আমাদের দেশের নারীদের আবহমানকালের ও জাতীয় পোশাক হচ্ছে শাড়ি। যদিও বর্তমান শাড়ি-ব্লাউজ সময়ের ব্যবধানে বিভিন্ন বিবর্তন ও পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বর্তমান রূপ পরিগ্রহ করেছে। যেমন: ব্লাউজ ও পেটিকোটের সংযোজন, পরিধান রীতিতে পরিবর্তন। ম্যাটেরিয়াল ও ডিজাইনের বৈচিত্র্য ও রূপান্তর তো বলার অপেক্ষা রাখেনা। তাছাড়া সময়ের ব্যবধানে পরিধেয় পোশাক হিসেবে শাড়ির যে তাৎপর্যপূর্ন পরিবর্তন এসেছে সেটি হচ্ছে,,, মা-খালাদের নৈমিত্তিক ও আটপৌরে পোশাক থেকে শাড়ি এখন অনেকটাই বিশেষ উপলক্ষ্য ও আনুষ্ঠানিকতা কেন্দ্রীক পোশাকে পরিণত হয়েছে যেখানে শাড়ি পরার মুখ্য উদ্দেশ্য থাকে আকর্ষণীয় রূপ ধারন বা নজরকাড়া সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলা। অর্থাৎ নৈমিত্তিক ও গতিশীল জীবনের পরিধেয় হিসেবে হিসেবে শাড়ি খুব একটা উপযোগী নয় বরং পোশাকী অলংকার হিসেবে বিশেষ উপলক্ষ্য বা আনুষ্ঠানিকতায় আকর্ষণীয় সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলাই শাড়ির সার্থকতা।
তবে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ তাআলা নারীদেরকে হিজাব মেনে চলার তথা দৃষ্টি আকর্ষণকারী ও গোপনীয় সৌন্দর্যকে আবৃত রাখার যে নির্দেশ দিয়েছেন তা মেনে চলার জন্য শাড়ি মোটেও উপযোগী নয়। কারন সিংহভভাগ নারী যেভাবে শাড়ী পরে তাতে বুক, গলা, কাঁধ, পিঠের একটি বড় অংশ এমনকি কোমর ও পেটের অংশও দৃশ্যমান থাকে। তাছাড়া এগুলো ঢাকা থাকলেও শাড়ির ওপর অন্য কোনও আবরণ যদি না থাকে তাতে দেহের গঠন আকৃতি অনেকটাই ফুটে উঠে। অনেককেই দেখা যায়, শাড়ি পরে হিজাব রক্ষার ব্যর্থ চেষ্টা চালান। মাথায় একটা স্কার্ফ ও ফুলহাতা ব্লাউজের সাথে শাড়িটা হয়তো *আক্ষরিক অর্থে* সবকিছু ঢেকে দ্বায়সারাভাবে সতরটা আবৃত করতে পারে। কিন্তু গোপনীয় সৌন্দর্য তথা দেহকাঠামো যেটি আবৃত করাও হিজাবের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ সেটি কোনোভাবেই পালন হয়না। তাছাড়া জমকালো ডিজাইন, নজরকাড়া রং ও পাতলা ম্যাটেরিয়ালের শাড়িটা নিজেই একটা ফিতনার উপাদান হয়ে দাঁড়ায়।
আর, হিজাবের যে শর্তগুলো আছে সেগুলো যথাযথভাবে মেনে শাড়ি পরাটা যে পরিমান কষ্টসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ হবে তাতে নিছক নিয়মরক্ষা ও নামেমাত্র শাড়ি পরাটাই শুধু হবে, অন্য কোনও বিশেষত্ব থাকবেনা। তাহলে একজন বাঙালী নারী যার সাথে শাড়ির রয়েছে শিকড় ও অস্থি-মজ্জার সম্পর্ক, সে কি আল্লাহ্'র হুকুম মেনে চলে একটা পোশাকী অলংকার হিসেবে শাড়িতে প্রকাশ পাওয়া বিশেষ সৌন্দর্য ও আকর্ষন ফুটিয়ে তুলতে পারবেনা? অবশ্যই পারবে। বরং ইসলাম সৌন্দর্য চর্চার যে অবাধ ও স্বাধীন ক্ষেত্র তাকে দিয়ে রেখেছে সেটিই শাড়ির সহজাত আবেদন ও আকর্ষণীয় সৌন্দর্য প্রকাশের সর্বোত্তম ক্ষেত্র। তাই একজন নারী যদি শাড়িতে তার গোপনীয়, আকর্ষণীয় এমনকি প্রলুব্ধকর সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তুলতে আকাংখী হন তাহলে সেটি একান্ত নির্জনে স্বামীর জন্য সাজ-সজ্জা করে ফুটিয়ে তোলাটাই পরম আকাংখিত এবং সেটাই শাড়ির সর্বোত্তম ও সার্থকতম ইসলামীকরন! ❤
শাড়িপ্রিয় ও ধর্মানুরাগী নারীরা ভেবে দেখবেন কি?