা করা যেতে পারে ।

প্রতিকার:

এইচআইভি সংক্রমণের উপায়গুলো জেনে এ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে এইডস প্রতিরোধ করা সম্ভব। এইডস প্রতিরোধে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় তা হলো:

১) অন্যের রক্ত গ্রহণ বা অঙ্গ প্রতিস্থাপনে আগে রক্তে এইচআইভি আছে কিনা পরীক্ষা করে নেয়া

২) ইনজেকশন নেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবারই নতুন সুচ/সিরিঞ্জ ব্যবহার করা 

৩) অনিরাপদ যৌন আচরণ থেকে বিরত থাকা 

৪) এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত মায়ের সন্তান গ্রহণ বা সন্তানকে বুকের দুধ দেয়ার ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া 

৫) কোন যৌন রোগ থাকলে বিলম্ব না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া 

৬) ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে চলা 

৭) অন্যের ব্যবহার করা ব্লেড ব্যবহার করা যাবে না ।

 বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা:

বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় ৩,৬৭৪ জন ব্যক্তি এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত; আর ঝুঁকিতে আছে আরো ১৪,৩০০ জন ।

তথ্যসূত্র: Wikipedia, WHO report.

Talk Doctor Online in Bissoy App